মেহেদি Lawsonia inermis | |
---|---|
![]() | |
Lawsonia inermis | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Plantae |
বিভাগ: | Magnoliophyta |
শ্রেণী: | Magnoliopsida |
বর্গ: | Myrtales |
পরিবার: | Lythraceae |
গণ: | Lawsonia |
প্রজাতি: | L. inermis |
দ্বিপদী নাম | |
Lawsonia inermis L. |
মেহেদি (Lawsonia inermis, মেহেদী, মেহেন্দী, মেন্দি। ইংরেজিতে হেনা, যা আরবি হিন্না حِنَّاء থেকে এসেছে [১]) এক ধরনের সপুষ্পক উদ্ভিদ, যার পাতা প্রাচীনকাল থেকে ত্বক, চুল, নখ, পশুর চামড়া ও পশম রঙিন করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদের পাতার সাথে অন্যান্য দ্রব্য মিশিয়ে আধা-কৃত্রিম পদার্থ তৈরি করা হয়, সেটাও মেহেদি নামেই পরিচিত। মেহেদির নানা প্রকার ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে ।
মেহেদি একটি লম্বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, যা সাধারণত ১.৮ থেকে ৭.৬ মিটার (৬ থেকে ২৫ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়। এটি একটি বহু শাখাযুক্ত উদ্ভিদ। কচি সময় এর কাণ্ড গুলো বেশ নমনীয় থাকলেও ধীরে ধীরে বেশ শক্ত পোক্ত এবং অভঙ্গুর হয়ে উঠে। কাণ্ডে পাতা একে অপরের বিপরীতে বৃদ্ধি পায়। তারা অবৃন্তক , উপ - বৃত্তাকার এবং ভল্লাকার ( দীর্ঘ এবং মাঝখানে ব্যাপকতর; গড় মাত্রা ১.৫ - ৫.০ সেমি X ০.৫ - ২ সেমি বা এক্স ০.২ - ০.৮ মধ্যে ০.৬ - ২ হয়) হয় , এবং এতে শান দেওয়া ( দীর্ঘ সরুকারী বিন্দু), এবং পৃষ্ঠে পৃষ্ঠীয় বিষণ্ন শিরা আছে ।
দীর্ঘজীবী মেহেদি উদ্ভিদে ফুল ফুটতেও দেখা যায় আবার এই ফুল থেকে ফলও উৎপন্ন হয়। ফুলের চারটি সেপাল এবং একটি ২ মিমি (০.০৭৯০ ইঞ্চি) ক্যালিক্স টিউব, ৩ মিমি (০.১২ ইঞ্চি) স্প্রেড লোব থাকে। এর পাপড়ি ডিম্বাকৃতি , সাদা বা লাল ক্যালিক্স টিউবের প্রান্তে জোড়া পুংকেশর থাকে। ডিম্বাশয় চার-কোষবিশিষ্ট ৫ মিমি (০.২০ মধ্যে) দীর্ঘ এবং খাড়া হয়। হেনা ফল ছোট, বাদামী ক্যাপসুল প্রকৃতির, ৪ –৮ মিমি (০.১৬ – ০.৩১ ইঞ্চি) ব্যাস বিশিষ্ট, প্রতি ফলে ৩২ থেকে ৪৯ বীজ থাকে এবং এরা অনিয়মিতভাবে চার ভাগে খোলে।
মেহেদি উদ্ভিদ প্রচন্ড তাপ সহনশীল উদ্ভিদ। এগুলো উত্তর আফ্রিকা , এশিয়া এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়ার শুষ্ক এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের আদি স্থানীয় উদ্ভিদ। এগুলো প্রায় সর্বোচ্চ ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও টিকে থাকতে পারে, তবে ৩৫ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৫ এবং ১১৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় এগুলোর ফলন সর্বাধিক হয়। বৃষ্টিপাতের ব্যবধানের সময় এদের দ্রুত বৃদ্ধি হয় এবং অভঙ্গুর পুরান কাণ্ড হতে নমনীয় এবং ভঙ্গুর নতুন কাণ্ড বের হয়। প্রবৃদ্ধি পরবর্তীকালে ধীর হয়ে যায়। শীতকালে এদের পাতাগুলি ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে যায় এবং দীর্ঘ শুষ্ক বা শীতল বিরতিতে পড়ে যায়। যেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৫২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর নিচে থাকে সেখানে এটি সমৃদ্ধ হয় না। আর তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৪১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর নিচে নামলে এরা মারা যায়।
ব্রোঞ্জ যুগ থেকেই দুনিয়াবাসীরা রঞ্জক হিসেবে মেহেদি ব্যবহার করে আসছে। দুনিয়ার বহু দেশে এটি উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বাংলাদেশ এবং ভারতে ঈদ ও বিয়ে উপলক্ষে এর ব্যবহার অনেকটা আবশ্যিকরূপে প্রচলিত। ভারতীয় আদালতে চুলের রঙ হিসেবে মেহেদির ব্যবহারের কথা উল্লেখ আছে যেটা প্রায় ৪০০ খ্রিষ্টাব্দের।[২] ছত্রাক-রোধী হিসেবেও মেহেদি কার্যকর।[৩] কাপড় ও চামড়া সংরক্ষণেও এর ব্যবহার হয়। মেহেদি ফুল থেকে সুগন্ধী তৈরি হতো বহু প্রাচীনকাল থেকেই, বর্তমান যুগে এর উৎপাদন আবার শুরু হয়েছে। পোকা দমনেও মেহেদি ব্যবহৃত হয়। লসোন (lawsone) বা ২-হাইড্রক্সি-১,৪ ন্যাপথা কুইনোন নামক এক প্রকার জৈব যৌগের উপস্থিতির কারণেই মেহেদিতে রঙ হয়। মেহেদির পাতাতেই প্রধানত: লসোন থাকে। যে গাছের পাতায় লসোন বেশি সে গাছের ফলে বীজ কম হয়।[৪] মেহেদি পেস্টের পিএইচ মান ৫.৫ হলে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
সাধারন পদ্ধতি
কয়েক মুঠো পুষ্ট মেহেদি পাতা শিলপাটায় মিহি করে বেটে অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিলেই হাত- পা, চুলে ব্যবহার করা যায়।
প্রয়োজনমত পুষ্ট মেহেদি পাতা নিয়ে সারাদিন কড়া রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ডারে মিহি গুড়ো করে এতে আরো কিছু উপাদান ব্যবহার করে একে শিল্পজাত করা যায়। নিম্নে এর উপাদানের পরিমাণের ক্রম এবং কার্যপদ্ধতি দেওয়া হলো।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: ১. পানি, (১ কাপ), ২. কফি / ব্ল্যাক টি (২ টেবিল চামচ), ৩. মেহেদি পাউডার, (৩ টেবিল চামচ), ৪. মেথির গুঁড়া / পাউডার, ( টেবিল চামচ), ৫. ভিনেগার / লেবুর রস (১ টেবিল চামচ), ৬. ইউক্যালিপটাস / এসেনশিয়াল অয়েল (বাধ্যতামূলক নয়), ৭. চিনি।
কার্যপদ্ধতি: