যশোদাবেন মোদী | |
---|---|
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দাম্পত্য সঙ্গী | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ২৬ মে ২০১৪ | |
প্রধানমন্ত্রী | নরেন্দ্র মোদী |
পূর্বসূরী | গুরুশরণ কাউর |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | যশোদাবেন চিমনলাল মোদী[১] ১৯৫২ (বয়স ৭২) ব্রাহ্মণওয়াড়া, গুজরাট, ভারত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
দাম্পত্য সঙ্গী | নরেন্দ্র মোদী (বি. ১৯৬৮; সেপ্টেম্বর ১৯৭১)[২][৩] |
পেশা | শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত) |
যশোদাবেন নরেন্দ্রভাই মোদী (জন্ম নাম: চিমনলাল মোদী,[৪][৫] জন্ম: ১৯৫২) একজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় স্কুল শিক্ষক। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিচ্ছিন্ন স্ত্রী। ১৯৬৮ সালে, যখন তিনি প্রায় ১৭ বছর বয়সী ছিলেন এবং নরেন্দ্র মোদী ১৮ বছর বয়সী ছিলেন, তখন তাদের বিয়ে হয়।[৬][৭][৮] বিয়ের কিছু সময় পর, তার স্বামী নরেন্দ্র মোদী তাকে পরিত্যাগ করেন।[৯][১০] তিনি বিয়েটি প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি যতক্ষণ না ২০১৪ সালের ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনের আগে আইনগতভাবে তাকে এটি স্বীকার করতে হয়েছিল।[১১][১২][১৩] ২০১৫ সালে, যশোদাবেন মোদী তার শিক্ষকতার চাকরি থেকে অবসর নেন।
১৯৫২ সালে যশোদাবেন জন্মগ্রহণ করেন।[১৪] তার জন্মের দুই বছর পর তার মা মারা যান।[১৪]
নরেন্দ্র মোদী ও যশোদাবেনের পারিবারিকভাবে আয়োজিত বিয়ে ছিল, যা তাদের শৈশবে পরিবারের মাধ্যমে প্রস্তাবিত হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদীর ভাইয়ের মতে, এই দম্পতি বিবাহ নামে পরিচিত ধর্মীয় বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছিলেন, যখন নরেন্দ্র মোদী ১৮ বছর এবং যশোদাবেন প্রায় ১৭ বছর বয়সী ছিলেন।[১৫][১৬][১৭][১৮]
বিয়ের কিছুদিন পর মোদী তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং হিমালয়ের গিয়ে সন্ন্যাসব্রত পালন করা শুরু করেন।[১৯] যশোদাবেন এরপর কয়েক মাস মোদীর পরিবারের সাথে বসবাস করেন।[৩] বিয়ের পর তিনি আবার স্কুলে তার পড়াশোনা চালু করেন।[২০] বিয়ের দুই বছর পর তার বাবার মৃত্যু হয়।[১৪] বাবার মৃত্যুর পরেও তিনি তার পড়াশোনা চালিয়ে যান ও ১৯৭২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।[২০]
প্রায় তিন বছর কোনো প্রকার যোগাযোগের বাইরে থাকার পর মোদী বাড়ি ফিরে আসেন এবং তার পরিবারের সাথে মিলিত হন।[১৯] তিনি এরপর যশোদাবেনকে ছাড়াই আহমেদাবাদ গিয়ে তার চাচার রেস্তোরাঁয় কাজ করার পরিকল্পনা করেন।[১৯] যাবার পূর্বে মোদীর মা যশোদাবেনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে মোদীর কাছে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন যেনো তারা সাংসারিক জীবন চালিয়ে যেতে পারেন।[১৯] যশোদাবেন মোদীদের বাড়ি আসার পর মোদীর সাথে তার বাবা-মার কথা কাটাকাটি হয়। ফলশ্রুতিতে তিনি বাড়ি ছাড়েন ও পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে তার চাচার কাছে আশ্রয় নেন।[১৯] যশোদাবেনের ধারণা এই তিন বছরের বিবাহিত জীবনে তিনি তিন মাসের মতো সময় তার স্বামীর সাথে কাটিয়েছেন।[১৯]
