আক্কাদীয় নলাকার সিলমোহর, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ অব্দ, সিলমোহরে ইনান্না, উতু, এনকি ও উসিমুদের চিত্র।[১]বর্তমান রাজনৈতিক মানচিত্রের প্রেক্ষাপটে মেসোপটেমিয়া ও সেই সভ্যতার প্রধান শহরগুলির অবস্থান।
মেসোপটেমীয় দেবদেবীগণ ছিলেন প্রায় স্বতন্ত্রভাবেই নরত্বারোপিত দেবদেবী।[২] মানুষ বিশ্বাস করত, তারা ছিলেন অসাধারণ শক্তিমত্তার অধিকারী[২] এবং মানুষের কল্পনায় তারা ছিলেন অতিকায় সব সত্ত্বা।[২] এই দেবদেবীদের বৈশিষ্ট্য মেলাম নামে এক দ্ব্যর্থক পরিধেয় পদার্থ, যা "তাঁদের ঢেকে রাখত ভীতিপ্রদ মাহাত্ম্যে"।[৩]মেলাম যোদ্ধা, রাজা, অতিকায় দৈত্য, এমনকি অপদেবতাদেরও পরিধেয় হতে পারত।[৪] এক দেবতার মেলাম এক মানুষের উপর দেখার পরিণতিটিকে বলা হয় নি। এই শব্দটি "মাংসের উপর শারীরিক উদ্দীপন" বোঝাতে ব্যবহার করা হত।[৫]সুমেরীয় ও আক্কাদীয় উভয় ভাষাতেই এমন অনেক শব্দ আছে, যেগুলি নি শব্দটির সংবেদন সৃষ্টি করে।[৪] এই শব্দগুলির অন্যতম ছিল পুলুহ্তু শব্দটি, যার অর্থ ভয়।[৫] এই দেবতাদের প্রতিকৃতিতে প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তাদের দেখা গিয়েছে মাথায় শিং-যুক্ত টুপি পরিহিত অবস্থায়।[৬][৭] এই টুপিতে ষাঁড়ের সাত জোড়া সিং একটি পর একটি স্থাপিত হত।[৮] কোনও কোনও ক্ষেত্রে এঁদের সোনা ও রুপোর অলংকার সেলাই করা পোশাক পরিহিত অবস্থাতেও দেখা যায়।[৭]
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার অধিবাসীরা বিশ্বাস করত যে, তাদের দেবদেবীরা বাস করেন স্বর্গে।[৯] কিন্তু একজন দেবতার মূর্তিকে তারা স্বয়ং সেই দেবতারই শারীরিক প্রতিমূর্তি মনে করত।[৯][১০] প্রকৃত অর্থে, কাল্ট মূর্তিগুলির নিয়মিত যত্ন নেওয়া হত ও এগুলির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হত।[১১][৯] পুরোহিতদের একটি দলকে নিযুক্ত করা হয়েছিল সেই সব মূর্তির তদারকির জন্য।[১২] তারা মূর্তিগুলিকে পোশাক পরাতেন[১০] এবং সেগুলির সামনে ভোজের আয়োজন করতেন, যাতে দেবতারা "খেতে" পারেন।[১১][৯] একজন দেবতার মন্দিরকে তারা আক্ষরিক অর্থেই সেই দেবতার বাসভবন বলে বিশ্বাস করতেন।[১৩] এই দেবদেবীদের নৌকা বা পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের বজরা ছিল। এগুলি সাধারণত মন্দিরের ভিতরেই রক্ষিত হত[১৪] এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে জলপথে সেই দেবদেবীদের কাল্ট মূর্তিগুলি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হত।[১৪] দেবদেবীদের নিজস্ব রথও ছিল। এগুলি স্থলপথে কাল্ট মূর্তিগুলি পরিবহনের কাজে লাগত।[১৫] কখনও কখনও দেবতার কাল্ট মূর্তিকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে আসা হত, যাতে সেই দেবতা যুদ্ধের সূচনাটি দেখতে পান।[১৫] মানুষ বিশ্বাস করত, মেসোপটেমীয় দেবমণ্ডলীর প্রধান দেবতারা "দেবতাদের সভা"য় অংশগ্রহণ করতেন[৬] এবং সেই সভায় তাঁরা যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন।[৬] এই সভাটিকে উরের তৃতীয় রাজবংশের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২১১২ অব্দ – আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০০৪ অব্দ) সমসাময়িক আধা-গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থার এক দিব্য প্রতিরূপ মনে করা হত।[৬]
ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে মেসোপটেমীয় দেবমণ্ডলীর বিবর্তন ঘটেছিল।[১৬] সাধারণভাবে মেসোপটেমীয় ধর্মের ইতিহাসকে চার ভাগে ভাগ করা হয়।[১৬] প্রথম পর্যায়ের সূত্রপাত ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দে। সেই যুগে দেবতা-সংক্রান্ত ধারণাটির ভিত্তি ছিল মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদাগুলি।[১৭] খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্যায়ে দেবতাদের ক্রমাধিকারতন্ত্রটি আরও বেশি সুগঠিত হয়ে ওঠে[১৭] এবং দেবত্বারোপিত রাজারা দেবমণ্ডলীতে প্রবেশ করতে শুরু করলেন।[১৭] তৃতীয় পর্যায়টির সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দ। সেই যুগে দেবতারা পূজিত হতেন ব্যক্তিমানুষের ইষ্টদেবতা রূপে এবং দেবতাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটি সর্বত্র প্রসার লাভ করে।