মোটরসাইকেল হেলমেট এক ধরনের হেলমেট যা মোটর সাইকেল চালকেরা ব্যবহার করে। হেলমেটগুলি কোন ধাক্কা বা আঘাতের সময় চালকের মাথা রক্ষা ক'রে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। এগুলি মাথার আঘাতের ঝুঁকি ৬৯% এবং মৃত্যুর ঝুঁকি ৪২% হ্রাস করে। হেলমেটের ব্যবহার অনেক দেশেই আইনমাফিক বাধ্যতামূলক।
মোটরসাইকেলের হেলমেটের মধ্যে একটি পলিস্টাইরিন ফোমের আস্তরণ রয়েছে যেটি আঘাতের ধাক্কা শোষণ করে নেয় এবং এর বাইরের দিকে আছে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর। হেলমেটের বেশ কয়েকটি বৈচিত্র রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেগুলি চিবুকের অংশ ঢেকে রাখে এবং যেগুলি ঢাকে না। কয়েকটি হেলমেটে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা থাকতে পারে, যেমন বায়ুচলাচলের ছিদ্র, মুখের সামনে ঢাকা, সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচতে মুখাবরণ, কানের সুরক্ষা বা ইন্টারকম।
আঘাত নিরোধক হেলমেটের উত্পত্তি ১৯১৪ সালের শুরুর দিকে ব্রুকল্যান্ডস রেস ট্র্যাকে।[১] চিকিৎসাবিভাগের একজন অফিসার ডাঃ এরিক গার্ডনার লক্ষ্য করেছিলেন যে প্রতি দুই সপ্তাহে তিনি একজন করে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত মোটর সাইকেল চালকের চিকিৎসা করছেন। তিনি বেথনাল গ্রিনের মিঃ মসকে দিয়ে ক্যানভাস এবং লাক্ষা দিয়ে হেলমেট তৈরি করান, যেটি ভারী আঘাত সহ্য করার পক্ষে যথেষ্ট শক্ত এবং যথেষ্ট মসৃণ, যাতে কোন অভিক্ষিপ্ত বস্তু এতে লাগলে সেটি ছিটকে সরে যায়। তিনি নকশাটি অটো-সাইকেল ইউনিয়নের সামনে উপস্থাপন করেছিলেন যেখানে প্রাথমিকভাবে এটি খারিজ করা হয়েছিল, তবে পরে এই ধারণাটিকে স্বীকার করে নেওয়া হয় এবং ১৯১৪ সালের আইল অব ম্যান টিটি দৌড়ের জন্য এটি বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়, যদিও চালকদের পক্ষ থেকে এর প্রতিরোধ হয়েছিল। গার্ডনার তাঁর সাথে এইরকম ৯৯ টি হেলমেট নিয়ে আইল অফ ম্যানে গিয়েছিলেন, এবং এক চালক যিনি এক প্রচণ্ড জোরে একটি গেটে ধাক্কা মেরেছিলেন তিনি হেলমেট থাকার জন্য রক্ষা পেয়ে গিয়েছিলেন। ডাঃ গার্ডনার পরে আইল অফ ম্যানের চিকিৎসাবিভাগের অফিসারের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছিলেন যাতে লেখা ছিল যে টি.টি.-এর পরে তাদের সাধারণত "বেশ কয়েকটি ধাক্কাজনিত মস্তকে আঘাতের ঘটনা থাকে" কিন্তু ১৯১৪ সালে এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি।
১৯৩৫ সালের মে মাসে, ওয়ারেহামে নিজের বাড়ির কাছে, একটি সরু রাস্তায়, একটি ব্রো সুপিরিয়ার এসএস ১০০ মোটর সাইকেল নিয়ে টমাস এডওয়ার্ড লরেন্সের (লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া নামে পরিচিত) একটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল কারণ সামনের রাস্তা হঠাৎ নিচু হয়ে যাওয়ায় সাইকেলে চড়া দুটি ছেলেকে তিনি দেখতে পাননি। তাদের বাঁচাতে গিয়ে হঠাৎ বাঁক নিয়ে লরেন্স নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি এবং হ্যান্ডেলবারের ওপরে ছিটকে পড়েছিলেন।[২] তাঁর মাথায় হেলমেট পরা ছিল না, এবং মাথায় গুরুতর জখম হয়ে তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন; ছয় দিন পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান। তাঁকে যাঁরা চিকিৎসা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন একজন স্নায়ুশল্যচিকিৎসাবিদ (নিউরো সার্জন), হিউ কেয়ার্নস। লরেন্সের মৃত্যুর পরে তিনি এই নিয়ে একটি দীর্ঘ গবেষণা শুরু করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন মাথায় আঘাতের কারণে মোটরসাইকেলের বার্তাবহ চালকদের অযথা মৃত্যু ঘটে। কেয়ার্নসের গবেষণার পরে সামরিক ও বেসামরিক উভয় মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যেই ক্র্যাশ হেলমেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছিল।[৩]
২০০৮ সালের একটি পদ্ধতিগত গবেষণায় দেখা গেছে যে হেলমেট পরা থাকলে মাথার আঘাতের ঝুঁকি প্রায় ৬৯% এবং মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৪২% হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।[৪]
যদিও একবার অনুমান করা হয়েছিল যে মোটরসাইকেলের হেলমেট পরার ফলে দুর্ঘটনায় ঘাড় এবং মেরুদণ্ডের জখম বেড়েছে, সাম্প্রতিক কিছু প্রমাণ থেকে দেখা গেছে আসল ঘটনা ঠিক এর উল্টো: হেলমেট মেরুদণ্ডের আঘাত থেকে রক্ষা করে। হেলমেট ব্যবহারে ঘাড় এবং মেরুদণ্ডে জখমের প্রকোপগুলি বাড়িয়ে তোলে, ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝির এই গবেষণা "ত্রুটিযুক্ত পরিসংখ্যানগত যুক্তি ব্যবহার করেছিল"।[৫][৬][৭]