শ্রী ময়ুরেশ্বর মন্দির, মোরগাঁও | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | পুনে জেলা |
অবস্থান | |
অবস্থান | মোরগাঁও |
রাজ্য | মহারাষ্ট্র |
দেশ | ভারত |
স্থাপত্য | |
ধরন | মন্দির স্থাপত্য |
সৃষ্টিকারী | অজানা |
শ্রী ময়ুরেশ্বর মন্দির (মারাঠি: श्री मयूरेश्वर मंदीर) বা শ্রী মোরেশ্বর মন্দির (মারাঠি: श्री मोरेश्वर मंदीर) হল হাতির মাথা বিশিষ্ট বিজ্ঞতার দেবতা গণেশের প্রতি উৎসর্গকৃত একটি হিন্দু মন্দির। এটি ভারতীয় প্রদেশ মহারাষ্ট্রের পুনে শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার (৫০ মা) দূরে পুনে শহরের মোরগাঁওয়ে অবস্থিত।[১] মন্দিরটি অষ্টবিনায়ক নামে পরিচিত পবিত্র জ্ঞান করা আটটি গণেশ মন্দিরে তীর্থযাত্রার যাত্রা প্রারম্ভ ও সমাপ্তি বিন্দু।
মোরগাঁও গণপাতক উপদলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাসনার কেন্দ্র, যারা গণেশকে সর্বোৎকৃষ্ট সত্তা বলে বিবেচনা করে। একটি হিন্দু কিংবদন্তি গণেশ কর্তৃক শয়তান সিন্ধুর মৃত্যুকে মন্দিরের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে। মন্দির নির্মাণের সঠিক তারিখ অজানা রয়েছে, যদিও গণপাতক সন্ন্যাসী মরয়া গোসাভি এর সাথে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। মন্দিরটি পেসওয়া শাসক ও মোর্য গোসাভির বংশধরদের পৃষ্ঠপোষকতায় উৎকর্ষ লাভ করেছিল।
পুনের চারপাশে আটটি পবিত্রজ্ঞান করা গণেশ মন্দিরে তীর্থযাত্রার প্রারম্ভ বিন্দু মোরগাঁও মন্দির। মন্দিরের প্রদক্ষিণপথ অষ্টবিনায়ক (আটজন গণেশ) নামে পরিচিত। তীর্থযাত্রা অসমাপ্ত বলে বিবেচিত হয় যদি তীর্থযাত্রী তীর্থযাত্রা শেষে মোঁরগাও মন্দির পরিদর্শন না করে।[১] মোরগাঁও মন্দির শুধুমাত্র অষ্টাবিনায়ক প্রদক্ষিণপথের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরই নয়, বরং ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গণেশ (গণেশা) তীর্থযাত্রা (আইএএসটি আসল) হিসেবে বর্ণিত।[২][৩][৪]
মোরগাঁও হল "আধ্যা পিঠ" - গণপাতক উপদলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাসনার কেন্দ্র, যারা গণেশকে সর্বোৎকৃষ্ট সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে।[৪] এটি অষ্টাবিনায়ক পথের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক তীর্থযাত্রীকে আকৃষ্ট করে।