যশোর | |
---|---|
মহানগর | |
ডাকনাম: খেজুরের গুড়ের শহর, প্রথম ডিজিটাল শহর, দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রবেশদ্বার | |
বাংলাদেশে যশোর শহরের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°১০′১৭″ উত্তর ৮৯°৩০′৩৯″ পূর্ব / ২৩.১৭১৩৪৬° উত্তর ৮৯.৫১০৯৫০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | খুলনা |
জেলা | যশোর |
উপজেলা | সদর |
শহর প্রতিষ্ঠা | ১৪৫০ |
মহানগর | ১৭৯০ |
পৌরনগর | ১৮৬৪ |
সরকার | |
• ধরন | যশোর পৌরসভা |
• শাসক | যশোর পৌরসভা |
• সিটিমেয়র | হায়দার গনি খান |
আয়তন | |
• মোট | ২১.১৫ বর্গকিমি (৮.১৭ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ২,৯৮,০০০ |
• জনঘনত্ব | ১৪,০০০/বর্গকিমি (৩৬,০০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বাংলাদেশ সময় (ইউটিসি+০৬:০০) |
পোস্টকোড | 7400-7409 |
জাতীয় কলিং কোড | +৮৮০ |
কলিং কোড | ০৪১ |
পুলিশ | বাংলাদেশ পুলিশ |
বিমানবন্দর | যশোর বিমানবন্দর |
ভাষা | বাংলা |
যশোর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা বিভাগে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক ও গুরুত্বপূর্ণ শহর। প্রশাসনিকভাবে শহরটি যশোর জেলা এবং যশোর সদর উপজেলার সদর। এটি যশোর জেলার সবচেয়ে বড় এবং প্রধান শহর। এটি খুলনা বিভাগ এর ২য় বৃহত্তম শহর এবং প্রতীষ্ঠাকালের দিক থেকে দেশের প্রাচীন পৌরসভার একটি। যশোর খুলনা বিভাগের অন্যতম বাণিজ্যিক একটি শহর। [১]যশোর বিমানবন্দর রাজধানী ঢাকার সাথে শহরটিকে আকাশপথে সংযুক্ত করেছে। বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে যশোর শহরের দূরত্ব ৫২.২ কি.মি.।[২] যশোর শহর ভৈরব নদ এর তীরে অবস্থিত। যশোর কে ফুলের রাজধানী বলা হয় কেননা যশোরের গদখালি থেকে বাংলাদেশের ৮০% ফুল সরবরাহ করা হয়।[৩] বাংলাদেশের সব থেকে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল যশোরে অবস্থিত। যশোরে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে যশোর বিমানবন্দর। ব্রিটিশ সরকার যশোর রোড নির্মাণ করেছিল যা বর্তমানে যশোর শহর কে কলকাতা এবং খুলনার সাথে সংযুক্ত করে রেখেছে। ১৭৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই যশোর অবিভক্ত বাংলার একটি জেলা ছিল।
যশোর বাংলাদেশের একটি জেলা ও প্রাচীন জনপদ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে যশোর জেলা প্রতিষ্ঠা করা হয়। গৌড়ের ধন ও যশ হরণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের শ্রী বৃদ্ধি ঘটেছিল বলে অনেকের ধারণা। তাই হরণকৃত যশ থেকে যশোর নামের উৎপত্তি। ফারসি শব্দ যশর থেকে যশোর নামের উৎপত্তি বলে অনেকের ধারণা। ফারসি শব্দ যশর অর্থ ব্রীজ বা সাঁকো। যশোরে আসার জন্য অসংখ্য খাল, নদী-নালা পার হতে হতো। এসব খাল, নদী-নালার উপরে ছিল অসংখ্য সাঁকো। কানিংহাম তার গ্রন্থে এবিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
আবার অন্য একটি সূত্র হতে জানা যায় যে- মহারাজ প্রতাপাদিত্যের পিতা বিক্রমাদিত্য ও তার এক সহযোগি বসন্ত রায় গৌড়ের এক চরম অরাজকতার সময় সুলতানের অপরিমিত ধনরত্ন নৌকা বোঝাই করে গোপনে এই এলাকায় প্রেরণ করেন। গৌড়ের ধনরত্ন বোঝাই অসংখ্য নৌকা এখানে পৌঁছানোর পর ধীরে ধীরে বন জঙ্গলে আবৃত্ত এলাকাটির খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। প্রতিষ্ঠিত হলো একটি সমৃদ্ধ রাজ্য। নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের নামকরণ হল যশোহর। প্রবাদ আছে, গৌড়ের যশ হরণ করে এই এলাকার শ্রীবৃদ্ধি হওয়ায় নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের নাম যশোহর রাখা হয়। স্থানীয় পুরাতন নাম যশোহর পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন নামকরণ হয় যশোর। 'যশোর' শব্দটি 'যশোহর' শব্দের অপভ্রংশ।
যশোর শহরের মোট জনসংখ্যা ২,৯৮,০০০; যার মধ্যে ১৫১০০০ জন পুরুষ এবং ১৪৭০০০ জন নারী। এ শহরের পুরুষ এবং নারীর অনুপাত ১০:৭। শহরে মোট ৬৬,৪৯৬টি পরিবার রয়েছে। যশোর হলো বাংলাদেশের ৫ম বৃহত্তম পৌরসভা জনসংখ্যার দিক দিয়ে। [৪]
শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হলো ২৩°১০′৪০″ উত্তর ৮৯°১০′৪৮″ পূর্ব / ২৩.১৭৭৭৬৮২° উত্তর ৮৯.১৮০১২২৫° পূর্ব। সমুদ্র সমতল থেকে শহরটির গড় উচ্চতা ১০.৮৯ মিটার।[৫]
উত্তরে ঝিনাইদহ জেলা ও মাগুরা জেলা, দক্ষিণে সাতক্ষীরা জেলা ও খুলনা জেলা, পূর্বে নড়াইল জেলা ও খুলনা জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।
১৮৮৪ সালে যশোর শহরের নাগরিকদের পৌরসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে যশোর পৌরসভা নামক একটি স্থানীয় সরকার সংস্থা (পৌরসভা) গঠিত হয় যা ৯টি ওয়ার্ড এবং ৭৩টি মহল্লায় বিভক্ত। ২৮.৫৬ বর্গ কি.মি. আয়তনের যশোর শহরের ২১.১৫ বর্গ কি.মি. এলাকা যশোর পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত হয়।[৬] আর বাকি শহরতলির বিভিন্ন স্থান যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পরিচালিত করা হয়।
এ জেলায় ৮টি উপজেলা রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি পুলিশ থানা রয়েছে এবং একটি পোর্ট থানা রয়েছে।
যশোরের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত। যশোর শহরের সাক্ষরতার হার হলো শতকরা ৭৬.২ ভাগ। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই শহরের একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও কয়েকটি সরকারি কলেজ আছে। যশোর শিক্ষাবোর্ড শহরের নিউটাউন এলাকাতে অবস্থিত। দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় (এম এম কলেজ) যশোরে অবস্থিত।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের সময় হতেই যশোর শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠান আছে এ জেলায়। যশোরে নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ বঙ্গের সর্ববৃহৎ আইটি প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। এছাড়া উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা নিচে দেয়া হলো:
যশোরের সাথে এর কাছাকাছি জেলাগুলির শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। পশ্চিম ও পূর্ব বাংলায় পরিবহণের জন্য এখানে সংযোজক আন্তর্জাতিক মহাসড়ক আছে।
যশোর রেলস্টেশন বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় ব্রডগেজ-ভিত্তিক নেটওয়ার্কের একটি জংশন। নেটওয়ার্কটি ভারত পর্যন্ত প্রসারিত। রাজধানী ঢাকা এবং ভারতের কলকাতাকে সংযুক্ত করে পরিষেবাটি ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে চালু করা হয়েছিল। যশোর জংশন রুটটির মাঝখানে পড়েছে।
নগরীর কাছাকাছি যশোর বিমানবন্দরটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিমানঘাঁটি। এটিই দেশের একমাত্র বিমানবন্দর যেখানে বিমান বাহিনীর সকল বৈমানিকদের বিমান উড্ডয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এটির রানওয়ে দিয়ে সামরিক বিমানসহ অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল করে। দৈনিক চলাচল করা অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক বিমানের মধ্যে রয়েছে ইউএস-বাংলা, রিজেন্ট , নভো এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
দেশের বৃহত্তম আইটি পার্ক শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
যশোরের অর্থনীতিকে বেগবান করেছে মাছ চাষ। যশোরের অর্থনীতির সিংহভাগই আসে মাছ চাষ তথা চিংড়ি রফতানি করে।
যশোরের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান নিয়ামক দেশের প্রধান এবং সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থল বন্দর যা শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী বেনাপোল পৌরশহরে অবস্থিত। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের সিংহভাগ এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়। ওপারে আছে পেট্রাপোল। সরকারি আমদানী শুল্ক আহরণে বেনাপোল স্থল বন্দরটির ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। এখানকার মানুষের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য।
যশোরের ব্যবসা এবং বাণিজ্যর প্রাণ কেন্দ্র বলা যায় নওয়াপাড়াকে। এখানকার আশেপাশের উদ্যোক্তাদের কারণে এখানে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠেছে। এছাড়া নৌপথে আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে। যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী যশোর। বাংলাদেশের অধিকাংশ ফুল মূলত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে চাষ হয়। এখানে উৎপাদিত ফুল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।
যশোর-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২২.৯
(৭৩.২) |
২৭.০
(৮০.৬) |
৩৩.৪
(৯২.১) |
৪১.০
(১০৫.৮) |
৩৮.১
(১০০.৬) |
৩২.৬
(৯০.৭) |
৩১.৪
(৮৮.৫) |
৩১.৬
(৮৮.৯) |
৩২.১
(৮৯.৮) |
৩১.৫
(৮৮.৭) |
২৯.২
(৮৪.৬) |
২৪.৯
(৭৬.৮) |
৩১.৩
(৮৮.৪) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | ১৫.৪
(৫৯.৭) |
১৯.৩
(৬৬.৭) |
২৬.১
(৭৯.০) |
৩৪.৬
(৯৪.৩) |
৩৩.০
(৯১.৪) |
২৯.২
(৮৪.৬) |
২৮.৪
(৮৩.১) |
২৮.৬
(৮৩.৫) |
২৮.৭
(৮৩.৭) |
২৭.২
(৮১.০) |
২৩.১
(৭৩.৬) |
১৭.৮
(৬৪.০) |
২৬.০
(৭৮.৭) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ৯.০
(৪৮.২) |
১১.৭
(৫৩.১) |
১৮.৯
(৬৬.০) |
২৮.৩
(৮২.৯) |
২৭.৯
(৮২.২) |
২৫.৮
(৭৮.৪) |
২৫.৫
(৭৭.৯) |
২৫.৬
(৭৮.১) |
২৫.৪
(৭৭.৭) |
২৩.০
(৭৩.৪) |
১৭.০
(৬২.৬) |
১০.৬
(৫১.১) |
২০.৭
(৬৯.৩) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১১
(০.৪) |
১৯
(০.৭) |
৪০
(১.৬) |
৭৭
(৩.০) |
১৬৮
(৬.৬) |
৩১৪
(১২.৪) |
৩০৪
(১২.০) |
২৯৩
(১১.৫) |
২৪৫
(৯.৬) |
১৩৩
(৫.২) |
২৮
(১.১) |
৮
(০.৩) |
১,৬৪০
(৬৪.৪) |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) | ৪৬ | ৩৫ | ৩৬ | ৪৪ | ৬০ |
যশোর শহর নিয়ে অনেক বিতর্কিত মতামত রয়েছে। যেমন যশোর পৌরসভার আয়তন ২১ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু যশোর শহরের আয়তন ৭২ বর্গকিলোমিটারের কাছাকাছি। একারণে খুলনার পর খুলনা বিভাগের বৃহত্তম শহর।
ক্রম | বিভাগ | জনসংখ্যা | ক্রম | বিভাগ | জনসংখ্যা | ||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ঢাকা চট্টগ্রাম |
১ | ঢাকা | ঢাকা | ৭,০৩৩,০৭৬ | ১১ | কুমিল্লা | রংপুর | ২৯৪,২৬৫ | খুলনা নারায়ণগঞ্জ |
২ | চট্টগ্রাম | চট্টগ্রাম | ২,৫৯২,৪৩৯ | ১২ | রংপুর | ময়মনসিংহ | ৪৭৬,৫৪৩ | ||
৩ | খুলনা | খুলনা | ৬৬৩,৩৪২ | ১৩ | গাজীপুর | ঢাকা | ২১৩,০৬১ | ||
৪ | নারায়ণগঞ্জ | ঢাকা | ৫৪৩,০৯০ | ১৪ | যশোর | খুলনা | ২০১,৭৯৬ | ||
৫ | সিলেট | সিলেট | ৪৭৯,৮৩৭ | ১৫ | দিনাজপুর | রংপুর | ১৮৬,৭২৭ | ||
৬ | ময়মনসিংহ | ঢাকা | ৪৭৬,৩৫০ | ১৬ | চাঁপাইনবাবগঞ্জ | রাজশাহী | ১৮০,৭৩১ | ||
৭ | টঙ্গী | রাজশাহী | ৪৪৯,৭৫৬ | ১৭ | ব্রাহ্মণবাড়িয়া | চট্টগ্রাম | ১৭২,০১৭ | ||
৮ | রাজশাহী | রাজশাহী | ৩৫০,৩৯৭ | ১৮ | কক্সবাজার | চট্টগ্রাম | ১৬৭,৪৭৭ | ||
৯ | বগুড়া | বরিশাল | ৩২৮,২৭৮ | ১৯ | টাঙ্গাইল | ঢাকা | ১৬৭,৪১২ | ||
১০ | বরিশাল | চট্টগ্রাম | ৩২৬,৩৮৬ | ২০ | চাঁদপুর | চট্টগ্রাম | ১৫৯,০২১ |