মোউরাল

মোউরাল
Common Banded Peacock
ডানা বন্ধ অবস্থায়
ডানা খোলা অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Papilionidae
গণ: Papilio
প্রজাতি: P. crino
দ্বিপদী নাম
Papilio crino
Fabricius, 1792

মোউরাল[] (বৈজ্ঞানিক নাম: Papilio crino(Fabricius)) এক প্রজাতির বড় আকারের প্রজাপতি, যার মূল শরীরটা কালো বর্ণের এবং ডানায় কালোর উপর সবুজ আবির ছেটানো এবং ডানায় উজ্জ্বল নীলচে সবুজ ধাতব রঙের পটি দেখা যায়। মোউরালের ওপর-পিঠে সামনের ডানার মাঝ আঁচল বরাবর একটি উজ্জ্বল নীলচে সবুজ ধাতব রঙের পটি নেমে এসে পিছনের ডানায় মিশেছে, সেখানের পটিটা তুলনামূলক ভাবে চওড়া। পিছনের ডানায় পটির মাঝামাঝি অংশে এই নীলচে আভাটা একটু বেশি এবং ডানার ভূমিকোণে গোলাপি পাড় দিয়ে ঘেরা কালো বিন্দু দেখা যায়। লেজ দেখা যায় এবং লেজের বর্ন কালো, লেজের ডগাতে তিলকের মতো নীলচে সবুজ দ্যুতি থাকে। এরা ‘প্যাপিলিওনিডি’ পরিবারের এবং 'প্যাপিলিওনিনি' উপগোত্রের সদস্য। ভারতএ এই প্রজাতির অধীনে কোন উপ-প্রজাতি তালিকাভুক্ত নেই।[]

প্রসারিত অবস্থায় মোউরালের ডানার আকার ১০০-১০৫ মিলিমিটার দৈর্ঘের হয়।[]

বিস্তার

[সম্পাদনা]

এই প্রজাপতিটি ভারত এবং শ্রীলঙ্কাতে দেখতে পাওয়া যায়। ভারতে মোউরালকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায়। দক্ষিণবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমঘাট ও নীলগিরির কিছু অংশ, ছোটনাগপুর অঞ্চল, বিহার অঞ্চলে মোউরাল দেখা যায়। এরা শুষ্ক এবং উষ্ণ পর্নমোচী অরণ্য বেশী পছন্দ করে।[]

বর্ণনা

[সম্পাদনা]

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

ডানার উপরিতল কালো এবং সবুজ আঁশে ঘনভাবে ছাওয়া। সামনের ডানায় কোস্টা থেকে ডরসাম অবধি বিস্তৃত নীলচে সবুজ, সুস্পষ্ট ডিসকাল বন্ধনীটি উপর থেকে নীচের দিকে ক্রমশ চওড়া হয়েছে। পিছনের ডানায় অনুরূপ বর্নের ডিসকাল বন্ধনীটি অধিকতর চওড়া এবং ভিতরের দিকে সুস্পস্টতর এবং সরলরৈখিক। উক্ত বন্ধনীটি সেল এর মধ্যে প্রবেশ করে না এবং ডরসাম থেকে ৭নং শিরা অবধি বিস্তার লাভ করে হঠাত শেষ হয়ে গেছে, কোস্টায় পৌঁছায়নি। লাল (মাথার দিকে কালো রেখা দ্বারা বেষ্টিত) টর্নাল ছোপ ছাড়া আর কোণে প্রান্তিক (marginal) লাল ছোপ দেখা যায় না। টর্নাস এর পাশে, লেজের উপরিভাগে ৩-৪টি উজ্জ্বল সবুজ অর্ধচন্দ্রাকৃতি ছোপ বর্তমান। লেজের ডগা নীল অথবা নীলচে সবুজ বর্নের।[]


ডানার নিম্নতল কালচে-বাদামী অথবা ধূসর কালো বর্নের। সামনের ডানায় চওড়া ধূসর অথবা ছাইরঙা বন্ধনী ক্রমশ নীচের দিকে সরু হয়ে নেমে গেছে এবং উক্ত বন্ধনীর ভিতরের প্রান্তে সাদা। পিছনের ডানায় কস্টা থেকে টর্নাস পর্যন্ত একসারি অর্ধচন্দ্রাকৃতি লাল সাব-টার্মিনাল ছোপ বক্রাকারে বিন্যস্ত।[]

