মেলাঘর | |
---|---|
পৌরসভা | |
![]() মেলাঘর পৌরসভা | |
ত্রিপুরায় মেলাঘর-এর অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°২৯′ উত্তর ৯১°২০′ পূর্ব / ২৩.৪৯° উত্তর ৯১.৩৩° পূর্ব | |
দেশ | ![]() |
অঞ্চল | উত্তর-পূর্ব ভারত |
রাজ্য | ত্রিপুরা |
জেলা | সিপাহীজলা |
মহকুমা | সোনামুড়া |
উচ্চতা | ১১ মিটার (৩৬ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১৭) | |
• মোট | ২০,৩০০ |
ভাষা | |
• আঞ্চলিক ভাষা | বাংলা, ইংরেজি, ককবরক |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
পিন | ৭৯৯১১৫ |
মেলাঘর (ইংরেজি: Melaghar) হচ্ছে ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহিজলা জেলার অন্তর্গত একটি ছোট্ট শহর ও পৌর এলাকা। এটি রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (প্রায় ৩০ মাইল) দূরে অবস্থিত। এটি সোনামুড়া শহর-এর প্রতিবেশী এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) দূরে অবস্থিত । এই অঞ্চলে একটি মহকুমা হাসপাতাল, থানা, কয়েকটি বড় উচ্চ মাধ্যমিক (ইংরেজি, বাংলা) এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোটরস্ট্যান্ড, খেলার মাঠ, পেট্রোল-পাম্প, এবং একটি টাউন হল রয়েছে। রাজা বীরবিক্রম মানিক বাহাদুর এর স্মৃতি বিজড়িত বিখ্যাত প্রাসাদ নীরমহল এই অঞ্চলের রুদ্রসাগর হ্রদ এর মাঝখানে অবস্থিত [১]।
মেলাঘর ১১ মিটার (৩৬ ফুট) সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কম উচ্চতায় অবস্থিত। মেলাঘরে বেশিরভাগ বছরই একটি শান্ত জলবায়ু থাকে। তবে গ্রীষ্মকালীন সময় অতিরিক্ত গরম, শুকনো, আর্দ্র এবং বৃষ্টিপাত এবং বজ্রঝড়ের সাথে ছেদ করতে পারে। শীতকাল সাধারণত নভেম্বরের শেষের দিকে শুরু হয় এবং ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী হয়, যেখানে তাপমাত্রা খুব নিম্ন অবস্থাতে পৌঁছতে পারে। মেলাঘরের বর্ষা মরসুম এপ্রিল মাসে শুরু হয়, বৈশাখ মাসে। বর্ষা মৌসুমে, স্থানীয় নদীগুলির দ্বারা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং বন্যার কারণে মেলাঘর ঘন ঘন জলে নিমজ্জিত হয়, ১৯৯৩ এবং ২০০৭ সালের ত্রিপুরার বন্যা বিশেষভাবে স্মরণীয়।
মেলাঘর-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩১ (৮৮) |
৩৬ (৯৭) |
৩১ (৮৮) |
৪৪ (১১১) |
৪৩ (১০৯) |
৪২ (১০৮) |
৩৮ (১০০) |
৩৭ (৯৯) |
৩৭ (৯৯) |
৩৬ (৯৭) |
৩৪ (৯৩) |
২৯ (৮৪) |
৪৪ (১১১) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৪ (৭৫) |
২৮ (৮২) |
৩৩ (৯১) |
৩৫ (৯৫) |
৩৪ (৯৩) |
৩২ (৯০) |
৩০ (৮৬) |
৩০ (৮৬) |
৩০ (৮৬) |
৩০ (৮৬) |
২৭ (৮১) |
২৫ (৭৭) |
৩০ (৮৬) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১১ (৫২) |
১৩ (৫৫) |
১৮ (৬৪) |
২৩ (৭৩) |
২৬ (৭৯) |
২৬ (৭৯) |
২৬ (৭৯) |
২৬ (৭৯) |
২৫ (৭৭) |
২২ (৭২) |
১৮ (৬৪) |
১৪ (৫৭) |
২১ (৭০) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ৪ (৩৯) |
৬ (৪৩) |
১০ (৫০) |
১৫ (৫৯) |
১৯ (৬৬) |
২৪ (৭৫) |
২৪ (৭৫) |
২৩ (৭৩) |
১৯ (৬৬) |
১৫ (৫৯) |
৯ (৪৮) |
২ (৩৬) |
২ (৩৬) |
অধঃক্ষেপণের গড় সেমি (ইঞ্চি) | ০.৩ (০.১) |
০.৮ (০.৩) |
২.৮ (১.১) |
৯.৩ (৩.৭) |
২১.৭ (৮.৫) |
৩৮.৭ (১৫.২) |
৪৪.০ (১৭.৩) |
৩৮.৪ (১৫.১) |
২৬.৭ (১০.৫) |
১৩.৩ (৫.২) |
২.৭ (১.১) |
০.৩ (০.১) |
১৯৯ (৭৮) |
উৎস: foreca.com[২] |
২০১৭ এর এপ্রিল পর্যন্ত মেলাঘরের মোট জনসংখ্যা ২০,৩০০। .[৩] পুরুষ ৫১% এবং মহিলা ৪৯%।
এখানে গড় সাক্ষরতার হার ৯১%, যা ভারতের গড় সাক্ষরতার হারের (৭৪.০৪%) চেয়ে বেশি। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৯৩%, এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৮৮%।
লিঙ্গ অনুপাত ১০০০ পুরুষের মধ্যে ৯৮৪ জন মহিলা ।[৪] এই অঞ্চলের মোট লোকসংখ্যার ১১% এর বয়স ৬-এর নিচে। সিংহভাগ লোকই বাংলায় বলে, তার মধ্যে বাইরের অনেক জাতিও আছে যারা হিন্দি ও ভোজপুরী ভাষায় কথা বলে।
মেলাঘর সোনামুড়া মহকুমার অন্তরগত নলছর এবং মোহনভোগ ব্লকের মধ্যে গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত। স্থানাঙ্ক হচ্ছে ২৩.৪৯° উত্তর এবং ৯১.৩৩° পূর্ব ।
২২ নং সোনামুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মেলাঘর নগরটি ত্রিপুরা পশ্চিম (লোকসভা কেন্দ্র) এর একটি অংশ। [৫]
ক্রিকেট হচ্ছে মেলাঘরের সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা। এখানে অনেকগুলি ছোট ছোট মাঠ রয়েছে, তবে মেলাঘর দ্বাদশ স্কুলের পিছনে অবস্থিত একমাত্র বড় মাঠ যা স্থানীয়ভাবে 'কাজল ময়দান' নামে পরিচিত। ঘরোয়া ম্যাচ অনেকবার সেখানে খেলা হয়েছে। এইভাবে মাঠটিকে স্টেডিয়াম হিসাবে পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে।
মেলাঘরটির প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা হল আইআরএন রোড ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম। জাতীয় সড়ক ৮ এর একটি অংশ (রাজ্য সড়ক ৬) এই নগরীর উপর দিয়ে গেছে। আর একটি অংশ বিশালগড় থেকে শুরু হয়ে সোনামুড়া মোটর স্ট্যান্ডে এসে শেষ হয়েছে। এটি মেলাঘরের মূল সড়ক, এটি 'মেলাঘর-সোনামুড়া' প্রধান সড়ক (এসএইচ-6) নামেও পরিচিত। এখানে একটি ছোট্ট মোটরস্ট্যান্ড আছে এবং এটি ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে । এখান থেকে দৈনন্দিন কয়েকশ লোক অন্যত্র জায়গায় জাতায়াত করে। মেলাঘর রাজধানী আগরতলার সাথে ভালভাবে সংযুক্ত ( নলছর , বিশ্রামগঞ্জ এবং বিশালগড় এর মাধ্যমে) এবং প্রধান শহরগুলির মধ্যে একটি উদয়পুর এর সাথে ( কাকড়াবন এবং পালাটানা এর মাধ্যমে)। নতুন বাস সার্ভিস সোনামুড়া - আগরতলা এবং সোনামুড়া - উদয়পুর পাওয়া যাচ্ছে। কাছাকাছি কোথাও যাবার জন্য স্থানীয় অটোরিক্সা পাওয়া যায়। নিকটতম বিমানবন্দর হচ্ছে আগরতলা বিমানবন্দর, এটি প্রায় ৬০কিমি দুরত্বে অবস্থিত। নিকটতম ট্রেন স্টেশন হচ্ছে বিশ্রামগঞ্জ স্টেশন, প্রায় ১৬ কিমি দুরে।
