রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর | |||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
![]() | |||||||||||||||
![]() | |||||||||||||||
সংক্ষিপ্ত বিবরণ | |||||||||||||||
বিমানবন্দরের ধরন | জনসাধারন | ||||||||||||||
পরিষেবাপ্রাপ্ত এলাকা | হায়দ্রাবাদ | ||||||||||||||
অবস্থান | শামসাবাদ | ||||||||||||||
চালু | ২৩ মার্চ ২০০৮ | ||||||||||||||
যে হাবের জন্য | |||||||||||||||
মনোনিবেশ শহর | |||||||||||||||
এএমএসএল উচ্চতা | ৬১৭ মিটার / ২,০২৪ ফুট | ||||||||||||||
স্থানাঙ্ক | ১৭°১৪′ উত্তর ৭৮°২৬′ পূর্ব / ১৭.২৪° উত্তর ৭৮.৪৩° পূর্ব | ||||||||||||||
ওয়েবসাইট | www | ||||||||||||||
মানচিত্র | |||||||||||||||
রানওয়ে | |||||||||||||||
| |||||||||||||||
পরিসংখ্যান (২০২০-২০২১) | |||||||||||||||
জিএমআর হায়দরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিমিটেড | |||||||||||||||
| |||||||||||||||
রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (তেলুগু: రాజీవ్ గాంధీ అంతర్జాతీయ విమానాశ్రయం; উর্দু: راجیو گاندھی بین الاقوامی ہوائی اڈا) (আইএটিএ: এইচওয়াইডি, আইসিএও: ভিওএইচএস) হল একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর হায়দ্রাবাদে উড়ান পরিষেবা প্রদান করে। এটি হায়দ্রাবাদের ২৪ কিলোমিটার (১৫ মাইল) দক্ষিণে শামসাবাদে অবস্থিত। বিমানবন্দরটি পরিচালিত হয় জিএমআর হায়দ্রাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিমিটেড নামে একটি পাবলিক-বেসরকারী উদ্যোগ। এই বিমানবন্দরটি হায়দ্রাবাদের প্রাথমিক বাণিজ্যিক বিমানবন্দর হিসাবে বেগমপেট বিমানবন্দরের পরিবর্তে মার্চ ২০০৮ সালে খোলা হয়। এটি ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নামে নামকরণ করা হয়।
বিমানবন্দরের একটি যাত্রী টার্মিনাল, একটি কার্গো টার্মিনাল এবং দুটি রানওয়ে রয়েছে। বিমান চালানর প্রশিক্ষণ সুবিধা, একটি জ্বালানী ভান্ডার, একটি সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র এবং দুটি এমআরও সুবিধা রয়েছে। ২০১৭ সালের হিসাবে, রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (আরজেআইএ) ভারতের যাত্রীবাহী বিমানবন্দরগুলির মধ্যে যাত্রী পরিবহনের হিসাবে ষষ্ঠ ব্যস্ততম বিমানবন্দর। বিমানবন্দরটি ২০১৭ সালে ১৭.১ মিলিয়ন যাত্রী বহন করে। এয়ার ইন্ডিয়া রিজিওনাল, ব্লু ডার্ট এভিয়েশন, স্পাইসজেট, লুফথান্স কারগো, কুইকজেট কারগো এবং ট্রুজেট বিমান পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে এবং ইন্ডিয়াগো ও এয়ার ইন্ডিয়া মনোনিবেশ শহর হিসেবে বিমানবন্দরটিকে ব্যবহার করে।
বিদ্যমান বাণিজ্যিক বিমানবন্দর বেগমপেট বিমানবন্দর ক্রমবর্ধমান যাত্রীদের ভিড় পরিচালনা করতে অক্ষম হয়ে পরে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এন. চন্দ্রবাবু নাইডুর নেতৃত্বে রাজ্য সরকার প্রথমে হাকিম্পেট বায়ুসেনা স্টেশনকে বেসামরিক বিমানবন্দর হিসাবে ব্যবহারের জন্য রূপান্তরিত করার বিষয়টি বিবেচনা করে; তবে, বিমানবাহিনী প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে।[৪] রাজ্য যখন বিমান বাহিনীর জন্য একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব করেছিল, তখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক রাজ্যকে বেগমপেট বিমানবন্দরের দক্ষিণে বিবেচনা করার পরামর্শ দেয়।[৫] রাজ্যটি ১৯৯৮ সালের মধ্যে নতুন বিমানবন্দরের জন্য তিনটি সম্ভাব্য স্থানে নির্বাচিত করে: এগুলি হল বঙলুর, নাদেরগুল ও শামসাবাদ।[৬] দুটি মহাসড়ক (এনএইচ ৪৪ ও এনএইচ ৭৬৫) এবং একটি রেলপথের নিকটে সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে,[৫] শামসাবাদকে ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্বাচিত করা হয়।[৭]
