রজনীকান্ত | |
---|---|
জন্ম | শিবাজী রাও গায়কোয়াড় ১২ ডিসেম্বর ১৯৫০ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, নেপথ্য গায়ক |
কর্মজীবন | ১৯৭৫–বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | লতা রঙ্গছড়ি (১৯৮১–বর্তমান) |
সন্তান | |
আত্মীয় | দেখুন রজনীকান্ত পরিবার বৃক্ষ |
পুরস্কার | পদ্মভূষণ (২০০০) |
এই অনুচ্ছেদটি রজনীকান্ত ধারাবাহিকের একটি অংশ | |
---|---|
রজনীকান্তের জীবনী | রজনীকান্তের প্রাপ্ত পুরস্কার | রজনীকান্ত অভিনীত চলচ্চিত্র |
রজনীকান্ত (জন্মনাম শিবাজী রাও গায়কোয়াড়; জন্ম- ১২ ডিসেম্বর, ১৯৫০) একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং সাংস্কৃতিক প্রতীক।[১] তিনি চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক করেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত তামিল সিনেমা অপূর্ব রাগাঙ্গাল (১৯৭৫) এ অভিনয়ের মাধ্যমে, এই সিনেমার পরিচালক কে.বলচন্দ্র, যার উপদেশে তিনি সিনেমাতে অভিনয় করেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য দেশের সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। তিনি ২০১৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।
ভারতীয় শহর বেঙ্গালুরুতে বেড়ে উঠেন, রজনীকান্ত অসচ্ছল জীবনের সাথে লড়াই করে কাটিয়েছেন তার শৈশব। বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাসের সহকারী হিসেবে কাজ করা অবস্থায় তিনি নাটকে অভিনয় করতেন। তিনি ১৯৭৩ সালে মাদ্রাজ আসেন “মাদ্রাজ ফিল্ম ইনিস্টিটিউট” থেকে অভিনয়ের উপর ডিপ্লোমা পড়ার জন্য। তামিল চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে রজনীকান্ত একসময় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে, ভারতীয় জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তিনি “ অভিনয় দেবতা” হিসেবে জনপ্রিয় হন।[২] সিনেমায় তার আচরণ এবং সংলাপের ধরন তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।[২] “শিবাজী” সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি ₹২৬০ মিলিয়ন (ইউএস$ ৩.১৮ মিলিয়ন) সম্মানী নেওয়ার পর তিনি জ্যাকি চ্যানের পর এশিয়ার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহণকারী তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর দিল্লিতে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সন্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার প্রাপ্ত হন। অন্যতম এই জীবন্ত কিংবদন্তি। ২০১৩ সালে, তিনি ছয়টি “তামিলনাড়ু স্টেট চলচ্চিত্র পুরস্কার” অর্জন করেন। যার মধ্যে চারটি সেরা অভিনেতা এবং বাকি দুইটি সেরা অভিনেতা হিসেবে বিশেষ পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার – তামিল। তিনি ভারতের তৃতীয় বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ অর্জন করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি, তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবী, উৎসাহদাতা এবং ড্রাভিডিয়ান রাজনীতিতে সেবা দানকারী। তিনি লতা রাঙ্গাচড়িকে বিয়ে করেন, ১৯৮১ সালে এক আলোচনা সভায় তাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয় এবং তাদের দুই সন্তান।
রজনীকান্ত ১৯৫০ সালে ১২ ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন,[৩] তিনি জন্মগ্রহণ করেন ভারতের মিসোর রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে একটি মারাঠি পরিবারে,[৪] যা বর্তমানে কার্নাটকের একটি অংশ।[৫] তার নাম রাখা হয় ছত্রপতি শিবাজীর নাম অনুসারে শিবাজী রাও গায়েকোয়াড ,একজন যোদ্ধা, এবং যিনি মারাঠি এবং কন্নড় ভাষার মানুষদের আনেন।[৪] রজনীকান্তের পূর্বপুরুষরা মাভদি কাদি পাথার নামে একটি গ্রাম থেকে আসেন, যা বর্তমানে মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার পুরান্দার তালুক নামের একটি স্থান।[৬] দুই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন রজনীকান্তের বাবা, রামজী রাও গায়েকোয়াড একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন।[৪] তার বাবা ১৯৫৬ সালে কাজ হতে অবসরগ্রহণ করেন, তার পরিবার হনুমান্থনগর নামক স্থানে স্থানান্তরিত হয় এবং সেখানে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন।[৪] ছয় বছর বয়সে, রজনীকান্ত “গাভিপুরাম সরকারি কন্নড় মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে” ভর্তি হন এবং সেখানে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।[৭]
