রবিবর্মা কইল থাম্পুরান | |
---|---|
জন্ম | [১][২] | ২৯ এপ্রিল ১৮৪৮
মৃত্যু | ২ অক্টোবর ১৯০৬ | (বয়স ৫৮)
পেশা | চিত্রশিল্পী |
স্বাক্ষর | |
রাজা রবিবর্মা, কিলিমানোর কইল থাম্পুরান[৪][৫] (২৯ এপ্রিল ১৮৪৮—২ অক্টোবর ১৯০৬) বিখ্যাত ভারতীয় চিত্রশিল্পী ছিলেন। ভারতীয় ইতিহাসের নানাক্ষেত্রে বিচরণের জন্য তাঁকে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী হিসেবে গণ্য করা হয়। ভারতীয় ইতিহাস ধরে রেখে তিনি ইউরোপীয় ধাঁচে চিত্র এঁকে ভারতীয় চিত্রশিল্প জগতে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছিলেন। এছাড়া রাজা রবি লিথোগ্রাফিতে অনেক দক্ষ ছিলেন। যা তাঁকে আরো বেশি সুপরিচিত করে তোলে। তার চিত্রশিল্প থেকে পরে অনেকেই আকৃষ্ট এবং অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এছাড়া হিন্দু দেব-দেবী এবং পুরাণের উপর তার সৃষ্টিকর্ম। গুলো তাঁকে আরো বেশি বিখ্যাত করে তোলে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] রাজা রবি বর্মা ত্রবনকোরের (বর্তমানে কেরালা) সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন।
রবি বর্মাকে ত্রবনকোরের পরবর্তী মহারাজা আইলিয়াম তিরুনাল পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন এবং এরপর থেকে তার প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল।[৬] তিনি মাদুরাইতে চিত্রকলার মূল বিষয়গুলি শিখেছিলেন।
ব্রিটিশ প্রশাসক এডগার থারসন তার এবং তার ভাইয়ের শিল্পী জীবনে অনেক সাহায্য করেছিলেন।[৭] ১৮৭৩ সালে ভিয়েনায় তার চিত্রকর্মের প্রদর্শনীর জন্য পুরস্কার অর্জনের পরে তিনি খুবই প্রশংসিত হয়েছিলেন। কয়েক বছর পর ১৮৯৩ সালে, তার চিত্রকর্মগুলি শিকাগোতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ডস কলম্বিয়ান প্রদর্শনীতেও পাঠানো হয়েছিল এবং সেখানে তিনি তিনটি স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।[৮] তিনি তার চিত্রকলার বিষয়ের সন্ধানে ভারতজুড়ে ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি প্রায়ই হিন্দু দেবী বা ভারতীয় মহিলাদের তার চিত্রকলার বিষয় করেছিলেন। তিনি বিশেষত মহাভারতের দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার কাহিনী এবং নল ও দময়ন্তীর গল্প থেকে পর্বগুলির চিত্রিত করার জন্য বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি ভারতীয় পৌরাণিক মহাকাব্যের চরিত্র গুলিকে তার কল্পনার উপস্থাপনায় এক নতুন জীবন দেন। তার চিত্রকলায় সংবেদনশীল হওয়ার কারণে সমালোচিত হন তবে তার কাজ ভারতে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তার কল্পিত অনেক চিত্রকর্মগুলি বড়োদরার লক্ষ্মী বিলাস প্রাসাদে রাখা হয়েছে।[৯]
১৮৯৪ সালে মুম্বইয়ের ঘাটকোপারে, সেই সময়ের দেওয়ান (প্রধানমন্ত্রী) টি. মাধব রাওয়ের পরামর্শে রবি বর্মা লিথোগ্রাফিক মুদ্রণ প্রেস শুরু করেছিলেন এবং পরে ১৮৯৯ সালে মহারাষ্ট্রের লোনাওয়ালার নিকটে মালাভালাতে স্থানান্তরিত করেন। মূলত মহাভারত, রামায়ণ এবং পুরাণের দৃশ্যেগুলি এবং বেশিরভাগ হিন্দু দেব-দেবীর চিত্র মুদ্রিত করা হত। এই ওলিওগ্রাফগুলি খুব জনপ্রিয় ছিল এবং ১৯০৬ সালের তার মৃত্যুর পরেও হাজার হাজারে মুদ্রিত হতে থাকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
তখনকার সময়ে রবি বর্মার প্রেসটি ভারতের বৃহত্তম এবং উদ্ভাবনমূলক প্রেস ছিল। প্রেসটি মূলত তার ভাই, রাজা বর্মা দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, কিন্তু প্রেসটি বাণিজ্যিক ব্যর্থতা সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ১৮৯৯ সালে এর মধ্যে প্রেসটি গভীরভাবে দেনায় ডুবে যায় এবং ১৯০১ সালে, প্রেসটির জার্মানি মুদ্রণ প্রযুক্তিবিদ, ফ্রিটজ শ্লেইচারের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। শ্লেইচার রবি বর্মার প্রিন্টগুলি মুদ্রণ অব্যাহত রেখেছিলেন তবে পরে নতুন ডিজাইন তৈরি করতে কম প্রতিভাবান শিল্পীদের নিযুক্ত করেছিলেন। শ্লেইচার বাণিজ্যিক ও বিজ্ঞাপনের লেবেল অন্তর্ভুক্ত করতে প্রেসের পণ্যকে আরও প্রশস্ত করেছিলেন। শ্লেইচার এবং তার উত্তরসূরিদের পরিচালনায়, প্রেসটি সফলভাবে অব্যাহত ছিল কিন্তু ১৯৭২ সালে একটি ধ্বংসাত্মক আগুন পুরো কারখানাটিকে ধ্বংস করে দেয়। রবি বর্মার অনেকগুলি মূল লিথোগ্রাফিক প্রিন্টও আগুনে নষ্ট হয়ে যায়।[১০]
১৯০৪ সালে ভাইসরয় লর্ড কার্জন, ব্রিটিশ সম্রাটের পক্ষে রবি বর্মাকে "কায়সার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক" প্রদান করেছিলেন। কেরালার মাভেলিকারাতে তার সম্মানে চারুকলাতে নিবেদিত একটি কলেজও গঠন করা হয়েছিল। কিলিম্যানুর এ রাজা রবি বর্মা হাই এবং ভারতবর্ষ জুড়ে বহু সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে যাদের নামকরণ রাজা রবি বর্মা নামানুসারে করা আছে। ২০১৩ সালে তার সম্মানে বুধ গ্রহের "ক্র্যাটার বর্মা" নামে রাখা হয়েছিল।[১১] ভারতীয় শিল্পে তার বিশাল অবদানের কথা বিবেচনা করে কেরালা সরকার "রাজা রবি বর্মা পুরস্করম" নামে একটি পুরস্কার প্রতিষ্ঠা করেছে, যা প্রতি বছর শিল্প ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখানো ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়।[১২]