স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই অনুরূপদর্শী। পুরুষ প্রকারে কমন পিকক এর ন্যায় সামনের ডানার উপরিপৃষ্ঠে রোয়াবৃত দাগ (woolly streak) অথবা scent scale থাকে যা 'montanus' রূপ (form-montanus) এর পুরুষে অনুপস্থিত।[]

'পিকক' দের স্বাভাবিক দ্রুত এবং মাটি ঘেঁষে এবং বড় গাছের মাথার (cannopy) উচ্চতায় উড়ান এই প্রজাতিতেও লক্ষণীয়। জঙ্গলের অভ্যন্তরে অথবা ফাঁকা জায়গায় অথবা বাইরে পাহাড়ি ঝর্না, নদী, নালার পাশে ভিজে কাদামাটি অথবা বালি এবং পাথরের ভিজে ছোপে এদের পুরুষ প্রকাররা দলবদ্ধ ভাবে মাড-পাডল করে।[] ডানা ঝাপ্টে ঝাপ্টে উড়ন্ত অবস্থায় ফুলের মধুও পান করে।মোউরালদের ফুলের মধুর প্রতি আসক্তি আছে। দ্রুত উড়তে উড়তে এরা মাঝে মাঝে পাতার উপর ডানা মেলে বসে থাকতে দেখা যায়।[] আর্দ্র চিরহরিৎ (evergreen) অথবা উষ্ণ শুষ্কতর (hot and dry) বনাঞ্চলে ৬০০ থেকে ৯০০ মিটার উচ্চতায় এদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। কখনো কখনো ১৮৩০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এদের দেখতে পাওয়া যায়। ভারতে এই প্রজাতি সুলভ (common) নয় বরং বেশীর ভাগ অঞ্চলেই হয় দুর্লভ (rare) অথবা খুবী কম দেখা যায় (very uncommon)।দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি পার্বতি অঞ্চলে এরা বিক্ষিপ্তভাবে সুলভ (sporadically common)। মোটামুটি সারা বছরই এই প্রজাতির সক্রিয়তা চোখে পড়ে, তবে বিশেষত জুলাই মাসে এদের সংখ্যাধিক্য লক্ষ্যনীয়।[]

বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]

স্ত্রী মোউরাল Chloroxylon swietenia গাছের পাতার ঊপর ডিম পাড়ে।[]

শূককীট

[সম্পাদনা]

শূককীট নীলচে সবুজ বর্ণের হয়। দ্বিতীয়, দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ দেহখন্ডে এক জোড়া করে মাংসল গুঁটি দেখা যায়।

আহার্য উদ্ভিদ

[সম্পাদনা]

এই শূককীট Chloroxylon swietenia গাছের পাতার রসালো অংশ আহার করে।

মূককীট

[সম্পাদনা]

মূককীট সবুজ রঙের হয়।

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Dāśagupta, Yudhājit̲̲̲̲̲̲a (২০০৬)। Paścimabaṅgera prajāpati (1. saṃskaraṇa. সংস্করণ)। Kalakātā: Ānanda। পৃষ্ঠা ৫৭। আইএসবিএন 81-7756-558-3 
  2. "Papilio crino Fabricius, 1793 - Common Banded Peacock"Butterflies of India। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০২৪ 
  3. Isaac, Kehimkar (২০১৬)। BHNS Field Guides Butterflies of India। Mumbai: Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 172। আইএসবিএন 9789384678012 
  4. Wynter-Blyth, Mark Alexander (১৯৫৭)। Butterflies of the Indian Region। Bombay, India: Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 389। আইএসবিএন 978-8170192329 
  5. Isaac, Kehimkar (২০০৮)। The book of Indian Butterflies (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। নতুন দিল্লি: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা 136। আইএসবিএন 978 019569620 2 
  6. বসু রায়, অর্জন; বৈদ্য, সারিকা; রায়, লিপিকা। সুন্দরবনের কিছু পরিচিত প্রজাপতি (মার্চ ২০১৪ সংস্করণ)। সুন্দরবন জীবপরিমণ্ডল,Department of Forest Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ১২। 
  7. Gaden S. Robinson, Phillip R. Ackery, Ian J. Kitching, George W. Beccaloni and Luis M. Hernández. HOSTS - a Database of the World's Lepidopteran Hostplants [১]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]