মুহসিন ইবনে আলী

মুহসিন বিন আলী
مُحْسِن ٱبْن عَلِيّ
আরবি বর্ণে লিখিত মুহসিন ইবনে আলীর নাম
পিতা-মাতা
আত্মীয়মুহাম্মাদ (পিতামহ)
পরিবারআহলে বাইত

মুহসিন ইবনে আলী (আরবি: مُحْسِن ٱبْن عَلِيّ, Muḥsin ibn ʿAlīy), মোহসিন বানানও প্রচলিত, তিনি ছিলেন ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ এবং আলী ইবনে আবি তালিবের কনিষ্ঠ পুত্র এবং এইভাবে ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মাদের নাতি। তিনি হোসাইনহাসানের ভাই ছিলেন।

মুহসিনের মৃত্যু নিয়ে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। শিয়ারা বিশ্বাস করে যে মুহসিন ১৮ জানুয়ারী ৬৩২ সালে গর্ভপাতের কারণে মারা যান। সুন্নিরা বিশ্বাস করেন যে, মুহসিন তার শৈশবে মারা যান, কোনো গর্ভপাত ঘটেনি। মুহসিনের তিনশত বছর পরে ১০ শতকে গর্ভপাতের প্রথম পরিচিত উল্লেখ পাওয়া যায়।[]

মুহসিনের ভাই হাসান ইবনে আলী এবং হোসাইন ইবনে আলীর নামের মত "মুহসিন" নামটিও আরবি মূলধাতু (ح-س-ن) Ḥ-S-N থেকে এসেছে। "মুহসিন" এর অর্থ হতে পারে "কল্যাণকর",[] "উপকারী",[] বা "যে সাহায্য করার কাজ করে।" বেশ কয়েকটি ইসলামি সূত্র জানায় যে হাসান, হোসাইন এবং মুহসিনের নাম তাদের পিতামহ ও ইসলামের নবী মুহাম্মাদের প্রদায়িত।[][][]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

সকীফার সমাবেশে আবু বকর খলিফা হন, কিন্তু আলী এবং তার কিছু সমর্থক তার শাসনকে বৈধ বলে মনে করেননি। আলাওয়ীরা আলীকে খলিফা হিসাবে সমর্থন করেছিল এবং ফাতিমার সাথে যে বাড়িতে তিনি থাকতেন সেখানে একত্রিত হয়েছিল, যেখানে উমর আবু বকরের নির্দেশে কাজ করছিলেন এবং আলীর আনুগত্য পেতে আসেন।[][] সুন্নি পণ্ডিত আত তাবারি এবং ইবনে কুতাইবা বর্ণনা করেছেন যে উমর হুমকি দিয়েছিলেন যে, যদি আলী আবু বকরের কর্তৃত্ব স্বীকার করতে অস্বীকার করেন তবে ঘরটি পুড়িয়ে ফেলা হবে।[][১০][১১] ঐতিহাসিক আল-বালাজুরী বলেছেন যে, আলীর সম্মতির মধ্য দিয়ে এখানে বিবাদের সমাপ্তি হয়েছিল।[১২] যাইহোক কিছু বর্ণনা যোগ করে যে, উমর এবং তার সমর্থকরা সহিংসভাবে বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন। যার ফলে ফাতিমার গর্ভে থাকা মুহসিনের গর্ভপাত হয়েছিল।[১৩] মুতাজিলা ধর্মতাত্ত্বিক ইব্রাহিম নাজ্জাম ব্যাখ্যা করেছেন যে, "উমর ফাতিমার পেটে এমনভাবে আঘাত করেছিলেন যে তার গর্ভের সন্তানটি মারা গিয়েছিল।"[১৪]  বিপরীতে, ইবনে রুসতম তাবারি বলেছেন যে, কুনফুদ নামে উমরের একজন সহযোগী, তার তরবারির খাপ দিয়ে তাকে আঘাত করে গর্ভপাত ঘটায়।[১৫]

