মস্তিষ্ক আবরণী বা meninges (/məˈnɪndʒiːz/,[১][২] একক: meninx (/ˈmiːnɪŋks/ বা /ˈmɛnɪŋks/[৩]), প্রাচীন গ্রিক: μῆνιγξ mēninx "membrane",[৪] বিশেষণ: meningeal /məˈnɪndʒəl/) বলতে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুরজ্জুকে আবৃত করে থাকা সংযোজী কলার আবরণীসমূহকেে বোঝায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে এই আবরণীর তিনটি স্তর থাকে: ডুরা ম্যাটার , অ্যারাকনয়েড ম্যাটার এবং পায়া ম্যাটার । এই মস্তিষ্ক আবরণী এবং সেরিব্রোস্পাইনাল রসের মুখ্য কাজ হল কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সুরক্ষা প্রদান করা।
ড্যুরা ম্যাটার (dura mater) (লাতিন: tough mother) (মেনিংক্স ফাইব্রোসা বা পেকীমেনিংক্স) করোটির হাড়ের কাছে থাকা একটি শক্ত আবরণী। এর একেবারে বাইরের অংশে ইতস্তত লেগে থাকা ফাইব্রোইলাষ্টিক কোষের সমষ্টি। কোষের বাইরে কোলাজেন থাকে না এবং যথেষ্ট খালি স্থান থাকে। বাকী অংশকে দুটি স্তরে ভাগ করা যায়: অধঃঅস্থীয় স্তর (endosteal layer) এবং আবরণীস্তর (meningeal layer)। অধো-অস্থীয় স্তরটি করোটির ভিতরদিকের তলটিতে লেগে থেকে তাকে আবরণ করে রাখে। করোটির ভিতরদিকে থাকা মহারন্ধ্র দিয়ে এটি পার হয় না। কিন্তু করোটির অন্য অনেকগুলি ছিদ্র দিয়ে এটি করোটির বাইরে পর্যন্ত উঠে গিয়ে করোটির বহিঃপৃষ্ঠকে ঢেকে রাখে। অন্যদিকে, আবরণী স্তরটি ঘন আঁশে গঠিত। এটি সম্পূর্ণ মস্তিষ্কটি ঢেকে রাখে এবং মহারন্ধ্র দিয়ে সরকি স্নায়ুরজ্জুর ডুরা ম্যাটার আবরণীরও সৃষ্টি করে।[৫]
ডুরার চারটি ভিতরদিকের ভাঁজ থাকে:
মস্তিষ্ক আবরণীর মধ্যস্তরটি অ্যারাকনয়েড ম্যাটার (arachnoid mater)। দেখতে মাকড়সার জালের মতো হওয়ার জন্য একে এই নাম দেওয়া হয়েছে। এটি একটি কোমল এবং ভেদ্য আবরণ। এই আবরণও আঁশে গঠিত এবং পায়া ম্যাটারের মতো চ্যাপ্টা কোষে আবৃত। অ্যারাকনয়েড ম্যাটার এবং ডুরা ম্যাটারের মধ্যে কিছু ব্যবধান থাকে। এই স্থান পূর্ণ করে রাখা তরল দ্রব্যকে সেরিব্রোস্পাইনাল রস (cerebrospinal fluid) বলে।[৫]
পায়া ম্যাটার (pia mater) (লাতিন: tender mother) একটি অতি পাতলা আবরণ। এটি স্তরটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুরজ্জুর গায়ে ঘনসন্নিবদ্ধভাবে থাকে এবং মস্তিষ্কের সকল ওঠা-নামা (জাইরাস এবং সালকাস) অনুসরণ করে। আঁশযুক্ত কলা দ্বারা গঠিত এই স্তরটিকে বাইরের অংশে চ্যাপ্টা কোষের সমষ্টি ঢেকে রাখে। মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালিকাগুলি পায়া ম্যাটারের মধ্যদিয়ে পার হয় এবং ক্যাপিলারীগুলি মস্তিষ্ককেপুষ্টি যোগান দেয়।
অ্যারাকনয়েড ম্যাটার এবং পায়া ম্যাটারকে কখনো-কখনো একসাথে লেপ্টোমেনিঞ্জেজ (leptomeninges) বলা হয় যার অর্থ পাতলা আবরণী। অ্যারাকনয়েড এবং পায়া মাকড়সার জালের মতো প্রবর্ধকে সংযুক্ত হয়ে থাকে, সেজন্য নামটি পায়া-অ্যারাকনয়েড বা লেপ্টোমেনিঞ্জেজ রাখা হয়েছে।
সাব্অ্যারাকনয়েড ব্যবধান বলতে অ্যারাকনয়েড ম্যাটার এবং পায়া ম্যাটারের মধ্যে থাকা খালি স্থানকে বোঝায়। এই স্থান সেরিব্রোস্পাইনাল রস নামক তরল দ্রব্য পূর্ণ করে রাখে।
সাধারণত ডুরা ম্যাটার মানুষের করোটির (Human skull) সঙ্গে লেগে থাকে। স্নায়ুরজ্জু ডুরা ম্যাটারকে প্রধান হাড় থেকে এপিডুরেল ব্যবধানে পৃথক করে রাখে। অ্যারাকনয়েড ডুরার সঙ্গে লেগে থাকে এবং পায়া ম্যাটার কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কলার সঙ্গে লেগে থাকে। আঘাতে বা রোগে ডুরা এবং অ্যারাকনয়েড পৃথক হয়ে পড়লে সাব্ডুরেল ব্যবধানের সৃষ্টি হয়। পায়া ম্যাটারের নিচে সাব্পায়েল ব্যবধান থাকে যা একে গ্লায়া লিমিটেন্স থেকে পৃথক করে।
মস্তিষ্ক আবরণীতে তিনপ্রকারের রক্তস্রাব (hemorrhage) হতে পারে:[৬]
মস্তিষ্কের আবরণীতে প্রভাব ফেলা অন্য কিছু রোগ হল মেনিঞ্জাইটিস (ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস বা পরপরজীবীর সংক্রমণের ফলে হওয়া আবরণীর প্রদাহ), এবং কর্কট রোগের ফলে হওয়া মেনিঞ্জিওমা (meningioma)।
মাছের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে একটিই আবরণ থাকে (আদিম আবরণী/primitive meninx)। উভচর প্রাণী, সরীসৃপ এবং জলচর প্রানীর ক্ষেত্রে আবরণীর বাইরের দিকে একটি শক্ত স্তর ডুরা ম্যাটার এবং ভিতরদিকে পাতলা দ্বিতীয় আবরণী থাকে (secondary meninx)। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ডুরা ম্যাটার থাকে, সঙ্গে দ্বিতীয় আবরণীটি অ্যারাকনয়েড এবং পায়া ম্যাটারে বিভক্ত হয়ে পড়ে।[৭]