মৌন্যা မုံရွာမြို့ | |
---|---|
শহর | |
মিয়ানমারে মৌন্যার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৬′৩০″ উত্তর ৯৫°৮′৩০″ পূর্ব / ২২.১০৮৩৩° উত্তর ৯৫.১৪১৬৭° পূর্ব | |
দেশ | মিয়ানমার |
অঞ্চল | সাগাইং অঞ্চল |
জেলা | মৌন্যা জেলা |
শহরাঞ্চল | মৌন্যা শহরাঞ্চল |
জনসংখ্যা (২০১৪ মিয়ানমার আদমশুমারি)[১] | |
• শহর | ৩,৭২,০৯৫ |
• পৌর এলাকা | ২,০৭,৪৮৯ |
• গ্রামীণ | ১,৬৪,৬০৬ |
• ধর্ম | বৌদ্ধধর্ম |
সময় অঞ্চল | মায়ানমার মান সময় (ইউটিসি+৬.৩০) |
এলাকা কোড | ৭১[২] |
মৌন্যা (বর্মী: မုံရွာမြို့ মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের বৃহত্তম শহর। এটি মান্দালয় থেকে ১৩৬ কিমি. উত্তরপশ্চিমে চিন্দুইন নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত।
একে নিম শহরও বলা হয় কারণ শহরটির অনেকগুলো রাস্তায় নিমগাছের সারি রয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
'শুকনো উপত্যকায়' মৌন্যা এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একমাত্র স্থান যেখানে উষ্ণ আধা-শুষ্ক জলবায়ু রয়েছে।[৩][৪] খুব উচ্চ তাপমাত্রা (উচ্চ বাষ্পীভবন) এবং দীর্ঘ শুকনো মরসুমের কারণে শহরটি ক্রান্তীয় সাভানা/ভেজা এবং শুষ্ক জলবায়ু হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হয় না। আরাকান পর্বতের নিকটে অবস্থিত হওয়ায় 'শুকনো উপত্যকা' বৃষ্টিপাত পায় না। তাপমাত্রা সারা বছরই খুব বেশি থাকে যদিও শীতের মাসগুলোতে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে মৃদু হয় (জানুয়ারিতে প্রায় ২১° সে)। এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের প্রথম দিকে বর্ষায় অনেক গরম থাকে, এপ্রিল মাসে গড় উচ্চ তাপমাত্রা ৩৮.৪° সে (১০১.১° ফা) এ পৌঁছে যায়।
১৯ অক্টোবর, ২০১১-তে মৌন্যাতে ১৩৯ মিলিমিটার (৫.৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়েছিল। ৪৭ বছর ধরে মৌন্যায় অক্টোবরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টিপাতের একটি নতুন রেকর্ড হয়। পূর্ববর্তী রেকর্ডটি ছিল ২৪ অক্টোবর, ১৯৬৭ সালে ১৩৫ মিলিমিটার (৫.৩ ইঞ্চি)।[৫]
মৌন্যা (১৯৮১–২০১০)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩৩.৮ (৯২.৮) |
৩৯.৩ (১০২.৭) |
৪১.৫ (১০৬.৭) |
৪৪.০ (১১১.২) |
৪৫.৮ (১১৪.৪) |
৪৩.৫ (১১০.৩) |
৪২.০ (১০৭.৬) |
৪১.০ (১০৫.৮) |
৩৮.৯ (১০২.০) |
৩৮.৮ (১০১.৮) |
৩৭.৪ (৯৯.৩) |
৩২.৬ (৯০.৭) |
৪৫.৮ (১১৪.৪) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৯.১ (৮৪.৪) |
৩২.৫ (৯০.৫) |
৩৬.৫ (৯৭.৭) |
৩৯.১ (১০২.৪) |
৩৭.৯ (১০০.২) |
৩৪.৯ (৯৪.৮) |
৩৬.০ (৯৬.৮) |
৩৪.৮ (৯৪.৬) |
৩৩.৮ (৯২.৮) |
৩২.৯ (৯১.২) |
৩০.৭ (৮৭.৩) |
২৮.৬ (৮৩.৫) |
৩৩.৯ (৯৩.০) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১৩.৫ (৫৬.৩) |
১৫.৫ (৫৯.৯) |
১৯.০ (৬৬.২) |
২৩.৩ (৭৩.৯) |
২৫.৪ (৭৭.৭) |
২৫.৮ (৭৮.৪) |
২৫.৯ (৭৮.৬) |
২৫.৫ (৭৭.৯) |
২৪.৭ (৭৬.৫) |
২৩.৪ (৭৪.১) |
১৯.৩ (৬৬.৭) |
১৫.০ (৫৯.০) |
২১.৪ (৭০.৫) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ১০.০ (৫০.০) |
১১.০ (৫১.৮) |
১৪.২ (৫৭.৬) |
১৮.০ (৬৪.৪) |
২০.০ (৬৮.০) |
২০.২ (৬৮.৪) |
২৩.১ (৭৩.৬) |
২১.০ (৬৯.৮) |
২০.৪ (৬৮.৭) |
১৭.৬ (৬৩.৭) |
১২.০ (৫৩.৬) |
৮.৩ (৪৬.৯) |
৮.৩ (৪৬.৯) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১.০ (০.০৪) |
১.২ (০.০৫) |
৭.৮ (০.৩১) |
২৫.৮ (১.০২) |
৮৭.৪ (৩.৪৪) |
৮৮.৩ (৩.৪৮) |
৫০.৬ (১.৯৯) |
১০৪.১ (৪.১০) |
১৬১.৬ (৬.৩৬) |
১১৩.৯ (৪.৪৮) |
৩৭.৩ (১.৪৭) |
৩.৭ (০.১৫) |
৬৮২.৭ (২৬.৮৮) |
উৎস: Norwegian Meteorological Institute[৬] |
