নীললোহিত | |
---|---|
রঙের স্থানাঙ্ক | |
হেক্স ট্রিপলেট | #FF00FF |
sRGBB (r, g, b) | (255, 0, 255) |
CMYKH (c, m, y, k) | (0, 100, 0, 0) |
HSV (h, s, v) | (300°, 100%, 100%) |
উৎস | CSS Color Module Level 3 |
B: [০-২৫৫] (বাইট)-এ নিয়মমাফিক H: [০-১০০] (শত)-এ নিয়মমাফিক |
নীললোহিত বা ম্যাজেন্টা (/məˈdʒɛntə/) বলতে বোঝায় রক্তবেগুনী-লাল,[১] লালাভ-রক্তবেগুনী বা ফিকে লাল-ক্রিমসন রঙ।[২] কম্পিউটারের পর্দায় এ রং তৈরি করা হয় সম অনুপাতে লাল ও নীল মিশিয়ে।[৩] আরজিবি (সংযোজী) ও সিএমওয়াইকে (বিভাজক) রং মডেলের বর্ণচক্রে ম্যাজেন্টা থাকে লাল ও নীলের মাঝখানে। এটি সবুজের পরিপূরক রঙ। ইঙ্কজেট প্রিন্টার এবং রঙিন মুদ্রণে যে চারটি রং ব্যবহৃত হয় ম্যাজেন্টা তার একটি। মুদ্রণকাজে ম্যাজেন্টার যে টোন ব্যবহৃত হয় তাকে বলা হয় "প্রিন্টারস ম্যাজেন্টা"।
ম্যাজেন্টা রঙটি প্রথমে পরিচিত হয়েছিল "ফাকসাইন" নামে এক নতুন অ্যানিলিন রঞ্জক হিসেবে। এর পেটেন্ট করেছিলেন ফরাসী রসায়নবিদ ফ্রাঙ্ক-ইম্যানুয়েল ভার্গেন ১৮৫৯ সালে। সেবছর চৌঠা জুনে ইতালির ম্যাজেন্টা শহরে এক যুদ্ধে ফরাসী ও সার্ডিনীয়রা জয়লাভ করে যার স্মরণে রঙটির নাম বদলে ম্যাজেন্টা রাখা হয়।[৪] উল্লেখ্য, ওয়েব রং হিসেবে ম্যাজেন্টার অপর নাম ফিউশা।
ম্যাজেন্টা একটি বর্ণালী-বহির্ভূত রঙ, অর্থাৎ আলোর দৃশ্যমান বর্ণালীতে একে পাওয়া যায়না। বরং ব্যবহারিকভাবে একে মনে করা হয় লাল এবং বেগুনি/নীল আলোর মিশ্রণ, যেখানে সবুজ অনুপস্থিত।
টেলিভিশন ও কম্পিউটার ডিসপ্লেতে ব্যবহৃত আরজিবি বর্ণপ্রণালীতে ম্যাজেন্টা একটি গৌণ রঙ। উচ্চমাত্রার লাল এবং নীল আলো সমপরিমাণে মিশিয়ে এই রং তৈরি করা হয়। আর এটি সবুজের পরিপূরক রঙ। ফলে কালো পর্দার ওপর সবুজ এবং ম্যাজেন্টা একত্রে ফেললে তা সাদা রং ধারণ করে।
রঙিন মুদ্রণে ব্যবহৃত সিএমওয়াইকে রং মডেলে মূল রঙ হিসেবে ম্যাজেন্টা, সায়ান ও হলুদ রং দিয়ে অন্য সব রং তৈরি হয়। কোনো পৃষ্ঠায় ম্যাজেন্টা, সায়ান ও হলুদ রং একটির ওপর অন্যটি লেপন করলে তা কালো রং ধারণ করবে। এই মডেলেও ম্যাজেন্টা সবুজের পরিপূরক রঙ, তাদের মধ্যে সর্বাধিক বৈপরিত্য ও তীব্র সঙ্গতি বিদ্যমান। ফলে সবুজ ও ম্যাজেন্টা কালি একত্রে গাঢ় ধূসর বা কালো কালি তৈরি করে। রঙিন মুদ্রণে ব্যবহৃত ম্যাজেন্টাকে বলে প্রসেস ম্যাজেন্টা যা কম্পিউটার স্ক্রীনের ম্যাজেন্টার চেয়ে একটু গাঢ়।
কালার থিওরি অনুসারে ম্যাজেন্টা একটি পার্পল বর্ণ যার সৃষ্টি হয় নীল/বেগুনি ও লাল রঙের চেয়ে সবুজ রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম প্বল হলে (ম্যাজেন্টার পরিপূরকের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৫০০-৫৩০ nm)।[৫]
মানসেল বর্ণপ্রণালীতে ম্যাজেন্টাকে বলা হয় লাল-পার্পল।
রঙের বর্ণালীকে জড়িয়ে বর্ণ চাকতি করা হলে ম্যাজেন্টার অবস্থান হয় লাল এবং বেগুনির মাঝখানে। ম্যাজেন্টার এই দুই উপাদান দৃশ্যমান বর্ণালীর বিপরীত দুই প্রান্তে অবস্থান করে আর তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্যও পুরোপুরি ভিন্ন। ফলে এই গৌণ সংযোজী রং ম্যাজেন্টাকে কেবল লাল ও নীল আলো সমানুপাতে মেশালে পাওয়া যায়, কিন্তু প্রকৃত বর্ণালীতে দেখা যায় না।
আলোকবিজ্ঞানে ফিউশা এবং ম্যাজেন্টা মূলত একই রঙ। আর ওয়েব রং হিসেবেও ফিউশা এবং ম্যাজেন্টা পুরোপুরি অভিন্ন এবং লাল ও নীল আলোর সমানুপাতে তা তৈরি করা হয়। তবে ডিজাইন ও মুদ্রণক্ষেত্রে একটু পার্থক্য আছে। আরজিবি এবং মুদ্রণে ফিউশার আমেরিকান রূপের চেয়ে ফরাসী রূপে লাল রঙের অনুপাত বেশি থাকে। ফিউশা ফুলের রং লাল, ফিউশা, পার্পল, গোলাপি সবরকমই হয়।
ম্যাজেন্টা রঙটি ছিল শিল্পে রাসায়নিক বিপ্লবের ফল, যা শুরু হয়েছিল ১৮৫৬ সালে উইলিয়াম পার্কিনের ম্যানুভেইন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। ম্যানুভেইন ছিল প্রথম সিনথেটিক অ্যানিলিন ডাই। এটি অত্যন্ত ব্যবসাসফল হয় এবং এর উৎপাদিত মওভ রঙটিও খুব জনপ্রিয় হয়। ফলে ইউরোপের অন্য রসায়নবিদগণও অ্যানিলিন রঞ্জক থেকে নতুন রং তৈরিতে উৎসাহী হন।[৪]
ফ্রান্সে লিওন শহরের কাছে লুইস রাফার্ড রাসায়নিক কারখানার পরিচালক ফ্রাঙ্ক-ইম্যানুয়েল ভার্গিন ১৮৫৮ সালের শেষাংশে বা ১৮৫৯-এর প্রথমাংশে বহু ফর্মুলায় চেষ্টা করার পর অ্যানিলিন এবং কার্বন টেট্ট্রাক্লোরাইড মিশ্রিত করতে সক্ষম হন। মিশ্রণটি লালাভ-পার্পল রঞ্জক উৎপন্ন করে যেটাকে তিনি নাম দেন "ফাকসাইন", ফিউশা/ফাকশিয়া ফুলের রঙের নামানুসারে। তিনি রাফার্দ কারখানা ছেড়ে দেন এবং তার রং নিয়ে যান রং তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান, ফ্রান্সিক অ্যান্ড জোসেফ রেনার্ডে, যারা রঙটি উৎপাদন করতে শুরু করে ১৮৫৯ সালে।
সেবছরই লন্ডনের দক্ষিণে ওয়ালওর্থে রঙ-উৎপাদক জর্জ সিম্পসনের গবেষণাগারে দুই ব্রিটিশ রসায়নবিদ, চেম্বার নিকলসন এবং জর্জ মৌল আরেকটি অ্যানিলিন রঞ্জক তৈরি করে সেই একই লাল-পার্পল রঙে এবং ১৮৬০ সালে "রোজাইন" নামে তারা সেটা উৎপাদন করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে, ১৮৫৯ সালে ইতালিতে ফরাসী ও অস্ট্রীয়দের মধ্যকার যুদ্ধের সম্মানে তারা রঙের নাম পরিবর্তন করে রাখেন "ম্যাজেন্টা" যা ব্যবসাসফল হয়।[৪] ১৮৯০ সালে সিএমওয়াইকের জন্যে প্রিন্টারস ম্যাজেন্টা এবং ১৯৮০ সালে ইলেকট্রিক ম্যাজেন্টা উদ্ভাবনের পূর্ব পর্যন্ত এই দুটি কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত রং ব্যবহার করা হতো। আর তারও পূর্বে কয়লা টার থেকে হতো ফিউশা, পরে ম্যাজেন্টার যুদ্ধের নামানুসারে যা "ম্যাজেন্টা" করা হয়।[৬]
১৯৩৫ সালে শুরু হওয়া কুইনাক্রিডন রঞ্জকসমূহ উন্নত হতে থাকে। লাল থেকে বেগুনি পর্যন্ত সব রঙই এতে ছিল, তাই এখনকার দিনে ম্যাজেন্টার জন্যে কুইনাক্রিডন রঞ্জকই ব্যবহৃত হয়। ম্যাজেন্টার বিভিন্ন টোন- হালকা, উজ্জ্বল, টকটকে, জ্বলজ্বলে, বা গাঢ় তৈরি করা যায় কুইনাক্রিডনের সাথে সাদা রং মিশিয়ে।
ম্যাজেন্টার জন্য ব্যবহৃত আরেকটি রঞ্ছক হলো লিথোল রুবিন বিকে, যা খাদ্যে রং দিতেও ব্যবহার করা হয়।
প্রসেস ম্যাজেন্টা (বিভাজক মূল, sRGB approximation) | |
---|---|
রঙের স্থানাঙ্ক | |
হেক্স ট্রিপলেট | #FF0090 |
sRGBB (r, g, b) | (255, 0, 144) |
CMYKH (c, m, y, k) | (0, 100, 0, 0) |
HSV (h, s, v) | (320°, 100%, 100%) |
উৎস | [১] CMYK |
B: [০-২৫৫] (বাইট)-এ নিয়মমাফিক H: [০-১০০] (শত)-এ নিয়মমাফিক |
রঙিন মুদ্রণে প্রসেস ম্যাজেন্টা, পিগমেন্ট ম্যাজেন্টা বা প্রিন্টারস ম্যাজেন্টা নামের এই রঙটি এবং হলুদ ও সায়ান মিলে তিনটি বিভাজক মূল রঙ গড়ে তুলেছে (গৌণ রঙগুলো হলো লাল, নীল ও সবুজ)। ম্যাজেন্টা রঙটি সবুজের পরিপূরক হওয়ায় ম্যাজেন্টা কণা সবুজ আলো শোষণ করে, তাই তারা বিপরীত রঙ।
প্রসেস ম্যাজেন্টা আরজিবি রং নয়, আর সিএমওয়াইকে থেকে আরজিবিতে যাবার খোনো নির্দিষ্ট রূপান্তর পদ্ধতি নেই। প্রিন্টারের কালির জন্যে বিভিন্ন ফর্মুলেশন ব্যবহৃত হয়, ফলে ভিন্ন প্রিন্টারে মুদ্রিত ম্যাজেন্টা রঙে ভিন্নতা থাকতে পারে। প্রসেস ম্যাজেন্টার একটি প্রচলিত ফর্মুলেশন ডানপাশের বক্সে দেখানো হলো।
ম্যাজেন্টা (ফিউশা) | |
---|---|
রঙের স্থানাঙ্ক | |
হেক্স ট্রিপলেট | #FF00FF |
sRGBB (r, g, b) | (255, 0, 255) |
CMYKH (c, m, y, k) | (0, 100, 0, 0) |
HSV (h, s, v) | (300°, 100%, 100%) |
উৎস | X11 |
B: [০-২৫৫] (বাইট)-এ নিয়মমাফিক H: [০-১০০] (শত)-এ নিয়মমাফিক |
ডানপাশের রঙটি ওয়েব রং ম্যাজেন্টা। এটি আরজিবি রং মডেলের তিনটি গৌণ রঙের একটি। আরজিবি বর্ণ চাকতিতে, ম্যাজেন্টা গোলাপি ও বেগুনির মধ্যবর্তী রং এবং এটি লাল ও নীল রঙের মাঝখানে অবস্থিত।
এই রঙটিকে ম্যাজেন্টা বলা হয় এক্স১১তে এবং ফিউশা বলা হয় এইচটিএমএলে। আরজিবি রং মডেলে এটি তৈরি করা হয় সমান প্রাবল্যের লাল ও নীল আলোর মিশ্রণে। ওয়েব রং ম্যাজেন্টা এবং ফিউশা আসলে অবিকল একই রঙ। মাঝেমধ্যে ওয়েব রং ম্যাজেন্টাকে ইলেকট্রিক ম্যাজেন্টা বা ইলেকট্রনিক ম্যাজেন্টাও বলা হয়।
মুদ্রণ এবং ওয়েব রং ম্যাজেন্টার নাম একই হলেও তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য বিদ্যমান। কম্পিউটার পর্দায় প্রাপ্ত ম্যাজেন্টার চেয়ে প্রসেস ম্যাজেন্টার (প্রিন্টার/পিগমেন্ট ম্যাজেন্টা) উজ্জ্বলতা বেশ কম। সিএমওয়াইকে ছাপার পদ্ধতি কম্পিউটার পর্দার রঙকে কাগজে পুরোপুরি নিখুঁতভাবে মুদ্রিত করতে পারে না। ম্যাজেন্টা ওয়েব রং কাগজে মুদ্রিত করলে তাকে বলে ফিউশা এবং ব্যবহারিকভাবে কম্পিউটার স্ক্রীনের মতো জ্বলজ্বলে রং কাগজে ছাপানো অসম্ভব।
রঙপেন্সিল ও ক্রেয়নে "ম্যাজেন্টা" রং বলতে প্রসেস ম্যাজেন্টাকেই (প্রিন্টারস ম্যাজেন্টা) বোঝায়।
ম্যাজেন্টা ফুলের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ রঙ, বিশেষত ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে। ম্যাজেন্টা সবুজের পরিপূরক রং হওয়ায় সবুজ লতাপাতার মধ্যে ম্যাজেন্টা তীব্রভাবে চোখে পড়ে, ফলে পশুপাখিরা তাতে আকৃষ্ট হয় যা ফুলটির পরাগায়ণে সাহায্য করে।