রবার্ট বুনসেন | |
---|---|
জন্ম | রবার্ট ভিলহেল্ম এবারহার্ড বুনসেন ৩০ মার্চ, ১৮১১[N1] |
মৃত্যু | ১৬ আগস্ট ১৮৯৯ | (বয়স ৮৮)
মাতৃশিক্ষায়তন | গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | সিজিয়াম ও রুবিডিয়াম আবিষ্কার; বুনসেন বার্নার উদ্ভাবন |
পুরস্কার | কপলি মেডেল (১৮৬০) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | রসায়ন (কর্মজীবন) ভূ-তত্ত্ব ও খনিতত্ত্ব (অবসর জীবন) |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | ক্যাসেল পলিটেকনিক স্কুল ম্যারবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ব্রেসলাউ বিশ্ববিদ্যালয় |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | ফ্রেদরিখ স্ত্রোমেয়ের |
ডক্টরেট শিক্ষার্থী | অ্যাডল্ফ ফন বেয়ার ফ্রিৎজ হেবার |
রবার্ট ভিলহেল্ম এবারহার্ড বুনসেন (জার্মান: Robert Wilhelm Eberhard Bunsen; জন্ম: ৩১ মার্চ, ১৮১১ - মৃত্যু: ১৬ আগস্ট, ১৮৯৯) জার্মান রসায়নবিদ হিসেবে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। বুনসেন বার্নার নামীয় দহন যন্ত্রের মানোন্নয়নে কাজ করেন ও যন্ত্রটি তার নামে নামাঙ্কিত হয়। প্রকৃতপক্ষে মাইকেল ফ্যারাডে বুনসেন যন্ত্রের আবিষ্কারক যা প্রয়োজনীয় উত্তাপ, স্থিরতা, ধোঁয়াবিহীন শিখার জন্যে বিশ্বের সকল গবেষণাগারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।[১] এছাড়াও তিনি গুস্তাভ কিরশফের সাথে বর্ণালীবীক্ষণ বা স্পেকট্রোস্কপি বিষয়ক গবেষণায়ও মূল্যবান অবদান রেখেছেন। তিনি বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সিজিয়াম এবং রুবিডিয়াম নামক রাসায়নিক উপাদানের সন্ধান পান।[২] ১৮৩৯ সালে উইলিয়াম গ্রোভকে সাথে নিয়ে গ্যালভেনিক কোষের মানোন্নয়ন ঘটান। এছাড়াও ১৮৪১ সালে বুনসেন কোষ উদ্ভাবন করেন।
রবার্ট বুনসেন গটিনজেনে ১৮১১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ওয়েস্টফালিয়া রাজতন্ত্রে স্বল্পকাল বসবাস করে যা নেপোলিয়নের পরাজয়ের তিন বছর পর হ্যানোভার রাজতন্ত্র নামে আখ্যায়িত হয়।[৩] তার বাবা ক্রিস্টিয়ান বুনসেন ছিলেন গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগারিক ও আধুনিক ভাষাতত্ত্ব বিষয়ের অধ্যাপক।[৩] চার সন্তানের মধ্যে তার অবস্থান ছিল সর্বকনিষ্ঠ। তবে, রবার্ট বুনসেনের প্রকৃত জন্মতারিখ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। যাজকীয় নিবন্ধন বহিসহ স্ব-হস্তে লিখিত দুইটি জীবন-বৃত্তান্তে ৩০ মার্চ, ১৮১১ সালটিকে প্রকৃত জন্মতারিখরূপে নির্ধারণ করা হয়েছে।[৪][৫][৬][৭] কিন্তু পরবর্তীকালে অনেক দলিলপত্রে ৩১ মার্চকে উল্লেখ করা হয়েছে।[৩][৮][৯][১০][১১][১২] তার আত্মজীবনীকার জর্জ লকম্যানের মত, বুনসেন পরবর্তী বছরগুলোয় ৩১কেই জন্মদিন হিসেবে উদ্যাপন করতেন। লকম্যান কখনোই ৩০কে সঠিক তারিখ হিসেবে মেনে নেননি।[৭]
