অবস্থান | চেন্নাই, তামিলনাড়ু, ভারত |
---|---|
সৈকত | করমন্ডল, বঙ্গোপসাগর |
ধরণ | শহরকেন্দ্রিক, প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকত |
সীমানা নির্দেশ | ১৮৮৪ |
মোট দৈর্ঘ্য | ১৩ কিমি (৮.১ মা) |
বেড়াবার পথের দৈর্ঘ্য | ৬ কিমি (৩.৭ মা) |
সর্বাধিক প্রস্থ | ৪৩৭ মি (১,৪৩৪ ফু) |
দিক হিসেবে অবস্থান | উত্তর দক্ষিণ |
উল্লেখযোগ্য জায়গা | বাতিঘর, আন্না মেমোরিয়াল, এমজিআর মেমোরিয়াল, নেপিয়ার ব্রিজ |
দায়িত্বে | কর্পোরেশন চেন্নাই |
মেরিনা সমুদ্র সৈকত হল বঙ্গোপসাগর বরাবর তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাই শহরের একটি প্রাকৃতিক ও শহরকেন্দ্রিক সমুদ্র সৈকত। [১] সৈকতটি উত্তরের সেন্ট জর্জ দুর্গ থেকে দক্ষিণে ফোরশোর এস্টেট পর্যন্ত বিস্তৃত, এর মোট দৈর্ঘ্য ৬.০ কিমি (৩.৭ মা)।[২] এটি দেশের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক শহরকেন্দ্রিক সৈকত। [৩][৪][৫] মেরিনা সৈকত মূলত বালুকাময়, মুম্বাইয়ের জুহু সৈকতের মত ছোট ছোট শিলা পাথরে ভরা নয়। সৈকতের গড় প্রস্থ ৩০০ মি (৯৮০ ফু),[৬] এবং সবচেয়ে বিস্তৃত জায়গায় প্রস্থ ৪৩৭ মি (১,৪৩৪ ফু)। এখানে জলের অন্তর্নিহিত স্রোত খুব অশান্ত হওয়ার কারণে মেরিনা সৈকতে স্নান এবং সাঁতার কাটা বিপদজনক, এবং আইনত নিষিদ্ধ। এটি দেশের অন্যতম জনবহুল সমুদ্র সৈকত এবং সপ্তাহের দিনগুলিতে প্রতিদিন প্রায় ৩০,০০০ পর্যটক এখানে আসে।[৭] সপ্তাহান্তে এবং অন্যান্য ছুটির দিনে এই সংখ্যাটি হয়ে যায় ৫০,০০০।[৮][৯][১০] গ্রীষ্মের মাসগুলিতে, প্রতিদিন প্রায় ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ লোক সৈকতে যায়।[১১] এই সমুুুদ্র সৈকতটি ভারতের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত।[১২]
ষোড়শ শতাব্দীর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলের অদূরের জমি জলের নিচে চলে যাচ্ছিল। এরপর সমুদ্র যখন পিছিয়ে গেল, তখন বেশ কয়েকটি বালির শিরা এবং নোনা জলের উপহ্রদ জেগে উঠেছিল। সেন্ট জর্জ দুর্গের দক্ষিণ দিকে, এই জাতীয় একটি বালির শিরা কৌমের মুখ থেকে প্রেসিডেন্সি কলেজের বর্তমান স্থান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। শিরার পিছনের দিকে একটি বিরাট নিচু জমি ছিল, যেখানে পরে কলেজটি গড়ে উঠেছিল। আর বালির শিরার ওপর বর্তমানের সৈকতটি গড়ে উঠেছে।[১৩] ১৬৪০ সালে সেন্ট জর্জ দুর্গ নির্মাণের সময়, সমুদ্র দুর্গের খুব কাছে ছিল। দুর্গের কাছে বন্দর নির্মাণের ফলে দুর্গের দক্ষিণে এবং বন্দরে এবং সমুদ্রে বালির বৃদ্ধি ঘটে, যা দুর্গের ঢালু অংশকে দুর্গ থেকে প্রায় ২.৫ কিমি দূরে সরিয়ে ফেলে। এর ফলে স্থল এবং সমুদ্রের মধ্যে প্রশস্ত সৈকত তৈরি হয়।[১৩]