এন. চন্দ্রবাবু নাইডুর নেতৃত্বাধীন সরকার ও ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের (এএআই) অধীনে ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর প্রকল্পকে সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।[৮] রাজ্য ও এএআই একসাথে এই প্রকল্পে ২৬% অংশীদারী রাখার এবং বাকি ৭৪% বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য বরাদ্দ করা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।[৯] ইতোমধ্যে ৫৪৯৯ একর অধিগ্রহণকৃত জমি সরকারি দখলের সাথে একটি চুক্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শমসাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এন. চন্দ্রবাবু নাইডু গ্র্যান্ডি মল্লিকর্জুন রাও (জিএমআর গ্রুপ) ও মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর হোল্ডিংস বারহাদ সমন্বয়ে কনসোর্টিয়ামকে ৭৪% অংশীদারী হিসাবে নির্বাচিত করে চুক্তি প্রদান করেন।[৫][৯] হায়দ্রাবাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড (এইচআইএএল), পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে জিএমআর হায়দ্রাবাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড (জিএইচআইএএল) নামে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি বিশেষ-উদ্দেশ্য সত্তা হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে রাজ্য, এএআই ও জিএমআর-এমএএইচবি তাদের অংশীদারিত্ব স্থাপন করেছিল।[৫][১০]
জিএইচআইএএল-এর সদস্যরা ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি অংশীদার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, সেইসাথে ₹৪ বিলিয়নের (ইউএস$৫৩ মিলিয়ন) রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।[৫][১১] জিএইচআইএএল ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে একটি ছাড় চুক্তি ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, এই শর্তে যে আরজিআইএ-এর ১৫০-কিলোমিটার (৯৩ মাইল) ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো বিমানবন্দর পরিচালনা করা যাবে না।[১২] তাই, বেগমপেট বিমানবন্দর বন্ধ করার প্রয়োজন ছিল।[১৩]
ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডি ক্ষমতা লাভ করলে প্রকল্পটি অগ্রবর্তী হয় এবং জিএমআর দ্বারা নির্মাণ কাজ ২০০৫ সালের ১৬ই মার্চ শুরু হয়, যখন সোনিয়া গান্ধী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।[১৪] দুই দিন আগে, কেন্দ্রীয় সরকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নামে বিমানবন্দরের নামকরণ করেছিল,[১৫] যিনি হায়দ্রাবাদে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।[১৬] নামকরণের ফলে তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) থেকে বিরোধিতা দেখা দেয়। বেগমপেট বিমানবন্দরে, আন্তর্জাতিক টার্মিনালটির নামকরণ করা হয়েছিল রাজীব গান্ধীর নামে এবং অভ্যন্তরীণ টার্মিনালটির নামকরণ করা হয়েছিল টিডিপির প্রতিষ্ঠাতা এন টি রমা রাওয়ের নামে; টিডিপি নতুন বিমানবন্দরে উক্ত নামকরণ রীতি চালিয়ে যেতে চেয়েছিল। যাইহোক, নতুন বিমানবন্দরে শুধুমাত্র একটি টার্মিনাল রয়েছে।[১৭]
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের প্রায় তিন বছর পর, বিমানবন্দরটি বিক্ষোভের মধ্যে ২০০৮ সালে ১৪ই মার্চ উদ্বোধন করা হয়। তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) আভ্যন্তরীণ টার্মিনালের নামকরণের দাবির পুনরাবৃত্তি করে।[১৬] উপরন্তু, ২০,০০০ জন এএআই কর্মচারীরা তাদের চাকরি হারানোর ভয়ে ১২ই ও ১৩ই মার্চ বেগমপেট বিমানবন্দরের পাশাপাশি বেঙ্গালুরুতে এইচএএল বিমানবন্দর বন্ধ করার বিরুদ্ধে ধর্মঘট পরিচালনা করেছিল।[১৮][১৯]
আরজিআইএ মূলত বাণিজ্যিক কার্যক্রম খোলার জন্য ২০০৮ সালের ১৬ই মার্চ নির্ধারিত ছিল; তবে, তারিখটি বিমানবন্দরে ভূমিগত পরিচালনার উচ্চ হার নিয়ে কিছু বিমান সংস্থার প্রতিবাদের কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। হার হ্রাস করা হলে, উদ্বোধন তারিখ ২০০৮ সালের ২৩শে মার্চের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।[২০] ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ‘লুফ্টহানজা ফ্লাইট ৭৫২’ আরজিআইএ-তে অবতরণকারী প্রথম উড়ান হওয়ার কথা ছিল, তবে দুটি স্পাইসজেট উড়ান আগে অবতরণ করেছিল।[২১] যাইহোক, লুফ্টহানজা উড়ানটি রাত ১২ টা ২৫ মিনিটে পৌঁছানোর পর পরিকল্পিত আনুষ্ঠানিক স্বাগত পেয়েছিল।[২১][২২]
