মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান | |||||
---|---|---|---|---|---|
৩য় সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি | |||||
দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন | ১৪ মে ২০২২ | ||||
প্রধান মন্ত্রী | |||||
উপরাষ্ট্রপতি | মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম | ||||
পূর্বসূরি | খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান | ||||
আবুধাবির আমির | |||||
রাজত্ব | ১৩ মে ২০২২ – বর্তমান | ||||
পূর্বসূরি | খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান | ||||
জন্ম | আল আইন | ১১ মার্চ ১৯৬১||||
দাম্পত্য সঙ্গী | সালামা বিনতে হামদান আল নাহিয়ান (বি. ১৯৮১) | ||||
বংশধর |
| ||||
| |||||
পিতা | জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান | ||||
মাতা | ফাতিমা বিনতে মুবারক আল কেতবি | ||||
সামরিক কর্মজীবন | |||||
আনুগত্য | সংযুক্ত আরব আমিরাত | ||||
সেবা/ | সংযুক্ত আরব আমিরাত বিমান বাহিনী | ||||
কার্যকাল | ১৯৭৯–বর্তমান | ||||
পদমর্যাদা | জেনারেল | ||||
ওয়েবসাইট | টুইটারে মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ইন্সটাগ্রামে মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান | ||||
শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান যিনি MBZ নামেও পরিচিত, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) এর তৃতীয় রাষ্ট্রপতি এবং আবুধাবির শাসক।[২] তিনি শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের তৃতীয় পুত্র, যিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং আবুধাবির শাসক ছিলেন। জায়েদ ২০০৪ সালের নভেম্বরে মারা যান এবং তার বড় ছেলে, মোহাম্মদের সৎ ভাই শেখ খলিফা বিন জায়েদ তার পদে স্থলাভিষিক্ত হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে খলিফা যখন স্ট্রোকের শিকার হন, তখন মোহাম্মদ আবুধাবির শাসক ছিলেন, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের নীতিনির্ধারণের প্রায় প্রতিটি দিক নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। [২] আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে আবুধাবির আমিরাতের অধিকাংশ দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব তাকে অর্পণ করা হয়েছিল। [৩] গবেষকরা বিন জায়েদকে স্বৈরাচারী শাসনের শক্তিশালী নেতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। [৪] [৫] [৬] [৭] কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনগণ তাঁর প্রেসিডেন্সিতে কোনো আপত্তি জানায়নি। ২০১৯ সালে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তাকে সবচেয়ে শক্তিশালী আরব শাসক এবং পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত করে। [৭] [৮] টাইম পত্রিকা কর্তৃক ২০১৯ সালে ১০০ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তির একজন হিসাবেও তাঁর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। [৯] ২০২২ সালের ১৩ মে শেখ খলিফার মৃত্যুর পর তিনি আবুধাবীর শাসক হন; [১০] এবং পরের দিন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। [১১]
শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ ১৯৬১ সালের ১১ মার্চ আল আইনে জন্মগ্রহণ করেন যা তখনকার ট্রুশিয়াল স্টেট ছিল।[১২] তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং আবুধাবির শাসক জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান এবং তার তৃতীয় স্ত্রী শেখা ফাতিমা বিনতে মুবারক আল কেতবির তৃতীয় পুত্র।[১৩] মোহাম্মদের ভাইরা হলেন: হামদান , হাজ্জা, সাঈদ, ইসা, নাহিয়ান, সাইফ, তাহনউন , মনসুর, ফালাহ, দিয়াব, ওমর ও খালিদ (পাশাপাশি চার মৃত ভাই; খলিফা , সুলতান, নাসের ও আহমেদ)। এরা ছাড়াও তার কয়েকজন বোন রয়েছেন। তবে এদের মধ্যে পাঁচজন তাঁর আপন ভাই। হামদান, হাজ্জা , তাহনউন , মনসুর এবং আবদুল্লাহ। এদেরকে বনি ফাতিমা বা ফাতেমার পুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[১৩]
বুঝশক্তি হওয়ার পর তার বাবা শেখ জায়েদ তাকে মরক্কোতে পাঠান। যাতে সেখানে সে শৃঙ্খলা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। তিনি তাকে ভিন্ন পদবি দেখিয়ে একটি পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছিলেন, যাতে সেখানে কেউ তাকে চিনে রাজকীয় আচরণ করতে না পারে। মোহাম্মদ বেশ কয়েক মাস স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় ওয়েটার হিসেবে কাজ করেম। তখন তিনি নিজের খাবার নিজেই তৈরি করতেন এবং নিজেই লন্ড্রি করতেন। মোহাম্মদ তার তৎকালীন জীবনের বর্ণনা দিয়েছিলেন এভাবে যে, ফ্রিজে এক বাটি তাবুলেহ থাকত এবং আমি দিনের পর দিন তা খেতে থাকতাম, যতক্ষণ না তার উপরে এক ধরনের ছত্রাক তৈরি হয়।[১৪]
শেখ মোহাম্মদ ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত আল আইন, আবুধাবির স্কুল এবং গর্ডনস্টোনের গ্রীষ্মকালীন স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তখন তার পিতা ইজ্জেদিন ইব্রাহিম নামে একজন সম্মানিত মিশরীয় মুসলিম ব্রাদারহুডপন্থি ইসলামি পণ্ডিতকে তার শিক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে তিনি রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি, স্যান্ডহার্স্টে যোগ দেন। স্যান্ডহার্স্টে থাকাকালীন তিনি একটি মৌলিক আর্মকোর্স, একটি ফ্লাইকোর্স, একটি প্যারাসুটিস্ট কোর্স এবং কৌশলগত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। স্যান্ডহার্স্টে থাকাকালীন তার সাথে হনপাহাং আব্দুল্লাহর সাথে পরিচয় হয়, যিনি পরে মালয়েশিয়ার রাজা হন। তারা দুজনেই রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টের ক্যাডেট অফিসার ছিলেন।[১৫]
এরপর মোহাম্মদ শারজাহতে অফিসার্স ট্রেনিং কোর্সে যোগ দিতে নিজ দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেশে ফিরে আসেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক বাহিনীতে রাষ্ট্রপতি-গার্ড থেকে শুরু করে আমিরাতি বিমান বাহিনীর একজন পাইলট পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সেক্টরে কর্মকতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন।[১৪]
Mohamed bin Zayed Al Nahyan এর রীতি | |
---|---|
উদ্ধৃতিকরণের রীতি | মহামান্য আমির |
কথ্যরীতি | মহামান্য আমিরের অনুগ্রহ |
বিকল্প রীতি | রঈস (President) |
২০২১ সালের এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি- সচিবের নির্দেশে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা-সিকাম্পেক এলিভেটেড টোল রোডের নাম পরিবর্তন করে শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ স্কাইওয়ে (জালান লায়াং মোহাম্মদ বিন জায়েদ ) রাখা হয়েছিল। [২৬]
8. শেখ জায়েদ বিন খলিফা আল নাহিয়ান | |||||||||||||||
4. সুলতান বিন জায়েদ বিন খলিফা আল নাহিয়ান | |||||||||||||||
2. শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়াম | |||||||||||||||
10. শেখ বুথি আল কুবাইসি | |||||||||||||||
5.শেখা সালমা বিনতে বুথি আল কুবাইসি | |||||||||||||||
1. শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান | |||||||||||||||
6. শেখ মোবারক আল কাতবী | |||||||||||||||
3. শেখা ফাতেমা বিনতে মোবারক আল কাতবী | |||||||||||||||
শেখ মোহাম্মদ মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জাতিসংঘের গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভকে 55 মিলিয়ন AED উপহার দেন। [২৭] রিচিং দ্য লাস্ট মাইল ফান্ডের জন্য তিনি $100 মিলিয়ন সংগ্রহ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন। [২৮] আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে শিশুদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য $50 মিলিয়নে অর্থ দান করেছেন। [২৯] [৩০] [৩১] [৩২] এছাড়াও রোল ব্যাক ম্যালেরিয়া পার্টনারশিপে তিনি $৩০ মিলিয়ন অর্থের অবদান রেখেছেন। [৩৩] [৩৪] [৩৫]