শিশু হিসেবে, তিনি ক্রিকেট, ফুটবল এবং বাস্কেটবল খেলতে অনেক আগ্রহী চিলেন এবং অনেক দুষ্ট ছিলেন। এই সময় তার ভাই তাকে রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃক স্থাপিত রামকৃষ্ণ মঠে নিয়ে যান। মঠে তিনি বেদ শিখতেন, ঐতিহ্যবাহী এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থ, যা মনে প্রভাব ফেলে।[৮] আধ্ম্যাত্বিক শিক্ষার সাথে, তিনি মঠে নাটকে অভিনয়ও করা শুরু করেন। মঠে অভিনয়ের পর থেকে অভিনয়ের প্রতি তার অদম্য স্পৃহা জাগে এবং তিনি হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত-এ “একলব্য'' এর বন্ধুর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। তার পরিবেশনা দর্শকের কাছ থেকে এবং কন্নড় কবি ডি.আর.বেন্দ্রের কাছ থেকে আলাদাভাবে প্রশংসা অর্জন করে।[৪] সময়ের সাথে তিনি যখন এগারো বছর বয়সে পা দেন,[৪] তার মা মারা যান।[৯]
ষষ্ঠ শ্রেণি পড়া সম্পন্ন করার পর, রজনীকান্ত আচার্য্য পাঠশালা পাবলিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ওখান থেকে তিনি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স সম্পন্ন করেন।[৮] আচার্য্য পাঠশালায় পড়ার সময়, তিনি নাটকে অভিনয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। এই রকম একটি উপলক্ষে, তিনি কুরুক্ষেত্র নাটকের “দূর্যোধন” চরিত্রে অভিনয় করেন।[১০] বিদ্যালয়ে পড়া সম্পন্নের পর, তিনি বেঙ্গালুরু এবং মাদ্রাজ শহরে বিভিন্ন রকম কাজ করেন, এমনকি কুলি এবং মিস্ত্রীর কাজও করেন,[১১] এবং পরিশেষে তিনি বেঙ্গালুরু ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের বাসের সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান।[১২][১৩] তিনি কন্নড় স্টেজ নাটক রচয়ীতা তোপী মুনিয়াপ্পা তাকে একটি পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে প্রস্তাব দেন, এরপর থেকে তিনি কন্নড় নাটকে অভিনয় করেন। ঐ সময়, সদ্য গঠিত মাদ্রাজ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন অভিনয় কোর্স নিয়ে নির্মিত একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে তিনি অভিনয় করতে যান।[১৪] যদিও তার পরিবার এই প্রতিষ্ঠানে যাওয়া পুরোপুরি সমর্থন করে নি,[১৪] তার বন্ধু এবং সহকর্মী তাকে ঐ প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্যে উৎসাহ প্রদান করে এবং তাকে এর জন্য আর্থিকভাবে সমর্থন দেয়।[১৫][১৬] ঐ প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন সময়ে, তিনি স্টেজ নাটকে অভিনয় করতেন, ফলে তিনি তামিল চলচ্চিত্র পরিচালক কে.বলচান্দের নজর কাড়েন।[১০] পরিচালক তাকে তামিল ভাষা শিখতে পরামর্শ দেন এবং তিনি অতি দ্রুত সেই পরামর্শ অনুসরণ করেন।[১৭]
"রজনীকান্ত দাবী করে যে আমি তার বিদ্যালয় । কিন্তু আমি জোর দিয়ে বলতে চাই এটি সেই রজনীকান্ত নয় যাকে আমি সিনেমা জগতে এনেছিলাম । সে তার নিজ কর্মপ্রচেষ্টা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম দ্বারা এই পর্যায়ে এসেছে । আমি শুধু তাকে সুযোগ করে দিয়েছিলাম এবং সিনেমা জগতের পথ দেখিয়ে দিয়েছিলাম । সে গিয়েছে এবং উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে ।"
—রজনীকান্ত সম্পর্কে কে.বলচান্দের মত[১৮]
রজনীকান্ত চলচ্চিত্রে তার অভিনয় শুরু করেন তামিল সিনেমা অপূর্ব রাগাঙ্গাল (১৯৭৫) এর মাধ্যমে।[১৯] কে.বলচান্দ,[১৯] যে তাকে শ্রীবিদ্যার স্বামী হিসেবে ছোটো চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সুযোগ দিয়েছিলেন।[২০][২১] এই সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে দুইজন বিশাল ব্যবধান বয়সী মানুষের দৈহিক সম্পর্কের কথা সিনেমায় প্রদর্শিত হওয়ার কারণে অনেক বিতর্কের সম্মুখীন হয়।[২২] যাহোক, এই সিনেমাটি সমালোচকদের প্রচুর প্রশংসা অর্জন করে এবং ২৩ তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে “সেরা তামিল চলচ্চিত্র” এর পুরস্কারদহ মোট তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।[২৩] হিন্দু পত্রিকায় এই সিনেমা সম্পর্কে বলা হয় যে, "নতুন অভিনেতা রজনীকান্ত মহীয়ান এবং চিত্তাকর্ষক"।[২৪]
এরপর তিনি পুত্তান্না কাঙাল পরিচালিত নতুন ধরনের পরীক্ষিত সিনেমা “কথা সঙ্গম” (১৯৭৬) এ অভিনয় করেন।[২৫] এই সিনেমাটি তিনটি ছোট গল্পের সমন্বয়ে নির্মিত হয়েছিল, যেখানে রজনীকান্ত সিনেমার শেষাংশে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিল।[২৬] তার পরবর্তী মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা হল বলচান্দের পরিচালিত তেলুগু ভাষার সিনেমা “আন্থুলেনী কথা”।[২৬] এই সিনেমাটি পরিচালকের নিজের পরিচালিত তামিল সিনেমা “আভাল ওরু থোডার কাথাই” (১৯৭৪) এর পুনঃনির্মিত সিনেমা। এই সিনেমায় তার অভিনয়ে জীবনের প্রথম বড় চরিত্রে অভিনয় করেন।[২৬] এরপরে, তিনি পরপর অনেক সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করেন। তার বিখ্যাত চরিত্রের প্রথম সিনেমা হল, “মুনড্রু মুদিচ্চু”, এই সিনেমায় একজন বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন, যেখানে তার অপর বন্ধু হ্রদে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন যাতে তার প্রাক্তন পেমিকার সাথে তার বিয়ের স্বপ্নপূরণ হয়।[২৭] তার হাত দিয়ে ছুড়ে সিগারেট ধরানোর স্টাইলটা তাকে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে।[২৮] ঐ বছরে তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা হল, “বালু জেনু”, এখানেও তাকে প্রায় একই চরিত্রে অভিনয় করতে হয়, যেখানে প্রধান নারী চরিত্র সমস্যায় পড়ে।[২৬] এরপর তিনি একই ধরনের চরিত্রে “আভারগাল”[২৯] এবং “১৬ ভায়াথিনিলে” সিনেমাতেও অভিনয় করেন।[২৬][৩০]
১৯৭৭ সালে তিনি তেলুগু ভাষার “চিলাকাম্মা চিপ্পিন্দি” সিনেমায় সর্বপ্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। [৩১] যদিও রজনীকান্ত সমসময় কে. বলচান্দকে তার উপদেষ্টা হিসেবে মানতেন,[৩২] কিন্তু তার মুখটি সবার কাছে পরিচিত করান এস.পি.মুথুরমন।[৩৩] মুথুরমন তাকে “ভুবনা ওরু কেলভিক্কুরি” (১৯৭৭) সিনেমায় ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগদানের মাধ্যেম একটি পরীক্ষা চালান। এই সিনেমায় তিনি চলচ্চিত্রে প্রথম অংশে একজন ব্যর্থ প্রেমিক এবং দ্বিতীয় অংশে তিনি ন্যক হিসেবে অভিনয় করেন।[৩৩] এই সিনেমার সফলতা ১৯৯০র দশক পর্যন্ত তাকে আরো ২৪ সিনেমার প্রস্তাব আস্তে সাহায্য করে।[৩৩] এসময়কার সিনেমাগুলোতে তিনি সাধারণত সহ-অভিনেতার চরিত্রে তার মধ্যে কয়েকটিতে খল চরিত্রে অভিনয় করেন।[২৭] “গায়িত্রী” সিনেমায় তিনি একজন পর্ণোগ্রাফার, যে কিনা তার স্ত্রী অজান্তে তাদের একসাথে কাটানো মূহুর্তগুলো রেকর্ড করে। আবার অন্যদিকে, “গালাতে সামসারা” সিনেমায় তিনি একজন বিবাহিত পুরুষ, যে একজন ক্লাবের নর্তকীর সাথে প্রেম করে।[৩৪] ঐ বছরের মুক্তিপ্রাপ্ত ১৫ টি সিনেমার মধ্যে সবগুলোই, তার আগের বছরের তুলনায় অনেক উন্নত ছিল।[৩৫]
১৯৭৮ সালে তিনি তামিল, তেলুগু এবং কন্নড় ভাষার মোট ২০ টি সিনেমায় অভিনয় করেন।[৩৬][৩৭] এই বছর তার অভিনীত প্রথম সিনেমা হল পি.মাধবানের “শঙ্কর সেলিম সায়মন”। এরপর তাকে কন্নড় ভাষার “খিলাড়ি কিট্টু”, যেখানে সহ-অভিনেতা ছিলেন বিষ্ণুবর্ধন, যিনি এরপর থেকে কন্নড় সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। তার পরবর্তী মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা “অন্নদাম্মুলা সাভাল”, যেখানে তাকে কৃষ্ণা’র সাথে দ্বিতীয় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। এরপর তিনি একটি অতিপ্রাকৃত রোমাঞ্চকর সিনেমা “আয়্যিরাম জেনমঙ্গল” সিনেমায় একটী গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তাকে দেখা যায় “মাথু তাপ্পাড়া মাগা” সিনেমায় প্রধান প্রতিদ্বন্ধীর চরিত্রে, যা তার মুক্তিপ্রাপ্ত ২৫ তম চলচ্চিত্র। তামিল ভাষায় “ভৈরব” সিনেমায় তিনি প্রথম নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন, যা একই বছর মুক্তি পায়।[৩৬] এই সিনেমায় অভিনয়ের পর তিনি “সুপার স্টার” নামে খ্যাত হন।[৩৬] এস.থানু, অন্যতম চলচ্চিত্র পরিবেশক যিনি রজনীকান্তের ৩৫ ফুট (১১ মি) উচু একটি প্রতিকৃতি স্থাপন করেন।[৩৮] তাকে পরবর্তীতে দেখা যায়, “ইলামাই ওঞ্জাল আদুকিরাথু”, সি.ভি.শ্রীধর নির্মিত একটি ত্রিমাত্রিক প্রেম কাহিনী, তাকে এক বন্ধুর চরিত্রে দেখা যায়, যে তার অপর বন্ধুর ভালবাসার জন্য নিজের ভালবাসাকে উৎসর্গ করে, এতে অভিনয় করেন কমল হাসান। এই সিনেমায় সফলতার কারণে “ভাসু পিলচিন্দি” তেলুগু ভাষায় এই সিনেমা পুনঃনির্মাণ করেন, যদিও তামিল ভাষার আসল সিনেমার সকল কলা কৌশলী একই থাকে এই সিনেমায়। তার পরবর্তী সিনেমা “ভানাক্কাটুরিয্য কাথাল্য” যেখানে একটি উদ্বোধনী গানের দ্বারা তার প্রবেশ ঘটে, এই প্রচেষ্টা তাকে আরো সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে সাহায্য করে।[৩৬] “মুল্লুম মারলুম” তার অভিনীত এ সিনেমাটি ঐ সময় মুক্তি পায় এবং যা সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে।[৩৯] এই সিনেমাটি জে.মহেন্দ্র পরিচালিত প্রথম সিনেমা, যা নির্মিত হয় কালকি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একই নামধারী একটি উপন্যাস থেকে।[৩৬] এই সিনেমাটি ফিল্মফেয়ার সেরা তামিল পুরস্কার অর্জন করে এবং রজনীকান্ত সেরা অভিনেতা হিসেবে “তামিলনাড়ু স্টেট চলচ্চিত্র পুরস্কার” অনুষ্ঠানে বিশেষ পুরস্কার অর্জন করেন।[৩৬] এরপর, তিনি একটি কাল্পনিক সিনেমা “আল্লাউদিনাম আলভুতা ভিলাক্কুম” এর মাধ্যমে মালায়ালাম সিনেমায় অভিষেক করেন, যা নির্মিত হয় আরব্য রজনীর (Arabian Nights) এর একটি গল্প অবলম্বনে। একই বছর, তিনি “ধর্ম যুদ্ধম্” সিনেমায় অভিনয় করেন, যেখানে তিনি একজন মানসিজ রোগাক্রান্ত ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেন, যে তার তার বাবা-মা হত্যার প্রতিশোধ নেয়। এরপর তিনি এন.টি.রাম রাও” পাশাপাশি “টাইগার” (১৯৭৯) নামক সিনেমায় অভিনয় করেন। “টাইগার” সিনেমায় অভিনয় শেষ হওয়ার পর তার অভিনীত সিনেমার সংখ্যা হয় ৫০ টি, সময়কাল ৪ বছর এবং মোট ৪ টি ভাষায়। এর মধ্যে কিছু অনেক জনপ্রিয় ছিল এবং এসব সিনেমা মুক্তি পায় তরুণ বিনোদন দানকারীদের উঠতি সময়ে, যেমনঃ “নিনাইথাল ইনিক্কুম” (১৯৭৯), তামিল-কন্নড় দ্বি-ভাষার “প্রিয়া” এবং তেলুগু “আম্মা এভারিক্কাইনা আম্মা”। “প্রিয়া” সিনেমটি নির্মিত হয় সুজথা রাঙ্গারজনের গোয়েন্দা উপন্যাস অবলম্বনে এবং এটি রজনীকান্তের প্রথম ছবি, যার বেশিরভাগ শুটিং হয়েছে ভারতের বাইরে, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।[৩৬]
১৯৮০ সালের শেষের দিকে, তিনি দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে একজন জনপ্রিয় নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।[৪০] তার অভিনয় জীবনের এই সময়ে, তিনি হঠাৎ করে চলচ্চিত্রে অভিনয় থেকে অব্যাহতি নেন, কিছুদিন পর আবার অভিনয়ে ফিরে আসেন।[৪১] তিনি ফিরে আসেন তামিল “বিল্লা” (১৯৮০) সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রটি হিন্দি “ডন” (১৯৭৮) সিনেমার পুনঃনির্মাণকৃত চলচ্চিত্র। এই সিনেমাতে রজনীকান্ত দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন এবং এই প্রথম তার সিনেমা ব্যবসায়িক সফলতা আভ করে। শ্রীদেবীর সাথে তার জুটি চলতে থাকে “জনী” (১৯৮০) সিনেমাতেও এবং এখানেও তিনি দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮১ সালে, তাকে “ঘরজানাই” সিনেমাতে দেখা যা, যা কন্নড় এবং মালায়ালাম ভাষায় আলাদাভাবে শুট করা হয়। এই সিনেমাটি তার দ্বৈত ভাষায় নির্মিত তখনকার সর্বশেষ সিনেমা। তিনি “মুরাত্তি কালাই” (১৯৮০) সিনেমাতেও অভিনয় করেন এবং এই সিনেমাটিও ব্যবসায়িক সফলতা লাভ করে।[৩৩] বলচান্দের প্রথম নিজস্ব প্রযোজনায় নির্মিত “নেত্রিকান” সিনেমাতে তিনি বাবা এবং পুত্রের ভূমিকায় দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন।[৩৩] তিনি কে.বলচান্দের পরিচালিত “থিল্লু মুল্লু” (১৯৮১) সিনেমাতে অভিনয় করেন, যা রজনীকান্তের প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র। তিনি অবাণিজ্যিক চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে তার উপদেষ্টার কাছ থেকে পরামর্শ লাভের পর তিনি বাণিজ্যিক ধরনের একশন নায়কের চরিত্রে অভিনয় করা থেকে বিরত থাকেন এবং এরফল তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন।[৪২]
১৯৮২ সালে, তিনি “পক্কির রাজা” (১৯৮২) এবং “থানিকাট্টু রাজা” সিনেমায় অংশ নেন। “মন্দ্রু মুগাম” সিনেমায় রজনীকান্ত সর্বপ্রথম একসাথে তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেন।[৪৩]
১৯৮৩ সালে, তিনি সর্বপ্রথম বলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার অমিতাভ বচ্চন এবং হেমা মালিনীর সাথে অভিনীত সিনেমাটি ছিল “আন্ধা কানুন”। এই সিনেমাটি তৎকালীন সময়ে সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমাগুলোর মধ্যে স্থান করে নেয়।[৪৪]
১৯৮৪ সালে তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে, মুতুরমন পরিচালিত এবং বলচান্দের প্রযোজিত “নান মহান আল্লা” (১৯৮৪)। তিনি সর্বপ্রথম কেমিও ভূমিকায় উপস্থিত থাকেন “আনবুল্লা রজনীকান্ত” সিনেমায়।[৪৫] তিনি ত্রি-চরিত্রে অভিনয় করেন “জন জনি জনার্ধন” সিনেমাতে। “নাল্লাভানুকু নাল্লাভান” সিনেমাতে অভিনয়ের জন্যে তিনি ফিল্মফেয়ার সেরা তামিল অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।[৪৬] তার অভিনীত ১০০তম সিনেমা, “শ্রী রাঘাভেন্দ্র” (১৯৮৫), তিনি হিন্দু মনীষী “রাঘাবেন্দ্রে স্বামী”র ভূমিকায় অভিনয় করেন।[৪৭]
১৯৮০র দশকের শেষ মধ্যভাগে, রজনীকান্ত “নান সিগাপ্পু মানিথান” (১৯৮৫), “পাদিক্কাদাভান” (১৯৮৫), “মিঃ ভারত” (১৯৮৬), “ভেলাইকারান” (১৯৮৭), “গুরু শিষ্য” (১৯৮৮) এবং “ধর্মথীন থালাইভান” (১৯৮৮) সিনেমার মত অনেক হিট সিনেমায় অভিনয় করেন। ১৯৮৮ সালে, তিনি ওয়াইট লিটল পরিচালিত প্রথম ইংরেজি ভাষা “ব্লাড স্টোন” (১৯৮৮) সিনেমায় অভিনয় করেন।[৪৮][৪৯] রজনীকান্ত “রাজাধী” (১৯৮৯), “শিব” (১৯৮৯), “রাজা চিন্নাই রোজা” এবং “মাপ্পিল্লাই”(১৯৮৯) সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি আরো কিছু বলিউড সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে এই দশক সমাপ্ত করেন। “রাজা চিন্নাই রোজা” ভারতে নির্মিত সরাসরী এবং এনিমেশন মিশ্রিত প্রথম চলচ্চিত্র।[৫০][৫১]
এই দশকে, রজনীকান্ত নিজেকে একজন বাণিজ্যিক বিনোদন দানকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত সকল সিনেমা বক্স অফিসে প্রচুর সফলতা লাভ করে। তিনি “পানাক্কারান” (১৯৯০) সিনেমায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি এই দশকের সূচনা করেন। তিনি গত দশকের ন্যায় এই দশকেও তিনি বলিউড সিনেমায় অভিনয় করে যান। “হাম” (১৯৯১) সালের সিনেমাতে তাকে অমিতাভ বচ্চনের পাশাপাশি সহ-অভিনেতা হিসেবে অভিনেতা করেন। ফলে তিনি “বাদশাহ্” সিনেমায় অভিনয়ের জন্যে উৎসাহ পান।[৫২] ১৯৯১ সালে, তিনি “থালাপাথি” সিনেমায় মনি রতন্মের সাথে কয়াজ করেন। সংকৃত মহাকাব্য মহাভারতএর গল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়।[৫৩][৫৪] এই সিনেমাটি মুক্তির পর সমালোচকদের প্রশংসা এবং সফলতা লাভ করে।[৪৭] এরপর তিনি ভিন্ন ভাষা হতে পুনঃনির্মিত বহু সিনেমায় অভিনয় করেন, বিশেষ করে হিন্দি এবং তেলুগু সিনেমা হতে পুনঃনির্মাণ করা হয় এসব সিনেমা। “আন্নামালাই”, মুক্তি পায় ১৯৯২ সালে, যার কিছুটা হিন্দি সিনেমা “খুদগার্জ” সিনেমার উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়। পি.বসু পরিচালিত “মান্নান” সিনেমা, যা বক্স অফিসে সফলতা লাভ করে। রজনীকান্ত প্রথম তার প্রথম সিনেমার গল্প লেখেন, “ভাল্লী” (১৯৯৩) সিনেমার জন্য এবং এই সিনেমায় তিনি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন। তিনি “যেজামান” সিনেমায় অভিনয় করেন, যেখান তিনি ভানাভার্যা ন নামক এক গ্রাম্য প্রধানের চরিত্রে অভিনয় করেন করেন। তার রোমান্টিক-হাস্যরসাত্মক সিনেমা “বীর” (১৯৯৪), এই সিনেমার শেষাংশের জন্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, কিন্তু এটি ১৯৯৪ সালে সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমাগুলোর মধ্যে স্থান করে নেয়।[৫৫] তিনি “ভাষা” (১৯৯৫) সিনেমার জন্য সুরেশ কৃষ্ণার সাথে হাত মিলান এবং এই সিনেমাটি চলচ্চিত্র শিল্পে রেকর্ডের সৃষ্টি করে,[৫৬] যা ভক্তদের এবং সমালোচকদের কাছে প্রশংসা পায়। এই সিনেমাটি তাকে অন্য ধাচের জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যায়।[৫৭] তিনি “পেদ্দারাযুধু” সিনেমায় কেমিও ভূমিকায় অভিনয় করেন। একই বছর, তিনি আরেকটি গ্যাংস্টার সিনেমা “আমির খানের” সাথে “আতাঙ্ক হে আতাঙ্ক” সিনেমায় অভিনয় করেন, যা যা ঐ সময় পর্যন্ত তার প্রধান চরিত্রে অভিনয় সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। কে.এস.রবিকুমার পরিচালিত এবং কে.বলচান্দের পরিচালিত তার অভিনীত আরেকটি বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমা হল “মুথু”, এইটি প্রথম তামিল সিনেমা যা জাপানি ভাষায় অনুদিত হয়। “মুতু – ওদুরু মহারাজা”।[৫৮] ১৯৯৮ সালে জাপানে এই সিনেমাটি $১.৬ আয় করে রেকর্ড সৃষ্টি করে এবং এরফলে বহু জাপানী ভক্তের সৃষ্টি হয়।[৫৯] জাপান প্রভাবিত আমেরিকান ম্যাগাজিন “নিউজউইক” ১৯৯৯ সালে মতামত দেয় যে, "রজনীকান্ত জাপানের ফ্যাশনের জগতে হলিউড অভিনেতা 'লিও নাদো দ্যা ক্যাপ্রিও'র জায়গা নিয়েছেন".[৬০] তিনি বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে প্রবেশ করেন ১৯৯৫ সালের শেষেরদিকে “ভাগ্য দেবতা” সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে।
কিছু সময় বিরতির পর, রজনীকান্ত তার নিজের লেখা “বাবা” (২০০২) সিনেমায় অভিনয় করেন।[৬১] এই সিনেমাটি নির্মিত হয় একজনের গ্যাংস্টার হয়ে উঠার কাহিনীকে কেন্দ্র করে।[৬১] এই সিনেমাটি আশার তুলনায় কম সাড়া জাগায় এবং পরিবেশকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।[৬২][৬৩] রজনীকান্ত নিজে পরিবেশকদের ক্ষতিপূরণ দেন। এই সিনেমাটি বিভিন্ন মতামত যেমন, "ফুলটি ছিল গোলাপ" এবং "সোনা আর চমকায়না"।[৬৪] পিএমকে নেতা “এস.রামদোস” সিনেমায় তার সিগারেট সেবনের স্টাইলের কারণে তার সমালোচনা করেন। তিনি তামিল তরুণদের কাছে ধূমপান ও মদ্যপান উৎসাহ দিচ্ছেন বলে সমালোচনা উঠে। পিএমকে কর্মীরা যে থিয়েটারে সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়, সে থিয়েটারে গিয়ে ফিল্ম রোল নষ্ট এবং পুড়ে ফেলে।[৬৫]
দুই বছর পর, রজনীকান্ত পি.বাসুর “চন্দ্রমুখী” (২০০৫), মালায়ালাম “মানিচিত্রাথাযু” সিনেমার পুনঃনির্মাণ, অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। এই সিনেমাটি মুক্তির পর তার বক্স অফিসে চূড়ান্ত সফলতা লাভ করে, এবং ২০০৭ সালে এই সিনেমাটি সবচেয়ে বেশিদিন থিয়েটারে চালিত তামিল সিনেমা হিসেবে রেকর্ড করে।[৬৬] “চন্দ্রমুখী” তুর্কি এবং জার্মান ভাষায়ও Der Geisterjäger নামে অনুদিত হয় এবং তা যথাক্রমে সেসব দেশে মুক্তি পায়।[৬৭] চন্দ্রমুখীর পর, এভিএম প্রোডাকশন প্রতিবেদন্দেয় যে, এস. শঙ্কর পরিচালিত এবং রজনীকান্ত অভিনীত সর্ববৃহৎ সহযোগী তামিল চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। এই সিনেমাটির নাম “শিবাজি: দ্য বস” এবং যা অভিনয় এবং নির্মাণের দুই বছর পর ২০০৭ সালের গ্রীষ্মে মুক্তি পায়। মুক্তির পর এই সিনেমাটি প্রথম তামিল সিনেমা যা যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বক্স অফিসের “সেরা দশের” তালিকায় স্থান পায়।[৬৮][৬৯] এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য রজনীকান্ত ₹২৬০ মিলিয়ন (ইউএস$ ৩.১৮ মিলিয়ন) সম্মানী পান, যা তাকে জ্যাকি চ্যানের পর তাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকগ্রহণকারী নায়করুপে প্রতিষ্ঠিত করে।[৭০][৭১][৭২] “শিবাজী” নির্মাণের সময়, তার কম্পিউটার নির্ভর একটি সিনেমা নাম “সুলতানঃ দ্য ওয়ারিয়র” নির্মাণের আশা প্রকাশ করেন। সিনেমাটি ২০০৮ সালে মুক্তি পাবে বলে নির্ধারন করা হয়,[৭৩][৭৪] যাহোক, এই সিনেমাটি নির্মাণ শুরু হলেও এর প্রগতি কয়েক বছর ধরে অজানাই রয়ে যায়।[৭৫]
"আর কিছু কি বলার আছে যে ৬১ বছর বয়সেও একজন মানুষ নায়কের চরিত্রে অভিনয় করে শুধু দক্ষিণ ভারতে নয় পুরো ভারতে জনপ্রিয়তা পায়? সুপারস্টার রজনী এন্থিরান চলচ্চিত্রে বিজ্ঞানী ও একটি রোবটের চরিত্রে অভিনয় করে আরো একবার প্রমাণ করলেন যে তিনিই সেরা [...] তিনি এত সূক্ষ্ম ভাবে চরিত্র দুটি ফুটিয়ে তুলেছেন যে তা হলিউডের অভিনেতাদেরও হার মানায় ।"
—রজিনীকান্তের এন্থিরান চলচ্চিত্রের প্রশংসায় রেডিফ[৭৬]
তিনি আবার পি.বাসুর সাথে কাজ করেন, “কুসেলান” সিনেমার জন্য। মালায়ালাম “কাধা পারাযুম্বল” সিনেমার পুনঃনির্মাণকৃত “কাথানায্যকুদু” (২০০৮) একটি তেলুগু সিনেমা, যেখানে রজনীকান্ত একজন চলচ্চিত্র তারকা হয়েও এবং নিজ ভূমিকায় বৃহৎ কেমিও চরিত্রে অভিনয় করেন, নায়কের প্রিয় বন্ধুর চরিত্রে। রজনীকান্তের ভাষ্যমতে, এই সিনেমাটির কোথাও কোথাও তার প্রাথমিক জীবনের কথা বর্ণিত আছে।[৭৭] যাহোক, এই সিনেমাটি বক্স অফিসে তেমম সফল হতে পারে নি, এতে পরিবেশক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।[৭৮] রজনীকান্ত আরো বলেন যে, তিনি “প্রমিদ সাইমিরার” সাথে “খুসেলান” এ আবার একসাথে কাজ করবেন।[৭৯][৮০]
রজনীকান্ত আবার এস. শঙ্করের সাথে আবার কাজ করেন, তার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী “এন্থিরান” সিনেমার জন্য।[৮১] এই সিনেমাটি ২০১০ সালে বিশ্বব্যপী মুক্তি পায় এবং এটি বিশ্ব সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভারতীয় সিনেমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় স্বভাবতই, এই সিনেমাটি ভারতে সর্বোচ্চ আয়কারী তামিল সিনেমা হিসেবে চিহ্নিত হয়।[৮২][৮৩][৮৪] রজনীকান্তকে এ ফিল্মের জন্য ৪৫০ মিলিয়ন রুপী দেওয়া হয় ।[৮৫]
২০১১ সালের জানুয়ারীতে, রজনীকান্ত “রানা” নামক সিনেমায় অভিনয় করেন। এর প্রযোজক সৌন্দর্য্য রাজনীকান্ত বেং পরিচালক কে.এস.রবিকুমার, যারা রজনীকান্তের সঙ্গে তৃতীয়বারের মতন কাজ করেন।[৪৩] ২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল, সিনেমার প্রধান শুটিং এর সময় তিনি স্বল্প খাদ্য বিষক্রিয়ার কারণে বমি করেন, ফলে তিনি অবসাদ ও নিরুদ্দম অনুভব করেন।[৮৬] তাকে সেন্ট ইসাবেলা’স হাসপাতালে একদিন চিকিৎসা প্রদান করা হয়।[৮৭] পাঁচদিন পর, তিনি আবার একই হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট এবং জ্বরের কারণে চিকিৎসার জন্য যান।[৮৮] এবার তার ব্রঙ্কাইটিস ধরা পড়ে এবং তিনি এক সপ্তাহ চিকিৎসা গ্রহণ করেন, যার মধ্যে কিছুদিন তিনি ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন।[৮৯] হাসপাতাল থেকে ছাড় পাওয়ার সময় অনেক সাংঘর্ষিক মেডিকেল রিপোর্ট, তার স্বাস্থ্যের অবনতি সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে,[৯০] যা অব্যাহতভাবে লতা রজনীকান্ত অস্বীকার করেন। এই সময়, CNN-IBN “রজনীকান্ত মৃত” নামে একটি প্রতিবেদন দেয়, যা ভারতে টুইটার এবং গুগল সার্চে শীর্ষে থাকে।[৯১] চূড়ান্ত ছাড়ের দুইদিন পর, ২০১১ সালের ১৬ মে রজনীকান্ত “শ্রী রামচন্দ্র মেডিকেল কলেজ এন্ড রিসার্চ ইনিস্টিটিউটে” ভর্তি হন।[৯২] এই হাসপাতাল, যাহোক, রজনীকান্তের চিকিৎসা অব্যাহত রাখে এবং তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রাখে এবং চিকিৎসার ইতিবাচক সাড়া প্রকাশ করে।[৯০] হাসপাতালের একটি রিপোর্টে জোর দিয়ে রজনীকান্তকে কিডনী প্রতিস্থাপন করার জন্য পরামর্শ দেয়, যাতে ধনুশ অস্বীকৃতি জানায়।[৯৩] ২০১১ সালে ২১ মে, ঐশ্বর্য রজনীকান্ত তার এবং রজনীকান্তের একটি ছবি প্রকাশ করেন, তারা দুইজন হাসপাতালের বিছানায় ভালসূচক বৃদ্ধাঙ্গুল (thumbs signal) দেখায়, ভুল খবরে তার ভক্তদের প্রতিক্রিয়ার জবাব দেন।[৯৪] এই হাসপাতালে বাইরের দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ।[৯৫] রজনীকান্তের ভাই, সত্যনারায়ণ রাও গাইক্বাদ, প্রতিবেদন দেয় যে, তার হঠাৎ অসুস্থতার কারণে তার ওজন দ্রুত হ্রাস পেয়েছে এবং তার খাবারে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং সাথে মদ্যপান ও ধূমপান থেকে বিরত থাকার কথা প্রকাশ করেন।[৯৬] ভক্তদের উদ্দেশ্যে রজনীকান্তের ৪ মিনিটের এক অডিও বার্তা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। অমিতাভ বচ্চনের উপদেশে, ২০১১ সালের ২১ মে, তিনি সপরিবার চেন্নাই থেকে সিঙ্গাপুরে গমন এবং “মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে” “নেফ্রোথেরাপী” গ্রহণ করেন।[৯৭][৯৮] সিঙ্গাপুরে দুই সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর, তিনি ২০১১ সালে ১৫ জুন পরিশেষে হাসপাতাল থেকে ছাড় পান এবং ১৩ জুলাই পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ছুটি কাটান।[৯৯][১০০]
“রানা” সিনেমাটি পুনরায় শুরু করার ক্ষেত্রে বহু বাধা পড়ায়, রজনীকান্ত তার জনপ্রিয় “এনথারিন” চরিত্র, “চিট্টি”। এই চরিতে তিনি অতিথি শিল্পী হিসেবে আবার অভিনয় করেন শাহরুখ খান এবং কারিনা কাপুর অভিনীত বলিউড বিজ্ঞান কল্পকাহিনী চলচ্চিত্র “রা-ওয়ান” (২০১১) এ।[১০১] ২০১১ সালের নভেম্বরে, সিদ্ধান্ত হয় যে, “রানা” সিনেমাটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং প্রধান চরিত্র হিসেবে রজনীকান্ত অভিনীত একটি নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ করাহবে, যার নাম “কোচাহদাইয়্যান”, এর পরিচালক হবে সৌন্দর্য্য রজনীকান্ত এবং লেখক কে.এস.রবিকুমার।[১০২] দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত একটি মোশন ক্যাপচার সিনেমা যা ২০১৪ সালের এপ্রিলে মুক্তিপ্রাপ্ত হবে বলে কার্যরুটিনে যোগ করা হয়।[১০৩]
রজনীকান্তকে তার সময়ে গণমাধ্যমে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃত দেওয়া হয়।[৪০][১০৪][১০৫] তার জনপ্রিয়তার সম্পর্কে বলা হয় যে, "ফিল্মে তার অদ্বিতীয় কথনশৈলী এবং প্রকাশভঙ্গী, সাথে সাথে রাজনৈতিক বক্তব্য এবং মানবপ্রীতি যে কোনো মানুষের মনকে আকৃষ্ট করে"।[১০৬] অনেকে তার জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে, তার জীবনের চেয়ে বড় সুপার হিরো ভূমিকায় বিভিন্ন চলচ্চিত্রে আবির্ভাব এবং অন্যরকম স্টাইলের অভিনয়কে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।[১০৭] প্রায় প্রত্যেকটি সিনেমায় রজনীকান্তের জনপ্রিয় স্টাইল বিদ্যমান যা অন্যান্য নায়কদের জন্য একটি বার্তা রেখে যায়। তার সংলাপগুলো সাধারণত তৈরী হত, নতুনত্বকে সৃষ্টি করার জন্যে, বা দর্শকদের হাসানো জন্য, কিন্তু এইসব সংলাপ দর্শকদের মনোরঞ্জনে কোনসময় বিফলে যেত না।[১০৮][১০৯] গণমাধ্যমের অনেকে বলেন, রজনীকান্তের প্রাথমিক জীবনে তার সাথে যারা অভিনয় করেছেন, যেমনঃ “গৌতম তাদিমাল্লা” এবং “নয়নতারা”, ইনারা জনপ্রিয় হয়েছেন রজনীকান্তের সাথে অভিনয়ের জন্যে।[১১০][১১১]
রজনীকান্ত লাতা রাঙ্গাচড়িকে বিয়ে করেন। লতা এথিরাজ মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন, যিনি তাদের কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য রজনীকান্তের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্যে গিয়েছিলেন।[৪৮][১১২] তাদের বিয়ে হয় ১৯৮১ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি, অন্ধ্র প্রদেশের ত্রিপাটিতে।[১১৩] তাদের দুই মেয়ে “ঐশ্বর্য্য রজনীকান্ত” এবং “সৌন্দর্য্য রজনীকান্ত”। তার স্ত্রী, লতা রজনীকান্ত, বর্তমানে একটি “আশ্রম” নামে একটি বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। তার বড় মেয়ে, ঐশ্বর্য্য অভিনেতা ধানুশকে বিয়ে করেন ২০০৪ সালের ১৮ নভেম্বর এবং তাদের যাত্রা এবং লিঙ্গা নামের দুইজন পুত্র আছে।[১১৪][১১৫] তার ছোট মেয়ে, সৌন্দর্য্য, চলচ্চিত্র শিল্পে পরিচালক, প্রযোজক এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। তিনি ২০১০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর শিল্পপতি আশ্বিন কুমারকে বিয়ে করেন।[১১৬]
রজনীকান্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বী, আত্মা এবং আত্মিক ধ্যানধারণার বিশ্বাসী।[১১৭] পাঠক হিসেবে, তিনি এই ধরনের বই পড়েন। তিনি “যোগ ব্যায়াম” এবং “মেডিটেশন” চর্চা করেন। রজনীকান্ত তার প্রত্যেকটি সিনেমার মুক্তির পূর্বে মন্দির দর্শন করেন। “শিবাজি” (২০০৭) মুক্তির পূর্বে ২০০৭ সালে তিনি “ত্রিমুলা ভেঙ্কাশেশ্বর মন্দির” পরিদর্শন করেন এবং পরবর্তী বছর তার “কুসেলান” সিনেমা মুক্তির পূর্বে অন্ধ্র প্রদেশের “প্রশান্তি নিল্যামে” “সত্য সাঁই বাবা” পরিদর্শন করেন।[১১৮] তিনি কোন উপলক্ষে হিমালয়ের মনীষীদের জন্যে দান করেন।[১১৯] তিনি প্রায় “রামকৃষ্ণ পরমেশ্বর”[১২০], “স্বামী সাচীদন্দ”, “রাগবেন্দ্র স্বামী”,[১২১] “মহাবতার বাবাজী”,[১২২] এবং “রামন মহাঋষি”র [১২০] নাম তার আত্মিক গুরু হিসেবে উচ্চারণ করেন।
রজনীকান্ত তার অভিনীত অনেক সিনেমার জন্য অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন, বিশেষভাবে তামিল সিনেমার জন্যে। তিনি প্রথম “ফিল্মফেয়ার সেরা তামিল অভিনেতা পুরস্কার” অর্জন করেন ১৯৮৪ সালে “নাল্লাভানুকু নাল্লাভান” সিনেমার জন্যে।[৪৬] পরে তিনি তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন তার “শিবাজী” (২০০৭) এবং “এন্থিরান” (২০১০) সিনেমার জন্যে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত, রজনীকান্ত তার বিভিন্ন সিনেমার জন্য ছয়টি “তামিল স্টেট চলচ্চিত্র পুরস্কার” অর্জন করেন।[১২৩][১২৪] তিনি “সিনেমা এক্সপ্রেস” এবং “ফিল্মফ্যান এসোশিয়েশন” থেকে চলচ্চিত্রে পর্দার সামনে অভিনত ও কাহিনীকার এবং প্রযোজনা কাজের জন্যে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন।[১২৩]
রজনীকান্ত “কালাইমামানি” পুরস্কার জেতেন ১৯৮৪ সালে এবং এম.জি.আর পুরস্কার জেতেন ১৯৮৯ সালে, উভয় পুরস্কার প্রদান করে তামিলনাড়ু সরকার। ১৯৯৫ সালে, “দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র কলাকুশলী সংগঠন” (South Indian Film Artistes' Association) তাকে “কালাইচেল্ভাম” পুরস্কার প্রদান করে। ২০০০ সালে ভারত সরকার কর্তৃক তাকে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ উপাধি প্রদান করে।[১২৫] তিনি NDTV কর্তৃক ২০০৭ সালের সেরা বিনোদন দাতা হিসেবে নির্বাচিত হন, যেখানে শাহ্রুখ খানের মতো নায়ক তালিকায় ছিলেন।[১২৬][১২৭] একই বছর মহারাষ্ট্র সরকার তাকে রাজ কাপুর পুরস্কার প্রদান করে। তিনি ২০১০ বিজয় পুরস্কার অনুষ্ঠানে ভারতীয় সিনেমায় তার অবদানের জন্য তাকে “চিভালিয়া শিবাজী গণেশ পুরস্কার” প্রদান করে।[১২৮] “এশিয়াউইক” কর্তৃক রজনীকান্তকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে ঘোষণা করে।[২][১২৯] “ফোর্বস ইন্ডিয়া” তাকে ২০১০ সালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।[১৩০] ২০১১ সালে, NDTV তাকে “দশকের সেরা বিনোদনদাতা পুরস্কার” প্রদান করে।[১৩১] ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে, NDTV তাকে "২৫ জন সেরা জীবিত লিজেন্ড" এর মধ্যে একজন হিসেবে সম্মান প্রদান করে।[১৩২]