মুহাম্মাদের সীলমোহর (আরবি: ختم الرسول, প্রতিবর্ণীকৃত: KḪatm ar-Rasūl)[ক] হলো উসমানীয় সুলতানদের দ্বারা তোপকাপি প্রাসাদে সংরক্ষিত পবিত্র ধ্বংসাবশেষসমূহের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন যা মুহাম্মাদের জীবদ্দশায় তার ব্যবহৃত প্রতীকগুলির মধ্যে একটি ছিল। তৎকালীন সময়ে বিদেশী গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পাঠানো বেশ কয়েকটি চিঠিতে মুহাম্মাদ সীলমোহরটি ব্যবহার করেছিলেন।
১৬৭৫ সালে জিন-ব্যাপটিস্ট টাভারনিয়ার বলেছিলো যে, তোপকাপ প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণের স্থানের পাদদেশে একটি কুলুঙ্গিতে আবলুসের একটি ছোট বাক্সে সীলমোহরটি রাখা আছে। সীলটি স্ফটিক দ্বারা আবৃত। ৩"× ৪" আকারের হাতির দাঁতের সীমানা দ্বারা সীলমোহরটি বাঁধানো। এটি সম্প্রতি ১৭ তম শতাব্দীর নথিতে স্ট্যাম্প করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। [১]
সীলটি লাল আয়তক্ষেত্রাকার একটি টুকরো, প্রায় ১ টি সেমি (½ ") দৈর্ঘ্য, الله / محمد رسول ( প্রথম সারিতে আল্লাহ একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং দ্বিতীয় সারিতে মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত রাসুল উল্লেখ আছে )। মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে, মুহাম্মাদের আসল সীলমোহরটি আবু বকর, উমর এবং উসমান উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। কিন্তু উসমানের শাসনামলে সীলমোহরটি মদিনার একটি কূপে হারিয়ে গিয়েছিল। বলা হয় যে উসমান সীলমোহরের একটি প্রতিরূপ তৈরি করেছিলেন এবং পরবর্তীতে এই সিলমোহরটি বাগদাদ (১৫৩৪) থেকে ইস্তাম্বুলে আনা হয়েছিল। [২]
জর্জ ফ্রেডরিক কুনজের মতে, মুহাম্মাদ যখন সম্রাট হেরাক্লিয়াসের কাছে একটি চিঠি পাঠাতে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে বলা হয়েছিল যে তার কাছ থেক প্রেরিত হিসাবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য তার একটি সীলমোহর লাগবে। মুহাম্মাদের কাছে রুপার তৈরি একটি সীলমোহর ছিল। যার সাথে মুহাম্মাদ রাসুলাল্লাহ বা "মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত রাসুল" শব্দটি ছিল। তিনটি শব্দ, তিনটি লাইনে লিখা ছিল। মুহাম্মদ আদেশ দিয়েছিলেন যে সীলমোহরটির কোনও নকল তৈরি করতে হবে না। তার মৃত্যুর পর, আংটিটি উসমানের কাছে আসে। যিনি ভুলবশত আংটিটি আরিসের কূপে ফেলে দেন। কূপটি এত গভীর ছিল যে নীচে খুঁজেও সীলমোহরটি কখনও পাওয়া যায়নি। সেই সময়ে সীলমোহরটির একটি অনুলিপি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু আসল আংটিটি হারিয়ে যাওয়াকে দুর্ভাগ্যের একটি ইঙ্গিত হিসাবে ধরে নেওয়া হয়েছিল। [৩] [৪] [৫] [৬]
মুহাম্মাদের সীলমোহরের একটি ভিন্ন নকশা রয়েছে। যেটি বৃত্তাকার। এটি উসমানীয় যুগের পাণ্ডুলিপির একটি কপি যা মুহাম্মদের চিঠির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। এটি সেই রূপ যা "মোহাম্মদের সীলমোহর" হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
চিঠির সত্যতা এবং সীলমোহর সন্দেহজনক এবং তাদের আবিষ্কারের সাথে সাথেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়েছে। যদিও এই বিষয়ে খুব কম গবেষণা আছে। কিছু পণ্ডিত যেমন নলডেক (১৯০৯) বর্তমানে সংরক্ষিত অনুলিপিটিকে জালিয়াতি বলে মনে করেন এবং (২০০৭) মুকাউকীদের কাছে চিঠির সমগ্র বিবরণটিকে "কোন ঐতিহাসিক মূল্য ছাড়াই" এবং সীলটি নকল বলে মনে করেন। তার মতে বর্তমানে সংরক্ষিত সীলমোহরটির প্যালিওগ্রাফিক্যাল ভিত্তি, লেখার শৈলী অনৈকিক এবং অটোমান তুর্কি বংশের ইঙ্গিত। [৮]
নথিপত্রে সীলমোহর করার জন্য সিগনেট রিং ব্যবহার করা ছাড়াও, মুহাম্মাদ তার চিঠিপত্রের প্রমাণ দেখানোর জন্য অন্যান্য কৌশলও ব্যবহার করতেন। মিশরের সেন্ট ক্যাথরিন মঠের একটি কথিত চিঠিতে, তিনি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, যাকে মুহাম্মদের অষ্টিনামও বলা হয়। এক্ষেত্রে তিনি তার হাতে কালি দিয়ে এবং কাগজে হাতের ছাপ দিয়েছিলেন। চিঠিটিতে বলা হয়েছেঃ "আমি তাদের এমন কিছু থেকে অব্যাহতি দেব যা তাদের বিরক্ত করতে পারে; যে বোঝা অন্যদের দ্বারা আনুগত্যের শপথ হিসাবে দেওয়া হয়। তারা অবশ্যই তাদের আয়ের কিছু দেবে না কিন্তু যা তাদের খুশি করবে - তারা অবশ্যই ক্ষুব্ধ হবে না, বা বিরক্ত হবে না, বা জোর করে বা বাধ্য করবে না। তাদের বিচারকদের পরিবর্তন করা বা তাদের কার্যাবলী সম্পন্ন করতে বাধা দেওয়া উচিত নয়। ভিক্ষুরা তাদের ধর্মীয় অনুশীলনে বিঘ্নিত হওয়া উচিত না, নির্জন মানুষদের তাদের মাতৃভূমিতে বাস করা থেকে বিরত রাখা উচিত না। কাউকে এই খ্রিস্টানদের লুণ্ঠন করার অনুমতি দেওয়া হয় নি, অথবা তাদের কোন গীর্জা, বা উপাসনালয় ধ্বংস করা বা লুণ্ঠন করা, অথবা এই ঘরগুলির মধ্যে থাকা যেকোনো জিনিস নিয়ে ইসলামের ঘরে আনার অনুমতি নেই। আর যে তা থেকে কোন কিছু কেড়ে নেয়, সে আল্লাহর শপথকে ভ্রষ্ট করেছে এবং সত্যিকার অর্থে তার রাসূলের অবাধ্য হয়েছে।" এটি মুহাম্মাদের হাতের প্রতিনিধিত্বকারী ছাপ দিয়ে সিল করা হয়েছে।[৯]