১৮৫২ সালের শেষদিকে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি লিওপল্ড মেলিনের পরিবর্তে নিয়োগ পান। সেখানে তিনি তড়িৎ-বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশুদ্ধ ধাতব পদার্থ - ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম, ব্যারিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং লিথিয়াম উৎপাদন করতেন। দীর্ঘদিনের সঙ্গী হেনরি এনফিল্ড রস্কো'র সাথে ১৮৫২ সালে হাইড্রোজেন ও ক্লোরিনের মাধ্যমে গঠিত হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের আলোক-রসায়ন প্রক্রিয়ায় গঠন পদ্ধতি বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন। পরবর্তীতে ১৮৫৯ সালে রস্কো'র সাথে কাজ করা থেকে বিরত থাকেন। এরপর গুস্তাভ কিরশফের সাথে বর্ণালী পর্যবেক্ষণে কাজ করেন।
১৮৫৫ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রপ্রকৌশলী ও গবেষণাগারের সহকারী পিটার দেসাগাকে নিয়ে পূর্বেকার মডেলের বুনসেন যন্ত্রের মানোন্নয়নে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ও দেসাগা গ্যাস-বাতাসের সংমিশ্রণে আগুন জ্বালানোর ধারণা গ্রহণ করে নতুন নকশায় এ যন্ত্রকে আরো জনপ্রিয় করে তোলেন। প্রয়োজনীয় উত্তাপ, স্থিরতা, ধোঁয়াবিহীন শিখায় গঠিত বিশেষ ধরনের প্রজ্জ্বলিত গ্যাসের এ যন্ত্রটিই সাধারণভাবে 'বুনসেন বার্নার' নামে আখ্যায়িত করা হয়।[১৩][১৪] দহন যন্ত্রটি বহনযোগ্য ও ক্ষুদ্রাকৃতির। উলম্বভাবে সাজানো ধাতব নলের সাথে গ্যাসের উৎসস্থলের সংযোগ থাকে ও নীচ দিকের ছিদ্র দিয়ে বাতাস প্রবেশ করানো হয়। বাতাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য টিউবে ছোট্ট একটি চাকতি থাকে।
১৮৬০ সালে বিদেশী সদস্যরূপে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসে নির্বাচিত হন। ১৮৭৭ সালে বর্ণালী বিশ্লেষণে গবেষণা ও আবিষ্কারের জন্যে গুস্তাভ রবার্ট কিরশফের সাথে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত সম্মানজনক ডেভি পদক লাভ করেন।
বুনসেন তার সময়কালে বৈশ্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি প্রভাববিস্তারকারী বিজ্ঞানীদের একজনরূপে পরিগণিত হয়েছেন। একজন শিক্ষকরূপে ছাত্রদের কাছে আদরণীয় ও পূজনীয় ছিলেন। বৈজ্ঞানিক বিতর্কে বুনসেন তাত্ত্বিক বিষয়াবলী থেকে সর্বদা দূরে থেকেছেন। গবেষণাগারেই নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন তিনি এবং বিভিন্ন আবিষ্কারের মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। নীতিগতভাবে তিনি তার আবিষ্কারের জন্য মেধাস্বত্ত্ব গ্রহণ করেননি।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি পাণিগ্রহণ করেননি।[৫][১৫] ৭৮ বছর বয়সে তিনি কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। এরপর তিনি ভূ-তত্ত্ব এবং খনিতত্ত্বে মনোনিবেশ ঘটান। ৮৮ বছর বয়সে হাইডেলবার্গে মহাপ্রয়াণ ঘটে এ মহান বিজ্ঞানীর।
|লেখক=
এবং |শেষাংশ=
উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য)
|তারিখ=
(সাহায্য)