রনে গোসিনি | |
---|---|
জন্ম | প্যারিস, ফ্রান্স | ১৪ আগস্ট ১৯২৬
মৃত্যু | ৫ নভেম্বর ১৯৭৭ প্যারিস, ফ্রান্স | (বয়স ৫১)
জাতীয়তা | ফরাসি |
ক্ষেত্র | কার্টুনিস্ট, লেখক, Editor |
ছদ্মনাম | দে'আগস্তিনি, স্ট্যানিস্ল্যাস |
উল্লেখযোগ্য কাজ | অ্যাস্টেরিক্স ইজনোগুড ল্যু পেটিট নিকোল লাকি লুক ঔমপাহ-পাহ |
সহযোগী | অ্যালবার্ট উদেরজো জন-জ্যাকস সম্পি মরিস মার্সেল গটলিব জন ট্যাবারি |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
দম্পতি | গিলবার্ট পোলারো-মিলো (১৯৬৭–১৯৭৭; মৃত্যু পর্যন্ত; ১ সন্তান) |
রনে গোসিনি (ফরাসি : [ʁəne ɡosini], পোলীয়: [ɡɔɕˈtɕinnɨ] (; ১৪ আগস্ট ১৯২৬ - ৫ নভেম্বর ১৯৭৭) একজন ফরাসি কমিকস সম্পাদক এবং পোলিশ বংশোদ্ভূত লেখক, যিনি )অ্যাস্টেরিক্স নামক কমিক বইয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত, যা তিনি চিত্রশিল্পী আলবেয়ার ইউদেরজোর সাথে একত্রে রচনা করেছিলেন। এছাড়া মরিসের সাথে ধারাবাহিক কমিক্স লাকি লুক এবং জন ট্যাবারির সাথে ইজনোগুড নিয়ে তার কাজের জন্য।
গোসিনি ১৯২৬ সালে প্যারিসে এক পোলিশ ইহুদি অভিবাসী পরিবার স্ট্যানিস্লা সিমখা গোসিনি (গোসিনি (পোলিশ শব্দ) অর্থ অতিথিসেবাপরায়ণ আরে সিমখা (ইহুদি শব্দ) অর্থ সুখী) ও আন্না (হান্না) বেরেনিয়িক-গোসিনির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। [১] তার পিতা পোল্যান্ডের ওয়ারসোর রাসায়নিক প্রকৌশলী এবং তার মাতা পোলিশ প্রজাতন্ত্র (এখন ইউক্রেনের অংশ) এর আইটোমিয়ারেজের কাছাকাছি চোদরকো নামক একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে এসেছিলেন। [২] রেনের বড় ভাই ক্লদ এর জন্ম ১৯২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। স্ট্যানিস্লা এবং আন্না প্যারিসে মিলিত হন এবং ১৯১৯ সালে বিয়ে করেন। রেনের জন্মের দুই বছর পর চাকরির সুবাদে গোসিনিরা আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে বসবাস শুরু করেন। বুয়েনস আইরেসে রেনে শৈশব কাল বেশ আনন্দময় ছিল। তিনি সেখানে ফরাসী বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। ছোট বেলায় তিনি বেশ লাজুক ছিলেন, এবং বিদ্যালয়ে তিনি "জোকার" হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কার্টুন বইয়ের ভক্ত হওয়ার কারণে খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি চিত্রাঙ্কনে পারদর্শী হয়ে উঠেন।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে বাবাকে হারান গোসিনি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। ফলে এই অল্প বয়সে চাকরি খুঁজতে বাধ্য হন। পরের বছর, টায়ার পুনরুদ্ধারের কারখানায় সহকারী অ্যাকাউন্টেন্ট হিসাবে প্রথম চাকরি পান তিনি। পরের বছরই চাকরি হারান। এরপর একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার জুনিয়র চিত্রশিল্পী হিসেবে যোগ দেন।[৩]
বড় ভাইয়ের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য ১৯৪৫ সালে গোসিনি এবং তার মা আর্জেন্টিনা ছেড়ে নিউ ইয়র্কের পথে পাড়ি দেন। ১৯৪৬ সালে ফরাসী সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্য ফ্রান্সে চলে আসেন তিনি। ১৪১ তম আলপাইন ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন হিসেবে আউব্যাগে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সিনিয়র করপোরাল হিসেব পদোন্নতি পান এবং রেজিমেন্টের শিল্পী হিসেবে দায়িত্ব পান এবং সেনাবাহিনীর জন্য ছবি এবং পোস্টার আঁকতে শুরু করেন।
