রাজ বটেরা Coturnix chinensis | |
---|---|
রাজ বটেরা Coturnix chinensis | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | গ্যালিফর্মিস |
পরিবার: | Phasianidae |
উপপরিবার: | Perdicinae |
গণ: | Coturnix |
প্রজাতি: | C. chinensis |
দ্বিপদী নাম | |
Coturnix chinensis লিনিয়াস, ১৭৬৬ | |
প্রতিশব্দ | |
Exalfactoria chinensis |
রাজ বটেরা (বৈজ্ঞানিক নাম: Coturnix chinensis) (ইংরেজি: King Quail), বা নীলাভ-বুক বটেরা Phasianidae (ফ্যাসিয়ানিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Coturnix (কোটার্নিক্স) গণের এক প্রজাতির রঙচঙে কোয়েল।[১][২] রাজ বটেরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চিনা বটেরা (ল্যাটিন coturnix = বটেরা; chinensis = চীনের)।[২] গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[৩] রাজ বটেরা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় পাখি। বাংলাদেশের ১৯৭৪[২] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৪] নীল বটেরার (C. adansonii) সাথে প্রজাতিটি একটি মহাপ্রজাতি গঠন করেছে। পূর্বে এদের Exalfactoria (এক্সালোফ্যাক্টোরিয়া) গণের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হত, এখনও কেউ কেউ প্রজাতিটিকে এই গণের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন। আবার অনেকে এদের নাটাবটের বলে গণ্য করেন, যদিও এরা তা নয়।
সারা বিশ্বে রাজ বটেরা বেশ সুলভ। আফ্রিকা ও অস্ট্রেলেশিয়া জুড়ে রাজ বটেরার বিস্তৃতি। দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস, রিইউনিয়ন ও গুয়ামে এদের অবমুক্ত করা হয়েছে। ইথিওপিয়া এবং মালিতে এরা অনিয়মিত।[৩]
রাজ বটেরার মোট দশটি উপপ্রজাতি সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।[৫] উপপ্রজাতিগুলো হল:
রাজ বটেরা স্লেট নীল রঙের ছোট ভূচর পাখি। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৪ সেন্টিমিটার, ডানা ৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১ সেন্টিমিটার, পা ২ সেন্টিমিটার ও লেজ ২.৫ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় ৫০ গ্রাম।[১][২] স্ত্রী ও পুরুষ বটেরার চেহারা ভিন্ন। স্ত্রী বটেরার আকার পুরুষের তুলনায় একটু বড়। পুরুষ বটেরার কপাল স্লেট-নীল। মাথায় সাদাকালো নক্সা থাকে। পিঠের বর্ণ পীত অথবা বাদামি ছিট ছিট দাগ থাকে। দেহে লালচে বাদামি ও কালো ডোরা দেখা যায়। ভ্রু-রেখা ও মাথার দু'পাশ স্লেট নীল। গলা ও গাল সাদা এবং কালো মোটা দাগযুক্ত। বুক ও বগল স্লেট নীল। পেট ও লেজতল ঢাকনি লালচে-তামাটে। স্ত্রী বটেরার কপাল লালচে। ঘাড়ের নিচের অংশ, কাঁধ ঢাকনি ও ডানা ঢাকনিতে ছিটা দাগ থাকে। বুক ও বগলে কালো ডোরা দেখা যায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ অনুজ্জ্বল রঙের। এদের মাথা ও ঘাড়ের পাশে কালো ডোরা থাকে। তলপেটে তামাটে রঙ নেই।[২] এদের চোখ লালচে, ঠোঁট কালচে-বাদামি ও পা উজ্জ্বল কমলা রঙের। উপপ্রজাতিভেদে এদের চেহারায় ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বন্দীদশায় এদের মধ্যে বিভিন্ন রঙের বৈচিত্র্য আনা গেছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে রূপালি রাজ বটেরা; এছাড়াও ধূসর-রূপালি, সাদা (অ্যালবিনো নয়) ও বাদামি বৈচিত্র্যপূর্ণ রাজ বটেরাও সৃষ্টি করা গেছে।
রাজ বটেরা ঘাসবনের স্থায়ী বাসিন্দা। এছাড়া আর্দ্র তৃণভূমি, শস্যক্ষেত, রাস্তার পাশে ও ঝোপ-ঝাড়ে এদের প্রায়শই দেখা যায়। এছাড়া আবাদি জমি, জলমগ্ন তৃণভূমি ও চা বাগানে ধীরে সুস্থে খাবার খুঁজে বেড়াতে দেখা যায়। সমুদ্রসমতল থেকে ১২০০ মিটার পর্যন্ত এদের পাওয়া যায়।[৬] খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাসবীজ, শস্যদানা, বিভিন্ন ফল, পাতা, বাদাম, কেঁচো ও বিভিন্ন পোকামাকড় ও তাদের লার্ভা।[৬] এরা মাঝে মাঝে বাঁশির সুরে ডাকে: টি-ইউ.... অথবা কুঈ-কি-কিউ.....। ভয় পেলে কোমল সুরে ডাকে টির-টির-টির-টির....।[২]
জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম। এসময় ঘন লতাপাতা ঘেরা ঘাসঝোপে মাটির গর্তে ঘাস ও পাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। এক এক বারে ৫-৭টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফিকে-ধূসর বা ফিকে জলপাই-হলদে রঙের হয়। ডিমগুলোর ছোট প্রান্ত সুঁচালো। ডিমের মাপ ২.৪ × ১.৯ সেন্টিমিটার। স্ত্রী বটেরা একাই ডিমে তা দেয়।[২]