মেলাঘর দেখার জন্য অন্যতম সেরা সময়টি হল বিখ্যাত দুর্গা পূজা এর সময়, যখন রাস্তাগুলি প্রাণবন্ত হয় এবং পুরো গ্রামের লোকেরা আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেবী দুর্গা এর বহু মূর্তি দেখার জন্য গ্রামের কেন্দ্রে ভিড় করে। দুর্গাপূজা একটি বার্ষিক হিন্দু উৎসব যা হিন্দু দেবী দুর্গা উপাসনা উদ্যাপন করে। এটি মহালয়া, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং বিজোয়া দশমী হিসাবে ছয় দিন হিসাবে পালিত হয়েছে।
সমস্ত রাজ্যে প্যান্ডেল পরিচালনায় মেলাঘর খুব একটা পিছিয়ে নেই।
প্রধান উৎসবগুলির মধ্যে একটি হল কালী পূজা, যা অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে ঘটে এবং সেখানে শিশু থেকে প্রবীণরা সবাই উপস্থিত থাকেন। মেলাঘর এই পূজার সময়ে উজ্জ্বল আলোকসজ্জার জন্য পরিচিত, যেখানে পুরো গ্রাম আলোকিত হয়।
মেলাঘরের রথযাত্রা ত্রিপুরা এর অন্যতম প্রাচীন ও বৃহত্তম মেলা। প্রতি বছর জুন-জুলাই(বাংলা: আষাঢ় ) মাসে, এটি জগন্নাথ বাড়ি মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার মানুষের ভিড় এই মেলার জনপ্রিয়তা কয়েকগুন বাড়িয়ে তোলে।
নীরমহল হচ্ছে মেলাঘরের প্রধান পর্যটন স্থান।[৬] রাজস্থান এর জলমহল এর পরে এবং পূর্ব ভারত এর মধ্যে একমাত্র প্রাকৃতিক জল প্রাসাদ এটি। রাজবাড়িটি মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর দেববর্মণ-এর দ্বারা নির্মিত হয়েছিল (১৯২৬-১৯৩০)। এটি রুদ্রসাগর হ্রদ এর মাঝখানে একটি প্রাসাদ। এটি মূল এলাকা থেকে প্রায় ২কিমি দুরে অবস্থিত। রাজঘাট ফেরিঘাট থেকে মূল প্রাসাদে ভ্রমণের জন্য নৌকা চালানোর ব্যবস্থা রয়েছে। 'সাগরমহল' হচ্ছে পর্যটকদের জন্য একটি লজ হোটেল, যারা সেখানে একটি রাত কাটাতে চান। প্রতি বছর শত শত মানুষ শীতের সময়ে পিকনিক করতে আসেন। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অনেকগুলি বিদেশী পাখি এই হ্রদে আসে।
আগরতলা এবং কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রতিদিনের সংবাদপত্রগুলি প্রতিদিন সকালে এই অঞ্চলে পৌঁছায়। প্রতিদিনের জনপ্রিয় কাগজপত্রগুলি হল দৈনিক সংবাদ, স্যন্দন পত্রিকা, প্রতিবাদী কলম, দেইলি দেশের কথা 'ইত্যাদি) উপরে ছাড়াও জাতীয় টেলিগ্রাফ (কলকাতা , আনন্দবাজার পত্রিকা , বর্তমান , টাইমস অব ইন্ডিয়া বা দ্য স্টেটসম্যানও উপলব্ধ।
গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কগুলি যেমন এয়ারটেল, বিএসএনএল, রিলায়েন্স জিও, ভোডাফোন আইডিয়া এবং ব্রডব্যান্ড পরিষেবাগুলির মধ্যে এখানে বিএসএনএল ও জিও ফাইবার উপলব্ধ রয়েছে।
নেটওয়ার্ক | ২জি | ৩জি | ৪জি | ৫জি |
---|---|---|---|---|
জিও | — | — | হ্যাঁ | হ্যাঁ |
বিএসএনএল | হ্যাঁ | হ্যাঁ | এখনো না[৭] | —[৮] |
ভোডাফোন আইডিয়া | হ্যাঁ | হ্যাঁ[৯] | না | — |
এয়ারটেল | হ্যাঁ | সক্রিয় নয়[১০] | হ্যাঁ | হ্যাঁ |
মেলাঘর থেকে কিছু কাছাকাছি শহরের দূরত্ব।
ক্রমিক. | শহর | দুরত্ব (কিমি) |
---|---|---|
১. | সোনামুড়া | ৯ |
২. | কাকরাবন | ১৩ |
৩. | বিশ্রামগঞ্জ | ১৫ |
৪. | উদয়পুর | ২২ |
৫. | বিশালগড় | ২৮ |
৬. | আগরতলা | ৪৭ |
৭. | বেলোনিয়া | ৫৪ |
৮. | তেলিয়ামুড়া | ৭১ |
৯. | খোয়াই | ১০০ |
১০. | ধর্মনগর | ২০০ |