পরের বছর, 'দ্য গার্ল উইথ দ্য আইজ অফ গোল্ড' নামক একটি বই চিত্রায়ন করেন তিনি এবং নিউইয়র্কে ফিরে আসেন। সময়টা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর একটি। কিছুদিনের জন্য তিনি হয়ে পরেন সম্পূর্ণ একা, বেকার এবং কর্পদকশুণ্য। অবশ্য ১৯৪৮ সালের মধ্যে নিজেকে গুছিয়ে নিতে সক্ষম হন, এবং ছোট্ট একটি স্টুডিওতে কাজ শুরু করেন। এখানে ভবিষ্যত ম্যাড ম্যাগাজিন এর অবদানকারী উইল এল্ডার, জ্যাক ডেভিস এবং হার্ভি কার্টজম্যানের সাথে পরিচিত এবং বন্ধুত্ব লাভ করেন। [৩] পরবর্তীতে তিনি কুনেন প্রকাশনার চিত্র (আর্ট) পরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং শিশুদের জন্য চারটি বই লিখেন। এই সময় তার সাথে দুইজন বেলজিয়ান কমিক শিল্পী জোসেফ জিলিয়ান (জিজে নামে অধিক পরিচিত) এবং মরিস ডি বেইভার (মরিস) এর সাথে পরিচয় ঘটে। শিল্পীদ্বয় লাকি লুক ধারাবাহিকের কার্টুনিস্ট এবং লেখক ছিলেন। গোসিনি অবশ্য ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল (মৃত্যুর আগ পর্যন্ত) এর লেখক হিসেবে কাজ করেছেন।[৩]
১৯৫১ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেস এজেন্সির প্রধান জর্জেস ট্রোফোন্টেনেসেস, গোসিনিকে প্যারিসে আবার ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে এবং তার এজেন্সির প্যারিস শাখার প্রধান হিসেবে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। এখানে তার সাথে অ্যালবার্ট উদেরজোর সাথে পরিচয় ঘটে। [৩][৪] প্রাথমিক পর্যায়ে তারাবোন সৈরি (শুভ সন্ধ্যা) নামক মহিলাদের জন্য প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিনে কাজ করতে শুরু করেন। গোসিনি এই ম্যাগাজিনের জন্য সিলভি লেখেন। এছাড়া গোসিনি এবং উদারজো সম্মিলিত ভাবে জেহান পিস্তলে এবং লুক জুনিয়র নামক ধারাবাহিক রচনা করেন।
১৯৫৫ সালে গোসিনি, উদারজো, জন-মাইকে চার্লিয়ার এবং জিন হিব্রাব সম্মিলিত ভাবে এডিপ্রেস/এডিফ্রান্স নামক সংঘ তৈরি করেন। এই সংঘ থেকে পরবর্তীতে কারখানার সমিতির জন্য ক্ল্যারন এবং চকলেট কোম্পানির জন্য পিস্তোলিন প্রকাশিত হয়। গোসিনি এবং উদারজো সম্মিলিতভাবে জিনট এর জন্য বিল ব্ল্যানচার্ট, পিস্তোলিন এর জন্য পিস্তলেট এবং একই নামের পত্রিকার জন্য বেঞ্জামিন এট বেঞ্জামিন ধারাবাহিকে কাজ করেন। গোসিনি আগস্তিনি ছদ্মনামে জন-জ্যাকস সম্পির ল্যু মুস্তিক এর জন্য ল্যু পেটিট নিকোলাস রচনা করেন। এছাড়া পিলট পত্রিকায় সুদ-ওয়েস্ট রচনা করেন।
১৯৫৬ সালে তিনি টিনটিন ম্যাগাজিনের সাথে কাজ শুরু করেন। তিনি জো এঞ্জেনট এবং অ্যালবার্ট ওয়েইনবার্গ এর জন্য কিছু ছোট গল্প লিখেন, এবং ডিনো অ্যাটানাসিয়োর সাথে সিনোর স্প্যাগেটিতে কাজ করেছিলেন, বব ডি মুর এর সাথে মসিয়র ট্রিক, মরিস মারিশাল এর সঙ্গে প্রুডেন্স পেটিপাস, টিবেট এর সাথে মার্শিয়ান গ্লবুল এবং আলফোন্সে, বার্ক এর সাথে স্ট্রেপোন্টিন এবং আন্দ্রে ফ্রাঙ্কুইন এর সাথে মোডেসে এট পম্পন কাজ করেন। ১৯৫৮-১৯৬২ সালে উদারজোর সাথে টিনটিন পত্রিকায় ঔমপাহ-পাহ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। উপরন্তু, প্যারিস-ফ্লার্ট (উইল এর সাথে 'লিলি ম্যাননেকিন') এবং ভিল্যান্ট (জর্দম এর সাথে 'বোনিফেস এট আনাটোল', গোদার্ডের সাথে 'পিপসি') পত্রিকাগুলোতে কাজ করেন।[৫]
১৯৫৯ সালে এডিপ্রেস/এডিফ্রান্স সংঘ ফ্র্যাঙ্কো-বেলজিয়ান কমিক কমিক পত্রিকা পিলটচালু করে।[৬] গোসিনি পত্রিকাটির একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে উঠেন। পত্রিকার প্রথম সংখ্যাতেই উদারজোর সাথে তার সর্বাধিক জনপ্রিয় কমিক অ্যাস্টেরিক্স প্রকাশ করা শুরু করেন। প্রকাশের সাথে সাথেই কাহিনীটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং যার জনপ্রিয়তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পরে। গোসিনি এসময় ল্যু পেটিট নিকোলাস এবং জেহান পিস্তোলেত (নাম পরিবর্তন করে জেহান সুপোলেট) পুনরায় লেখা শুরু করেন। গোদার্দের সাথে তিনি জ্যাকু ল্যু মুস এবং থুমব্লু এ বোদাক্লু রচনা করতে শুরু করেন।
১৯৬০ সালে পত্রিকাটি জর্জ দারগদ কিনে নেয়, এবং গোসিনি প্রধান সম্পাদক এর দায়িত্ব পান। এ সময় তিনি নতুন ধারাবাহিক লেস ডিভাগ্যাশন দ্যে মসিয়ে সেই-টাউট (মার্শাল এর সাথে), লা পোটাকুলুজি ইলাস্ত্রে (কাবুর সাথে), লে দাঙ্গুদোসিয়ে (গোটলিব এর সাথে) এবং লা ফরে দা শনবু (মিক ডেলিনক্স এর সাথে)। ট্যাবারির সাথে রেকর্ড এ লে অ্যাভেঞ্চার দ্যু কালিফ হারুন এল পুসাহ যা পরবর্তীতে পিলটে ইজনোগুড নামে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। রেমন্ড ম্যাশখ্রু এর সাথে তিনি স্পিরিওর জন্য প্যান্টুফ্লো রচনা করেছিলেন।
গোসিনি ১৯৬৭ সালে গিলবার্ট পোলারো-মিলোকে বিয়ে করেন। ১৯৬৮ সালে কন্যা সন্তান 'অ্যান গোসিনি জন্মগ্রহণ করে।
১৯৭৭ সালের ৫ নভেম্বর ডাক্তারের চেম্বারে রুটিন স্ট্রেস টেস্টের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫১ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন গোসিনি।[৭] নিসের ইহুদি কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার ইচ্ছা অনুযায়ী, তার বেশিরভাগ অর্থ ফ্রান্সের প্রধান র্যাবাইনেট স্থানান্তর করা হয়।
গোসিনির মৃত্যুর পর উদারজো একাই অ্যাস্টেরিক্স এর প্রকাশনা চালিয়ে যান। ২০১১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করলে এই দায়িত্ব জের-ইয়েভেস-ফেরি (কাহিনী) এবং ডিডিয়ার কনর্যাড (শিল্প) এর হাতে পরে।[৮] একই ভাবে ট্যাবারি ইজনোগুড এবং মরিস লাকি লুক এর প্রকাশনা চালু রাখেন।
গোসিনির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, উদারজো এল ওডিসি ডি'অ্যাস্টেরিক্স ("অ্যাস্টেরিকস অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক গোল্ড") এর একটি চরিত্র তার সাথে মিল রেখে তৈরি করেন।
তরুণ কমিক লেখকদের উৎসাহী করার জন্য ১৯৯৬ সাল থেকে ফ্রান্সে প্রতি বছর অ্যাঙ্গোলেমে আন্তর্জাতিক কমিক্স ফেস্টিভাল এ রনে গোসিনি পুরস্কার প্রদান করা হয়। ইউনেস্কোর ইনডেক্স ট্রান্সলেসনামের হিসেবে উদারজো ফরাসি বিংশ অনূদিত লেখক (আগস্ট ২০১৭)।[৯]
ধারাবাহিক | বছর | পত্রিকা | গ্রন্থ সংখ্যা | সম্পাদক | চিত্রশিল্পী |
---|---|---|---|---|---|
লাকি লুক[b] | ১৯৫৫–১৯৭৭ | স্পিরো and পিলট | ৩৮ | দুপ্যুয়ুস এবং দারগদ | মরিস |
মোডেসে এট পম্পন[a][b] | ১৯৫৫–১৯৫৮ | টিনটিন | ২ | লম্বার্ড | আন্দ্রে ফ্রাঙ্কুইন |
প্রুডেন্স পেটিপাস | ১৯৫৭–১৯৫৯ | টিনটিন | লম্বার্ড | মরিস মারিশাল | |
সিনর স্প্যাগেটি | ১৯৫৭–১৯৬৫ | টিনটিন | ১৫ | লম্বার্ড | ডিনো অ্যাটানাসিয়োর |
ঔমপাহ-পাহ | ১৯৫৮–১৯৬২ | টিনটিন | ৩ | লম্বার্ড | অ্যালবার্ট উদেরজো |
স্ট্রেপোন্টিন | ১৯৫৮–১৯৬৪ | টিনটিন | ৪ | লম্বার্ড | বার্ক |
অ্যাস্টেরিক্স[b] | ১৯৫৯–১৯৭৭ | পিলট | ২৪ | দারগদ | অ্যালবার্ট উদেরজো |
ল্যু পেটিট নিকোলাস | ১৯৫৯–১৯৬৫ | পিলট | ৫ | ডেনোয়েল | জন-জ্যাকস সম্পি |
ইজনোগুড[b] | ১৯৬২–১৯৭৭ | রেকর্ড এবং পিলট | ১৪ | দারগদ | জন ট্যাবারি |
লে দাঙ্গুদোসিয়ে | ১৯৬৫–১৯৬৭ | পিলট | ৩ | দারগদ | মার্সেল গটলিব |