মাদ্রাজ বন্দর তৈরি হওয়ার আগে, সৈকত বলতে ছিল শুধু কাদার একটি ফালি, সাথে ছিল শুধু চিড়িং মাছ। ১৮৮১ সালে বন্দরটি তৈরি না হওয়া অবধি সমুদ্র সৈকতটি বর্তমান রাস্তা পর্যন্ত ছিল। ১৮৮১ থেকে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত মাদ্রাজের গভর্নর মাউন্টস্টুয়ার্ট এলফিনস্টোন গ্রান্ট ডাফ, ১৮৭০ এর দশকের শেষদিকে, শহরে আগের সফরে এসে, সৈকত দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।[১৪][১৫] তিনি এখানে পায়ে চলা পথ করার পরিকল্পনা করেন। ১৮৮৪ সালে সৈকত বরাবর নরম বালির সাহায্যে ব্যাপক পরিমার্জন ও স্তর তৈরি করে পায়ে চলা পথ নির্মিত হয়েছিল। সেই বছরেই তিনি এটিকে মাদ্রাজ মেরিনা নাম দিয়েছিলেন।[১৪][১৫] উনিশ শতকের গোড়ার দিকে, সৈকতকে সামনে রেখে বেশ কয়েকটি সরকারি ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল।[১৩]
বন্দরটি তৈরি হওয়ার পর থেকে বন্দরের দক্ষিণ অঞ্চলটি উল্লেখযোগ্যভাবে বর্ধিত হয়ে বর্তমান সময়ের সৈকত গঠিত হয়েছে। মূলত বন্দরটি নির্মাণের জন্য রাখা তরঙ্গ ভঙ্গের উপস্থিতির সত্ত্বেও উত্তরাঞ্চলের উপকূলে মারাত্মক ভূমিক্ষয় হয়েছে।[১৬] অবশেষে, উত্তর-প্রবহমান স্রোত সৈকতটিকে আরও প্রশস্ত করেছে। সমুদ্র সৈকতটি বন্দরের তরঙ্গরোধ দ্বারা ভেসে যাওয়া বালি আটকে ফেলার ফলে গঠন করা গিয়েছিল।[১৭][১৮] সৈকতের বিস্তৃতি অগ্রগতির কারণে প্রতি বছরে ৪০ বর্গ মিটার করে বাড়ছে।[৩]
১৮৮৪ সালে পায়ে চলা পথ তৈরির পরে, সেই পথ বরাবর বেশ কয়েকটি সংযোজন হয়েছিল। ১৯০৯ সালে, দেশের প্রথম অ্যাকোয়ারিয়ামটি এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
একাধিক পাথরের মূর্তি দিয়ে এই সমুদ্র-সৈকত পার্শ্ববর্তী ক্ষেত্র অলঙ্কৃত যা এই সমুদ্র-সৈকতের একটি বিখ্যাত বৈশিষ্ট্য। এখানে রয়েছে মহাত্মা গান্ধী, তিরুভল্লুবরের মত ভারতীয় এবং স্থানীয় কিংবদন্তির মুর্তি। তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম জি রামচন্দ্রন এবং আন্নার স্মৃতিচিহ্নও এই সমুদ্র-সৈকতে বর্তমান।
মেরিনা সমুদ্র সৈকত এর অকৃত্রিম সৌন্দর্য, প্রফুল্ল পরিবেশ এবং সমৃদ্ধ ইকোসিস্টেমের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে এই সমুদ্র সৈকত এবং জল দূষিত হতে শুরু করে। প্লাস্টিকের থলি, মানব বর্জ্য এবং অন্যান্য দূষক সমুদ্র সৈকতের অনেক অংশকে অব্যবহারযোগ্যে পরিণত করে। সাম্প্রতিককালে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেরিনা পরিষ্কার এবং ইকোসিস্টেম সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে সমুদ্র সৈকতের নীলাঙ্গাড়াই বিভাগে যেখানে ওলিভ রিডলি কচ্ছপ বাসা তৈরি করে। এসকল সমস্যা সত্ত্বেও মেরিনা পরিদর্শন চেন্নাইয়ে আসা যেকোনও পর্যটকের জন্য একটি অবশ্য দ্রষ্টব্য স্থান।
২০০৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর, একটি ভূকম্পনের দরুন উদ্ভূত সুনামি মেরিনা সমুদ্র সৈকতে মৎস্যজীবি সম্প্রদায়সহ শতাধিক সাধারণ লোকের প্রাণহানি ঘটায়।