রবার্ট ওয়েন | |
---|---|
জন্ম | নিউটাউন, মন্টগোমারিশায়ার, ওয়েলস | ১৪ মে ১৭৭১
মৃত্যু | ১৭ নভেম্বর ১৮৫৮ নিউটাউন, মন্টগোমারিশায়ার, ওয়েলস | (বয়স ৮৭)
পেশা | সমবায়ী; সমাজ সংস্কারক, ফ্যাক্টরি মালিক; উদ্ভাবক |
দাম্পত্য সঙ্গী | ক্যারোলিন ডেল |
সন্তান | জ্যাকসন ডেল (১৭৯৯) রবার্ট ডেল (১৮০১) উইলিয়াম (১৮০২) অ্যান ক্যারোলিন (১৮০৫) জেন ডেল (১৮০৫) ডেভিড ডেল (১৮০৭) রিচার্ড ওয়েন (১৮০৯) মেরি ডেল/ওয়েন (১৮১০) |
পিতা-মাতা | রবার্ট ওয়েন ও মেরি ওয়েন[১] |
রবার্ট ওয়েন (ইংরেজি: Robert Owen) (১৪ মে, ১৭৭১ - ১৭ নভেম্বর, ১৮৫৮) একজন ব্রিটিশ (ওয়েলশীয়) সমাজ সংস্কারক এবং কল্পলৌকিক সমাজতন্ত্র ও সমবায় আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নায়ক।[২]
রবার্ট ওয়েন ওয়েলসের নিউটাউন গ্রামে ১৭৭১ সালের ১৪ মে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন দরিদ্র জিন নির্মাতা আর দারিদ্র্যের কারণে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করা হয় নি। মাত্র নয় বছর বয়সে ওয়েন কাপড়ের দোকানে চাকরি নেন এবং তার বয়স যখন ১৮ বছর, তখন তিনি ম্যানচেস্টার চলে যান। সেখানে একটি সুতা কলে সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। পরে একশ পাউন্ড পুঁজি নিয়ে নিজেই সুতা উৎপাদন ব্যবসা শুরু করেন। তার ব্যবসা কয়েকদিনের মধ্যে ফুলেফেঁপে ওঠে এবং তিনি ম্যানচেস্টারের একজন প্রথম শ্রেণীর ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পান। কয়েক বছর পর তিনি কয়েকজন অংশীদারসহ একটি সুতা প্রস্তুতকারী কোম্পানী গঠন করেন এবং নিজে সে কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিযুক্ত হন। অল্প কয়দিনে তিনি প্রচুর সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।[২][৩]
সমসাময়িক কালে অন্যান্য ফ্যাক্টরি মালিকরা বেশির ভাগই ছিলেন মুনাফা লালায়িত। মুনাফা বাড়াতে তারা শ্রমিকদেরকে অমানুষিক পরিশ্রমে বাধ্য করতেন। যারপরনাই অত্যাচার , শোষণ ও পাওনা বঞ্চিতকরণের মাধ্যমে মালিকরা বাড়তি মুনাফা অর্জন করতেন । কিন্তু রবার্ট ওয়েন ভিন্ন নীতি গ্রহণ করেন।
শ্রমিকদেরকে খুশি রেখে মুনাফা সর্বোচ্চকরণ ছিল তাঁর লক্ষ্য। তিনি বিশ্বাস করতেন যদি শ্রমিকদেরকে আনন্দে রাখা যায়, সুখে রাখা যায় তবে তারা আরো বেশি করে কাজ করতে উৎসাহী হবে। তাই তিনি এমন কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন, যা ছিল সে-সময়কালে শ্রমিকদের জন্য অচিন্তনীয়। তিনি শ্রমিকদের জন্য আবাসস্থল নির্মাণ করে দেন। তাদের জন্য আদর্শ গ্রাম তৈরি করেন। তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল তৈরি করেন, যাতে তারা লেখাপড়া করতে পারে। এমনকি স্থানীয় বিপণি বিতান গড়ে তুলেন, যেখান থেকে ন্যায্য মূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী তারা কিনতে পারে। Robert Owen এর ফ্যাক্টরি দেখে ইংরেজ কবি Robert Southey মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন যে, বিজ্ঞানমনস্কতার আলোকে যে ধরনের নিরাপদ শিল্প-কারখানা হওয়া উচিত, তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল ওয়েনের ফ্যাক্টরি। সেখানে লক্ষ্য করা গেছে- কিভাবে মেশিনগুলোকে যত্নসহকারে স্থাপন করতে হয় , তাদের পরিচর্যা করা অর্থাৎ যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখা , এসবের কোনোই ঘাটতি ছিল না সেখানে। কোনরকম দুর্গন্ধ বা আশপাশে ময়লা জমে থাকা এরকম কোন চিহ্ন সেখানে ছিল না। ফ্যাক্টরিতে ছিল মিলনায়তন ও খাওয়াদাওয়ার ডাইনিং হল বা ক্যান্টিন, ছিল আধুনিক যাবতীয় ব্যবস্থা। শ্রমিকদের জন্য তিনি গড়ে তুলেছিলেন মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ। দশ বছরের নিচের ছেলেমেয়েদের কাজে আসা সেখানে বারণ, অথচ অন্যান্য কারখানা মালিকরা বেশি মুনাফার লোভে শিশুদের কাজে লাগাতে উৎসাহী ছিলেন । তিনি সারা বিশ্বের মধ্যে এরকম একটি আদর্শ ‘প্রথম’ এলিমেন্টারি স্কুল গড়ে তুলেছিলেন। কোনো অপরাধের জন্য শ্রমিকদেরকে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার পদ্ধতিতে তিনি বিশ্বাস করতেন না। তিনি শ্রমিকদেরকে যতটা সম্ভব উপদেশ বা পরামর্শ দিয়ে কাজ করাতে ইচ্ছুক ছিলেন। তবে তত্ত্বাবধান-এর কাজটি অনেকটা নীরবেই তিনি সারতেন। শ্রমিকদেরকে কাজে সবসময় উৎসাহিত করতেন । শ্রমিক-মালিক এর মধ্যে সু-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল এই আদর্শ ফ্যাক্টরি সিস্টেম-এর মাধ্যমে, যা সেসময়ে ছিল অকল্পনীয়।