রত্নাপুরা රත්නපුර இரத்தினபுரி মিনি পুরা, রুওয়ান পুরা, মানিক পুরা | |
---|---|
নগর | |
রত্নাপুরা | |
স্থানাঙ্ক: ৬°৪০′৫০″ উত্তর ৮০°২৪′০৮″ পূর্ব / ৬.৬৮০৫৬° উত্তর ৮০.৪০২২২° পূর্ব | |
দেশ | শ্রীলংকা |
প্রদেশ | সাবারাগামুওয়া |
জেলা | রত্নাপুরা |
সরকার | |
• ধরন | পৌর পরিষদ |
• Mayor | তিরন হিরন্ত অথথানায়েক |
আয়তন | |
• মোট | ২০ বর্গকিমি (৮ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১৩০ মিটার (৪৩০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১২) | |
• মোট | ৪৬,২২৯ |
বিশেষণ | রত্নাপুরি |
ওয়েবসাইট | ratnapura.mc.gov.lk |
রত্নপুরা (সিংহলি: රත්නපුර; তামিল: இரத்தினபுரி) (সিংহলি এবং তামিল ভাষায় "রত্নের শহর") শ্রীলঙ্কার একটি প্রধান শহর। এটি সাবারাগামুওয়া প্রদেশের রাজধানী শহর। সেইসাথে রত্নপুরা জেলা এবং শ্রীলঙ্কার রত্ন বাণিজ্যের একটি ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্র। এটি দক্ষিণ-মধ্য শ্রীলঙ্কার কালু গঙ্গায় (কালো নদী) দেশের রাজধানী কলম্বোর প্রায় ১০১ কিমি (৬৩ মা) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। রত্নাপুরাকে রত্নপুরাও বলা হয়।
'রত্নপুরা' নামটি একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ "রত্নগুলির শহর", সংস্কৃত শব্দ পুরা (শহর) এবং রত্ন (রত্ন পাথর) থেকে।[১] ২০০০ বছর আগে তখন প্রথম বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ বুদ্ধ-গয়া, বারাণসী এবং পাটলিপুত্র থেকে এখানে এসেছিলেন। তখন তারা কেবল তাদের সাথে বৌদ্ধ ধর্মই নিয়ে আসেননি, সাথে বৌদ্ধ সংস্কৃতিও নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু যেহেতু তাদের শিক্ষা প্রধানত সংস্কৃত এবং পালি ভাষায় ছিল, তাই তাদের আগমন স্থানীয় ভাষাকেও প্রভাবিত করেছে। যদিও খেজুরের গুড়ের থেকে উৎপাদিত একধরণের মিছরি ঐতিহ্যগতভাবে এই অঞ্চলে রত্নপুরা নামে পরিচিত, তবে সম্ভবত এর বদলে উলটো এই শহরের নাম থেকেই মিছরিটির এরূপ নামকরণ করা হয়েছিল।[২]
এই শহরটি রুবি, নীলকান্তমণি এবং অন্যান্য রত্ন সহ বহুমূল্য পাথর খনির একটি দীর্ঘ-স্থাপিত শিল্পের কেন্দ্র। রত্ন খনির পাশাপাশি, শহরটি ধান ও ফল উৎপাদনের জন্য পরিচিত। শহরের চারপাশে চা এবং রাবারের বড় বাগান রয়েছে। এই অঞ্চলে উৎপন্ন চাকে বলা হয় নিম্ন-দেশীয় চা। রত্নপুরায় একটি সুপ্রতিষ্ঠিত পর্যটন শিল্প রয়েছে। কাছাকাছি সিংহরাজা ফরেস্ট রিজার্ভ, উদাওলাওয়ে ন্যাশনাল পার্ক, কিতুলগালা এবং অ্যাডামস পিক পর্যটকদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৯০১ সালে, রত্নপুরা শহরের জনসংখ্যা ছিল ৪,০৮৪ এবং ২০১২ সাল নাগাদ এটি ৪৬,২২৯-এ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিস্টান এবং মুসলমান প্রত্যেকেই জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গঠন করে।
শহরটি একজন মেয়রের নেতৃত্বে একটি পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত হয়। কাউন্সিল জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় এবং এর ১৫টি আসন রয়েছে। ২০০৬ সালের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচনে ২৯,১৫৯ জন নিবন্ধিত ভোটার ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
রত্নাপুরা হাসপাতালকে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোর মতো একটি শিক্ষণ হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এই হাসপাতালে তিনটি সার্জিক্যাল ইউনিট, তিনটি মেডিকেল ইউনিট, দুটি অর্থোপেডিক ইউনিট, তিনটি অবস্টেট্রিক্স এবং গাইনোকোলজি ইউনিট, দুটি পেডিয়াট্রিক্স ইউনিট, একটি নাক-কান-গলা ইউনিট, একটি নিউরোলজি ইউনিট, একটি নিউরোসার্জিকাল ইউনিট, একটি রিউম্যাটোলজি ইউনিট, একটি ইউরোসার্জিকাল ইউনিট, ডায়ালিসিস সুবিধাসহ একটি নেফ্রোলজি ইউনিট, একটি ডার্মাটোলজি ইউনিট, একটি মানসিক ইউনিট, একটি দুর্ঘটনা ও জরুরী বিভাগ, এবং একটি কার্ডিওলজি ইউনিট। এই হাসপাতালটিতে নিয়মিত অস্ত্রোপচারের জন্য সপ্তাহে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টাতেই অপারেশন থিয়েটারের সুবিধা রয়েছে। এই মুহূর্তে হাসপাতালটিতে দুটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ ইউনিট রয়েছে। এগুলোতে ১২ টি আইসিইউ-শয্যা রয়েছে। হাসপাতালটি সার্জিক্যাল এবং পেডিয়াট্রিক পিজি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য একটি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এটি সাবরাগামুওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল অনুষদ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে একটি শিক্ষণ হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছিল।[৩]
শহরের মানুষ রত্ন ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। রত্নের পিট আশেপাশের এলাকায় সাধারণ দর্শনীয় স্থান। শ্রীলঙ্কার বেশিরভাগ বড় মাপের রত্ন ব্যবসায়ীরা রত্নপুরা থেকে কাজ করেন। এই শহরেও প্রচুর বিদেশী রত্ন ব্যবসায়ী রয়েছে যারা সেখানে পাওয়া রত্নগুলির মূল্যকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিদেশী ব্যবসায়ীদের মধ্যে থাই ( থাইল্যান্ড ) ব্যবসায়ীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রতিদিন, শহরতলি এবং অন্যান্য শহর থেকে বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী রত্ন পাথর বিক্রি বা কেনার জন্য শহরের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হন। বড় মাপের ব্যবসায়ীরা স্থানীয়দের কাছ থেকে রত্ন সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে। কিছু ব্যবসায়ী রত্ন কিনতে শহরের বাইরে যান।এর মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী শহর যেমন কালাওয়ানা, বোগাওয়ান্তলাওয়া এবং এলা-এরা। মাদাগাস্কারের ইলাকাকা উপত্যকায় বিশ্বমানের পাললিক নীলকান্তমণির মজুদ আবিষ্কারের পর, রত্নপুরার অনেক ব্যবসায়ী রত্ন কেনার জন্য দেশের বাইরে মাদাগাস্কারে যান। রত্নপুরায় তিনটি প্রধান রত্ন বাজার রয়েছে ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ এপ্রিল ২০২২ তারিখে ।" আবাগাহমুলা জেম মার্কেট "," ক্লক টাওয়ার জেম মার্কেট ","ডেমুওয়ামাওয়াথা জেম মার্কেট " এই মার্কেটগুলো দিনের বিভিন্ন সময়ে চলে।
শহরের কৃষি শিল্পও বেশ উন্নত। শহরের চারপাশে চা এবং রাবারের বড় বাগান রয়েছে। যদিও শহরের আশেপাশে ধানের ক্ষেতগুলিও একটি সাধারণ দৃশ্য ছিল, তবে রত্নাপুরায় ধান চাষ বর্তমানে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি কারণ অনেক কৃষক তাদের ধান চাষ ছেড়ে দিচ্ছে। বরং তারা রত্ন খনি সংক্রান্ত পেশার দিকে মনোনিবেশ করছে। কারণ এই পেশায় অর্থ উপার্জনের আরও বেশি উত্পাদনশীল উপায়। অনেক কৃষক যদি কৃষি ছেড়ে দেয়, তাহলে কৃষকদের জন্য তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহ করা এবং বাজারে ব্যবসা করা কঠিন হবে। তবে এখানে অনেক সুস্বাদু ফল (যেমন আম ও পেঁপে ) এবং শাকসবজি বাজারজাত করার পণ্য হিসেবে জন্মানো হয়।
রত্নপুরা শহরটি এ৪ হাইওয়েতে অবস্থিত যা রাজধানী কলম্বোকে পূর্ব প্রদেশের কালমুনাইয়ের সাথে সংযুক্ত করে। আরেকটি হাইওয়ে এ৮ শহরটিকে শ্রীলঙ্কার পশ্চিম উপকূলে পানাদুরার সাথে সংযুক্ত করেছে। দ্বীপটি ব্রিটিশ দখলের সময়, ১৯১২ সালে ন্যারোগেজ ট্রেন ট্র্যাক স্থাপন করা হয়েছিল যা কলম্বো - আভিসাওয়েলা - রত্নপুরা - ওপানায়েককে সংযুক্ত করে তবে ১৯৭৬ সালে আভিসাওয়েলার পরবর্তী লাইনটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এইভাবে সড়ক পরিবহনের মোড হ্রাস. ২০০৬ সালে, শুধুমাত্র রথনাপুরা পর্যন্ত একটি নতুন ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ শুরু হয়। ২০১৪ সালে, সরকার ই০৬ রুয়ানপুরা এক্সপ্রেসওয়েকে অনুমোদন দেয় যা রথনাপুরাকে শ্রীলঙ্কার এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করবে। এক্সপ্রেসওয়ের কাজ ২০২১ সালে শুরু হয়েছিল, প্রথম অংশটি ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ শেষ হবে।
কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগের অধীনে রত্নপুরায় একটি ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু রয়েছে। শহরটি শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এই এলাকাটি ভেজা অঞ্চল হিসেবে গণ্য করা হয়। শহরটিতে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধানত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর ফলে বৃষ্টিপাত হয়। বছরের বাকি মাসগুলিতে, সংক্রামক বৃষ্টির কারণেও যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়। এখানকার গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ মিমি। গড় তাপমাত্রা ২৪ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পরিবর্তিত হয় এবং এখানে উচ্চ আর্দ্রতার মাত্রা রয়েছে। শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২১ মিটার (৬৯ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত।
রত্নাপুরা-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | ২৭ (৮১) |
২৮ (৮২) |
২৯ (৮৪) |
২৮ (৮২) |
২৮ (৮২) |
২৭ (৮১) |
২৭ (৮১) |
২৭ (৮১) |
২৭ (৮১) |
২৭ (৮১) |
২৭ (৮১) |
২৭ (৮১) |
২৭ (৮২) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১৩০ (৫.১) |
১২০ (৪.৭) |
২৩০ (৯.১) |
৩৬০ (১৪.২) |
৪৫০ (১৭.৭) |
৩৪০ (১৩.৪) |
৩০০ (১১.৮) |
২২০ (৮.৭) |
৩৫০ (১৩.৮) |
৫০০ (১৯.৭) |
৩৮০ (১৫.০) |
২১০ (৮.৩) |
৩,৫৯০ (১৪১.৫) |
উৎস: তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত |
রত্নপুরা শহরের বেশির ভাগ অংশ কালু নদীর প্লাবন ভূমিতে অবস্থিত। ফলস্বরূপ, শহরটি নিয়মিত বন্যার শিকার হয়ে থাকে। সাধারণত মে মাসে এই বন্যা হয়ে থাকে। বসন্তের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য কালুর উজানে কোন বড় মাপের বাঁধ নেই। নগরীতে বন্যার ঝুঁকি কমানোর প্রস্তাবগুলো এখনো সম্ভাব্যতা পর্যায়ে পৌঁছায়নি।[৪] ২০০৩ সালের মে মাসে শহরটি ১৯৪৭ সালে ব্রিটেন থেকে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বড় বন্যার সম্মুখীন হয়েছিল।
রত্নপুরা শহরে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ (৫২.৮৮%) এবং উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা (৩৩.৫২%) রয়েছে।[৫]
রত্নপুরা এবং এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি উপাসনালয় রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
মহা সমন দেবালয় হচ্ছে দেবতা সমনকে উৎসর্গ করা একটি মন্দির। দেবতা সমন হলেন (একজন বৌদ্ধ দেবতা ) যাকে রত্নপুরার অভিভাবক বলে মনে করা হয়। পর্তুগিজরা রত্নপুরা দখল করলে, এই স্থানে অবস্থিত প্রাচীন মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং এর উপরে একটি পর্তুগিজ গির্জা নির্মাণ করা হয়। কান্দিয়ান রাজ্য রত্নপুরা পুনরুদ্ধার করার পর তারা পর্তুগিজ গির্জাটি ধ্বংস করে দেয় এবং তারাই আবার মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করে। যদিও পুরানো মন্দিরের অস্তিত্বকে সমর্থন করার জন্য কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই, তবে পরোক্ষ প্রমাণগুলি একটি মন্দিরের অস্তিত্বকে সমর্থন করে। এসব প্রমাণ থেকে আন্দাজ করা হয় পর্তুগিজ সময়ের আগে বর্তমান অবস্থানে একটি হিন্দু মন্দিরের মতো অবকাঠামো ছিল। বর্তমানে এই উপাসনালয়টি বৌদ্ধদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
সেন্টস পিটার এবং পলের ক্যাথেড্রাল হচ্ছে রত্নপুরায় ক্যাথলিকদের ইতিহাস রত্নপুরায় পর্তুগিজ শাসনের মাধ্যমে শুরু হয়। ১৭ শতকে খুব কম ক্যাথলিক এই শহরে বাস করত। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল পর্তুগিজ এবং পর্তুগিজ ও স্থানীয়দের মধ্যে বিয়ে হওয়ার কারণে জন্মলাভ করা বংশধর। পর্তুগিজরা একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বৌদ্ধ মন্দিরের উপরে একটি গির্জা নির্মাণ করেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই পর্তুগিজ গির্জাটি ধ্বংস হয়ে যায় যখন কান্দিয়ান রাজ্য পর্তুগিজদের কাছ থেকে রত্নপুরা পুনর্দখল করে। বর্তমান গির্জাটি রত্নপুরার প্রধান রাস্তা (শহরের ভিতরে) বরাবর একটি ভিন্ন স্থানে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে ব্যবহৃত চার্চ ভবনটি ১৭ শতকে সেন্ট জোসেফ ভাজ (সিলনের প্রেরিত) দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে বলা হয়। তখন তিনি সাবরাগামুওয়াতে তাঁর প্রেরিত মিশনের অংশ হিসাবে রত্নপুরা পরিদর্শন করেছিলেন। ১৯৯৫ সালের ২ নভেম্বর সাবারাগামুওয়া একটি ডায়োসিস হয়ে ওঠার পরে এসএস পিটার-পলের গির্জাটি ডায়োসিসের ক্যাথিড্রালের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছিল।
পোথগুল বিহারায় হচ্ছে রথনাপুর পোথগুল রাজামহা বিহার (පොත්ගුල් විහාරය) হল একটি মনোরম গুহা মন্দির। এটি একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। রাজা বট্ট গামিনী অভয়াগ (ওয়ালম্যাগ নামে অধিক পরিচিত) কর্তৃক ৮৯-৭৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এটি নির্মিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয় । ক্যান্ডি যুগের রাজা কীর্তি শ্রী রাজাসিংহের (১৭৪৭ - ১৭৮১) সময়ে এটি সংস্কার করা হয়েছিল। পোথগুল বিহার এই দুই যুগের দুটি মন্দির রয়েছে।
এছাড়াও এই শহরে রয়েছে সেন্ট লুকস চার্চ (ইংল্যান্ডের চার্চ) ও শিব মন্দির (হিন্দু)।
রত্নাপুরা হল গিলিমেল এবং কার্নি এস্টেটের মধ্য দিয়ে আদমের পদচিহ্ন বা অ্যাডামস পিকে ওঠার 'ক্লাসিক' বা কঠিন পথের সূচনা বিন্দু। তীর্থযাত্রার মৌসুম ডিসেম্বর মাসে পোয়া (পূর্ণিমা) দিনে শুরু হয় এবং এপ্রিলে দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষার শুরু পর্যন্ত চলে। এটি ১০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি তীর্থস্থান। রাজা পরাক্রমবাহু এবং পোলোন্নারুওয়ার রাজা নিসানকা মাল্লা পাহাড়ি পথে ক্লান্ত তীর্থযাত্রীদের জন্য আম্বালামা বা 'বিশ্রামস্থান' প্রদান করেছিলেন। অন্য আরও জনপ্রিয় পথ হচ্ছে ডিকোয়ার কাছাকাছি ডালহৌসি (উচ্চারিত 'ডেল-হাউস') এর মধ্য দিয়ে।
রত্নপুরার স্কুলগুলির মধ্যে রয়েছে:
'কাতুগাস এলা (කටුගස් ඇල්ල) রত্নাপুরা থেকে ৩ কিলোমিটার (১.৯ মা) দূরে মহাওয়ালাওয়াট্টায় অবস্থিত একটি ৬ মিটার উঁচু (২০ ফুট) জলপ্রপাত। কিরিন্দি এলা (කිරිඳි ඇල්ල) হচ্ছে একটি ১১৬ মিটার উঁচু (৩৮১ ফুট) জলপ্রপাত (শ্রীলঙ্কার সপ্তম সর্বোচ্চ), রত্নপুরা থেকে ৪ কিলোমিটার (২.৫ মাইল) দূরে রত্নপুরা - পেলমাদুল্লা রোডে অবস্থিত। রাজানাওয়া এলা (රජනෑ ඇල්ල) হচ্ছে রত্নাপুরা-কালাওয়ানা সড়কের পাশে মারাপানা গ্রামে অবস্থিত একটি ১২ মিটার উঁচু (৩৯ ফুট) জলপ্রপাত। বেশ কয়েকটি সিংহলী চলচ্চিত্রে জলপ্রপাতের চারপাশের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
এই অঞ্চলের চারপাশে অসংখ্য রত্ন খনি রয়েছে। বিশেষ করে নিচু ধানের জমির মাটিতে। খনিগুলো সাধারণত প্রায় ১০ মিটার (৩৩ ফুট) থেকে ৫০ মিটার (১৬০ ফুট) গভীর হয়। খনির প্রক্রিয়ার জন্য সহজে বহনীয় বিভিন্ন হস্ত-পরিচালিত সরঞ্জাম, যেমন: বেলচা, পিক, প্যান (বিশেষ করে বাঁশ থেকে তৈরি) এবং দোলনা ব্যবহৃত হয়। খনি থেকে মাটি তোলার পরে, প্যান ব্যবহার করে ময়লা এবং কাদা ধুয়ে ফেলার জন্য জল ব্যবহার করা হয়। ফলে সাধারণ পাথরের চেয়ে ভারী যে কোনও রত্নপাথর প্যানের নীচে রয়ে যায়।
শ্রীলঙ্কার শেষ রাজা "শ্রী বিক্রম রাজাসিনহা" এর সময়ে, এহেলেপোলা নীলামকে সাবারাগামুওয়াকে ( রত্নপুরা) "ডিসাওয়ে" বা সাবারাগামুয়ার স্থানীয় গভর্নর হিসাবে পাঠানো হয়েছিল। তিনি স্থানীয় ধানের খামারগুলিকে সহায়তা করার জন্য একটি ছোট জলাধার এবং জলের খাল তৈরি করেছিলেন। এই নায়কের কাজগুলি এখনও রত্নপুরা অঞ্চলের চারপাশে দৃশ্যমান এবং স্থানীয় লোকেরা আজও তাঁর কাজ থেকে উপকৃত হচ্ছে। রত্নাপুরা শহরের মাঝখানে অবস্থিত তাঁর বাড়িটি এখন জাতীয় যাদুঘর ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
নায়ক হিসাবে এহেলেপোলার চিত্রায়ন বেশ বিতর্কিত। একবার তিনি ব্রিটিশদের সাথে ষড়যন্ত্র করেছিলেন এবং ক্যান্ডি রাজার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। এহেলেপোলা রাজার কাছে আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত (প্রচলিত আইন অনুযায়ী) রাজা তার পরিবারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন। তখন তিনি একদম কাপুরুষোচিত কাজ করেছিলেন। তিনি রাজাকে ক্যান্ডিতে তার পুরো পরিবারকে হত্যা করতে দিয়েছিলেন। তার ছোট ছেলে গিলোটিনের দ্বারা সাহসিকতার সাথে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে শিশু নায়ক হয়ে ওঠে। অন্যদিকে তার বড় ভাই তার মায়ের পিছনে লুকিয়ে ছিল (তিনি ডুবে গিয়েছিলেন)।