প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হওয়ার তাগিদে যশোদাবেন পরবর্তীতে তার পড়াশোনা চালিয়ে যান। ১৯৭৮-১৯৯০ পর্যন্ত তিনি বনসকান্ত জেলায় শিক্ষকতা করেন।[২০] ১৯৯১ সালে তিনি তার বর্তমান বাসস্থান রাজসেনা গ্রামে চলে আসেন।[২০] বর্তমানে তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা এবং তিনি প্রতি মাসে ১৪,০০০ ভারতীয় রূপি অবসরভাতা পান।[১৪] একজন ভাষ্যকারের মতে এতো অল্প বেতনে জীবন ধারণ করা যশোদেবেনের জন্য খুবই কষ্টকর ছিলো এবং তার সারা জীবন কেটেছে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে। মোদীর সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে তার ভাষ্য, “আমরা কখোনই যোগাযোগের মধ্যে ছিলাম না... আজ পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে কখনোই আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি।”[১৪] পরবর্তীতে আরেকটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান যে, ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত মোদী তার সাথে সাধারণ কথাবার্তা চালিয়ে যান।[২১] বর্তমানে যশোদাবেন তার ভাই অশোক ও তার স্ত্রীর সাথে উনঝাতে বসবাস করেন।[৩] তিনি খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন এবং তার দিন কাটে ধর্মকর্ম করে। প্রতিদিন ভোর ৫টায় তিনি ঘুম থেকে ওঠেন এবং প্রার্থনা শুরু করেন এবং প্রার্থনা শেষে তিনি মন্দিরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।[২২]
অনেক দিন ধরে গুঞ্জন ছিল যে মোদি আসলে বিবাহিত। ১৯৯২ সালে, যশোদাবেন আবিয়ান পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকার করেছিলেন, যখন সেই পত্রিকা তার এবং মোদীর বিয়ে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।[২৩] ২০০২ সালের মে মাসে, সাংবাদিক দর্শন দেশাই যশোদাবেনকে খুঁজে পান, তবে তিনি এবং তার গ্রামবাসীরা তার সাথে কথা বলতে অস্বীকার করেন এবং তাকে শহর ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়।[২৪] ২০০৯ সালে, খবর পাওয়া যায় যে মোদির রাজনৈতিক শত্রুরা জানতে পারে যে তিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং একটি ছোট ঘরে থাকেন। মোদি নিজে কখনো খোলাখুলি বললেন না যে জশোদাবেন তার স্ত্রী, তবে তিনি এটি অস্বীকারও করেননি। তার বিয়ে তার গ্রামে সবার জানা ছিল। তিনি একজন পরিশ্রমী এবং ভালো শিক্ষিকা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, বিশেষ করে তার ছাত্রদের মধ্যে।[২৫]
যখন ফর্মে তার স্ত্রীর পরিচয় দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে, মোদি বারবার স্ত্রীর তথ্যের অংশটি ফাঁকা রেখে অথবা একটি দাগ দিয়ে পূর্ণ করেছেন – যেমন ২০০১, ২০০২, ২০০৭ এবং ২০১২ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে।[২৬] রাজনৈতিক সমাবেশে তিনি বলেছিলেন যে তিনি অবিবাহিত।[২৭][২৮][২৯]
২০১৪ সালের ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনে, মোদি লোকসভায়, ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে, ভাদোদরা আসন থেকে নির্বাচন করেন।[৩০] জনগণের প্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে এবং সাম্প্রতিক রায় অনুসারে যা বলেছিল যে একটি সম্পূর্ণ উত্তর দেওয়া আবশ্যক, মোদিকে তার পূর্ববর্তী বিয়ে ঘোষণা করতে হয়েছিল।[৩১] আইনগত পরামর্শের পরে যে "এটি পরিষ্কারভাবে বলতে" হবে, প্রথমবারের মতো পাবলিক এবং মিডিয়াতে মোদি স্বীকার করেন যে তার একটি স্ত্রী আছেন।[৩২]
নরেন্দ্র মোদির ভাই সোমভাই মোদি একটি বিবৃতি দিয়ে বলেন যে মোদিকে তার পরিবার দ্বারা একটি ব্যবস্থা করা বিয়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।[৩৩] তিনি বলেন যে বিয়েটি কখনো সমাপ্ত হয়নি এবং মোদি বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর খুব দ্রুত তা ছেড়ে দেন। তার ভাই আরও বলেন যে মোদি স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে জাতি ও সমাজের জন্য কাজ করতে শুরু করেছিলেন।[৩৩]
মোদি তার বিয়ে স্বীকার করার আগে, একটি গ্রুপ আন্দোলনকারীরা এবং নিরাপত্তা কর্মীরা যশোদাবেনের বাড়িতে যান। তারা তাকে চারধাম তীর্থযাত্রায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন, যা তিনি দীর্ঘদিন ধরে করতে চেয়েছিলেন। যাত্রার সময়, তারা তাকে উত্তরাখণ্ডের রিষিকেশে স্বামী রামদেবের আশ্রমে নিয়ে যান। বিয়ের খবর প্রকাশিত হলে সাংবাদিকরা জশোদাবেনের মন্তব্য জানতে চান, তবে তার পরিবার তাদের জানায় যে তিনি শীঘ্রই বাড়ি ফিরে আসবেন।[৩৪]
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য, মোদির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তার বিয়ে সম্পর্কিত তথ্যের প্রতি অস্পষ্টতা নিয়ে তার সমালোচনা করেন। আহমেদাবাদের এক নাগরিক, নিশান্ত ভার্মা, মোদির বিরুদ্ধে আইনি স্ত্রীর বিষয়টি অস্বীকার করার এবং পূর্ববর্তী নির্বাচনী দলিলগুলি ভুয়া করে জমা দেওয়ার জন্য ফৌজদারি অভিযোগ আনার আবেদন করেন, যা জনগণের প্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। এই মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়। নিম্ন আদালত মোদিকে এই আইনের অধীনে কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেনি।[৩৫]
২০১৪ সালের গরমে, কংগ্রেস পার্টির রাজনীতিবিদ অজয় রাই আলাহাবাদ হাই কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে মোদি জশোদাবেনের পার্মানেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর প্রদান করেননি, সহ অন্যান্য বিষয়।[৩৬]
অনেক কংগ্রেস পার্টির রাজনীতিবিদ মোদির তার স্ত্রীর বিচ্ছিন্নতা নিয়ে আচরণের সমালোচনা করেছেন।[৩৭][৩৮][৩৯]
১৯৯২ সালে যশোদাবেন মোদী ও তার বিয়ে প্রসঙ্গে লেখা একটি নিবন্ধের জন্য অভয়া নামে একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।[৪০] ২০০৯ সালে ওপেন ম্যাগাজিন যশোদাবেনকে তার গ্রামে খুঁজে বের করেন ও তাকে কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ পান।[২০] ২০১৪ সালে দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একজন প্রতিবেদক তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।[১৪] একই বছরের মে মাসে টিভি৯ গুজরাত তার ভিডিও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে।[২১] পরবর্তীতে ডিসেম্বরে ডন নিউজের একজন লেখক বলেন, যশোদাবেনের সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন সময়ে পার করে আসা বিভিন্ন সংকটময় অবস্থা ও বিপদ-আপদ সম্পর্কে প্রতিবেদন দেওয়ার মতো সাহস তার সাক্ষাৎকার নেওয়া বেশিরভাগ সংবাদপত্রের ছিলো না।[৪১]
যশোদাবেন জানিয়েছিলেন যে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, তবে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি সেখানে যোগ দিতেন।[২১] তিনি আরও জানান যে, মোদীর জন্য তার যথেষ্ট আবেগ রয়েছে এবং মোদী যে নির্বাচনের আগে সরকারি কাগজপত্রে তাকে তার স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন তাতে তিনি সন্তুষ্ট।[২১] এবং তিনি এটাও বলেন যে, তিনি মোদীর সাথে সঠিক সময়ে আবার দেখা করার ব্যাপারে আশাবাদী।[২১]
২০১৪ সালে রাজনীতিক গোপীনাথ মুণ্ডের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগদানকে যশোদাবেন জনসম্মুক্ষে অনুষ্ঠিত তার জীবনের প্রথম কোনো অনুষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করেন।[৪২] ঐ বছরেরই নভেম্বরে তিনি প্রথমবারের মতো মুম্বাই যান এবং মহালক্ষী মন্দির ও সিদ্ধিভিনায়ক মন্দিরে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীর জন্য প্রার্থনা করেন।[৪৩]
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যশোদাবেন তার ঘরে কিছু খ্রিস্টান মিশনারিকে আশ্রয় দেন যারা তাকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।[৪৪][৪৫] জুন মাসে মোদীর সমর্থকদের আয়োজিত একটি রাজনৈতিক কনফারেন্সে তাকে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়।[৪৬] পরবর্তীতে কনফারেন্সের আয়োজকরা জানান যে, এক সপ্তাহ ব্যাপী এই কনফারেন্সটি দ্বিতীয় দিনেই বিজেপি নেতা অমিত শাহ ও অন্যান্যদের নির্দেশনায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও বন্ধ করে দেওয়ার প্রেক্ষিতে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি তবে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন যে যশোদাবেনের অংশগ্রহণ এড়াতেই এমনটি করা হয়েছে।[৪৬]
