মুহাম্মদ তাওফিক পাশা

মুহাম্মদ তাওফিক পাশা
মিশরসুদানের খেদিভ
রাজত্ব১৮৭৯–১৮৯২
পূর্বসূরিইসমাইল পাশা
উত্তরসূরিদ্বিতীয় আব্বাস হিলমি পাশা
জন্ম১৫ নভেম্বর ১৮৫২
কায়রো
মৃত্যু৭ জানুয়ারি ১৮৯২(1892-01-07) (বয়স ৩৯)
হেলওয়ান
দাম্পত্য সঙ্গীএমিনা ইলহামি
বংশধরপ্রিন্সেস নাজলি বিনতে মুহাম্মদ হানিম
দ্বিতীয় আব্বাস হিলমি পাশা
প্রিন্স মুহাম্মদ আলি বে
প্রিন্সেস হাদিস হানিম
প্রিন্সেস নিমেতাল্লাহ মুহাম্মদ হানিম
রাজবংশমুহাম্মদ আলি রাজবংশ
পিতাইসমাইল পাশা
মাতাশাফিক-নূর

মুহাম্মদ তাওফিক পাশা (আরবি: محمد توفيق باشا; ৩০ এপ্রিল বা ১৫ নভেম্বর ১৮৫২ – ৭ জানুয়ারি ১৮৯২) ছিলেন মিশর ও সুদানের খেদিভ। ১৮৭৯ থেকে ১৮৯২ সাল পর্যন্ত তিনি খেদিভের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মিশরের মুহাম্মদ আলি রাজবংশীয় ষষ্ঠ শাসক।

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

তাওফিক পাশা ছিলেন ইসমাইল পাশার জ্যেষ্ঠ পুত্র। তার ছোট ভাইদের মত তাকে পড়াশোনার জন্য ইউরোপ পাঠানো হয়নি। তিনি মিশরে বেড়ে উঠেছেন।

তিনি কায়রোর নিকটে একটি প্রাসাদ লাভ করেছিলেন। প্রায় বারো বছর যাবত তিনি এখানে নিরিবিলি জীবন কাটিয়েছেন। এখানে থাকাকালীন তিনি প্রজাদের প্রতি উত্তম ও ভদ্র আচরণের জন্য সুনাম অর্জন করেছিলেন।

তাওফিক পাশা ১৮৭৩ সালের ১৫ জানুয়ারি কায়রোতে এমিনা ইলহামিকে বিয়ে করেন। এমিনা ইলহামি ছিলেন দামাত ইবরাহিম ইলহামি পাশা ও নাজরিন কাদিনের কন্যা।

শাসনপূর্ব‌ দায়িত্ব

[সম্পাদনা]

নুবার পাশার পদচ্যুতির পর ১৮৭৮ সালে তাওফিক পাশাকে কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি অল্প কয়েক মাস এই পদে ছিলেন।

এরপর তিনি তার এস্টেটে ফিরে যান এবং নিরিবিলি জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন। ১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ ও ফরাসিদের চাপের কারণে উসমানীয় সুলতান কর্তৃক ইসমাইল পাশাকে অপসারণের পর সুলতানের আদেশে তাওফিক নতুন খেদিভ নিযুক্ত হন।

শাসনকাল

[সম্পাদনা]

তাওফিক তার নিযুক্তির খবরে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। ইসমাইল পাশার নীতির কারণে এসময় মিশর ও সুদান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগ্রস্ত ছিল। তাওফিক পাশার ক্ষমতালাভের পর ব্রিটিশ ও ফরাসিদের কর্মকাণ্ডের ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়।

এসময় সেনাবাহিনীসহ সকল শ্রেণীর জনগণ অসন্তষ্ট হয়। তাওফিক পাশার নিজের শাসনতান্ত্রিক অভিজ্ঞতা ছিল না।

তাওফিক পাশা

১৮৭৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিশৃঙ্খল চলতে থাকে। এরপর ব্রিটিশ ও ফরাসি সরকার কর্তৃক দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়। দুই বছরের বেশি সময় মেজর ইভলিন বেরিং, অকল্যান্ড কোলভিন এবং মসিয়ে দা ব্লিংনিরেস কার্যত মিশর শাসন করেছিলেন।

এই সময় জুড়ে মিশরীয় সেনাবাহিনীতে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর না হতে পারায় তাওফিক পাশার সমালোচনা করা হয়। তবে ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে তার আচরণ নিয়ন্ত্রিত হত এবং তিনি ঘটনা নিয়ন্ত্রণে অক্ষম ছিলেন।