মৌন্যায় মান্দালয়-বুদালিন শাখা রেললাইন রয়েছে। তবে, মৌন্যায় বাস দিয়ে যাওয়া আরও ভালো যেহেতু মান্দালয় থেকে স্থলপথের অবস্থা যথেষ্ট ভাল। মৌন্যার সাথে বুদালিন, দাবায়িন, ইয়ে-উ এবং কিন-উর রাস্তা দিয়ে সংযোগ আছে। রেলপথে সাগাইং ও মান্দালয়-ম্যিতক্যিনা লাইনের সাথে সংযোগ আছে।[৭] বর্ষা মৌসুমে ৬৪০ কিলোমিটার (৪০০ মাইল) হকামতি এবং বছরের বেশিরভাগ সময় হোমালিনে চলাচল করায় চিন্দুইন নদীতে নৌপরিবহন সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[৮][৯]
মৌন্যা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আশেপাশের চিন্দুইন উপত্যকা কৃষিপণ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র। কৃষিপণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে শিম, কমলা, ডাল ও গুড়। এছাড়াও, স্থানীয় শিল্পে তুলা, ময়দা, নুডলস এবং ভোজ্যতেল উত্পাদনের জন্য কারখানা রয়েছে। ওয়েট উডাঙ্ক নামে পরিচিত সসেজ বেশ জনপ্রিয় এবং বুদালিন লুঙ্গি কাপড়ের দৃঢ়তা এবং চেক নকশার জন্য পরিচিত। মৌন্যার রুক্ষ সুতির কম্বল মিয়ানমার জুড়ে বিখ্যাত (মৌন্যা এক শতাব্দী ধরে দেশের কম্বলের ৮০% সরবরাহ করে)।[১০] কিছু কম্বল ব্যাকপ্যাকের মধ্যে সেলাই করে ব্যাংককের পর্যটকদের বিক্রি করা হয়। অন্যান্য আঞ্চলিক কারুশিল্পের মধ্যে রয়েছে বাঁশ এবং খড়ের পণ্য, গরুর গাড়ি এবং কৃষি সরঞ্জাম। কিউউকা গ্রাম প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য বার্ণিশ করা পাত্রের জন্য সুপরিচিত।
ভারত থেকে আসা কালো বাজারের পণ্য, বিশেষত শাড়ি এবং সাইকেলের অংশ মৌন্যা হয়ে মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলে যায়।
মৌন্যার পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হলো থামবুদ্ধে প্যাগোডা, একটি বৌদ্ধমন্দির যেখানে ইন্দোনেশিয়ার বরোবুদুরের মতো একটি স্তূপ রয়েছে। এটি ১৩০৩ সালে তৈরি, যদিও এটি ১৯৩৯ সালে পুনর্গঠন করা হয়েছিল। এতে বুদ্ধের ৫০০,০০০ এরও বেশি চিত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়। কাছেই রয়েছে মহা বোধি তাহতং লায়কুন সেক্ক্যা বুদ্ধ মূর্তি, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মূর্তি যার উচ্চতা ১১৮,৮২ মিটার (পাদদেশ সহ মোট ১২৯.২৩ মিটার)। ১৯৬০ এর দশকে মহা বোধি তা হতাং সায়াডাও দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধ মূর্তি, বোধি গাছ এবং প্যাগোডা দিয়ে ভরা একটি বিস্তীর্ণ স্থানের কেন্দ্রবিন্দু এটি। এটিতে ৯৫ মিটার উচ্চতার আরেকটি বুদ্ধ মূর্তি রয়েছে।[১১]
আরেকটি আকর্ষণ হলো চিন্দুইন নদীর পারে ফোইন্টাং গুহা কমপ্লেক্স, যা মৌন্যা প্রায় ২৫ কিলোমিটার (১৬ মাইল) পশ্চিমে।
বুদালিনে অবস্থিত নিয়াউং-গান ব্রোঞ্জ যুগের কবরস্থানের বয়স খ্রিস্টপূর্ব ১,৫০০ থেকে ৫০০। এখানে ব্রোঞ্জের সরঞ্জাম, সিরামিক এবং পাথরের নিদর্শন আছে। মৌন্যার উত্তরে একটি সংকীর্ণ পথ দিয়ে সেখানে যেতে ৬০ মিনিটের মতো সময় লাগে।[১২]
এখানের সুবিধা খুব সীমিত হওয়ায় মৌন্যাতে খুব কম পর্যটক আসে।
মৌন্যার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে:
বার্মিজ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্র বহু বছর ধরে মৌন্যা অঞ্চলে (চিন্দুইন নদীর পশ্চিমে) ছিল। যদিও বার্মিজ কমিউনিস্ট পার্টি এখন আর সক্রিয় নয়, মৌন্যায় মিয়ানমারের সামরিকের উপস্থিতি আছে।
কবিদের কেন্দ্র হিসাবে মৌন্যা জাতীয়ভাবে পরিচিত এবং একে প্রায়শই মিয়ানমারের উত্তরের কাব্য কেন্দ্র হিসাবে অভিহিত করা হয়। এখানে সমসাময়িক কবি এবং প্রকাশক মিন সুই হ্নিতের বাড়ি, যিনি ২০১৯ এর শীতকালে প্রায় ১০০ খণ্ড কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। সমসাময়িক কবি এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার কি জাও আয়ের বাড়িও মৌন্যায়।