দেশের বাইরে থাকা আত্মীয় ও বন্ধুদের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে যশোদাবেন ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে পাসপোর্টের আবেদন করেন। তবে বিবাহ নিবন্ধনের কাগজ বা স্বামীর সাথে একত্রে স্বাক্ষরিত কোনো হলফনামা প্রদান করতে ব্যর্থ হওয়ায় ‘অসম্পূর্ণ’ হিসেবে তার আবেদনটি বাতিল হয়ে যায়। এর পর তার ভাই অশোক জানান যে, তারা আইনগতভাবে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছেন।[৪৭]
আমি সবসময় পাঁচ জন নিরাপত্তাকর্মী বেষ্টিত থাকি। প্রায় সময় আমাকে বা আমার আত্মীয়দের তাদের জন্য রান্না করতে হয়। আমার বৌদি তাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করেন। বুঝতেই পারছেন যে, এটি যথেষ্ট বিরক্তিকর... এটি বিভ্রান্তিকর হয়ে যায় যখন আমার কোথাও ভ্রমণ করতে হয়। কারণ আমি গণপরিবহন ব্যবহার করি আর তারা তাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে বসে আমাকে অনুসরণ করে।
রয়টার্সকে যশোদাবেন, নভেম্বর ২০১৪[৪৮]
২০১৪ সালের মে মাস থেকে মেহসানা জেলার পুলিশ যশোদাবেনকে নিরাপত্তা প্রদান করা শুরু করে।[৪৯] স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ আইন অনুসারে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দাম্পত্য সঙ্গী যথাযথ নিরাপত্তা পাবার দাবীদার আর এজন্যই এই নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদান করা শুরু করেন।[৫০] এছাড়াও স্যালারিজ অ্যান্ড অ্যালাউন্সেস অফ মিনিস্টারস’ আইন অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে যশোদাবেন আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার দাবীদার।[৫০]
২০১৪ সালের নভেম্বরে যশোদাবেন রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট (আরটিআই) অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে তার নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বরাবর একটি লিখিত অনুরোধ করেন।[৫১][৫২] তিনি জানান যে নিরাপত্তারক্ষীদের কার্যক্রমে তিনি আতঙ্কবোধ করেন এবং তিনি তাদের ওপর অর্পিত নির্দেশনার অনুলিপি চান।[৫৩] ভারতের গণমাধ্যমে তার এই তথ্যের অনুরোধ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে, যশোদাবেনের আতঙ্ক, আর অভিযোগের পেছনে থাকা অর্থনৈতিক জটিলতা, নিরাপত্তারক্ষীদের অতিথি হিসেবে আপ্যায়িত হওয়ার ইচ্ছা, বা ভারতে নারী স্বাধীনতার একটি উদাহরণ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।[৪৮] যশোদাবেন জানিয়েছেন যে নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে গণ্যমাধ্যমের সাথে কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন।[৫৪] গাল্ফ নিউজ তাদের এক প্রতিবেদনে জানায় যে নিরাপত্তারক্ষীরা তার সাথে রয়েছে মূলত তার ওপর গোয়েন্দাগিরি করার উদ্দেশ্যে।[৫৪] যশোদাবেনের পরিবারারের সদস্যরা জানিয়েছেন যে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের সাথে কোনো পরিচয়পত্র রাখেন না এবং তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমন কী তারা কে এবং কোন দপ্তর থেকে তাদেরকে এই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে সে বিষয়েও কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।[৫৫]