[৪] গণপাতক উপদলের উভয় মৌলিক ধর্মগ্রন্থ মরগাও এর প্রশংসা করে। যদিও মুগডালা পুরাণের ২২টি অধ্যায় মোরগাঁওয়ের মহত্ব বর্ণনায় নিয়োজিত, গণেশ পুরাণ ঘোষণা করে যে মোরগাঁও গণেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্থানের মধ্যে একটি এবং পৃথিবীতে (ভূলোক) একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ স্থান। অন্য জায়গাগুলো হল স্বর্গে অবস্থিত কৈলাশ (প্রকৃতপক্ষে কৈলাশ পৃথিবীতে হিমালয়ের একটি পাহাড়, যা গণেশের বাবা-মার আবাস বলে বিশ্বাস করা হয়) এবং পাতালে (পৃথিবীর নিচে) আদি-শেষার প্রাসাদ।[৪] ঐতিহ্যগতভাবে মন্দিরটির শুরু ও শেষ নেই। আরেকটি কাহিনী বিশ্বাসে আছে যে প্রলয়ের (পৃথিবী ধংসের সময়) সময় গণেশ এখানে যোগনিদ্রায় প্রবেশ করবে। এর পবিত্রতাকে পবিত্র হিন্দু শহর কাশীর সাথে তুলনা করা হয়।[২]
গণেশ পুরাণ অনুযায়ী, গণেশ ময়ুরেশ্বর (Mayūreśvara) হিসেবে পৃথিবীতে আসেন। তার বাহু ছয়টি এবং গাত্রবর্ণ সাদা। তার বাহন ময়ুর। শয়তান সিন্ধুকে বধের উদ্দেশ্যে ত্রেতা যুগে শিব এবং পার্বতীর ঘরে তিনি জন্মেছিলেন।[৫]
সিন্ধু ছিল মিথিলার রাজা চক্রপাণি ও তার স্ত্রী উগ্রার ছেলে। উগ্রা সৌরমন্ত্রের শক্তিতে গর্ভবতী হন কিন্তু ভ্রুণ থেকে বিকিরিত অত্যধিক তাপ সহ্য করতে না পেরে তাকে সমুদ্রে ফেলে দেন। শীঘ্রই, পরিত্যাক্ত ভ্রুণ থেকে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয় এবং সমুদ্র তাকে তার শোকার্ত বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়, যিনি তার নাম রাখেন সিন্ধু-অর্থাৎ সমুদ্র।[৫]
পার্বতী লেনয়াড্রিতে (আরেকটি অষ্টবিনায়ক অঞ্চল, যেখানে পার্বতীর পুত্র হিসাবে গণেশের পূজা করা হয়) বার বছর "সমগ্র মহাবিশ্বের ধারক" গণেশের কঠোর ধ্যানে মগ্ন হন। তার প্রায়শ্চিত্তে সন্তুষ্ট হয়ে, গণেশ তাকে বরদান করেন যে তিনি তার পুত্র হিসাবে জন্ম নিবেন। যথাসময়ে লেনয়াড্রিতে পার্বতীর গর্ভে গণেশের জন্ম হয় এবং শিব তার নাম রাখেন গণেশ। একদা ছোট্ট গণেশ একটি আমগাছ থেকে একটি ডিম পেড়ে আনেন,যা থেকে একটি ময়ূর বের হয়। গণেশ ময়ূরটিতে চড়েন এবং ময়ুরেশ্বর নামধারণ করেন।[৫]
সূর্য-দেবতা বর স্বরুপ সিন্ধুকে সর্বদাপূর্ণ অমৃতের (জীবনদায়ী পানীয়) পাত্র দেন। অসুরকে সাবধান করা হয় যে যতক্ষণ পাত্রটি অক্ষত থাকবে ততক্ষণ সে অমৃত পান করতে পারবে।তাই পাত্রটি রক্ষার জন্য সে এটি গিলে ফেলে।সিন্ধু ত্রিভুবনে ত্রাশ সৃষ্টি করে,ফলে ভগবান গণেশের কাছে সাহায্য চায়।গণেশ সিন্ধুর সেনাদলকে পরাজিত করে,তার সেনাপতি কামালাসুরকে তিন খন্ড করে এবং সিন্ধুর দেহ ফেড়ে অমৃতের পাত্র খালি করে শয়তানকে বধ করে।বর্নিত আছে স্রষ্ঠা-ভগবান ব্রক্ষা মোরগাও মন্দির নির্মাণ করেন এবং সিদ্ধি ও বুদ্ধিকে গণেশের সাথে বিয়ে দেন। রক্তমাংসের দেহধারণের শেষে, তার ছোট ভাই স্কান্দাকে (সাধারণত যার সাথে ময়ূর বাহন সংশ্লিষ্ট) তার বাহন ময়ূর দান করে, গণেশ তার স্বর্গীয় আবাসে ফিরে যান।[৫]
ময়ূরে (সংস্কৃততে ময়ূরা, মারাঠিতে মোরা) চড়ার কারণে গণেশ ময়ূরেশ্বর বা মোরেশ্বর ("ময়ূরদের প্রভূ") নামে পরিচিত। আরেকটি কিংবদন্তি মতে এই স্থানটি ময়ূর অধ্যুষিত ছিল যা থেকে গ্রামটির মারাঠি নাম মোরগাঁও ("ময়ূরের গ্রাম") এবং প্রধান দেবতার নাম মোরেশ্বর দেওয়া হয়।[১][১][৪]
একটি গণপাতক কিংবদন্তি স্মরণ করিয়ে দেয় কীভাবে স্রষ্টা-দেবতা ব্রহ্মা, রক্ষাকারী দেবতা বিষ্ণু এবং ধ্বংসের দেবতা শিব, স্বর্গীয় মাতা দেবী, সূর্য-দেবতা সূর্য তাদের স্রষ্টা সম্বন্ধে এবং নিজেদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য জানতে মোরগাঁওয়ে ধ্যানে মগ্ন হন। গণেশ ওমকারা শিখারুপে তাদের সামনে আবির্ভূত হন এবং তাদের আশীর্বাদ করেন। আরেকটি লোককাহিনিতে আছে ব্রহ্মা যখন তার ছেলে কামকে (বাসনা) সৃষ্টি করেন, তখন তিনি নিজে কামনার স্বীকার হন এবং নিজ কন্যা সরস্বতিকে (বিদ্যার দেবী) কামনা করেন। সকল দেবতার মিনতিপূর্ন আহ্বানে পবিত্র তূর্যতীর্থ নদী আবির্ভূত হয় এবং অজাচারের পাপ মুছার জন্য নদীর পানিতে গোসল করেন। ব্রহ্মা তারপর পানির পাত্রে নদীর পানি বহন করে, গণেশার উপাসনা করার জন্য মোরগাঁওয়ে আসেন।গণেশার মন্দিরে প্রবেশের পর ব্রহ্মা হোচট খান এবং পাত্র থেকে পানি পড়ে যায়। ব্রহ্মা পানি কুড়িয়ে তোলার চেষ্টা করলে সেই পানি পবিত্র কার্যনদীতে পরিণীত হয়, যা আজও মোরগাঁওয়ে বহমান।[৬]
মরয়া গোসাভি (মোরোবা), একজন প্রধান গণপাতক সন্ন্যাসী চিঞ্চয়াডে যেখানে তিনি নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, স্থানান্তরের পূর্বে মোরগাঁও গণেশ মন্দিরে পূজা করেছিলেন।[৭] ১৮ শতকে মারাঠা সম্রাজ্যের ব্রাহ্মণ পেশওয়া শাসকদের কাছ থেকে মোরগাঁও মন্দির এবং পুনের কাছাকাছি অন্য গানাপাটয়া কেন্দ্রগুলো পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল। পেশওয়ারা যারা গণেশকে কুলাডাইভাট (পারিবারিক দেবতা) হিসাবে পূজা করে, ও টাকা দান করেছিলেন এবং এইসব গণেশ মন্দিরের সম্প্রসারণ করেছিলেন।[২][৮]
আন্নে ফেলধাউসের মতে যখন মরয়া গোসাভি মন্দিরটিকে জনপ্রিয় করেন অর্থাৎ সতেরো শতকের আগে মোরগাঁও মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল না।[২][৯] যদিও মরয়া গোসাভির সময়কালটিও বিতর্কিত এবং তা ১৩ তম-১৪ তম শতক থেকে ১৭ শতকের মধ্যে হেরফের করে।[১০] মোর্য গোসাভির বংশধর যাদেরকে চিঞ্চওয়াড মন্দিরে মূর্ত হওয়া গণেশ হিসেবে পূজা করা হত - প্রায়ই মোরগাঁও মন্দির পরিদর্শন করতেন এবং বহু অষ্টবিনায়ক মন্দিরের আর্থিক ও প্রশাসনিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন।[২] ১৭ শতকের সন্ন্যাসী সামার্থ রামদাস মোরগাও এর ছবি দেখে জনপ্রিয় আরতি সংগীত সুখকর্তা ও দুঃখবিনাশক রচনা করেন।
বর্তমানে মন্দিরটি চিঞ্চওয়াড থেকে পরিচালিত চিঞ্চওয়াড দেভাস্থান ট্রাস্ট প্রশাসনের অধীন। মোরগাও এর পাশাপাশি মন্দির ট্রাস্টটি চিঞ্চওয়াড মন্দির এবং থেউর ও সিদ্ধাটেক অষ্টবিনায়ক মন্দিরকে নিয়ন্ত্রণ করে।[১১]
চারকোণায় চারটি মিনারবিশিষ্ট উঁচু প্রাচীর দিয়ে মন্দিরটি ঘেরা, যা নির্মাণশৈলীর উপর মুসলিম প্রভাবের ধারণা দেয়।[১][৩] একসময় একজন মুসলিম শাসক মন্দিরটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।[৩] মন্দিরটিতে চারটি প্রবেশপথ আছে,প্রতিটি মৌলিক দিকে মুখ করা এবং প্রতিটিতে গণেশের মূর্তি আছে, চার সময়ের (যুগ) প্রতিটিতে আবির্ভূত গণেশের রূপ অনুযায়ী তাকে প্রত্যেক প্রবেশপথে গড়া হয়েছে। গণেশের প্রতিটি রুপ পুরুষার্থর (জীবনের লক্ষ্য) সাথে সংশ্লিষ্ট এবং দুজন সঙ্গী তাকে সঙ্গ দেয়। ভগবান রাম (বিষ্ণুর অবতার) ও তার স্ত্রী সীতাসহ মন্দিরের পূর্ব প্রবেশদ্বারে বাল্লালবিনায়াকার মূর্তি ধর্মের (ন্যায়পরায়ণতা,কর্তব্য) প্রতীক এবং রক্ষাকারী ভগবান বিষ্ণুকে মূর্ত করে। গণেশের পিতা-মাতা শিব এবং পার্বতী (উমা) সহ দক্ষিণ গেটে ভিগণেশা অর্থের (সম্পদ ও খ্যাতি) প্রতীক এবং ধ্বংসকারী শিবকে মূর্ত করে। ভালোবাসার দেবতা কামদেব ও তার স্ত্রী রাতিসহ পশ্চিম গেটে চিন্তামনি কাম (কামনা,ভালোবাসা,ইন্দ্রিয় সুখ) প্রকাশক এবং আকারহীন (আসাট) ব্রাহ্মণকে মূর্ত করে। ভারাহা (বরাহ রুপি বিষ্ণুর অবতার) এবং তার স্ত্রী পৃথিবী দেবী মাহীসহ উত্তর গেটে মহাগানাপাতি মোক্ষ (উদ্ধার) প্রকাশ করে এবং সাত ব্রাক্ষণের মূর্ত প্রকাশ।[৪]
মন্দিরের মূল প্রবেশপথ উত্তরের দিকে মুখ করা। চতুর্ভুজাকার প্রাঙ্গনে দুটি দ্বীপমালা-বাতিসহ বাতিঘর আছে। মন্দিরের বাইরে গণেশের বাহন-ইঁদুরের ৬ ফুট উঁচু মূর্তি অবস্থিত।[১] কাছেই নাগারাখানা-যা নাগারা (বাদ্যযন্ত্র বিশেষ) জমা রাখে অবস্থিত। মন্দির গেটের ঠিক বাইরে,প্রভুর দিকে মুখ করে নন্দী ষাড়ের বিশাল একটি ভাস্কর্য অবস্থিত। একে অস্বাভাবিক বিবেচনা করা হয় কারণ নন্দীকে সাধারণত শিব মন্দিরের সামনে পবিত্রতম স্থানে রাখা হয়। একটি লোককাহিনি এই অস্বাভাবিকতা ব্যাখা করে গণেশের সামনে রাখার চিন্তা করে নন্দীর ভাস্কর্যকে কাছের শিব মন্দির থেকে পরিবহন করে আনা হয়েছিল কিন্তু তারপর আর সরানো হয়নি। ইঁদুর এবং নন্দী উভয়কে প্রবেশপথের অভিভাবক বিবেচনা করা হয়।[৬]
সাম্প্রতিক নির্মিত সভা-মন্ডপে ভগমান বিষ্ণু ও তার স্ত্রী লক্ষীর প্রতীমা আছে। কুরুন্ডওয়াডের পাটওয়ারডান শাসকদের নির্মিত কেন্দ্রীয় হলের দিকে এটি চালিত করে।এই হলের ছাদটি একটি একক পাথর থেকে গঠিত।গারভাগৃহাতে(পবিত্রতম স্থান) উত্তর দিকে মুখ করা মায়ুরেশ্বর বা মোরেশ্বর রুপে গণেশের একটি মূল মূর্তি আছে।শুড় বামে সরানো অবস্থায়,চার বাহু ও তিন চোখসহ বসার ভঙ্গিতে গণেশা মূর্তিটিকে গড়া হয়েছে।মূর্তিটি উপরের হাত দুটি দিয়ে একটি ফাস(পাশা) এবং এলিফেন্ট গোড (অনুষ্কা) ধরে রাখে,যদিও নিচের ডান হাত হাটুর উপর অবস্থান করে এবং অন্য হাতে মোডাকা (মিষ্টি) ধরে রাখে। নাভি ও চোখগুলো হীরকখচিত।গণেশের মাথার উপর প্রভুকে আশ্রয়দানকারী কোবরার ফণা আছে।[৩][৬] জাফরান-রঙের সিঁদুর (ভার্মিলিওন) দিয়ে মোটা প্রলেপ দেওয়ায় মূর্তিটি যেমন দেখায় তার চেয়ে ছোট, প্রলেপটি প্রতি শতকে একবার তুলে ফেলা হয়।এটি শেষ তোলা হয় ১৮৮২ সালে এবং তার আগে ১৭৮৮ সালে।[১][৩] গণেশের পাশে তার স্ত্রীদ্বয় রিদ্ধি ও সিদ্ধি, যাদেরকে কখনো কখনো সিদ্ধি ও বুদ্ধি ডাকা হয়, তাদের প্রতীমা থাকে।[১][৬] এই প্রতিমাগুলো পঞ্চ ধাতুর সংকর অথবা পিতলে তৈরী।[১][৬] দেবতাগুলো কারুকাজ করা রুপা ও সোনায় আবৃত।[১] সকল অষ্টাবিনায়াকা মন্দিরের মত, মূল গণেশ মূর্তিটিকে স্বয়ম্ভু বলে বিশ্বাস করা হয় অর্থাৎ হাতির মত মুখ বিশিষ্ট পাথর থেকে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরী হওয়া।[১২] মূল মূর্তির সামনে, গণেশের বাহন-ইঁদুর এবং ময়ূর রাখা হয়। গর্ভগৃহর বাইরে বামদিকে একটি নগ্ন ভৈরবীর মূর্তি আছে।[৬] To the left outside the garbhagriha is an image of Nagna-Bhairava.[১৩]
সভা-মন্ডপের (এসেম্বলী হল) বাইরে গণেশের বিভিন্ন রুপের ২৩ টি প্রতিমা আছে। গণেশের প্রতিমাগুলোর মধ্যে মুডগালা পুরানে বর্নিত গণেশের আটটি অবতার-ভাক্রাকুন্ডা, মাহোডারা, একাডান্তা, ভিকাটা, ধ্রুমাভারনা, ভিগ্নারাজা এবং লাম্বাডারা অন্তর্ভুক্ত-এবং মন্দিরের আট কোণায় অবস্থিত।[১][৪][১৪] কিছু মূর্তি যোগেন্দ্র আশ্রমের অনুসারীদের দ্বারা স্থাপিত।[১] লক্ষ্যনীয় আরেকটি গণেশের প্রতিমা হল "সাক্ষী বিনায়ক" যা ময়ুরেশ্বরের কাছে করা প্রার্থনার "একজন সাক্ষী"। প্রথাগতভাবে প্রথমে "নগ্ন ভৈরবী"কে পূজা করা হয়, তারপর ময়ুরেশ্বর এবং তারপর সাক্ষী বিনায়ক। এটিই এখানকার পূজার সঠিক ক্রম।
সভা-মন্ডপের চতুর্দিকে অন্য হিন্দু দেবতার মূর্তি আছে যার মধ্যে আঞ্চলিক দেবতা শুক্লা চতুর্থী ও কৃষ্ণা চতুর্থীর(চান্দ্র মাসের উজ্জ্বল পক্ষ ও অন্ধকার পক্ষের ৪র্থ চান্দ্র দিন,যাদের উভয়ই গণেশা পূজার জন্য পবিত্র বলে বিবেচিত) ব্যক্তিরুপের প্রকাশ ভিথোবা ও খান্ডোপা এবং গানাপাটয়া সন্ন্যাসী মরয়া গোসাভি অন্তর্ভুক্ত।সারকামামবুলেশন পথের(প্রদর্ক্ষিন পথ)উপর, কাল্পাভরুসকা মন্দিরের কাছে একটি তারাতি গাছ আছে।গাছটিকে মরয়া গোসাভির প্রায়শ্চিত্তের স্থান বলে বিশ্বাস করা হয়।[১] মন্দির প্রাঙ্গনে দুটি পবিত্র গাছ আছে - শামি ও বিল্ব।[৩]
প্রতিদিন সকাল ৭ টা,দুপুর ১২ টা এবং রাত ৮ টায় মূল গণেশ মূর্তিকে পূজা করা হয়।[১৫]
যথাক্রমে হিন্দুমাস মাঘ এবং ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের ৪র্থ চান্দ্র দিবসে গণেশ জয়ন্তী (মাঘা শুক্লা চতুর্থি) ও গণেশ চতুর্থির (ভদ্রপদ শুক্লা চতুর্থী) উৎসবে বিপুল সংখ্যক ভক্ত ময়ূরেশ্বর মন্দিরে জমায়েত হয়।[২] উভয় উৎসবে গণেশের পালখি সহ (পালকি) তীর্থযাত্রীদের একটি শোভাযাত্রা মঙ্গলমূর্তি মন্দির, চিঞ্চওয়াড (মোর্য গোসাভি প্রতিষ্ঠিত) থেকে এসে পৌছায়।[১][১৫] গণেশ চতুর্থী উদ্যাপন আশ্বিন শুক্লা (হিন্দুমাস আশ্বিনের শুক্লপক্ষের ১০ম চান্দ্র দিন) পর্যন্ত, একমাস ব্যাপী স্থায়ী হয়।[১৬] বিজয়াদশমি, শুক্লা চতুর্থী (হিন্দু মাসের শুক্লপক্ষের ৪র্থ চান্দ্র দিন), কৃষ্ণা চতুর্থী (হিন্দুমাসের কৃষ্ণপক্ষের ৪র্থ চান্দ্র দিন) এবং সমাভাতি অমাবস্যাতেও (সোমবারের নতুন চাঁদের রাত) মেলা ও অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।[১৫]
|প্রথমাংশ1=
এর |শেষাংশ1=
নেই (সাহায্য)