অসন্তোষের ফলে আহমেদ উরাবির নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়। উরাবি এসময় সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব লাভ করেছিলেন। ১৮৮২ সালের জুলাই মাসে উরাবির কর্মকাণ্ডের ফলে ব্রিটিশ এডমিরাল স্যার বুকাম্প সিমর ঘোষণা করেন যে উরাবিকে হস্তান্তর না করলে তিনি আলেক্সান্দ্রিয়ার দুর্গে বোমাবর্ষণ করবেন।

গোলাবর্ষণের পূর্বে তাওফিক পাশাকে পরামর্শ দেয়া হয় যাতে তিনি শহর ত্যাগ করেন এবং তার নিজস্ব নৌযান বা বন্দরে থাকা যেকোনো স্টিমারে করে নিরপেক্ষ কোনো শক্তির আশ্রয় নেন। তবে তিনি এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তিনি বলেন, “আমি এখনো খেদিভ, এবং আমি আমার জনগণের বিপদের মুহূর্তে তাদের পাশে থাকব।“ শহর থেকে পাঁচ কিমি দূরে কাসর এল-রামলের প্রাসাদে থাকার ফলে তিনি গোলাবর্ষণের আওতামুক্ত ছিলেন।

বিদ্রোহী সেনারা প্রাসাদ আক্রমণ করার পর তিনি পালিয়ে গিয়ে অন্য একটি প্রাসাদে আশ্রয় নিয়ে সক্ষম হন। এখানে তিনি ব্রিটিশ সুরক্ষা গ্রহণে তিনি সম্মত হন।

তেল এল-কবিরের যুদ্ধের পর তিনি কায়রো ফিরে আসেন। এরপর তিনি ব্রিটেনের চাপের ফলে সংস্কারে সম্মতি দেন এবং ব্রিটিশ বিশেষ কমিশনার লর্ড ডাফরিনের তত্ত্বাবধানে সাংবিধানিক শাসকের পদ গ্রহণ করেন।

১৮৮৩ সালে কলেরা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি আলেক্সান্দ্রিয়া গমন করেন। এসময় তার স্ত্রী তার সাথে ছিলেন। তিনি এখানে হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।

১৮৮৪ সালে স্যার ইভলিন বেরিং কূটনৈতিক এজেন্ট ও কনসাল-জেনারেল হিসেবে মিশর যান। তিনি তাওফিক পাশার কাছে সুদান ত্যাগের দাবি করেন। তাওফিক পাশা অনিচ্ছাসত্ত্বেও এতে রাজি হন।

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

তাওফিক পাশা ১৮৯২ সালের ৭ জানুয়ারি কায়রোর হেলওয়ান প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র দ্বিতীয় আব্বাস হিলমি পাশা শাসনভার লাভ করেন।

সম্মাননা

[সম্পাদনা]
  • উসমানীয় সাম্রাজ্য অর্ডার অফ অনার, ইমতিয়াজ মেডেল, ১৮৬৮
  • উসমানীয় সাম্রাজ্য অর্ডার অফ দ্য উসমান্স, নিশান-ই-উসমানিয়া, ১৮৬৮
  • উসমানীয় সাম্রাজ্য অর্ডার অফ নোবেলিটি, ১৮৬৮
  • সুইডেন গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ ভাসা, ১৮৬৮
  • যুক্তরাজ্য নাইট গ্র্যান্ড কমান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য স্টার অফ ইন্ডিয়া (জিসিএসআই), ১৮৭৫
  • হাওয়াই রাজ্য নাইট গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য রয়েল অর্ডার অফ কালাকাওয়া ১, ১৮৮১[]
  • ইতালির রাজত্ব (১৮৬১–১৯৪৬) গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ সেইন্টস মরিস এন্ড লাজারাস, ১৮৮৬
  • অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ ফ্রাঞ্জ জোসেফ, ১৮৮৬
  • যুক্তরাজ্য নাইট গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য বাথ (জিসিবি), ১৮৮৭
  • নেদারল্যান্ডস গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ নেদারল্যান্ডস লায়ন, ১৮৯০
  • তৃতীয় ফরাসি প্রজাতন্ত্র গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য লিজিওন দা অনার, ১৮৯০
  • সুইডেন নাইট অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য সেরাফিম, ১৮৯১

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. The Royal Tourist—Kalakaua's Letters Home from Tokio to London. Editor: Richard A. Greer. Date: 10 March 1881
  • Public Domain এই নিবন্ধটি একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনেচিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Tewfik Pasha"ব্রিটিশ বিশ্বকোষ26 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 686–687। 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
মুহাম্মদ তাওফিক পাশা
জন্ম: ১৮৯২ মৃত্যু: ১৮৯২
পূর্বসূরী
ইসমাইল পাশা
মিশরসুদানের খেদিভ
১৮৭৯–১৮৯২
উত্তরসূরী
দ্বিতীয় আব্বাস