ডিসেম্বর মাসে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো তার তথ্যের অনুরোধ প্রত্যাখান করে। প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসেবে তারা জানায় যে আইন অনুসারে তাদেরকে এ ধরনের তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে অব্যাহতি দেওয়ার একটি সুযোগ রয়েছে যা এই অনুরোধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়েছে।[৫২] অনুরোধ জানানোর সময় যশোদাবেন তার বিবাহিত নাম ‘যশোদাবেন নরেন্দ্রভাই মোদী’ ব্যবহার করেছিলেন[৫৫] কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাকে উত্তর দেওয়ার সময় তাকে ‘যশোদাবেন, (তার পিতার নাম)-এর কন্যা’ আকারে অভিহিত করা হয়।[৫৬] ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে তিনি এই প্রত্যাখানের বিরুদ্ধে আপিল করেন।[৫৭] আপিলের পাশাপাশি তিনি আরও উল্লেখ করেন যে দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তা তার নাম ‘যশোদাবেন নরেন্দ্রভাই মোদী’ ব্যবহার না করে তার বিবাহপূর্ব নাম ‘যশোদাবেন চিমনলাল মোদী’ ব্যবহার করেছেন।[৫৭] ২০১৫ সালে পয়লা জানুয়ারি ভারতের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দূরদর্শনে যশোদাবেনকে উপস্থাপন করা হয় যেখানে এ বিষয়টি নিয়ে তিনি তার মন্তব্য জানিয়েছিলেন।[৫৮][৫৯] ফলশ্রুতিতে তথ্য ও প্রচার মন্ত্রক দূরদর্শনের এই অনুষ্ঠান পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং টেলিভিশনটির প্রচারের দায়িত্বে থাকা পরিচালককে আহমেদাবাদ থেকে আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পোর্ট ব্লেয়ারে বদলি করা হয়।[৫৮][৫৯] একই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি যশোদাবেনের আবেদন আবার প্রত্যাখ্যাত হয় এবং প্রত্যাখানের জবাবে তাকে পুনরায় ‘যশোদাবেন, চিমনলাল মোদীর কন্যা’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়।[৬০]
২০১৫ সালের মে মাসে যশোদাবেন তৃতীয় বারের মতো তার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট তথ্য এবং এ বিষয়ক নির্দেশনা জানতে চেয়ে আবেদন করেন।[৬১] তিনি এ অভিযোগও করেন যে তিনি তার আবেদন ফর্মে তার আইনত বৈধ নাম যশোদাবেন নরেন্দ্রভাই মোদী ব্যবহার করে পূরণ করলেও সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা উত্তরে তাকে তার বিবাহপূর্ব নামে সম্বোধন করা হয়েছে।[৫৫] এই আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারি একজন প্রতিনিধি বলেন, “যদি তিনি প্রথমবার আবেদন জানানো কর্তৃপক্ষের প্রদান করা তথ্যে সন্তুষ্ট না হন তবে তিনি গুজরাতের তথ্য কমিশনের কাছে দ্বিতীয়বারের মতো আবেদন করতে পারেন।”[৫৫] নারী বিষয়ক ভাষ্যকার শুভা দে যশোদাবেনের তথ্য চেয়ে করা আবেদনকে ‘সাহসী, সোজাসাপ্টা, এবং প্রাসঙ্গিক’ বলে অভিহিত করার পাশাপাশি যশোদাবেনকে একজন ‘সুপারহিরো’ ও ‘তেজস্বী’ হিসেবে অভিহিত করেন।[৬২]
যশোদাবেন গলায় মঙ্গল সূত্র হার পরিধান করেন ও মাথায় সিঁদুর দেন যা ঐতিহ্যগতভাবে একজন বিবাহিত হিন্দু নারীকে নির্দেশ করেন।[৬২] তার বিয়ে ও মোদীর সাথে সাথে তার সম্পর্ক ভারতে নারী ও পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা ও সচেতনতার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে এজন্য যে, যশোদাবেন-ই প্রথাগত বিয়ের কারণে সৃষ্ট জটিলতার স্বীকার প্রথম নারী নন যিনি তার রাজনীতিবিদ স্বামী দ্বারা প্রত্যাখাতের স্বীকার হয়েছেন।[৬৩]
নরেন্দ্র মোদীর বোন যশোদাবেনকে একজন সত্যিকারের ভারতীয় নারী হিসেবে অভিহিত করেছেন।[৬৩] ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলে যশোদাবেনকে একজন ত্যাগী স্ত্রী হিসেবে দেখা হয়, কারণ প্রায় ৫০ বছর ধরে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা সত্ত্বেও স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসা ও আবেগ অটুট রয়েছে।[৬৩] একজন ভাষ্যকার তাকে গৌতম বুদ্ধের স্ত্রী যশোধরা ও তুলসীদাসের স্ত্রী রত্নাবলীর সাথে তুলনা করেছেন, যাদের স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের অস্বীকার করার পর বিখ্যাত ধর্মগুরু হয়ে উঠেছিলেন।[৬৪] এছাড়াও হিন্দু ঐতিহ্যের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্রের সাথে তার সাথে তুলনা করা হয় যাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে ‘ভারতীয় নারীত্বের স্বেচ্ছাত্যাগ ও কষ্ট মেনে নেওয়ার প্রবণতা, যা অনন্তকাল ধরে ভারতীয় সমাজে একটি উঁচুমনা ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত’ ফুটে উঠেছে। এসকল বিখ্যাত নারীর মধ্যে রয়েছে সাবিত্রী, সীতা, এবং শকুন্তলা।[৬৪]
শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রায়ই যশোদাবেনকে চিঠি পাঠান।[৬৫] একজন তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, “ভারতের কোটি কোটি নারী তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পান।”[৬৫] ধর্মীয় সংগঠনগুলো তাকে ব্রহ্মচর্যের হিন্দু দেবতা হনুমানের স্ত্রী শুভার্চলার সাথে তুলনা করেন, কারণ হনুমান যখন শুভার্চলাকে তার স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করতে চান তখন তিনি কোনো প্রতিবাদ করেননি।[৬৫]
ডন নিউজের একজন লেখক বলেন, যশোদাবেন ও মোদির বিয়ে ছিলো “একটি আইনগত ও প্রকাশ্য ঘটনা, দুই জন দাম্পত্য সঙ্গীর কোনো লুকায়িত কোনো ঘটনা নয়।” তিনি বিষয়টিকে স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কিত শাহ বানুর মামলার সাথেও তুলনা করেন।[৪১]
ভারতে রাজনীতিকদের সফলতার সাথে তাদের দাম্পত্য সঙ্গী না থাকা বা দাম্পত্য সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক না থাকার বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রেও মোদী ও যশোদাবেনের আলাদা হওয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়।[৬৩] মোদীকে রাজনৈতিক সমর্থন দেওয়া রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ তাদের জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বে কৌমার্যের মূল্যায়ন করে। মায়াবতী, জয়ললিতা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ প্রভাবশালী ভারতীয় নারী রাজনীতিকরা কোনো দাম্পত্য সঙ্গী না থাকায় যথেষ্ট সম্মান পান। যদিও ব্যাপারটি নারীর দায়িত্ববোধের একটি ভিন্ন মাত্রা নির্দেশ করে।[৬৩] সোনিয়া গান্ধীও স্বামী রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর পুনরায় বিয়ে না করায় সম্মানিত। কিছু পর্যবেক্ষক বিশ্বাস করেন যে তিনি যদি আবার বিয়ে করতেন তবে রাজনৈতিকভাবে তিনি তার সম্মান হারাতেন।
মোদীর দল বিজেপির বিরোধী দল কংগ্রেসের সদস্য ও আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ব্যঙ্গাত্মক[৬৬] অর্থে পরামর্শ দেন যে যশোদাবেনকে নোবেল পুরস্কার ও ভারতরত্ন পুরস্কার প্রদান করা উচিত।[৬৭] যশোদাবেনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “তিনি হচ্ছেন মহান ভারতীয় নারীত্ব ও ত্যাগের প্রতীক।” তিনি পরোক্ষভাবে মোদীকে আক্রমণ করেন এবং মোদীর তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার মতো বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেন।[৬৮] ভারতীয় সংসদ সদস্য সাক্ষী মহারাজ বলেন যে যশোদাবেনের ধর্মীয় আরাধনা মোদীর রাজনৈতিক সাফল্যে ভূমিকা রেখেছে।[৬৯] গুরুদাস কমত নামের আরেকজন সংসদ সদস্য বলেন যে মোদী যেভাবে তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করেছেন তা ছিলো তার (যশোদাবেন) জন্য একটি অবিচার।[৭০]
একটি গণমাধ্যম সূত্র পরামর্শ দেয় যে যশোদাবেনের ভালোর জন্যই তাকে লোকপ্রকাশ্যের আড়ালে রাখা উচিত।[৭১]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Taylor 2014
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নিIndians, especially his political enemies, have always been fascinated by the mystery of Modi’s abandoned wife Jashodaben, now a retired school teacher in her early sixties. ... As the first of over 800m eligible voters went to the polls this week in the 2014 Indian general election, Modi admitted for the first time under oath that he was married to her – in his nomination form for the parliamentary seat of Vadodara in Gujarat. ...His opponents hope that this disclosure will dent his popularity among women who might empathize with Jashodaben, whom he never returned to after two weeks of their nuptials. The declaration is reported to have come after strict legal advice that he come clean on the marriage which, his family members say, was never consummated.