মোহাম্মদ বিন জায়েদ ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত লুভরে আবুধাবি, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গুগেনহেইম আবু ধাবি এবং কাসর আল হোসনের মতো সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং শিল্প জাদুঘর স্থাপনের কাজে জড়িত ছিলেন। [৩৬] [৩৭] [৩৮] [৩৯]
মোহাম্মদ বিন জায়েদ তার বিগত জীবনে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড, বিমানবাহিনীতে পাইলট, আমিরাতি বাহিনীর প্রতিরক্ষা কমান্ডার এবং সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৫ সালে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্রবাহিনীর ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার নিযুক্ত হন এবং তদনুসারে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন। [৪০] [৪১]
১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে যখম মোহাম্মদ একজন সহকারী সেক্রেটারি অফ সেস্ট ছিলেম, তিনি রিচার্ড ক্লার্ককে বলেছিলেন যে, তিনি F-16 ফাইটার জেট কিনতে চান। ক্লার্ক তখন এই বলে উত্তর দিয়েছিলেন যে, তিনি অবশ্যই F-16A বলতে চাইছেন, যে মডেলের জেট পেন্টাগন সাধারণত তার মিত্রদের কাছে বিক্রি করে। তা শুনে মোহাম্মাদ বলেছিলেন যে, এটার পরিবর্তে তিনি আরো উন্নত রাডার ও অস্ত্রসম্মত একটি নতুন মডেল কিনতে চান, যে সম্পর্কে তিনি "এভিয়েশন উইকে" পড়েছিলেন। ক্লার্ক তাকে বলেছিলেন যে, সেই মডেলটি এখন আর নেই। কারণ সামরিক বাহিনী সেটার প্রয়োজনীয় গবেষণা ও উন্নয়ন করেনি। মোহাম্মদ বলেন, তাহলে ইউএই গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য অর্থ প্রদান করবে। পরবর্তীতে সেই আলোচনা লাগাতার কয়েক বছর ধরে চলেছিল এবং ক্লার্কের মতে, "তিনি ইউএস এয়ার ফোর্সের চেয়ে উন্নত F-16 নিয়েই সেই আলোচনা শেষ করেছিলেন"। [৪২]
মোহাম্মদ নিজ দেশের স্কুলে জুজুৎসু বাধ্যতামূলক করেছেন। ২০১৪ সালে তিনি একটি সামরিক খসড়া তৈরি করে তরুণ আমিরাতীদের এক বছরের জন্যে বুটক্যাম্পে যোগদান করতে বাধ্য করেন। আমিরাতি সামরিক বাহিনীকে পুনর্গঠিত করার লক্ষ্যে তিনি অস্ট্রেলিয়ার স্পেশাল অপারেশন কমান্ডের অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন প্রধান মেজর জেনারেল মাইক হিন্দমার্শ আমন্ত্রণ জানান। নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, মোহাম্মদের এমন দৃষ্টিভঙ্গির ফলস্বরূপ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েল ব্যতীত এই অঞ্চলের সেরা সজ্জিত ও প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। [৪২]
মোহাম্মদের নেতৃত্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনী তাদের স্বল্প সক্রিয়কর্মী থাকা সত্ত্বেও নিজেদের সক্রিয়তা এবং কার্যকর সামরিক ভূমিকার ফলস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল এবং সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিস কর্তৃক "লিটল স্পার্টা" নামে ভূষিত হয়। [৪৩] ২০২০ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে মোহাম্মদের সংস্কার সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক বাহিনীর কার্যকারিতা সফলভাবে বৃদ্ধি করেছে। [৪৪]
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মোহাম্মদ বিন জায়েদকে স্বৈরাচারী শাসনের শক্তিশালী নেতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। [৪] [৫] [৬] [৭] কারণ তার দেশে কোনো অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন নেই।সেখানে [২] রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার সীমিত,[১৩] বাক স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত [১৩] [১৪] এবং দেশে কোনো স্বাধীন মিডিয়া নেই। [২] মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে নির্যাতন ও নির্বিচারে আটক চলে এবং নাগরিক ও বাসিন্দাদের জোরপূর্বক গুম করা হয়। [১৭] [১৩] রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ডেভিডসন আমিরাতি নেতা হিসেবে মোহাম্মাদের কার্যকালকে "স্বৈরাচারী-কর্তৃত্ববাদের একটি চিহ্নিত ও বর্ধিত সময় হিসাবে অভিহিত করেছেন। [৫]
