রাবণ | |
---|---|
![]() অষ্টাদশ শতাব্দীর রাক্ষস রাবণের ভাস্কর্য | |
দেবনাগরী | रावण |
সংস্কৃত লিপ্যন্তর | Rāvaṇa |
অন্তর্ভুক্তি | লঙ্কার রাজা, রাক্ষস |
পূর্বসূরি | কুবের (লঙ্কার রাজা) |
উত্তরসূরি | বিভীষণ (লঙ্কার রাজা) |
আবাস | লঙ্কা |
বাহন | পুষ্পক রথ |
গ্রন্থসমূহ | রামায়ণ ও এর সংস্করণ |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
মাতাপিতা | |
সহোদর | কুম্ভকর্ণ, বিভীষণ, খারা, দুষণা, অহীরাবণ, শূর্পণখা |
দম্পত্য সঙ্গী | |
সন্তান | মেঘনাদ, অতিকায়, অক্ষয়কুমার, নরন্তক, দেবন্তক, ত্ৰিশিরা |
হিন্দুধর্ম |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
![]() |
রাবণ (সংস্কৃত: रावण) হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের অন্যতম প্রধান চরিত্র ও প্রধান খলনায়ক।[১][২][৩] তিনি মহাকাব্য ও পুরাণে বর্ণিত লঙ্কা দ্বীপের রাজা। কিন্তু বর্তমানে শ্রীলঙ্কা যে সেই লঙ্কা সেটি এখনো নিশ্চিত নন। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে রামায়ণের এই তথ্যটি পাওয়া যায় না। রামচন্দ্রের পত্নী সীতাকে হরণ করে তিনি লঙ্কায় নিয়ে যান। সীতার উদ্ধারকল্পে কিষ্কিন্ধ্যার বানরসেনার সাহায্যে রামচন্দ্র লঙ্কা আক্রমণ করলে রাবণের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। এই ঘটনা রামায়ণ মহাকাব্যের মূল উপজীব্য বিষয়। রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে তার পূর্বজীবনের কথা বলা হয়েছে।
রাবণের প্রকৃত নাম দশানন/দশগ্রীব। তার রাবণ নামটি শিবের দেওয়া। জনপ্রিয় শিল্পে তার দশটি মাথা, দশটি হাত ও দশটি পা দর্শিত হয়। মহাকাব্যে কামুক ও ধর্ষকামী বলে নিন্দিত হলেও রাবণকে মহাজ্ঞানী ও তাপসও বলা হয়েছে। উত্তর ভারতে দশেরা উৎসবে রাবণের কুশপুত্তলিকা দাহ আজও এক জনপ্রিয় প্রথা। রাবণ আদি যুগে সর্বপ্রথম মর্তে উড়ন্ত যান পুষ্পক রথ ব্যবহার করেন।
রাবণের জন্ম অন্তত ২৩ হাজার ৯৮৭ বছর আগে।
রাবণ ত্রেতাযুগে ঋষি বিশ্রব এবং রাক্ষস রাজকন্যা কৈকেসীর কাছে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। উত্তর প্রদেশের বিসরাখের গ্রামবাসীরা দাবি করেন যে বিশ্রবের নামানুসারে বিসরাখের নামকরণ করা হয়েছিল এবং সেখানে রাবণের জন্ম হয়েছিল। যাইহোক, হেলা ঐতিহাসিক সূত্র এবং লোককাহিনী অনুসারে, রাবণ লঙ্কায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে তিনি পরে রাজা হন। রাবণের পিতামহ, ঋষি পুলস্ত্য,[18] ছিলেন দশজন প্রজাপতির একজন, বা ব্রহ্মার মনে জন্মানো পুত্র, এবং প্রথম মন্বন্তরার (মনুর বয়স) সপ্তর্ষি (সাত মহান ঋষি) একজন। তাঁর মাতামহ ছিলেন সুমালি (বা সুমালয়), রাক্ষসদের রাজা এবং সুকেশের পুত্র। সুমালীর দশ ছেলে ও চার মেয়ে ছিল। সুমালি নশ্বর জগতের সবচেয়ে শক্তিশালী সত্ত্বাকে কৈকেসীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, যাতে একজন ব্যতিক্রমী উত্তরাধিকারী তৈরি হয়। তিনি বিশ্বের রাজাদের প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কারণ তারা তার চেয়ে কম শক্তিশালী ছিল। কৈকেসী ঋষিদের মধ্যে খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে কুবেরের পিতা বিশ্বকে বেছে নেন। রাবণ এবং তার ভাইবোন এই দম্পতির কাছে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তারা তাদের পিতার কাছ থেকে তাদের শিক্ষা শেষ করেছিলেন, রাবণ বেদের একজন মহান পণ্ডিত ছিলেন।
