মোহসিন হামিদ | |
---|---|
স্থানীয় নাম | محسن حامد |
জন্ম | লাহোর, পাকিস্তান | ২৩ জুলাই ১৯৭১
পেশা | ঔপন্যাসিক, লেখক ও ব্র্যান্ড উপদেষ্টা |
জাতীয়তা | পাকিস্তানি ব্রিটিশ |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড ল স্কুল |
সময়কাল | ২০০০-বর্তমান |
ধরন | সাহিত্যিক কল্পকাহিনী |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | নিচে দেখুন |
দাম্পত্যসঙ্গী | জাহরা |
সন্তান | ১ |
ওয়েবসাইট | |
mohsinhamid |
মোহসিন হামিদ (উর্দু: محسن حامد; জন্ম ২৩ জুলাই ১৯৭১) একজন পাকিস্তানি-ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, লেখক ও ব্র্যান্ড উপদেষ্টা। তার রচিত উপন্যাসগুলো হল মথ স্মোক (২০০০), দ্য রিলাকট্যান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট (২০০৭), হাউ টু গেট ফিলথি রিচ ইন রাইজিং এশিয়া (২০১৩) ও এক্জিট ওয়েস্ট (২০১৭)। তার দ্য রিলাকট্যান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট উপন্যাসটি ২০০৭ সালে বুকার পুরস্কারের ক্ষুদ্রতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়,[২] এবং অ্যানিসফিল্ড-উল্ফ বই পুরস্কার ও এশীয় আমেরিকান সাহিত্য পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করে।
হামিদ ১৯৭১ সালের ২৩শে জুলাই এক পাঞ্জাবি ও কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তার শৈশবের কেটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি ৩ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। তার পিতা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি সে সময়ে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি ছিলেন। তিনি এরপর তার পৈত্রিক বাড়ি লাহোরে ফিরে আসেন এবং লাহোর আমেরিকান স্কুলে পড়াশোনা করেন।[৪]
১৮ বছর বয়সে হামিদ তার পড়াশোনার জন্য পুনরায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমান। তিনি ১৯৯৩ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উড্রো উইলসন স্কুল অব পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স থেকে সুম্মা কাম লোডসহ স্নাতক অর্জন করেন। স্নাতক শ্রেণিতে তিনি রবার্ট এইচ. উইলিয়ামসের তত্ত্বাবধানে "সাসটেইনেবল পাওয়ার: ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্স প্লানিং ইন পাকিস্তান" শীর্ষক ১২৭ পৃষ্ঠার দীর্ঘ সন্দর্ভ লিখেন।[৫] প্রিন্সটনে শিক্ষার্থী থাকাকালীন হামিদ জয়েস ক্যারল ওটস ও টনি মরিসনের অধীনেও অধ্যয়ন করেছেন। হামিদ মরিসনের শেখানো কথাসাহিত্য কর্মশালার জন্য তার প্রথম উপন্যাসের প্রথম পাণ্ডুলিপি লিখেন। তিনি এই উপন্যাস নিয়ে কাজের জন্য পড়াশোনার পর পাকিস্তানে ফিরে আসেন।[৬]
তিনি এরপর হার্ভার্ড ল স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৯৭ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন।[৭] করপোরেট আইন বিরক্তিকর হওয়ায় তিনি নিউ ইয়র্ক সিটিতে ম্যাকিনসি অ্যান্ড কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা হিসেবে কয়েক বছর কাজ করে তার শিক্ষার্থী ঋণ শোধ করেন। তিনি লেখার জন্য প্রতি বছর তিন মাস ছুটির অনুমতি পান এবং তিনি এই সময়ে তার প্রথম উপন্যাস মথ স্মোক লেখা সমাপ্ত করেন।[৮]
হামিদ শুধু এক বছর থাকার জন্য ২০০১ সালের গ্রীষ্মে লন্ডনে যান। যদিও তিনি লেখার জন্য প্রায়ই পাকিস্তানে আসতেন, তিনি আট বছর লন্ডনে বসবাস করেন এবং ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিকত্ব লাভ করেন।[৯] ২০০৪ সালে তিনি উল্ফ ওলিন্সের ব্র্যান্ড উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন, এবং সপ্তাহে তিনদিন চাকরি করতেন যেন তিনি লেখার সময় পান।[১০] তিনি এরপর উল্ফ ওলিন্সের লন্ডন অফিসে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৫ সালে এই কোম্পানির প্রথম প্রধান গল্পকথন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।[১১]
হামিদের প্রথম উপন্যাস মথ স্মোক নিউক্লিয়ার-পরীক্ষা উত্তর লাহোরে একজন মারিজুয়ানা-খোর সাবেক ব্যাংকারের গল্প বর্ণনা করে, যে তার বন্ধু-পত্নীর প্রেমে পড়ে এবং হিরোইনে আসক্ত হয়ে পড়ে। এটি ২০০০ সালে প্রকাশিত হয় এবং খুব দ্রুতই পাকিস্তান ও ভারতে কাল্ট হিট হয়ে ওঠে। এটি সেরা প্রথম উপন্যাসের জন্য প্রদত্ত হেমিংওয়ে ফাউন্ডেশন/পেন পুরস্কারের ফাইনালিস্ট হয় এবং পাকিস্তানে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে এবং ইতালিতে একটি অপেরেত্তাতে উপযোগ করা হয়।[১২]
মথ স্মোক-এর একটি উদ্ভাবনী কাঠামো ছিল, এতে একাধিক কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে, মধ্যম পুরুষের বিচারের দৃশ্য এবং এর প্রধান চরিত্রদের জীবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ভূমিকার মতো বিষয়গুলোর উপর প্রবন্ধ। ইংরেজি ভাষার দক্ষিণ এশীয় কথাসাহিত্যের সমসাময়িক পদ্ধতির পথপ্রদর্শক হিপের অগ্রদূত, এই বইটিকে কয়েকজন সমালোচক "উপমহাদেশীয় (ইংরেজি) লেখার [তার] প্রজন্ম থেকে বেরিয়ে আসা সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপন্যাস" বলে গণ্য করেন। দ্য নিউ ইয়র্ক রিভিউ অব বুকস-এ অনিতা দেসাই উল্লেখ করেন:
ধীরগতির ঋতু পরিবর্তন, গ্রামীণ ডোবা, আড্ডারত উঠান এবং বন্দুক চালানো, মাদক-পাচার, বৃহৎ আকারের শিল্প-কারখানা, বাণিজ্যিক উদ্যোক্তা, পর্যটন, নব্য অর্থ, নাইটক্লাব, বুটিকস... দ্বারা দখলকৃত বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী পরিবারগুলো সম্পর্কে কেউ সত্যিই লিখতে বা পড়তে পারে না। এই নতুন বিশ্বকে রেকর্ড করার জন্য হাক্সলি, অরওয়েল, স্কট ফিটজেরাল্ড, এমনকি টম উলফ, জে ম্যাকইনার্নি বা ব্রেট ইস্টন এলিস কোথায় ছিলেন? লাহোরের প্রেক্ষাপটে রচিত মোহসিন হামিদের উপন্যাস মথ স্মোক সেই পৃথিবীর প্রথম চিত্রায়নের একটি।[১৩]
তার দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য রিলাকট্যান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট-এ ব্যর্থ প্রেম ও ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত জীবন ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া একজন পাকিস্তানির গল্প বিবৃত করে। এটি ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় এবং এর ১ মিলিয়নের অধিক কপি বিক্রি হয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকায় ৪র্থ স্থান অধিকার করে।[১৪][১৫] উপন্যাসটি বুকার পুরস্কারের ক্ষুদ্রতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় এবং অ্যানিসফিল্ড-উল্ফ বই পুরস্কার, এশীয় আমেরিকান সাহিত্য পুরস্কার-সহ কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করে ও ২৫টি ভাষায় অনূদিত হয়। দ্য গার্ডিয়ান বইটিকে এই দশককে সংজ্ঞায়িত করা অন্যতম বই হিসেবে নির্বাচন করে।[১৬]
মথ স্মোক-এর মত দ্য রিলাকট্যান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে নিরীক্ষাধর্মী ছিল। উপন্যাসটি নাটকীয় স্বগতোক্তির ব্যবহার দেখা যায়, যেখানে পাকিস্তানি কেন্দ্রীয় চরিত্রটি অনবরত মার্কিন শ্রোতাকে সম্বোধন করতে থাকে যাকে কখনো সরাসরি কথা বলতে শোনা যায়নি। হামিদ বলেন আলবের কাম্যুর দ্য ফল বইটি তার এই বর্ণনাভঙ্গির আদর্শ হিসেবে কাজ করেছে।[১৭][১৮] একজন মন্তব্যকারীর মতে, এই কৌশলটির কারণে:
হয়ত আমরা পাঠকই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি; হয়ত বইটি আমাদের অবচেতন অনুমানগুলোকে প্রতিফলিত করার জন্য একটি রোরশাচ [Rorschach] হিসেবে লেখা হয়েছে। আমাদের না জানার মধ্যেই উপন্যাসের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে... হামিদ আক্ষরিক অর্থেই আমাদেরকে এক ধরনের গলিতে ফেলে চলে যায়, গল্পটি হঠাৎ করেই স্থগিত হয়ে যায়; এমনকি এটাও সম্ভব যে কিছু সহিংসতা ঘটতে পারে। তবে সম্ভবত, আমরা বিরোধপূর্ণ বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির থলে ধরে রেখেছি। আমাদের চেঞ্জিসের প্রতীকীবাদ নিয়ে চিন্তা করতে দেওয়া হয়েছে যেখানে আমরা প্রতীকবাদের খেলায় ধরা পড়েছি—এটি এমন একটি খেলা যার সাথে আমরা নিজেরাই পরিচিত।"[১৯]
তার তৃতীয় উপন্যাস হাউ টু গেট ফিলথি রিচ ইন রাইজিং এশিয়া দ্য নিউ ইয়র্কার-এর ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ সংখ্যায় এবং গ্রন্থ-এর বসন্ত ২০১৩ সংখ্যায় ভিন্নভাবে প্রকাশিত হয় এবং ২০১৩ সালের মার্চে রিভারহেড বুকস থেকে প্রকাশিত হয়।[২০][২১] পূর্ববর্তী বইগুলোর মত হাউ টু গেট ফিলথি রিচ ইন রাইজিং এশিয়া-এ উভয় ধরনের রীতির মিশ্রণ দেখা দিচ্ছে। মধ্যম পুরুষে বর্ণিত উপন্যাসটিতে দারিদ্রপীড়িত গ্রাম্য বালক থেকে উন্নয়নশীল এশিয়ার একটি অজানা শহরে ধনাট্য ব্যবসায়ীতে পরিণত কেন্দ্রীয় চরিত্রের জীবনযাত্রার গল্প বলা হয়েছে, যে অজানা একজন সুন্দরী নারীর প্রত্যাশায় রয়েছে পথে যার সাথে তার দেখা হয় কিন্তু কথা হয়নি। উন্নয়নশীল এশিয়ার সর্বত্র উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবকদের নিয়ে লেখা উপন্যাসটি সকৌতুক এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সময়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ভালোবাসার তৃষ্ণার চিত্রায়নে প্রগাঢ়তার পরিচয় দিয়েছে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর পর্যালোচনায় মিচিকো কাকুতানি উপন্যাসটিকে "গভীরভাবে আন্দোলিত" বলে উল্লেখ করে লিখেন যে হাউ টু গেট ফিলথি রিচ ইন রাইজিং এশিয়া "[হামিদকে] তার প্রজন্মের অন্যতম উদ্ভাবনী ও সহজাত গুণসম্পন্ন লেখক হিসেবে তার স্থান দৃঢ়তার সাথে পুনর্ব্যক্ত করে।"[২২]
এছাড়াও হামিদ রাজনীতি, শিল্পকলা, সাহিত্য, ভ্রমণ ও অনান্য বিষয়াবলি নিয়ে লিখেছেন, তন্মধ্যে তিনি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও উগ্রপন্থা নিয়ে সম্পাদকীয় লিখেছেন।[২৩] তার সাংবাদিকতা, প্রবন্ধ ও গল্পগুলো টাইম, দ্য গার্ডিয়ান ও ডন,[২৪] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট,[২৫] দ্য ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন,[২৬] দ্য প্যারিস রিভিউ ও অনান্য প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৩ সালে ফরেন পলিসি পত্রিকা তাকে বিশ্বের ১০০ শীর্ষ বৈশ্বিক চিন্তাবিদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
হামিদের চতুর্থ উপন্যাস এক্জিট ওয়েস্ট (২০১৭) নাদিয়া ও সাঈদ নামে এক তরুণ দম্পতি এবং অভিবাসন সমস্যায় জর্জরিত এক সময়ে তাদের সম্পর্ক নিয়ে রচিত। এটি ২০১৭ সালে বুকার পুরস্কারের ক্ষুদ্রতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
মুসলিম অস্তিত্বের সীমিত, প্রায়শই এক-পাক্ষিক উপস্থাপনা, ধর্মীয় প্রতীক/বিশ্বাসগুলোকে শুধুমাত্র সম্ভবত মৌলবাদী বা সন্ত্রাস-সহানুভূতিশীল ঝোঁকের সাথে যুক্ত করার জন্য আহ্বান জানানোর জন্যও তার উপন্যাসগুলো সমালোচিত হয়েছে।[২৭]
হামিদ ২০০৯ সালে তার স্ত্রী জাহরা ও তাদের কন্যা দিনাকে (জন্ম ১৪ আগস্ট ২০০৯) নিয়ে লাহোরে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি পাকিস্তান ও বিদেশে তথা লাহোর, নিউ ইয়র্ক, লন্ডন এবং ইতালি ও গ্রিস-সহ বিভিন্ন ভূমধ্যসাগরীয় দেশে সময় ভাগাভাগি করে বসবাস করছেন। হামিদ নিজেকে "শঙ্কর" বলে দাবী করেন,[২৮] এবং তার একটি লেখনীতে বলেন, "একটি উপন্যাস প্রায়ই একজন মানুষের তার নিজের সাথে সংলাপে বিভক্ত হতে পারে।"[২৯]
মোহসিন হামিদ নিম্নোক্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।