মোবাইল বিজ্ঞাপন

মোবাইল বিজ্ঞাপন বলতে নব্য ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমে বাস্তবায়িত বিজ্ঞাপনের একটি শাখাকে বোঝায়, যেখানে ভোক্তাদের কাছে তাদের ওয়্যারলেস মোবাইল টেলিফোন (তারহীন ভ্রাম্যমাণ দূরালাপনী যন্ত্র বা মুঠোফোন), স্মার্টফোন (বুদ্ধিমান মুঠোফোন) কিংবা অন্যান্য ভ্রাম্যমাণ যোগাযোগ যন্ত্রসমূহের (যেমন ট্যাবলেট) মাধ্যমে সরাসরি হাতের মুঠোয় বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়া হয়।[] এটিকে মোবাইল বিপণনের একটি অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। মোবাইল বিজ্ঞাপনগুলি মুঠোফোনের খুদেবার্তায় (এসএমস বা শর্ট মেসেজ সার্ভিস) পাঠ্য বিজ্ঞাপন হিসেবে, শব্দ-ছবি-ভিডিও সংবলিত দৃশ্য-শ্রাব্য বহুমাধ্যম খুদেবার্তা (এমএমস বা মাল্টিমিডিয়া মেসেজ সার্ভিস) হিসেবে, ওয়েবসাইটের মুঠোফোন সংস্করণে বা মোবাইল ফোনের জন্য নির্মিত অ্যাপ্লিকেশনের ভেতরে গ্রথিত (এমবেডেড) বাক্স আকৃতির (ব্যানার) বিজ্ঞাপন হিসেবে, এমনকি আন্তর্জাল থেকে কোনও কিছু নামানোর সময় মুঠোফোনের পর্দার পুরোটা জুড়ে সাময়িক স্বল্পস্থায়ী বিজ্ঞাপন (ইন্টারস্টিশিয়াল) হিসেবে বাস্তবায়িত হতে পারে। ইদানিং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন যেমন ইউটিউব, টিকটক, ইত্যাদির ভেতরে ক্ষুদে ভিডিও বিজ্ঞাপনের প্রচলনও বৃদ্ধি পেয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে ৫ম প্রজন্মের ভ্রাম্যমাণ যোগাযোগ প্রযুক্তি (ফাইভ জি মোবাইল কমিউনিকেশন টেকনোলজি) আরও দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে আরও সমৃদ্ধ (যেমন বিবর্ধিত বাস্তবতা, অসদ বাস্তবতা, ইত্যাদি বিষয়বস্তুতে পূর্ণ) বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করার সুযোগ করে দেবে।[] মোবাইল বিজ্ঞাপনগুলি মুঠোফোনে ব্যক্তির পছন্দের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক (পার্সোনালাইজড) এবং প্রতিবেশ-সংবেদী (কনটেক্সট-সেনসিটিভ) হয়ে থাকে। যেহেতু মানুষেরা বর্তমানে প্রায় সবসময় তাদের মুঠোফোন হাতে বা কাছে রাখে, তাই মোবাইল বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে সময়ের প্রতি সংবেদনশীল (টাইম সেনসিটিভ) বিজ্ঞাপন যেমন কোনও আসন্ন ঘটনা, ঝটিকা মূল্যহ্রাস (ফ্ল্যাশ সেল), ইত্যাদি বিজ্ঞাপনী কাজ চালানো খুব সহজ। ইদানিং মোবাইল বিজ্ঞাপনগুলিতে ভোক্তার ভৌগোলিক অবস্থান জেনে নিয়ে সেই অনুযায়ী মাপমত বিজ্ঞাপন প্রচার করার ব্যাপারে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।[] একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী মোবাইল বিজ্ঞাপনের বাজার ১০ হাজার ২ শত কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে, যেখানে বাজারের যৌগিক বার্ষিক বৃদ্ধির হার হল ২২%। এর মূল কারণ হল মুঠোফোন বিশেষ করে স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি; ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০০ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহৃত হচ্ছিল এবং ২০২৭ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ৭৬০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হয়। ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী খুচরা কেনাকাটার প্রায় ৬.৯% মুঠোফোন দিয়ে করা হয়েছিল এবং এই সংখ্যা ২০২৫ সাল নাগাদ ১০%-এ পৌঁছাতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হয়।[]

একান্ত গোপনীয়তা সংক্রান্ত উদ্বেগ

[সম্পাদনা]

একান্ত গোপনীয়তা রক্ষার সপক্ষের প্রবক্তারা মোবাইল বিজ্ঞাপনে এ সংক্রান্ত সমস্যাগুলি তুলে ধরেছেন। মুঠোফোনে যে লক্ষ্যস্থিরকৃত বিজ্ঞাপন (টার্গেটেড অ্যাড) ব্যবহার করা হয়, সেগুলিতে আগ্রহী ও প্রাসঙ্গিক ক্রেতার কাছে পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তুর ক্রেতাকেন্দ্রিকীকরণ (কাস্টোমাইজেশন) করতে হয়। এভাবে ক্রেতাকেন্দ্রিক করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তির আচরণের উপাত্ত, ব্যক্তির পরিচয় নির্মাণ বা প্রোফাইলিং, উপাত্ত খনন (ডাটা মাইনিং) ও অন্যান্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, যেগুলি কোনও ব্যক্তির একান্ত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Gülce Dölkeleş (২০২২), "Emphasis on Design Principles in the Context of Communication Technologies in Mobile Advertising", Gökhan Akel, Handbook of Research on Interdisciplinary Reflections of Contemporary Experiential Marketing Practices, পৃষ্ঠা 476 
  2. Kalin Kassabov (৯ জানুয়ারি ২০২৩)। "Why Mobile Marketing Is Growing So Fast"Forbes। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০২৩ 
  3. "Online Ads vs. Privacy"The New York Times। ১২ মে ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]