যুক্তরাষ্ট্রের শিশুশ্রম নিরোধ আইন প্রণয়ন করেছিলেন সিনেটর টম হারকিন (ডেমোক্রেট - আইওয়া)। আইনের বিল আকারে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে প্রথমবারের মতো প্রস্তাবিত হয়েছিল ১৯৯২ সালে; পরবর্তী প্রস্তাব করা হয়েছিল যথাক্রমে ১৯৯৩, ১৯৯৫, ১৯৯৭ এবং ১৯৯৯ সালে। হারকিন-এর ওয়েবসাইটের মতে, "এই বিলটি শিশুশ্রম দ্বারা উৎপাদিত পণ্যগুলির আমদানি নিষিদ্ধ করবে এবং লঙ্ঘনকারীদের জন্য দেওয়ানি ও ফৌজদারি জরিমানা অন্তর্ভুক্ত করেছে।"[১]
যুক্তরাষ্ট্রের "শিশুশ্রম নিরোধ আইন ১৯৯৯" নামে পরিচিত বিলটির চূড়ান্ত প্রস্তাবটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের ১৫৫১ নম্বর বিল ছিল। এই বিলটি উত্থাপনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন টম হারকিন। এই বিলে বলা হয়েছিল, ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের দ্বারা উৎপাদিত এবং খনি হতে উত্তোলিত পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ থাকবে।[২] ১৯৯৫ সালে সিনেট বিল ৭০৬ এর মূল শব্দটি অন্তর্ভুক্ত ছিল, "শিশুশ্রম এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে বিদেশে উৎপাদিত পণ্যগুলির আমদানি নিষিদ্ধ।" এই আইনটি অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি ধারায় শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯২ সালে হারকিনের মূল প্রস্তাবটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের মাধ্যমে শিশুশ্রমের বৈশ্বিক ইস্যুতে পরিণত হয় এবং এটি ব্যাপক সাড়া ফেলে।[৩] হারকিন বেশ কয়েকটি শিশুশ্রম বিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত। হারকিনের ভাষ্যমতে, "আমি ২০০০ সালের বাণিজ্য আইন সংশোধন করতে সক্ষম হয়েছিলাম, যে আইনটি বাধ্যতামূলক বা চুক্তিভিত্তিক শিশুশ্রম দ্বারা তৈরি পণ্যগুলিতে প্রয়োগ করা হয়েছে।" ১৯৯৯ সালে কংগ্রেসে যেহেতু মূল বিল পাস করা হয় নি, তাই ২০০৬ সালে হারকিন জানালেন যে, তিনি পুনরায় বিলটি উপস্থাপন করবেন।[৪]
১৯৯০ সালে বাংলাদেশে মজুরি উপার্জনকারী লক্ষাধিক শিশুর মধ্যে প্রায় সকলেই তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ করেছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কমপক্ষে ৫৭ লক্ষ শিশু কারখানায় শ্রমিক হিসাবে নিযুক্ত ছিল। এই সংখ্যা ১৫ মিলিয়নেরও বেশি হতে পারে।[৫] শিশুশ্রম নিরোধ আইন পাসের পর আসন্ন অর্থনৈতিক ক্ষতির ভয়ে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা ৫০,০০০ হাজার শিশুকে বাদ দেয়।[৫] এই আইনে শিশুদের দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণ তৈরিকৃত পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে আমেরিকার সাথে লাভজনক চুক্তির ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়। এটির প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, কেননা দেশের রপ্তানির সিংহভাগই রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান।[৫] কারখানার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা শিশুরা কোথায় আছে তা জানতে ইউনিসেফ বাংলাদেশে তদন্তকারীদের একটি দল পাঠিয়েছিল। ইউনিসেফ ১৯৯৭ সালে "বিশ্ব শিশুদের বিবৃতি" প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, অধিকাংশ শিশু খারাপ পরিস্থিতিতে আছে। যেমন, তারা ইট-পাথর ভাঙ্গার কাজ এবং রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তি করছে। অবশেষে অনেক মেয়ে পতিতাবৃত্তিতে যায়।[৬]