বিশ্লেষকরা মোহাম্মদ বিন জায়েদের শাসনামলে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে একটি ভাড়াটে রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। [৪৫]কারণ রাষ্ট্রের সকল বড় বড় আর্থিক সংস্থা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের তিনি প্রধান বা চেয়ারমান। তিনি আবুধাবি কাউন্সিল ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (ADCED) এর প্রধান, [৪৬] [৪৭] [৪৮] আবুধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (ADIA) এর ডেপুটি চেয়ারম্যান, [৪৯] মুবাদালা ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান [৫০] ( এটি একটি আমিরাতি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হোল্ডিং কোম্পানি যাকে সার্বভৌম সম্পদ তহবিল হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে)। [৪৬] [৫১]
এছাড়াও তিনি আবুধাবি বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান [৫২] [৫৩] এবং তাওয়াজুন ইকোনমিক কাউন্সিলের প্রধান, যেটি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পূর্বে ইউএই অফসেট প্রোগ্রাম ব্যুরো নামে পরিচিত ছিল।[৫৪] এসবের সাথে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আবুধাবি শিক্ষা ও জ্ঞান বিভাগ এবং [৫৫] [৫৬] আবুধাবি জাতীয় তেল কোম্পানির সুপ্রিম পেট্রোলিয়াম কাউন্সিলের চেয়ারম্যানও তিনি। এই কাউন্সিলটি আবু ধাবির হাইড্রোকার্বন সম্পদের প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা। [৫৭] [৫৮] [৫৯]
২০০৩ সালের নভেম্বরে শেখ জায়েদ তার ছেলে মোহাম্মদকে আবুধাবির ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স নিযুক্ত করেন। [৬০] [৬১] [৫০] ২০০৪ সালের নভেম্বরে পিতার মৃত্যুর পর শেখ মোহাম্মদ আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স হন এবং ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার নিযুক্ত হন। ওই মাসেই তাকে জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং তার বড় সৎ ভাই খলিফা বিন জায়েদের বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
২০১৪ সালের জানুযারিতে শেখ খলিফার অসুস্থতা হলে কার্যত [৬২] মোহাম্মদই আবুধাবির প্রকৃত শাসক হন এবং আবুধাবি শহরে আগমনকারী বিশিষ্ট দেশি বিদেশী ব্যক্তিদের স্বাগত জানাতেন। [৬৩] [৬৪] [৬৫] ২০২২ সালের ১৩ মে তিনি বড় ভাই শেখ খলিফার মৃত্যুর পর আবুধাবির শাসক হন [১০] এবং পরেরদিন ১৪ মে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। [১১]
২০১৮ সালে বিন জায়েদ ইউএই থেকে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি কাটাতে ইথিওপিয়াকে $3 বিলিয়ন অনুদানের প্রথম কিস্তি প্রদানের আগে প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের সাথে দেখা করতে ইথিওপিয়ায় ভ্রমণ করেছিলেন। মোহাম্মদের ব্যক্তিগত উৎসাহ ও উদ্যোগে সংযুক্ত আরব আমিরাত খরা চলাকালীন সোমালিয়াকে সহায়তা প্রদানের জন্য একটি তহবিল সংগ্রহ করেছিল। [৬৬] [৬৭] [৬৮]
মোহাম্মদ ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের পর ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের একজন দৃঢ় সমর্থক ছিলেন এবং ইয়েমেনে হুথি দখলের পর হুথিদের তাড়ানোর জন্য ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা-সমর্থিত হস্তক্ষেপকে সমর্থন করেছিলেন। [৬৯] ২০১৮ সালের নভেম্বরে মোহাম্মদের ফ্রান্স সফরের সময় একদল অধিকারকর্মী তৎকালীন ক্রাউন প্রিন্সের বিরুদ্ধে "ইয়েমেনে যুদ্ধাপরাধ, নির্যাতন এবং অমানবিক আচরণে জড়িত থাকার" অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। ফরাসী মানবাধিকার গোষ্ঠী এআইডিএল-এর পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়: "ক্ষমতার জন্য তিনি অন্যায়ভাবে ইয়েমেনি ভূখণ্ডে বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।" [৭০]
মোহাম্মদ বিন জায়েদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার প্রধান মিত্র হিসাবে বিবেচনা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব জিম ম্যাটিস এবং সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রিচার্ড এ. ক্লার্কসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের সাথে তার শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসাবে মোহাম্মদ তাদের সাথে পরামর্শ করেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা বাড়ানোর বিষয়ে তাদের পরামর্শ অনুসরণ করেন। ওবামা প্রশাসনের সাথে প্রাথমিকভাবে বিন জায়েদের সম্পর্ক ভালোই ছিল কিন্তু ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি সম্পর্কে বারাক ওবামা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে পরামর্শ না করার কারণে বা চুক্তি সম্পর্কে আমিরাতকে অবহিত না করার কারণে তাদের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তাদের মাঝে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে ২০১৬ সালে, যখন আটলান্টিকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে ওবামা উপসাগরীয় শাসকদের "মুক্ত অশ্বারোহী হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন যে, "তারা নিজেদের আগুন নেভানোরও ক্ষমতা রাখে না"। ওবামার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার সাথে দেখা করতে বিন জায়েদ নিউইয়র্কে উড়ে যান। [৪২] [৭১]
২০২০ সালের আগস্টে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং শেখ মোহাম্মদ যৌথভাবে আনুষ্ঠানিক ইসরাইল-সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। [৭২] 2022 সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিন জায়েদকে ফোন করেছিলেন তখন বিন জায়েদ তার ফোনকল অস্বীকার করেছিলেন। [৭৩]
২০২২ সালের ২২ মার্চ বিন জায়েদ মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের সাথে মিশরে দেখা করেছিলেন। তখন তারা ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ক, রাশিয়া-ইউক্রেনীয় যুদ্ধ এবং ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন বলে ধারণা করা হয় [৭৪] [৭৫]
বিন জায়েদ রাশিয়া ও তার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। রাশিয়া এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মাঝে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আলোচনায় তিনি মধ্যস্থতাও করেছিলেন। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপে বিন জায়েদও জড়িত ছিল বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল। [৭৬] রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের সাথে বিন জায়েদের দৃঢ় সম্পর্ক এবং উভয় দেশে তার প্রভাবের কারণে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকা তাকে আরব বিশ্বের "সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক" হিসাবে চিহ্নিত করেছে। [৭৭]
পুতিন মোহাম্মদকে তার "পুরনো বন্ধু" এবং "রাশিয়ার একজন বড় বন্ধু" বলে অভিহিত করেন। দুই নেতা নিয়মিত ফোনে কথাও বলেন। [৭৮] আমিরাতে একটি সরকারী রাষ্ট্রীয় সফরে পুতিন মোহাম্মদকে একটি রাশিয়ান জিরফ্যালকন উপহার দেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম দুই মহাকাশচারী হাজ্জা আল মানসৌরি এবং সুলতান আল নেয়াদিকে রাশিয়া প্রশিক্ষণ দিয়েছিল এবং রাশিয়ার সহায়তায় তারা প্রথম আমিরাতি ও প্রথম আরব মহাকাশচারী হিসেবে হাজ্জা আল মানসৌরি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সফলভাবে অবতরণ করেন।
২০২১ সালের আগস্টে বিন জায়েদ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের সাথে আলোচনা করেছিলেন। [৭৯] এর আগে লিবিয়া ইস্যুতে কর্তৃত্ব খাটাতে গিয়ে উভয়ের দেশের মাঝে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। ২০২১ সালেআফগানিস্তানে তালেবানের বিজয় এবং মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী - সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তুরস্কের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হতে শুরু করে। [৮০]