স্পাইসজেট ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার নতুন বোম্বার্ডিয়ের কিউ ৪০০ বিমান ব্যবহার করে "আরজিআইএ" থেকে তার আঞ্চলিক ঘাঁটি চালু করে।[২৩] বিমান সংস্থাগুলি বেশ কয়েকটি দ্বিতীয় শ্রেণির ও তৃতীয় শ্রেণির শহরে উড়ান পরিষেবা প্রদানের জন্য[২৪] দেশের মধ্যে কেন্দ্রীয় অবস্থানের কারণে হায়দ্রাবাদ বিমানন্দরটির বেছে নেয়।[২৫] আঞ্চলিক বিমান সংস্থা ট্রুজেট ২০১৫ সালের জুলাই মাসে উড়ান পরিচালনা শুরু করার সময় আরজিআইএ বিমানবন্দরে একটি হাব বা ঘাঁটি চালু করেছে।[২৬]
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রাজীব অন্তর্দেশীয় টার্মিনালকে এন টি রাম রাও নামে অভিহিত করে, যার ফলে রাজ্যসভার সদস্যগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।[২৭][২৮] নামকরণ কীভাবে হবে সে বিষয়ে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা অনিশ্চিত রয়ে গেছেন।[২৯]
আরজিআইএ বিমানবন্দরটি একটি সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগ জিএমআর হায়দ্রাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিমিটেড'য়ের মালিকানাধীন এবং ওই সংস্থার দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি জিএমআর গোষ্ঠী (৬৩%) ও মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর হোল্ডিংস বারহাদের (১১%) মধ্যে একটি ব্যক্তিগত কনসোর্টিয়ামের পাশাপাশি ভারতের সরকারি সত্তা ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (১৩%) ও তেলেঙ্গানা সরকার (১৩%) নিয়ে গঠিত।[৩০] জিএআইএইচএল ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যবর্তী ছাড়ের চুক্তির ভিত্তিতে, অতিরিক্ত ৩০ বছরের জন্য এটি চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প সহ জিএআইএলএল ৩০ বছরের জন্য বিমানবন্দরটি পরিচালনা করার অধিকার অর্জন করে।[৩১]
বিমানবন্দরটি ৫,৪৯৫ একর জুড়ে বিস্তৃত। যার মধ্যে প্রধানত ১,৭০০ একর জমি বিমানক্ষেত্র ও ৩০০ একর জমি ভূমিগত সুবিধা সহ বিমানবন্দরের প্রয়োজনে মোট ২০০০ একর জমির উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। অবশিষ্ট ৩ হাজার ৪৯৫ একর জমি বিমানবন্দর সম্প্রসারণে ব্যবহার করা হবে। আর কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। বিমানবন্দরটি সম্পূর্ণরূপে ৫,৪৯৫ একরের মধ্যে পরিকল্পিত।[৩২]
আরজিআই-এর একটি একক যাত্রী টার্মিনাল রয়েছে, যা ১,০৫,৩০০ স্কয়ার ফুট (৯,৭৮০ বর্গ মিটার) জুড়ে বিস্তৃত ও প্রতিবছর ১২ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে।[৩৩] টার্মিনাল ভবনের পশ্চিমাঞ্চল আন্তর্জাতিক উড়ান পরিচালনা করে এবং পূর্বদিকের অংশ অন্তর্দেশীয় উড়ানগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়।[৩৪] স্ব-পরিক্ষন-প্রবেশের জন্য ১৯ টি কিউস্কের সাথে ৪৬ টি অভিবাসন কাউন্টার এবং ৯৬ টি পরিক্ষন-প্রবেশ ডেস্ক রয়েছে। [৩৫] মোট ৯ টি দরজা রয়েছে, যার মধ্যে সাতটি টার্মিনাল ভবনের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত এবং উত্তর দিকের অন্যা দুটি। দুইটি জেটওয়ে দিয়ে ও তিনটি দরজা দ্বারা বৃহত্ত বিমাপ পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাবলিক লাউঞ্জ সুবিধা প্লাজা প্রিমিয়াম লাউঞ্জ দ্বারা সরবরাহ করা হয়, যা টার্মিনাল ভবনে তিনটি লাউঞ্জ পরিচালনা করে; ভিআইপিদের জন্য তিনটি পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে।[৩৬] প্রাক নিরাপত্তা হিসাবে "বিমানবন্দর গ্রাম" যাত্রী পরিবহনের জন্য একটি বৈঠক বিন্দু।[৩৪]
বিমানবন্দরে ৫৭ টি পার্কিং বে, ৪৭ টি দূরবর্তী পার্কিং বে ও ১০ টি অ্যারো ব্রিজ রয়েছে। জিএইচএআইএল ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে আরও ২৬ টি পার্কিং বে যোগ করেছে, ফলে বর্তমান সময়ে মোট ৮৩ টি পার্কিং বে রয়েছে।[৩৭]
উইকিমিডিয়া কমন্সে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।