[১৭] খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে চতুর্থ তথা সর্বশেষ পর্যায়ে দেবতারা নির্দিষ্ট মানবীয় সাম্রাজ্য ও শাসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন।[১৮] কিউনিফর্ম লিপিগুলি থেকে তিন হাজারেরও বেশি মেসোপটেমীয় দেবদেবীর নাম উদ্ধার করা হয়েছে।[১৯][১৬] এগুলির অনেকগুলিই পাওয়া যায় প্রাচীন মেসোপটেমীয় লিপিকারদের দ্বারা সংকলিত দেবতাদের নামের দীর্ঘ তালিকাগুলি পাওয়া যায়।[১৯][২০] এই তালিকাগুলির মধ্যে দীর্ঘতম তালিকাটির শিরোনাম আন = আনতুম। এটি ব্যাবিলনীয় পণ্ডিতদের রচনা। এই তালিকায় দুই হাজারেরও বেশি সুমেরীয় দেবদেবী ও তাঁদের অনুরূপ সেমিটীয় দেবদেবীদের নাম উল্লিখিত হয়েছে।[১৯][১৭]
গুডিয়ার রাজত্বকাল (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২১৪৪-২১২৪ অব্দ) ও উরের তৃতীয় রাজবংশের সমসাময়িক প্রথম প্রত্যায়িত দেবমণ্ডলীর নাম আনুননাকি।[২১][২২] প্রথম দিকে আনুননাকিরা ছিলেন প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী স্বর্গীয় দেবদেবী।[২৩][২১] মানুষ বিশ্বাস করত, তাঁরা "মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারণ করতেন"।[২২] পরবর্তীকালে তারা কাথোনিক পাতাল দেবতা হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন।[২৩] প্রধানত সাহিত্যিক উপাদানগুলিতেই তাদের উল্লেখ পাওয়া যায়।[২২] প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে তাদের কোনও কাল্টের অস্তিত্বের প্রমাণ খুব কম ক্ষেত্রেও পাওয়া গিয়েছে।[২৪][২২] এর কারণ সম্ভবত আনুননাকি মণ্ডলীর প্রত্যেক সদস্য বা সদস্যার নিজস্ব স্বতন্ত্র একটি করে কাল্ট ছিল এবং সেই কাল্টগুলি ছিল পরস্পরের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ধরনের।[২১] অনুরূপভাবে এমন কোনও উপস্থাপনাও আবিষ্কৃত হয়নি, যেখানে আনুননাকিকে একটি পৃথক গোষ্ঠী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[২১] অবশ্য কয়েকটি প্রতিকৃতিতে এই মণ্ডলীর কোনও সদস্য বা সদস্যাকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিতও করা গিয়েছে।[২১] আরেকটি দেবমণ্ডলীর নাম ছিল ইজিজি। এই দেবমণ্ডলী প্রথম প্রত্যায়িত হয়েছিল আদি ব্যাবিলনীয় যুগে (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৮৩০ অব্দ – আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩১ অব্দ)।[২৫]ইজিজি নামটি দেখে মনে হয় যে, প্রথমে সেই নামটি দশ মহৎ দেবতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল।[২৫] কিন্তু পরবর্তীকালে এই নামটি দ্বারা সম্মিলিতভাবে সকল দেবতাকেই বোঝানো হত।[২৫] কোনও কোনও ক্ষেত্রে আনুননাকি ও ইজিজি নাম দু’টি প্রায় সমার্থক অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।[২১][২২]
Armstrong, James A. (১৯৯৬), "Uruk", Fagan, Brian M.; Beck, Charlotte; Michaels, George; Scarre, Chris; Silberman, Neil Asher, The Oxford Companion to Archaeology, Oxford, England: Oxford University Press, পৃষ্ঠা 735–736, আইএসবিএন978-0-19-507618-9উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Black, Jeremy; Green, Anthony (১৯৯২), Gods, Demons and Symbols of Ancient Mesopotamia: An Illustrated Dictionary, The British Museum Press, আইএসবিএন978-0-7141-1705-8উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Brisch, Nicole (২০১৬), "Anunna (Anunnaku, Anunnaki) (a group of gods)", Ancient Mesopotamian Gods and Goddesses, University of Pennsylvania Museum, সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১৮উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Budin, Stephanie L. (২০০৪), "A Reconsideration of the Aphrodite-Ashtart Syncretism", Numen, 51 (2): 95–145উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Falkenstein, A. (১৯৬৫), "Die Anunna in der sumerischen Überlieferung", Assyriological Studies, Chicago, Illinois: The Oriental Institute of the University of Chicago (16): 127–140উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Hallo, William W. (১৯৯৬), "Review: Enki and the Theology of Eridu", Journal of the American Oriental Society, 116 (2), পৃষ্ঠা 231–234, ডিওআই:10.2307/605698উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Harris, Rivkah (ফেব্রুয়ারি ১৯৯১), "Inanna-Ishtar as Paradox and a Coincidence of Opposites", History of Religions, 30 (3): 261–278, জেস্টোর1062957, ডিওআই:10.1086/463228উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