মুহসিনের মৃত্যু নিয়ে শিয়া মুসলিম ও সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।[১৬] মুহসিন শৈশবেই মারা গিয়েছিলেন, কোনো গর্ভপাতের কথা উল্লেখ না করেই অনেক প্রাথমিক ঐতিহাসিক সূত্র রয়েছে। ইতিহাসবিদ বালাজুরি, ইয়াকুবী এবং আল-মাসুদী ফাতিমার সন্তানদের মধ্যে মুহসিনকে তালিকাভুক্ত করেছেন, কিন্তু গর্ভপাতের কোনো উল্লেখ ছাড়াই। একইভাবে, শিয়া ধর্মতাত্ত্বিক শেখ মুফীদ তার কিতাব আল-ইরশাদ লেখার সময়, মুহসিনের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো সহিংসতার উল্লেখ করেননি। ঝগড়ার সময় গর্ভপাতের প্রথম পরিচিত রেফারেন্স শুধুমাত্র ১০ম শতাব্দীতে ইবনে কুলাওয়াইহ কুম্মীর কামিলুয যিয়ারত-এ পাওয়া যায়।[] গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক কোয়েলি ফিটজপ্যাট্রিক অনুমান করেছেন যে, গল্পটি সেই সময়ের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে প্রতিফলিত করে এবং তাই সাবধানতার সাথে আচরণ করা উচিত।[১৩]

স্মরণ

[সম্পাদনা]

মুহসিন ইবনে আলীকে নিয়ে কখনও কখনও ইসনা আশারিয়া শিয়ারা শোক প্রকাশ করে এবং প্রায়শই তাকে শহীদ হিসাবে বিবেচনা করে।[১৭]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Khetia (2013, pp. 71–75)
  2. Boozari, Amirhassan (২০১১)। Shi'i Jurisprudence and Constitution: Revolution in Iran (first সংস্করণ)। Palgrave Mcmillan। পৃষ্ঠা 77। আইএসবিএন 978-0-230-11846-1 
  3. "Translation and Meaning of محسن in Almaany English Arabic Dictionary"। Almaany.com। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০১৯ 
  4. "A Shi'ite Encyclopedia"Al-Islam.org। Ahlul Bayt Digital Islamic Library Project। 
  5. ibn Hanbal, Ahmad। Fadha'il al-Sahaba, Volume 2। পৃষ্ঠা 774, Tradition 1365। 
  6. al-Hakim। al-Mustadrak, Volume 3। পৃষ্ঠা 165, 168। 
  7. Illahi, Mahboob (২০১৮)। Doctrine of Terror: Saudi Salafi Religion। FriesenPress। পৃষ্ঠা 150। আইএসবিএন 978-1-5255-2647-3 
  8. Hazleton, Lesley (২০০৯)। After the Prophet: The Epic Story of the Shia-Sunni Split in Islam। Knopf Doubleday Publishing Group। পৃষ্ঠা 71। আইএসবিএন 978-0-385-53209-9 
  9. Al-Tabari, Muhammad ibn Jarir (১৯৮৫)। The History of al-Tabari। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 186–87। আইএসবিএন 0-88706-691-7 
  10. Ibn Qutaybah, Abu Muhammad (১৯০৯)। al-Imamah wa al-Siyasah। পৃষ্ঠা 3। 
  11. Ibn Qutaybah (1909)
  12. Khetia, Vinay (২০১৩)। Fatima as a Motif of Contention and Suffering in Islamic Sources। Concordia University। পৃষ্ঠা 32। 
  13. Fitzpatrick, Coeli; Walker, Adam Hani (২০১৪)। Muhammad in History, Thought, and Culture: An Encyclopedia of the Prophet of God। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 186। আইএসবিএন 978-1-61069-178-9 
  14. al-Safadi, Salahuddin Khalil। Waafi al-Wafiyyaat 
  15. Khetia (2013)
  16. Fedele, Valentina (২০১৮)। Fatima। Encyclopedia of Women in World Religions: Faith and Culture across History। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 56। আইএসবিএন 978-1-4408-4850-6 
  17. Pinault, David (২০১৬)। Horse of Karbala: Muslim Devotional Life in India। Palgrave Macmillan US। পৃষ্ঠা 62। আইএসবিএন 978-1-137-04765-6 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]