ব্রহ্মার নিকট বর: রাবণ 11,000 বছর ধরে তপস্যা করে ব্রহ্মার কাছ থেকে বর পেয়েছিলেন। রাবণ এর ইচ্ছা অনুযায়ী ব্রহ্মা তাকে একটি বর দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন যা তাকে মানুষ ছাড়া ব্রহ্মার সমস্ত সৃষ্টির কাছে অপরাজেয় করে তুলবে। তিনি অস্ত্র, একটি রথ, সেইসাথে ব্রহ্মার কাছ থেকে আকৃতি পরিবর্তন করার ক্ষমতাও পেয়েছিলেন। রাবণের দৌরাত্ম্যে দেবতারা মিনতি জানালে ভগবান বিষ্ণু তাদের আশ্বাস দেন যে তিনি মানব (রাম) রূপে অবতীর্ণ হবেন এবং রাবণকে বধ করবেন যেহেতু তাঁর অজেয় বর মানুষের অন্তর্ভুক্ত নয়।
রাবণের পিতা ব্রহ্ম ঋষি বিশ্রবা বা বিশ্বশ্রবা এবং মাতা কৈকসী যার অন্য নাম নিকষা । বিশ্রবা মহর্ষি পুলস্ত্যর (সপ্তর্ষি /সপ্ত ঋষির একজন) পুত্র আর কৈকসী হলেন অসুররাজ সুমালীর কন্যা ।
কৈকসীকে বিবাহের জন্য অসুররাজ সুমালীর কাছে অনেক প্রস্তাব আসে কিন্তু সুমালীর ইচ্ছা যে, সে তার কন্যাকে মৃত্যু লোকের সবচেয়ে শক্তিশালী সত্তার সাথে বিবাহ দিবে, যাতে তার মেয়ের সন্তানরা ব্যতিক্রমী, তেজস্বী এবং পরাক্রমী হয়। তাই সকল প্রার্থীকে তিনি ফিরিয়ে দেন কারণ তারা কেউই তার চেয়ে শক্তিশালী ছিল না ।
কৈকসী অনেক ঋষি ও মুনির মধ্যে খুঁজে বিশ্রবাকে বিবাহ যোগ্য মনে করেন এবং তার সেবা করেন। তার সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে ঋষি বিশ্রবা তাকে বিবাহ করেন । ব্রহ্ম ঋষি বিশ্রবার ঔরসে কৈকসীর গর্ভে তিন পুত্র যথাক্রমে দশানন (দশ মাথা বিশিষ্ট), কুম্ভকর্ণ, বিভীষণ এবং এক কন্যা শূর্পণখার জন্ম হয় । রাবন ও তার সহোদরদের শিক্ষা তার পিতার কাছে সম্পন্ন হয়। রাবণ বেদ শাস্ত্রের অন্যতম একজন পণ্ডিত ছিলেন ।
রাবণ সংগীত রচনায় অতি নিপুণ ছিলেন। তিনি শিবের পরম ভক্ত ছিলেন। সার্বক্ষণিক শিবের সান্নিধ্য পাওয়ার লক্ষ্যে তিনি যখন কৈলাশ পর্বতকে লংকায় প্রতিস্থাপনের জন্যে নিজ তপোবল দ্বারা দুই হস্তে তুলে নেন তখন মহাদেব তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি কৈলাশে স্পর্শ করলে রাবণের দুই হাত কৈলাশের নিচে চাপা পরে যায়। রাবণ তখন প্রচন্ড চিৎকার করতে থাকে এবং শিবকে শান্ত করার নিমিত্তে তিনি একটি সংগীত রচনা করেন, যা পরে "শিব তাণ্ডব স্তোত্র" নামে পরিচিত হয় । শিবের ক্রোধ শান্ত হয় এবং মহাদেব রাবণকে তার চন্দ্রহাস নামক খড়গ তাকে উপহার দেন এবং অতি উচ্চ মাত্রায় তার রোদন করার কারণে তার নাম রাবণ বলে পরিচিত হয়।
রাবণ বাস্তু শাস্ত্রে এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রে অতীব জ্ঞান রাখতেন। জ্যোতিষ শাস্ত্রে তার জ্ঞানের দ্বারা সে তার পুত্রের জন্মলগ্নে সকল গ্রহকে তার বশে এনে সেই তিথিকে মঙ্গল তিথি বানিয়ে নেন। রাবণ ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন এবং বর প্রাপ্ত হন যে, সুর-অসুর, যক্ষ-রক্ষ কেউ তাকে পরাজিত করতে পারবেনা। আত্মগর্বে গর্বিত হয়ে সে মানুষের কথা বলে নি। রাবণ তার বৈমাত্রেয় বড় ভাই কুবেরকে পরাজিত করে তার কাছ থেকে পুষ্পক বিমান ছিনিয়ে নেয় যা তাকে অতি অল্প সময়ে লঙ্কা থেকে যে কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারত ।
প্রথম জীবনে রাবণ কৈলাস অভিযান করে মহাদেবের কাছে পরাজিত হয়ে শিবভক্ত হন। রাবণ পূর্বজন্মে ছিলেন অভিশাপগ্রস্ত বিষ্ণুভক্ত বিজয়। রাবণ তার নিজশক্তিতে ত্রিলোকের অধিপতি হন। শ্রীরাম অবতীর্ণ হন এবং রাবণকে বধ করেন । কথিত আছে, রাম রাবণকে হত্যা করে ১ বৎসর ব্রহ্ম হত্যার অনুশোচনায় হিমালয়ে তপস্যা করেন। রাম ছিলেন মর্যাদা পুরুষোত্তম।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |