রবার্ট অ্যাডলার | |
---|---|
জন্ম | ডিসেম্বর ৪, ১৯১৩ |
মৃত্যু | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ বোইস, ইদাহো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৯৩)
জাতীয়তা | আমেরিকান - অস্ট্রিয়ান |
মাতৃশিক্ষায়তন | ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়[১] |
পরিচিতির কারণ | দূরদর্শনের জন্য তারবিহীন রিমোট কন্ট্রোল আবিষ্কার |
পুরস্কার | এডিসন মেডেল ১৯৮০ |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | পদার্থবিজ্ঞানী |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | জেনিথ ইলেক্ট্রনিক্স |
রবার্ট অ্যাডলার (জন্মঃ ডিসেম্বর ৪, ১৯১৩ || মৃত্যুঃ ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০০৭) ছিলেন অস্ট্রিয়াতে জন্মগ্রহণকারী এক আমেরিকান আবিষ্কারক যিনি বহু আবিষ্কারের স্বত্বাধিকারী ছিলেন। তিনি জেনিথ ইলেক্ট্রনিক্সের হয়ে কাজ করেছেন এবং সংস্থার সহ-সভাপতি ও গবেষণা পরিচালক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। তার কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দূরদর্শনের জন্য প্রাথমিক শব্দ-ভিত্তিক রিমোট কন্ট্রোল বিকাশ, যা ২৫ বছর অবধি বহুল প্রচলিত ছিল যতদিন না আরও জটিল সঙ্কেত প্রেরণকারী ইনফ্রারেড (আইআর) রিমোট কন্ট্রোল-এর বিকাশ হয়।
অ্যাডলার ১৯৩৩ সালে ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তার অভিভাবকরা ছিলেন; জেনি এবং ম্যাক্স অ্যাডলার যার মধ্যে প্রথমজন ছিলেন পেশায় একজন চিকিৎসক এবং অপরজন ছিলেন সমাজতাত্ত্বিক। [২][৩][৪] তিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৭ সালে পি এইচ ডি প্রাপ্ত হন। ১৯৩৮ সালে জার্মানির নাৎসি দল অস্ট্রিয়া দখল করেন এবং যেহেতু ডক্টর অ্যাডলার ইহুদি সম্প্রদায়ের [৫] অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তাই তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তিনি প্রথমে বেলজিয়াম ও তার পরবর্তীকালে ইংল্যান্ড -এ গমন করেন। সেখানে তিনি তার এক বন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-এ স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য দেশান্তরে গমন করেন। [৬] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করার পর তিনি সেখানে ১৯৪১ সালে জেনিথ ইলেক্ট্রনিক্স -এর গবেষণা বিভাগে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তার জীবনকালে তিনি প্রায় ১৮০ টি ইউ এস পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী হয়েছিলেন।[১]
অ্যাডলার সবচেয়ে বেশি পরিচিত দূরদর্শনের (টেলিভিশনের) জন্য তার বিখ্যাত তারবিহীন (ওয়্যারলেস) রিমোট কন্ট্রোল আবিষ্কারের জন্য। যদিও এটি প্রথম আবিষ্কৃত টেলিভিশনের রিমোট কন্ট্রোল নয় কিন্তু প্রযুক্তির দিক থেকে পূর্বে আবিষ্কৃত রিমোট কন্ট্রোলগুলির থেকে অনেক উন্নত ছিল।
জেনিথের অপর এক ইঞ্জিনিয়ার ইউজেন পলির আবিষ্কৃত জেনিথ ফ্ল্যাশ ম্যাটিক রিমোট কন্ট্রোলটি ছিল প্রথম ওয়্যারলেস রিমোট কন্ট্রোল। সংকেত প্রেরক তারকে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে প্রতিস্থাপিত করার প্রচেষ্টা তখন প্রায়ই ব্যর্থ হত। ফ্ল্যাশ ম্যাটিক রিমোট কন্ট্রোলের ট্রান্সমিটারে দিক নির্দেশকারী ফ্ল্যাশ লাইট এবং টেলিভিশন যন্ত্রে আলোক সংবেদনশীল তড়িৎকোষ বা ফটো সেল স্থাপন করা হয়েছিল। এই প্রযুক্তির একটি ত্রুটি ছিল এই যে যদি টেলিভিশনকে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে রাখা হত তখন আলোক সংবেদনশীল তড়িৎকোষগুলি জাগ্রত হয়ে রিমোট কন্ট্রোলের কার্জক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলত। তখন জেনেথের পরিচালক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ারদের এই সমস্যার সমাধান করতে নির্দেশ দেন।
প্রাথমিকভাবে এই সমস্যার সমাধানের জন্য রেডিও তরঙ্গের উপর ভিত্তি করে সংক্ষিপ্তভাবে এক নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়েছিল কিন্তু এই প্রযুক্তির কিছু ত্রুটি লক্ষ্য করা গেছিল। প্রথমত প্রাচীরের মধ্যে দিয়ে সঙ্কেত প্রেরণের কিছু অসুবিধা লক্ষ্য করা যায়; এছাড়াও একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখা টেলিভিশনের সাথে সাথে তার পার্শ্ববর্তী স্থানে অবস্থিত টেলিভিশন কেও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রভাবিত করা যাচ্ছে যা একেবারেই কাম্য নয়। অতঃপর, জেনিথের বিপণনকারীরা এমন রিমোট কন্ট্রোল চেয়েছিল যাতে ব্যাটারির প্রয়োজন হয় না, কারণ তাদের মনে হয়েছিল যে ব্যাটারিটি খারাপ হয়ে গেলে গ্রাহকদের মনে হবে যে হয়তো টেলিভিশন সেটটিতেই কিছু ত্রুটি হয়েছে।
এরপর অ্যাডলার এই সমস্যার সমাধানে সংস্থার চাহিদার কথা মাথায় রেখে শব্দ তরঙ্গের প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিভিশনে সঙ্কেত প্রেরণের কৌশলের বিকাশ ঘটান। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তিনি যে প্রথম রিমোট কন্ট্রোলটি তৈরি করেছিলেন তার নাম ছিল স্পেস কমান্ডার যাতে তিনি অ্যালুমিনিয়াম রডের ব্যবহার করেছিলেন। এই পদ্ধতির সাহায্যে খুব সহজেই উচ্চ কম্পাঙ্কের সঙ্কেত উৎপন্ন করে টেলিভিশনকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত।
১৯৬০ সালে অ্যাডলার অতিস্বনক(আলট্রাসনিক) সংকেত ব্যবহারের জন্য তার প্রযুক্তির কিছু পরিবর্তন ও উন্নতিসাধন করে, তার এই প্রযুক্তি পরবর্তী ২৫ বছর ধরে টেলিভিশনে ব্যবহৃত হত যতদিন না আরও জটিল সঙ্কেত প্রেরণকারী ইনফ্রারেড (আইআর) রিমোট কন্ট্রোল-এর বিকাশ হয়।
১৯৮২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জেনিথ থেকে অবসর নেওয়ার সময়, অ্যাডলার সংস্থার সহ-সভাপতি এবং গবেষণা পরিচালক ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ পর্যন্ত জেনিথের প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৮০ সালে অ্যাডলার এডিসন পদক লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে, অ্যাডলার এবং পলি টেলিভিশন আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের জাতীয় সংস্থান থেকে যৌথভাবে এমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। অ্যাডলারের শেষ পেটেন্ট আবেদনটি ৬ অক্টোবর ২০০৬ সালে টাচ স্ক্রিন বা মানবস্পর্শ সংবেদনশীল পর্দার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি সম্পর্কিত কাজের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। [১][৭]
রবার্ট অ্যাডলার ৯৩ বছর বয়সে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে, ইদাহোর বোইসে মারা যান।