James, Edwin Oliver (১৯৬৩), The Worship of the Sky-god: A Comparative Study in Semitic and Indo-European Religion, London, England: Athlone Press, এএসআইএনB000PD61S2উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Kasak, Enn; Veede, Raul (২০০১), Kõiva, Mare; Kuperjanov, Andres, সম্পাদকগণ, "Understanding Planets in Ancient Mesopotamia"(পিডিএফ), Folklore: Electronic Journal of Folklore, Tartu, Estonia: Folk Belief and Media Group of ELM, 16: 7–33, আইএসএসএন1406-0957উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Katz, D. (২০০৩), The Image of the Underworld in Sumerian Sources, Bethesda, Maryland: CDL Pressউদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Kramer, Samuel Noah (১৯৮৩), "The Sumerian Deluge Myth: Reviewed and Revised", Anatolian Studies, Ankara, Turkey: British Institute at Ankara, 33: 115–121, জেস্টোর3642699, ডিওআই:10.2307/3642699উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Lutwyche, Jayne (২২ জানুয়ারি ২০১৩), "Why are there seven days in a week?", bbc.co.uk, Religion & Ethics, The British Broadcasting Company, ১ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৯উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Mark, Joshua J. (২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭), "Ninurta", Ancient History Encyclopediaউদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
McCall, Henrietta (১৯৯০), Mesopotamian Myths, The Legendary Past, Austin, Texas: University of Texas Press, আইএসবিএন978-0-292-75130-9উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Pryke, Louise M. (২০১৭), Ishtar, New York City, New York and London, England: Routledge, আইএসবিএন978-1-138-86073-5উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Richter, T. (২০০৪), "Untersuchenungen zu den lokalen Panthea Süd- und Mittelbabyloniens in altbabylonidcher Zeit", Alter Orient und Altes Testament, Münster, Germany: Ugarit-Verlag, 2 (257)উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Robson, Eleanor (২০১৫), "Ninurta, god of victory", Nimrud: Materialities of Assyrian Knowledge Production, Open Richly Annotated Cuneiform Corpus, UK Higher Education Academyউদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Rogers, John H. (১৯৯৮), "Origins of the Ancient Astronomical Constellations: I: The Mesopotamian Traditions", Journal of the British Astronomical Association, London, England: The British Astronomical Association, 108 (1): 9–28, বিবকোড:1998JBAA..108....9Rউদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Simons, Frank (২০১৭), Hazenbos, Joost; Mittermayer; Novák, Mirko; Suter, Claudia E., সম্পাদকগণ, "A New Join to the Hurro-Akkadian Version of the Weidner God List from Emar (Msk 74.108a + Msk 74.158k)", Altorientalische Forschungen, Berlin, Germany: Walter de Gruyter, 44 (1): 82–100, আইএসএসএন0232-8461, ডিওআই:10.1515/aofo-2017-0009উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Teixidor, Javier (১৯৭৯), Vermaseren, M. J., সম্পাদক, The Pantheon of Palmyra, Études Préliminaires aux Religiones Orientales Dans l'Empire Romain (ইংরেজি ভাষায়), Leiden, The Netherlands: E. J. Brill, আইএসবিএন978-90-04-05987-0উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)