রণেন সেন | |
---|---|
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একবিংশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত | |
কাজের মেয়াদ আগস্ট ২০০৪ – মার্চ ২০০৯ | |
পূর্বসূরী | ললিত মানসিং |
উত্তরসূরী | মীরা শঙ্কর |
যুক্তরাজ্যে ঊনবিংশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত | |
কাজের মেয়াদ মে ২০০২ – এপ্রিল ২০০৪ | |
পূর্বসূরী | নরেশ্বর দয়াল |
উত্তরসূরী | কমলেশ শর্মা |
জার্মানিতে সপ্তদশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত | |
কাজের মেয়াদ অক্টোবর ১৯৯৮ – মে ২০০২ | |
পূর্বসূরী | এস. কে. লাম্বা |
উত্তরসূরী | টি. সি. এ. রঙ্গচারী |
রাশিয়াতে প্রথম ভারতীয় রাষ্ট্রদূত | |
কাজের মেয়াদ অক্টোবর ১৯৯২ – অক্টোবর ১৯৯৫ | |
পূর্বসূরী | এ. এস. গঞ্জালভেস (তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন) |
উত্তরসূরী | এস. কে. লাম্বা |
দক্ষিণ কোরিয়ায় পঞ্চদশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত | |
কাজের মেয়াদ ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ – ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯২ | |
পূর্বসূরী | ইউ. সি. সোনি |
উত্তরসূরী | পি. এ. ন্যাজারথ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | ৯ এপ্রিল ১৯৪৪
জাতীয়তা | ভারতীয় |
দাম্পত্য সঙ্গী | কল্পনা সেন |
সন্তান | ২ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | নাগরিক সেবা, ভারতীয় পররাষ্ট্র সেবা |
পুরস্কার | পদ্মভূষণ (২০১২) |
রণেন সেন (জন্ম:- ৯ এপ্রিল ১৯৪৪ ) হলেন একজন ভারতীয় কূটনীতিক, যিনি ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট থেকে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের পারমাণবিক চুক্তিতে তাঁর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। [১]
রণেন সেনের জন্ম ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায়। তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স সহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন। [২]
সংঘ লোক সেবা আয়োগ তথা ইউ. পি. এস. সি. পরীক্ষা সফলতার সঙ্গে পাশ করার পর তিনি ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অধীনস্থ পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা নীতির উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রকের উপ/যুগ্ম সচিব, পরমাণু শক্তি কমিশনের সচিব সহ বিভিন্ন পদে কাজ করেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় পররাষ্ট্র সেবায় বিভিন্ন দেশে ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনের নানা পদে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া,(১৯৯১-৯২) রাশিয়া (১৯৯২-৯৮), জার্মানি (১৯৯৮-২০০২) ও যুক্তরাজ্যের (২০০২-২০০৪) পর শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (২০০৪-২০০৯) ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ করেছেন। তার সময়েই ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সফল ভাবে সেই চুক্তির স্বাক্ষরের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। প্রবাসী ভারতীয় ও মার্কিন সেনেটরদের একাংশকে চুক্তির যৌক্তিকতা বোঝাতে ও বাস্তবায়নে জনমত তৈরিতে তাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেন প্রবাসী ভারতীয় লেখক স্বদেশ চট্টোপাধ্যায়। প্রথাগত দৌত্যের বাইরে 'ট্র্যাক টু ডিপ্লোম্যাসি' বা ব্যাক চ্যানেল ডিপ্লোম্যাসিই তার অন্যতম হাতিয়ার ছিল। পরবর্তীতে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বদেশ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা পরবাসে আমার দেশ গ্রন্থ প্রকাশের অনুষ্ঠানে সে কথাই ব্যক্ত করেন। [৩]
২০০৯ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে অবসর গ্রহণের পর রণেন সেন ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ১ জুন থেকে ২০১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টাটা মোটরসের একজন স্বাধীন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিলে তিনি টাটা সন্সের বোর্ডে একজন নন-এক্সিকিউটিভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন। [৪]
ভারত সরকার ২০১২ খ্রিস্টাব্দে নাগরিক সেবায় রণেন সেনের অবদানের জন্য তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ প্রদান করে। [৫]
ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তির অন্যতম ভূমিকা পালনকারী রাষ্ট্রদূত রণেন সেন যখন আতঙ্কিত বামদলগুলির বিরোধিতায় এবং ভারতীয় জনতা পার্টির কারণে করেন যখন ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তি সম্পাদনে বেশ কয়েকমাস ধরে কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল, তখন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রণেন সেন ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট এক অফ-দ্য-রেকর্ড সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন-
এটি এখানে (ওয়াশিংটন ডিসিতে) রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়েছে এবং সেখানে (নয়াদিল্লিতে) ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে, তাহলে আপনি কেন মস্তকহীন মোরগ মতো এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন। তার এই মাথাবিহীন মুরগি মন্তব্য চায়ের কাপে তুফান তোলে। রেডিফ ডট কমে সংবাদ হিসাবে প্রকাশিত হলে রণেন সেনের এই "মস্তকহীন মোরগ" মন্তব্যের জেরে সংসদীয় বিশেষাধিকার কমিটি তাকে নোটিশ জারি করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই যে, স্বচ্ছ চুক্তিটি কোন গোপন নথি ছিল না বরং সর্বজনীন নথি ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন অগ্রাধিকার ছিল না। রণেন সেন তাই বিস্মিত হয়ে ঘোষণা করেছিলেন বুশ প্রশাসনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে চুক্তিটি কার্যকর না হলে,ভবিষ্যতে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে গুরুতর প্রভাবসহ ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।[৬]
এই মন্তব্য নিয়ে অনেক হৈচৈ-এর পর, রণেন সেন অবশ্য সংসদীয় বিশেষাধিকার কমিটির সামনে ক্ষমা প্রার্থনা করে স্পষ্ট ব্যাখ্যায় বলেছেন:
"আমার মস্তকহীন মোরগ মন্তব্যটি আমার কিছু মিডিয়া বন্ধুদের একটি কৌশলহীন পর্যবেক্ষণ ছিল এবং এতে অবশ্যই কোন মাননীয় সংসদ সদস্যের প্রসঙ্গে নয়। [৬]
লোকসভা কমিটি এবং রাজ্যসভা কমিটি রণেন সেনের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনায় তার অপ্রকৃত অযৌক্তিক মন্তব্যের জন্য বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত না করে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে গঠিত প্যানেলের উল্লেখ করে-
তার মন্তব্য কেবল ছিল নিম্ন রুচির নয়, অযৌক্তিকও বটে। একজন বরিষ্ঠ ও অভিজ্ঞ কূটনৈতিকের জনসাধারণের বক্তব্যকে প্রভাবিত করা উচিত নয়।[৬]