রাঢ় | |
---|---|
ঐতিহাসিক/ভৌগোলিক অঞ্চল | |
উপর থেকে নিচে, বাঁদিক থেকে ডানদিকে: তারাপীঠের গ্রামীণ অঞ্চল, বীরভূমের একটি গ্রাম, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষাপ্রাঙ্গন, দুর্গাপুরের আনন্দ বিনোদন উদ্যান, কার্জন গেট, বর্ধমান শহরের ১০৮ শিবমন্দির, বিষ্ণুপুরের শ্যামরায় মন্দির | |
রাঢ় অঞ্চলের মানচিত্র | |
Location in India | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°১৫′ উত্তর ৮৭°০৪′ পূর্ব / ২৩.২৫° উত্তর ৮৭.০৭° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
সরকার | |
• শাসক | পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
ভাষা | |
• সরকারি | বাংলা ও ইংরেজি |
• অন্যান্য ভাষা | ওড়িয়া, কুড়ুখ, মগধী, মুন্ডারি ও সাঁওতালি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
প্রধান শহর | হাওড়া, আসানসোল, দুর্গাপুর, চন্দননগর, বর্ধমান, মেদিনীপুর, খড়গপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, সিউড়ি |
রাঢ় হল ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের একটি ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক অঞ্চল। এটি পশ্চিমে ছোটনাগপুর মালভূমি ও পূর্বে গাঙ্গেয় বদ্বীপ পর্যন্ত প্রসারিত। রাঢ় অঞ্চলের সীমানা সম্পর্কে প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে নানা পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া গেলেও, বোঝা যায় যে মূলত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেই এই অঞ্চলের অবস্থিতি ছিল। অঞ্চলের কয়েকটি অংশ আধুনিক ঝাড়খণ্ড রাজ্যের অন্তর্গত।[১][২][৩]
ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে রাঢ় অঞ্চলটির ভিন্ন ভিন্ন নামে চিহ্নিত হয়েছে। আবার ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য এখানে গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন রাঢ় সভ্যতা এখানেই অবস্থিত ছিল। তবে এর প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায় না।[২][৩][৪][৫]
এই অঞ্চলের বিভিন্ন নামগুলি আসলে "রাঢ়" শব্দটির শব্দগত বিকৃতি। অনেক সময় "ঢ়" শব্দটি "ঢ" হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে রচিত জৈণ ধর্মগ্রন্থ আচারাঙ্গ সূত্র-এ "রাঢা", "রাঢ", "রাঢ়া", "রাঢ়", "লাঢা", "লাঢ়" প্রভৃতি শব্দগুলি পাওয়া যায়। কোনো কোনো বইতে "লালা", "রার" বা "লাড়" নামেও এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে। ভাষাতাত্ত্বিক প্রভাত রঞ্জন সরকারের মতে, চীনারা রাঢ়কে "লাটি", গ্রিকরা "গঙ্গারিডি" ও আর্যরা "রাট্টা" বলত। তবে অনেক গ্রিক, রোমান ও মিশরীয় বইতেই "গঙ্গারিডাই", "গঙ্গারিডি", "গঙ্গারিটাই" ও "গঙ্গারিডাম" সভ্যতা, রাজ্য বা জাতির উল্লেখ রাঢ়ের পাশাপাশি একইভাবে করা হয়েছে। মেগাস্থিনিস, টলেমি, স্ট্রাবো, প্লিনি দ্য এল্টার, অ্যারিয়ান, ডিওডোরাস সিকুলাস, কুইন্টাস কার্টিয়াস রিউফুস ও প্লুটার্কের রচনায় গঙ্গারিডাই রাজ্যের নাম পাওয়া যায়।[২][৩][৬][৭]
"রাঢ়" শব্দের ব্যুৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেকে বলেছেন, এটি অস্ট্রোএশিয়াটিক পরিবার-ভুক্ত কোনো এক স্থানীয় ভাষা থেকে এসেছে। সাঁওতালি ভাষায় প্রচলিত নিম্নোক্ত ভাষাগুলি থেকে এর উদ্ভব হওয়া সম্ভব: "লার" (সুতো), "রাড়" (সুর) ও "লাড়" (সাপ)। ভাষাবিদ প্রভাতরঞ্জন সরকারের মতে, শব্দটির উৎস প্রোটো-অস্ট্রোএশিয়াটিক "রাঢ়া" বা "রাঢ়ো" শব্দদুটি, যার অর্থ "লালমাটির দেশ" বা "ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার দেশ"।[২][৬]
"গঙ্গারিডাই" শব্দের উৎসটিও স্পষ্ট নয়। ঐতিহাসিক ড. অতুল সুর, প্লিনি ও টলেমির মতে এর অর্থ "গঙ্গার তীরবর্তী রাঢ় অঞ্চল"। যদিও অন্যান্য গবেষকদের মতে, এর অর্থ, "গঙ্গাহৃদি" (যে অঞ্চলের হৃদয়ে গঙ্গা প্রবাহিত), "গঙ্গারাষ্ট্র" বা "গঙ্গা-রিডাই" (গঙ্গা জাতির দেশ। মেগাস্থিনিস এই অঞ্চলের অধিবাসীদের বলেছেন, "Gangarides'। ডিওডোরাস সিকুলাসের বর্ণনা অনুসারে, গঙ্গারিডাই "রাষ্ট্রে সবচেয়ে বড়ো আকারের ও সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় হাতি ছিল।"[৭]
বর্ধমান বিভাগের সম্পূর্ণ বীরভূম জেলা, বর্ধমান জেলার মধ্যভাগ, বাঁকুড়া জেলার পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব ভাগ ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমভাগ রাঢ়ের অন্তর্গত। এছাড়া প্রেসিডেন্সি বিভাগের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার অংশবিশেষ ও হুগলি জেলার সামান্য অংশ রাঢ়ের অন্তর্গত।
পুরনো পলিমাটি দিয়ে গঠিত এই অঞ্চলে ল্যাটেরাইট লাল মাটির প্রাধান্যই বেশি। মাটির স্তর এখানে অগভীর। মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম। নদী অববাহিকাগুলি বাদে অন্যত্র তাই মাটি খুব একটা উর্বর নয়।
এছাড়া পণ্য ফসলের মধ্যে বাঁকুড়া জেলায় পলাশ ও কুল গাছে লাক্ষাকীট এবং বাঁকুড়া, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলায় রেশমকীটের খাদ্য তুঁতগাছের চাষ হয়।
এছাড়া বীরভূমের আহম্মদপুরের চিনি কল ও রাঢ়ের বিভিন্ন অঞ্চলের চালকল, তেলকল ও কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা এই অঞ্চলের মাঝারি শিল্পের কয়েকটি নিদর্শন। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে কিছু বৃহৎ শিল্পস্থাপনে উদ্যোগী হয়েছেন। এর মধ্যে বর্ধমানের অন্ডালে একটি বিমাননগরী বা এয়াট্রোপোলিশ স্থাপনের পরিকল্পনা অন্যতম।
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য)।