মোহাম্মদের বিন জায়েদের নেতৃত্বে সংযুক্ত আরব আমিরাত এই অঞ্চলে প্রথম শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি বারাকাহ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে। [৮১] সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক সহযোগিতার জন্য একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছে যা পারমাণবিক অপ্রসারণের আন্তর্জাতিক মান উন্নত করে আশা করা হয়। [৮২]২০১২ ও ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত পারমাণবিক নিরাপত্তা শীর্ষ সম্মেলনে বিন জায়েদ উপস্থিত হয়েছিলেন, যা যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া ও নেদারল্যান্ডে আয়োজিত হয়েছিল। [৮৩]
ইসলাম সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারী ধর্ম এবং সেখানে ব্লাসফেমি, অমুসলিম কর্তৃক মুসলিমদের ধর্মান্তরিতকরণে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক আইন রয়েছে। আমিরাতি সংবিধান সব ধর্মের স্বাধীন উপাসনার গ্যারান্টি দেয়, যতক্ষণ না এটি স্থানীয় জননীতি বা নৈতিকতার বিরোধী হিসেবে পর্যবসিত না হয়। [৮৪] আমিরাতি সরকার কঠোরভাবে মুসলিম আইন কানুন নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করে। [৮৫] কুরআন বা ইসলাম সম্পর্কিত বিষয়বস্তুতে বক্তৃতা প্রদান এবং সে সম্পর্কিত বিষয়াদি প্রকাশের জন্য সরকারী অনুমতি প্রয়োজন হয়। দেশের সকল ইমামকে অবশ্যই আমিরাতি সরকারের কাছ থেকে তাদের বেতন গ্রহণ করতে হয়। [৮৫]
শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ ১৯৮১ সালে শেখা সালামা বিনতে হামদান আল নাহিয়ানকে বিয়ে করেন।[৮৬] তারা তাদের মোট নয়জন সন্তান আছে ; চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। সেই সাথে তাঁরা দুইজন কন্যা সন্তান দত্তক নিয়েছেন। সন্তানদের থেকে তাদের মোট ১৫ জন নাতি-নাতনি রয়েছে।[৮৭] তাদের সন্তানরা হলেন:
আরবদের ঐতিহাসিক স্বভাব মাফিক শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বাজপাখির প্রতি খুবই অনুরাগী এবং আমিরাতের নতুন প্রজন্মের মাঝে প্রাচীন আরবের ঐতিহ্যের প্রচার এবং তা টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে মোহাম্মদ বিন জায়েদ ফ্যালকনি ও ডেজার্ট ফিজিওগনোমি নামে স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি নিজেই এ বিষয়ে তার বাবার কাছ থেকে অনুশীলন শিখেছিলেন। [৮৯][৯০]
শেখ মোহাম্মদ এখনো নিজের উত্তরাধিকার হিসেবে একজন ক্রাউন প্রিন্স বেছে নেননি। আল জাজিরার মতে, বিন জায়েদ সম্ভবত তার ভাই মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বা তাহনউন বিন জায়েদ আল নাহিয়ান অথবা তার নিজের ছেলে খালেদ বিন মোহাম্মদ আল নাহিয়ানকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করবেন।[৯১]
২০২০ সালের ১৭ জুলাই ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে সেখানে "যুদ্ধাপরাধে জড়িড থাকার অভিযোগে" মোহাম্মদ বিন জায়েদকে লক্ষ্য করে তদন্ত চালানোর জন্য একজন ফরাসি তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ক্রাউন প্রিন্সের প্যারিসে সরকারী সফরের সময় তার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ দায়ের করার পরে তদন্তটি প্রাথমিকভাবে অক্টোবর ২০১৯ সালের অক্টোবরে শুরু করা হয়েছিল।[৯২]
দুটি অভিযোগের মধ্যে একটি ছয়জন ইয়েমেনি নাগরিক সম্পর্কে অভিযোগ করা হয়েছিল, তারা বলেছিল যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি জেলখানাগুলিতে তাদের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট এবং সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি রিপোর্ট দাবী করে যে, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের হামলা (যে জোটে সংযুক্ত আরব আমিরাতও আছে) যুদ্ধাপরাধ সৃষ্টি করতে পারে এবং আমিরাত বাহিনী কর্তৃক নিয়ন্ত্রণিত দুটি কেন্দ্র থেকে নির্যাতন চালানো হতে পারে।[৯৩]
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)