ভেন ম্যাগনাস ওয়েন কার্লসেন (নরওয়েজীয়: Sven Magnus Øen Carlsen; জন্ম: ৩০ নভেম্বর, ১৯৯০) ভেস্টফোল্ড অঞ্চলের টন্সবার্গে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত নরওয়েজীয় দাবাড়ু ও গ্র্যান্ডমাস্টার। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ১নং দাবা খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান ও বর্তমান বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আসীন। তার সর্বোচ্চ রেটিং হচ্ছে ২৮৭২ যা দাবার ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেটিং।
শৈশবকাল থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমায় খেলায় অভ্যস্ত ম্যাগনাস কার্লসেন পরবর্তীকালে নিজেকে আরও উন্নয়ন ঘটিয়ে বিশ্বমানের খেলোয়াড়ে রূপান্তরিত হন। তিনি অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের ন্যায় শুরু করার জন্য প্রস্তুতিতে বিশ্বাসী নন এবং বিভিন্ন ধরনের সূচনা করে খেলা শুরু করেন যা প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের কাছে বেশ কঠিন ও বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। দাবার ঘুটির অবস্থানে প্রভূত্ব ও শেষদিকের পরাক্রমের ফলেই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হোসে রাউল কাপাব্লাঙ্কা, ভাসিলি স্মাইস্লোভ ও আনাতলি কারপভের ন্যায় খেলোয়াড়গণ তার সাথে ড্র করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
প্রকৌশলী দম্পতি সিগ্রান ওয়েন এবং হেনরিক আলবার্ট কার্লসেনের সন্তান ম্যাগনাস কার্লসেন নরওয়ের টন্সবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারটি ফিনল্যান্ডের ইস্পু এলাকায় অবস্থানের পর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে চলে যান। তারপর তারা ১৯৯৮ সালে নরওয়েতে ফিরে আসেন ও বেরামে বসবাস করতে থাকে। পুনরায় তারা হ্যাজলামে চলে যান।[১] খুব ছোট অবস্থাতেই তার বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ ঘটে। দুই বছর বয়সেই ৫০ অংশের জিগস পাজল সমাধান করতে পেরেছিলেন। চার বছর বয়সেই ১০-১৪ বছর বয়সীদের উপযোগী লেগো সেট সাজাতে পেরেছেন।[২]
পাঁচ বছর বয়সে কার্লসেনের বাবা তাকে কীভাবে দাবা খেলতে হয় - এ বিষয়ে শিক্ষা দেন। কিন্তু তিনি শুধুমাত্র কৌতূহলের বশবর্তী হয়েই তাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন।[৩] বেন্ট লারসেনের ফাইন্ড দ্য প্ল্যান শিরোনামের দাবাবিষয়ক বই প্রথম পড়েন।[৪] প্রারম্ভিক সময়ে দাবায় দক্ষতা অর্জনের জন্য একসময় কার্লসেন চাল ফেলার জন্য একাকী ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করেছেন, যোগসূত্রের সন্ধান করেছেন, পুনরায় খেলেছেন এবং বাবার নির্দেশিত পন্থায় অবস্থান নিয়েছেন।
১৯৯৯ সালে নরওয়েজীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশীপে শিশু বিভাগে কার্লসেন আট বছর ৭ মাস বয়সে প্রথমবারের মতো দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। ১১ রাউন্ডের খেলায় তিনি সাড়ে ছয় পয়েন্ট লাভ করেছিলেন।[৫]
অসাধারণ প্রতিভাশীল দাবাড়ু কার্লসেন ২০০৪ সালে মাত্র ১৩ বছর ১৪৮ দিন বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার পদবী লাভ করেন। এরফলে তিনি ঐ সময়ে দাবার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টারের মর্যাদা লাভ করেন যদিও তিনি তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু ছিলেন। ১ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখে ১৯ বছর ৩২ দিন বয়সে সর্বকনিষ্ঠ দাবা খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বের ১নং র্যাঙ্কিং লাভ করেন। জানুয়ারি ২০১৩ সালে ফিদে রেটিং তালিকায় কার্লসেনের এলো রেটিং পৌঁছে ২৮৬১ যা দাবার ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ের। নভেম্বর, ২০১৩ সালে বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি বিশ্বনাথন আনন্দকে পরাভূত করে নতুন বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হন।সর্বশেষ নভেম্ববর, ২০১৬ বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিওনশিপে তিনি ইউক্রেনের সের্গেই কারজাকিনকে হারিয়ে বর্তমানেও বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হয়ে আছেন। তাকে তার এই অমিত দাবা প্রতিভার জন্য মোজার্ট অফ চেস বলা হয়।
স্বীকৃতি | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী বিশ্বনাথন আনন্দ |
বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন ২০১৩-বর্তমান |
উত্তরসূরী নির্ধারিত হয়নি |
পূর্বসূরী লিনিয়ার ডোমিনগুয়েজ লি কুয়াং লিয়েম |
ওয়ার্ল্ড ব্লিৎজ চেজ চ্যাম্পিয়ন ২০০৯ ২০১৪ |
উত্তরসূরী লেভন এরোনিয়ান আলেকজান্ডার গ্রিসচুক |
পূর্বসূরী শাখরিয়ার মামেদিয়ারভ |
বিশ্ব র্যাপিড দাবা চ্যাম্পিয়ন ২০১৪–বর্তমান |
উত্তরসূরী নির্ধারিত হয়নি |
পূর্বসূরী ভ্যাসেলিন তোপালভ বিশ্বনাথন আনন্দ বিশ্বনাথন আনন্দ |
বিশ্বের ১নং ১ জানুয়ারি ২০১০ – ৩১ অক্টোবর ২০১০ ১ জানুয়ারি ২০১১ – ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১ জুলাই ২০১১ – বর্তমান |
উত্তরসূরী নির্ধারিত হয়নি |
পূর্বসূরী তোরা বার্গার |
বর্ষসেরা নরওয়েজীয় ক্রীড়াব্যক্তিত্ব ২০১৩ |
উত্তরসূরী ওলে আইনার বর্নডালেন |