ম্যাগনাস নাট এঙ্ককেল (হামিনা, ৯ নভেম্বর, ১৮৭০ - স্টকহোম, ২৭ নভেম্বর, ১৯২৫) ছিলেন একজন ফিনিশ চিত্রশিল্পী।
এঙ্ককেল ছিলেন এক ভিক্যার পরিবারের কনিষ্ঠ পুত্র। তিনি পূর্ব ফিনল্যান্ডের একটি ক্ষুদ্র প্রাদেশিক রাজধানীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। হেলসিঙ্কিতে তিনি চিত্রকলা শিক্ষা করেছিলেন।
১৮৮৯-৯১ নাগাদ হেলসিঙ্কিতে যখন তিনি ছাত্রজীবন অতিবাহিত করতেন, সেই সময় সেখানকার চিত্রশৈলীর প্রতিষ্ঠিত আদর্শ ছিল ন্যাচারালিজম বা প্রকৃতিবাদ। তিনিই প্রথম ফিনিশ শিল্পী যিনি নিজের চিত্রকর্মে প্রকৃতিবাদকে অস্বীকার করেছিলেন। ১৮৯১ সালে তিনি প্রথমবার প্যারিসে যান। এখানে তিনি আকাদেমি জুলিয়ানের জুল-জোসেফ লেফেব্র আন্ড বেঞ্জামিন কনস্ট্যান্ট-এ চিত্রকলা শিক্ষা করেন। এখানে তিনি প্রতীকবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পিয়ের পুভিস দে চাভানেস-এর শিল্পকর্মের দ্বারা তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। সেই সময়কার নব্য প্রতীকবাদী আন্দোলনের শরিক হয়ে তিনি প্রতীকবাদী সাহিত্যের ধ্যানধারণাও ধার করে আনেন।
ব্রিটানিতে থাকাকালীন তিনি হাল্কা রং ব্যবহার করে সেলফ পোর্ট্রেট ও ব্রেটন উম্যান ছবিদুটি আঁকেন। তিনি রেনেসাঁ ও সার পেলাডানের আদর্শবাদী ও অতীন্দ্রিয় ধারণার প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। পেলাডানের থেকেই তিন সৌন্দর্যের উভকামী ধারণাটি গ্রহণ করে তার চিত্রকর্মে প্রয়োগ করেন।
১৮৯৩ সালে দ্বিতীয়বার প্যারিসবাসের সময় তিনি দ্য অ্যাওয়েকেনিং নামে একটি ছবি আঁকেন। এই ছবিতে তার রীতিনিষ্ঠা ও স্বচ্ছ রঙের ব্যবহার লক্ষণীয়। ছবিটি এক ধরনের আধ্যাত্মিক পরিবেশের কথা মনে করায়।
এঙ্ককেল ছিলেন সমকামী। তার এই সত্ত্বাটি প্রতিফলিত হয়েছে তার ইরোটিক চিত্রকলায়। রটলেজের "হুজ হু ইন গে অ্যান্ড লেসবিয়ান হিস্ট্রি" অনুযায়ী, "পুরুষের প্রতি তাঁর প্রেমের কথা অস্বীকার করা না হলেও, তা অপ্রাসঙ্গিক।... এঙ্ককেলের নগ্ন পুরুষ ও বালকেরা খোলামেলাভাবেই কামোদ্দীপক ও ইন্দ্রিয়পরায়ণ। তাঁর ছবিতে পুরুষের নগ্নতা নিষ্কলুষ নয়।"[১]
১৮৯৪ ও ১৮৯৫ সালে তিনি মিলান, ফ্লোরেন্স, রাভেনা, সিয়েনা ও ভেনিস ভ্রমণ করেন। এই বছরগুলি ছিল শিল্পীয় যন্ত্রণাদায়ক অন্তর-সংঘাতের বছর। শিল্প ও জীবনের পারস্পরিক সম্পর্কে এই সময় তার চিত্রকর্মকে প্রভাবিত করেছিল।
ইতালিতে অবস্থানের সময় তিনি ছবিতে অনেক বেশি রঙের ব্যবহার করতে শুরু করেন এবং এখানেই তার ছবিগুলিতে একটি আশাবাদী আদর্শ প্রতিষ্ঠালাভ করে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম বছরগুলিতে উত্তর-প্রভাববাদের প্রভাবে তিনি উজ্জ্বলতর এবং অধিক বর্ণযুক্ত প্যালেট অঙ্কন শুরু করেন। এই সিরিজের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল দ্য বেদার্স। এটি ঘন ও জীয়ন্ত রঙে অঙ্কিত। ভারনার থোম ও এলেন থেস্লেফের সঙ্গে তিনি "সেপটেম" নামে একটি গোষ্ঠী স্থাপন করেন। এই গোষ্ঠীর শিল্পীরা নিজেদের মধ্যে স্বকীয় ধারণা বিনিময় করতেন।
১৯০৭ সালে এঙ্ককেল ট্যামপারের নতুন ক্যাথিড্রালের বেদিচিত্র অঙ্কনের বরাত পান। পুনরুজ্জীবনের এই ছবিটি দশ মিটার লম্বা ও চার মিটার চওড়া। এই ছবিতে দেখা যায় সকল জাতি ও সকল দেশের মানুষ কবর থেকে উঠে আকাশপথে হাঁটছে। ছবির কেন্দ্রে রয়েছে দুজন মানুষ হাতে হাত রেখে হাঁটছে।
১৯২৫ সালে স্টকহোমে এঙ্ককেলের জীবনাবসান হয়। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া জাতীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়। ফিনল্যান্ডের তার পিতৃপুরুষের গ্রামে তাকে সমাধিস্থ করা হয়