মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার অভিযান | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
| |||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা | থুমামা ইবনে উথাল | ||||||
শক্তি | |||||||
৩০ | অজানা | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
নিহত: ০ |
নিহত: ১০ থুমামা ইবনে উথাল বন্দী |
মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার [২] অভিযানটি ৬২৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে, (৬ষ্ঠ হিজরির মুহররম মাস) সংঘটিত হয়। [৩]
ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ বনু বকরের (বনু বকর বিন ওয়ায়েল) সাথে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে ইবনে মাসলামার নেতৃত্বে ত্রিশজন সাহাবীর একটি দল প্রেরণ করেন। তারা বনু বকরের সেপ্ট বাসস্থানের দিকে রওনা হয়। সাহাবীরা তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায় এবং তাদেরকে চারদিকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শত্রুদের মধ্যে অনেকে পালিয়ে যায়। তবে এই অভিযানে শত্রুদের দশজন নিহত হয়। সাহাবীরা যুদ্ধের মালামাল দখল করে নেয় এবং বনু হানিফা গোত্রের (বনু বকরের একটি শাখা) প্রধান থুমামাহ ইবনে উথাল আল-হানাফীকে সাথে নিয়ে ফিরে আসে।[৪]
মুহাম্মদের সাথীরা থুমামাহ ইবনে উথালকে একটি মসজিদের খুঁটিতে বেঁধে রাখে। মুহাম্মদের করা একটি প্রশ্নের উত্তরে থুমামা বলেন: "যদি আপনি কাউকে হত্যা করতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই মহৎ বংশের একজন লোককে বেছে নিতে হবে, যদি আপনি অনুগ্রহশীল হতে চান তবে তাকে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তি হতে হবে এবং যদি আপনি টাকা চাইতেন তাহলে আপনাকে তা একজন উদার মানুষের কাছ থেকে চাইতে হত।" থুমামা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে এই কথাটি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেন। তৃতীয়বার, মুহাম্মদ তাকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেন এবং পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। [৪]
এই অভিযানের সময় মুসলমানরা দশজনকে হত্যা করে এবং অন্যরা কোনো প্রতিরোধ না করে পালিয়ে যায়। মুসলিমরা ১৫০টি উট এবং ৩০০০টি ছাগল লুট হিসেবে আটক করে। [৫]
এই ঘটনাটি মুসলিম ফিকহবিদ আত তাবারি তার রচনায় উল্লেখ করেন। মুসলিম আইনবিদ ইবনে কাইয়িম আল-জাওজিয়া তার রচিত মুহাম্মদের জীবনী সম্পর্কিত বই যাদুল মা'আদ -এ ঘটনাটি উল্লেখ করেন। [৪][৬][৭] এছাড়া, আধুনিক মাধ্যমিক সূত্র এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজয়ী বই[৮] আর-রাহীকুল মাখতুম (দ্য সিলড নেক্টার) এ ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়। [৪]
ঘটনাটি মুসলিম পন্ডিত ইবনে সা'দ তার "মুহাম্মদের সামরিক অভিযান" সম্পর্কিত বইতেও উল্লেখ করেন। [৫] তিনি এই অভিযান সম্পর্কে লিখেন:
“ | আল-কুরতার বিরুদ্ধে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ এর সারিয়্যাহ।
তারপর আল-কুরতার বিরুদ্ধে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামার সারিয়্যাহ ঘটে। তিনি আল্লাহ'র রাসুল মুহাম্মদ এর হিজরতের পর থেকে পঞ্চাশতম মাসের শুরুতে ১০ মুহররম যাত্রা করেন। তিনি (নবী) তাকে কিলাবের একটি শাখা বনু বকরের অধীনস্থ উপজাতি আল-কুরতার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। তারা দারিয়াহ এর আশেপাশে অবস্থিত আল-বাকারাত নামক স্থানে থামত। দারিয়াহ আল-মদিনা থেকে সাতটি পর্যায়ে (দূরত্ব) অবস্থিত। তাকে চারদিক থেকে ঘেরাও করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তাই সে রাতের বেলা দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হতে থাকে... |
” |
এই অভিযানে বনু হানিফা গোত্রের প্রধান থুমামাহ ইবনে উথাল আল-হানাফী বন্দী হন। [৪] সহীহ মুসলিম হাদিস সংগ্রহে এটি উল্লেখ করা হয়েছে:
“ | আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ'র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নজদ এ কিছু ঘোড়সওয়ার প্রেরণ করেন। তারা এক ব্যক্তিকে বন্দি করে নিয়ে যায়। তিনি বনু হানিফা গোত্রের ছিলেন এবং তাকে থুমামা ইবনে উথাল বলা হত। তিনি ইয়ামামার লোকদের প্রধান ছিলেন। লোকেরা তাকে মসজিদের একটি স্তম্ভের সাথে বেঁধে রাখে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে বের হন। তিনি বলেন: হে থুমামা, তোমার কিছু বলার আছে? তিনি উত্তর দিলেন: মুহাম্মদ, আপনার সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা আছে। আমাকে মেরে ফেললে এমন একজনকে মেরে ফেলা হবে যার রক্ত ঝরেছে। আপনি যদি আমার একটি উপকার করেন, তবে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপকার করা হবে। আপনি যদি সম্পদ চান, বলেন এবং আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন।
আল্লাহর রাসূল তাকে এ অবস্থায় দুই দিনের জন্য রেখে গেলেন। দুইদিন পর আবার তার কাছে এসে বললেন: হে থুমামা, তোমার কিছু বলার আছে? তিনি উত্তরে বললেন: যা আমি আপনাকে আগেই বলেছি। আপনি যদি আমার একটি উপকার করেন তবে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপকার করা হবে। আমাকে মেরে ফেললে এমন একজনকে মেরে ফেলা হবে যার রক্ত ঝরেছে। আপনি যদি সম্পদ চান, বলেন এবং আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে পরের দিন পর্যন্ত রেখে গেলেন এবং পরদিন যখন আবার তার কাছে এসে বললেন: হে থুমামা, তোমার কিছু বলার আছে? তিনি উত্তরে বললেন: যা আমি আপনাকে আগেই বলেছি। আপনি যদি আমার একটি উপকার করেন, তবে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপকার করা হবে। আমাকে মেরে ফেললে এমন একজনকে মেরে ফেলা হবে যার রক্ত ঝরেছে। আপনি সম্পদ চাইলে বলেন এবং যা চাইবেন তাই পাবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের বললেন: থুমামাকে মুক্ত করে দাও। তিনি মসজিদের কাছে একটি খেজুর বাগানে গিয়ে গোসল করলেন। অতঃপর তিনি মসজিদে প্রবেশ করে বললেন: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে মুহাম্মদ, আল্লাহর কসম, পৃথিবীতে আমার কাছে আপনার চেহারার চেয়ে ঘৃণ্য আর কোনো চেহারা ছিল না, কিন্তু এখন আপনার চেহারা আমার কাছে সব চেহারার চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছে। আল্লাহর কসম, আপনার দ্বীনের চেয়ে আমার কাছে বিদ্বেষপূর্ণ কোন দ্বীন ছিল না, কিন্তু এখন আপনার দ্বীন আমার কাছে সব দ্বীনের চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছে। আল্লাহর কসম, আপনার শহরের চেয়ে আমার কাছে ঘৃণ্য কোনো শহর ছিল না, কিন্তু এখন আপনার শহর আমার কাছে সব শহরের চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছে। আমি যখন উমরা করতে যাচ্ছিলাম তখন আপনার ঘোড়সওয়াররা আমাকে বন্দি করে। এখন এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সুসংবাদ দিলেন এবং উমরায় যেতে বললেন। যখন তিনি মক্কায় পৌঁছলেন, তখন কিছু লোক তাকে বলল: তুমি কি ধর্ম পরিবর্তন করেছ? তিনি বললেন: না! আমি বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আল্লাহর কসম, ইয়ামামা থেকে তোমরা একটি গমের দানাও পাবে না যতক্ষণ না রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি না দেন।সহীহ মুসলিম, ১৯:৪৩৬১ (ইংরেজি) |
” |
সহীহ বুখারী, ৫:৫৯:৬৫৮ (ইংরেজি) হাদিস সংগ্রহেও ঘটনাটি উল্লেখ করা আছে।