Modi, 64, kept his teenage marriage a secret for decades during his political ascent and only last year admitted that his wife exists. The wife, Jashodaben Chimanlal Modi, is a retired teacher who lives in a small town in Modi’s home state of Gujarat. Although she had not heard from her husband in years, she says she still hopes to join him one day in the capital as his spouse. ... Narendra Modi, the son of a man who sold tea in a railway station, comes from a lower caste called Ghanchi. He and his wife were promised to each other as young adolescents in keeping with the traditions of their community. They were then married in a small ceremony when she was 17 and he was 18. ... Narendra Modi left shortly thereafter to wander in the Himalayas with little more than a change of clothing in his rucksack, ... Modi never returned to his wife but never divorced her, even as he became the high-profile chief minister of Gujarat and, last year, India’s premier. He never publicly spoke of his wife, and journalists who sniffed around on the topic as Modi’s fame grew were privately discouraged from doing so.
Narendra Modi, expected to become India’s next prime minister, admitted for the first time today that he is married, but said that he has been estranged from his wife for more than 40 years — a revelation that brings the treatment of women to the forefront of the nation’s election campaign. ... The leader of the Bharatiya Janata party (BJP) has always shunned questions about his private life, but was forced to make the declaration in an election affidavit filed in his home state of Gujarat. The 63-year-old chief minister of the state named his wife as 'Jashodaben' on a form about his marital status. In previous filings he has always left the column blank, although critics have long claimed that he had an arranged marriage when he was 17, to a woman he quickly deserted.
The woman to whom he was wed, Jashoda Chiman Modi, even gave an interview to a local newspaper in which she said although Mr Modi had effectively abandoned her, she considered herself his wife. Yet Mr Modi, who seldom takes any questions from the media, let alone ones about his private life, had always refused to comment on the matter. When he successfully contested four successive elections to become chief minister of Gujarat, he had always left blank the column on documents that asked about his marital status. On Wednesday, when Mr Modi filed nomination papers for the seat of Vadodara, one of two constituencies he is contesting, he entered the name Jashoda in the column that asked about his family. He was unable to provide her address.
Tv9 Gujarati
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; May 2015 object maiden name
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি