রাশিয়ার বৈদেশিক সম্পর্কসমূহ বলতে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে রুশ ফেডারেশনের সম্পর্ককে বুঝানো হয়।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত আজারবাইজান সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি প্রজাতন্ত্র ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি আইয়াজ মুতাল্লিবভের বৈদেশিক নীতির কারণে রাশিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল[১]। কিন্তু আর্মেনীয়দের নিকট খোজালির পতনের পর আবুলফাজ এলচিবে আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি হন, এবং তিনি রুশ-বিরোধী নীতি অবলম্বন করেন[২]। ১৯৯৩ সালে হায়দার আলিয়েভ আজারবাইজানের ক্ষমতায় আসেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেন।
রাশিয়ায় ৫ লক্ষাধিক আজারবাইজানি বসবাস করে, এবং আজারবাইজানেও বহুসংখ্যক রুশ বসবাস করে[৩]। দেশ দুইটির সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও নাগর্নো-কারাবাখ সংঘাত, রুশ—জর্জীয় যুদ্ধ এবং কাস্পিয়ান সাগরের আইনি অবস্থা নিয়ে দেশ দুইটির মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। চেচেন সমস্যার ক্ষেত্রে আজারবাইজান রাশিয়াকে সমর্থন করে এবং বাকুতে বিদ্রোহী চেচেন রাষ্ট্রপতি আসলান মাসখাদভের প্রতিনিধির কার্যালয় বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে, নাগর্নো-কারাবাখ সংঘাতের প্রথমদিকে রাশিয়া নিরপেক্ষ ছিল, কিন্তু এলচিবের রুশবিরোধী জাতীয়তাবাদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়া আর্মেনিয়ার পক্ষ অবলম্বন করে[৪]। এটি ছাড়াও ১৯৯০ সালের কালো জানুয়ারির ঘটনাবলির স্মৃতি আজারবাইজানি সমাজে বিশেষত জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে রাশিয়ার প্রতি সন্দেহ জাগিয়ে রেখেছে। তা সত্ত্বেও ২০০৭ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী ৮০% আজারবাইজানি রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পক্ষপাতী ছিল। ২০০৮ সালে জর্জিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের পর এই সমর্থন ৫২%-এ নেমে আসে[৫]।
রুশভীতি কখনোই আজারবাইজানে প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি, এবং সেখানকার সরকারও আজারবাইজানে বসবাসরত জাতিগত রুশদের অধিকার রক্ষার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কিন্তু সেখানে আর্মেনীয়দের সঙ্গে বিবাহিত কিংবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত রুশদের প্রতি শত্রুভাব বিদ্যমান[৬]। অন্যদিকে, চেচেন যুদ্ধের পর রাশিয়ায় বিদ্যমান 'ককেশীয়ভীতি'র কারণে আজারবাইজানিরা প্রায়ই রাশিয়ায় বৈষম্যের শিকার হয়, কারণ রুশরা আজারবাইজানি এবং ককেশাসের অন্যান্য জাতির লোকেদের মধ্যে পার্থক্য সনাক্ত করতে পারে না[৭]।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের নিকট হতে জর্জিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। জর্জিয়ার অন্তর্গত আবখাজিয়া প্রজাতন্ত্রটি নবগঠিত রাষ্ট্রে আবখাজদের স্বায়ত্তশাসন বাতিল হওয়ার আশঙ্কায় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ শুরু করে। রাশিয়া এই সংঘর্ষে আবখাজিয়াকে সমর্থন করে। ২০০৮ সালের রুশ–জর্জীয় যুদ্ধে জর্জিয়ার পরাজয়ের পর একই বছরের ২৬ আগস্ট রাশিয়া আবখাজিয়াকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে[৮][৯]। বর্তমানে রাশিয়া ও আবখাজিয়ার মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। বর্তমানে আবখাজিয়ায় রুশ সামরিক ঘাঁটি বিদ্যমান, এবং সেখানে প্রায় ৪,৫০০ রুশ সৈন্য মোতায়েন রয়েছে[১০]।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত আর্মেনিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে আর্মেনিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৮৮–১৯৯৪ সালের নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধের সময় রাশিয়া আর্মেনিয়াকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা প্রদান করে[১১]। আর্মেনিয়া সিআইএসকে শক্তিশালী করার রুশ পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে। আর্মেনিয়া রুশ-নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট সিএসটিও এবং যৌথ সিআইএস বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সদস্য। প্রায় ৪,৫০০ রুশ সীমান্তরক্ষী আর্মেনীয় সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে যৌথভাবে আর্মেনিয়ার তুর্কি ও ইরানি সীমান্ত পাহারা দেয়[১২]। ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া আর্মেনিয়ার গুমরিতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। ২০১০ সালে রাশিয়া ও আর্মেনিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া ২০৪৪ সাল পর্যন্ত ঘাঁটিটি ব্যবহার করতে পারবে[১৩]। ২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি আর্মেনিয়া রুশ-নেতৃত্বাধীন ইউরেশীয় ইউনিয়নের একটি পূর্ণ সদস্যে পরিণত হয়।
২০১৬ সালের নভেম্বরে রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন একটি যৌথ রুশ ও আর্মেনীয় সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার প্রস্তাব অনুমোদন করেন[১৪]। একই বছর রাশিয়া আর্মেনিয়ার নিকট এক ডিভিশন ইস্কান্দার-এম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে[১৫][১৬]।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইউক্রেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ইউক্রেনের নিকট প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রায় ৫,০০০ পারমাণবিক অস্ত্র ছিল[১৭][১৮][১৯]। ১৯৯২ সালে ইউক্রেন স্বেচ্ছায় ৩,০০০ পারমাণবিক অস্ত্র রাশিয়ার নিকট হস্তান্তর করে[১৭]। পরবর্তীতে ইউক্রেন বাকি পারমাণবিক অস্ত্রগুলোও ধ্বংস করে ফেলতে রাজি হয়[২০][২১][২২]। পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয় ছাড়াও রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আরো কয়েকটি বিষয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ক্রিমিয়ার সার্বভৌমত্ব এবং সেভাস্টোপোলের কর্তৃত্ব এই দ্বন্দ্বের প্রধান বিষয় ছিল। এক চুক্তি অনুসারে ক্রিমিয়া একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে থেকে যায়, অন্যদিকে সেভাস্টোপোল ইউক্রেনের অধীনে থাকলেও ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত এক চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া ২০১৭ সাল পর্যন্ত সেভাস্টোপোলে নৌঘাঁটি স্থাপনের অধিকার লাভ করে[২৩][২৪]। ইউক্রেনের বাণিজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সম্পাদিত হত রাশিয়ার সাথে। এছাড়া সোভিয়েত-উত্তর যুগে রাশিয়া ইউক্রেনে চতুর্থ বৃহত্তম বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়[২৫]।
২০০৪ সালে ইউক্রেনে কমলা বিপ্লবের পর জ্বালানি সরবরাহ এবং ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে দেশ দুইটির সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সেভাস্টোপোলে রুশ নৌঘাঁটি মতানৈক্যের বিষয় হিসেবে থেকে যায়[২৬]। ২০০৮ সালে জর্জিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের সময় ইউক্রেন জর্জিয়াকে সমর্থন করে এবং এতে পাস্পরিক সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে[২৭]। ২০০৯ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য নিয়ে বিতর্কের পর ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়[২৮]।
২০১০ সালে ইউক্রেনের নতুন রাষ্ট্রপতি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের অধীনে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া থেকে ইউক্রেনে রপ্তানিকৃত প্রতি ১,০০০ কিউবিক মিটার প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য ১০০ মার্কিন ডলার হ্রাস করার বিনিময়ে ইউক্রেন ২৫ বছরের জন্য রাশিয়াকে সেভাস্টপোলের রুশ নৌঘাঁটি চালু রাখার অনুমতি প্রদান করে[২৯][৩০][৩১]। ২০১৩ সালের আগস্টে ইউক্রেন রাশিয়া, বেলারুশ ও কাজাখস্তানের সমন্বয়ে গঠিত কাস্টমস ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক হয়[৩২]।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের যোগদানের পক্ষপাতীরা ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ করে, যা ইউরোমাইদান বিপ্লবে রূপ নেয় এবং ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন। ইউক্রেনের নতুন সরকার রুশ-বিরোধী নীতি অবলম্বন করে এবং পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে মৈত্রী গঠনে সচেষ্ট হয়। ইয়ানুকোভিচ ও রাশিয়ার সঙ্গে মৈত্রীর সমর্থক ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে রুশবিরোধীদের দ্বন্দ্ব আরম্ভ হলে এই অরাজক পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের ১১ মার্চ ক্রিমিয়ার আইনসভা ইউক্রেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে[৩৩] এবং ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত একটি গণভোটে ক্রিমিয়ার অধিবাসীরা রাশিয়ার সঙ্গে যোগদানের পক্ষে মত দেয়[৩৪][৩৫]। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে[৩৬] এবং রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর পাল্টা অবরোধ আরোপ করে[৩৭][৩৮][৩৯]। এছাড়া পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থীরা দনেতস্ক ও লুহানস্ক নামে দু'টি স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয় এবং ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ইউক্রেন সরকার রুশ সৈন্যরা এই বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ করে, যদিও রাশিয়া এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত শীতল।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত উজবেকিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৯২ সালে রাশিয়া ও উজবেকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৯৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত উজবেকিস্তান রুবল-জোনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাজিকিস্তানের গৃহযুদ্ধ চলাকালে রাশিয়া ও উজবেকিস্তান উভয়েই তাজিক সরকারকে সহায়তা করার জন্য তাজিকিস্তানে সৈন্য প্রেরণ করে। এরপর থেকে মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল এ রাষ্ট্রটি রাজনৈতিকভাবে রাশিয়া থেকে দূরে সরে যেতে থাকে[৪০]। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন জোটের আক্রমণের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উজবেকিস্তানের কার্শি-খানাবাদে একটি বিমানঘাঁটি স্থাপন করে।
২০০৩ সালে রুশ কোম্পানি গ্যাজপ্রম উজবেক পাইপলাইন নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে[৪১]। একই বছর থেকে উজবেকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে থাকা রাশিয়ার কাছে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করতে শুরু করে[৪২]। ২০০৫ সালের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের পর উজবেকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কার্শি-খানাবাদ বিমানঘাঁটি খালি করার নির্দেশ দেয়। ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর মস্কোতে রাশিয়া ও উজবেকিস্তানের মধ্যে একটি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়[৪৩][৪৪]। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে।
২০০৬ সালে উজবেকিস্তান রুশ-নেতৃত্বাধীন সিএসটিও সামরিক জোটে যোগদান করে, কিন্তু ২০১২ সালে জোটটি থেকে বের হয়ে আসে, যার ফলে উজবেকিস্তান রাশিয়ার প্রভাব বলয় থেকে দূরে চলে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়[৪৫]। ২০১৪ সালে রাশিয়া রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য রাশিয়ার নিকট উজবেকিস্তানের প্রায় সমস্ত ঋণ মওকুফ করে দেয়[৪৬]।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগেই ১৯৯১ সালের ২৪ আগস্ট রাশিয়া এস্তোনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং একই বছরের ২৪ অক্টোবর রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথমদিকে রাশিয়ার সঙ্গে এস্তোনিয়ার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও শীঘ্রই সীমান্ত সমস্যা, এস্তোনিয়া থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহার এবং এস্তোনিয়ায় রুশ সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য প্রভৃতি বিষয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ১৯৯৪ সালের ২৯ আগস্ট রাশিয়া এস্তোনিয়া থেকে পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন করে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা এখনো বজায় রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে রুশ সরকার এস্তোনিয়ায় বসবাসরত রুশ সংখ্যালঘুদের প্রতি এস্তোনীয় সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির (যেমন- নাগরিকত্ব প্রদানে অস্বীকৃতি, রুশ ভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতি) প্রতিবাদ করেছে। এস্তোনিয়াও রাশিয়ায় বসবাসরত এস্তোনীয়দের সমগোত্রীয় মারি জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যের নিন্দা জানিয়েছে। সর্বশেষে এস্তোনিয়ার রুশ-বিরোধী ও পশ্চিমাঘেঁষা নীতি, সোভিয়েত শাসনের তীব্র সমালোচনা এবং এস্তোনিয়া কর্তৃক ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোতে যোগদান রাশিয়ার সঙ্গে এস্তোনিয়ার সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটিয়েছে।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত কাজাখস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত ছিল। বর্তমানে রাশিয়া ও কাজাখস্তানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। রাশিয়ার মস্কোয় কাজাখস্তানের একটি দূতাবাস এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ, অস্ত্রাখান ও ওমস্কে কাজাখস্তানের কনস্যুলেট-জেনারেল রয়েছে। অন্যদিকে, কাজাখস্তানের আস্তানায় রাশিয়ার একটি দূতাবাস এবং আলমাতি ও উরালস্কে রাশিয়ার কনস্যুলেট রয়েছে। কাজাখস্তান রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথ, যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থা এবং ইউরেশীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের সদস্য।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত কিরগিজস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। বর্তমানে রাশিয়া ও কিরগিজস্তানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। কিরগিজস্তানের বিশকেকে রাশিয়ার একটি দূতাবাস এবং ওশে একটি কনস্যুলেট রয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার মস্কোয় কিরগিজস্তানের একটি দূতাবাস, একাতেরিনবার্গে একটি কনস্যুলেট এবং নভোসিবিরস্কে একটি ভাইস-কনস্যুলেট রয়েছে। কিরগিজস্তান রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথ, যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থা এবং ইউরেশীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের সদস্য। কিরগিজস্তানে রাশিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটি বিদ্যমান[৪৭]।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত তাজিকিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত ছিল। ১৯৯২ সালে রাশিয়া ও তাজিকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই রাষ্ট্রদ্বয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
তাজিকিস্তানের গৃহযুদ্ধ চলাকালে রাশিয়া তাজিক সরকারকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে এবং ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের ক্রমাগত সাফল্যের মুখে ২৫,০০০ সৈন্য প্রেরণ করে তাজিক সরকারকে পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধের অবসান ঘটে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত রাশিয়া আফগান–তাজিক সীমান্ত প্রহরা দেয়ার জন্য তাজিকিস্তানে ১১,০০০ সীমান্তরক্ষী মোতায়েন রেখেছিল। তাজিকিস্তান রুশ-নেতৃত্বাধীন সিএসটিও-এর সদস্য। তাজিকিস্তানে রুশ সামরিক ঘাঁটি বিদ্যমান। ২০১২ সালের অক্টোবরে রাশিয়া ও তাজিকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া ২০৪২ সাল পর্যন্ত তাজিকিস্তানে অবস্থিত রুশ সামরিক ঘাঁটিগুলো ব্যবহার করতে পারবে[৪৮]।
১০ লক্ষাধিক তাজিক রাশিয়ায় কাজ করে, এবং তাদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের ওপর তাজিকিস্তানের অর্থনীতি বহুলাংশে নির্ভরশীল। ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে তাজিক কর্মীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স তাজিকিস্তানের জিডিপির ৪৮%।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত তুর্কমেনিস্তান প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি প্রজাতন্ত্র ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৯৫ সালে তুর্কমেনিস্তান আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং 'কঠোর নিরপেক্ষতা'র নীতি অবলম্বন করে এবং তুর্কমেনিস্তানের নিরপেক্ষতা জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত হয়। তুর্কমেনিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি সাপারমুরাত নিয়াজভ দেশটির রুশ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করেছিলেন। বর্তমানে এই নীতির পরিবর্তন ঘটেছে।
সাম্প্রতিককালে রুশ—তুর্কমেনিস্তানি সম্পর্ক তুর্কমেনিস্তান থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির চুক্তিলাভের রুশ প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। তুর্কমেনিস্তানের সমৃদ্ধ হাইড্রোকার্বন মজুদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত[৪৯]। কিন্তু রাশিয়ায় রপ্তানিকৃত তুর্কমেন গ্যাসের মূল্য নিয়ে রাষ্ট্র দুইটির মধ্যে প্রায়ই বিবাদ দেখা দেয়[৫০][৫১]। তুর্কমেন রাষ্ট্রপতি গুরবাঙ্গুলি বেরদিমুহামেদভ রুশ-নিয়ন্ত্রিত প্রিকাস্পিয়স্কি পাইপলাইনকে গ্যাস সরবরাহ ও বর্ধিত করতে রাজি হয়েছিলেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত এই লক্ষ্যে কোনো কার্যক্রম ঘটে নি[৫২]।
১৯৬৩ সালের ১১ মার্চ কুয়েত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়[৫৩]। ১৯৯১ সালের ২৮ ডিসেম্বর কুয়েত রাশিয়াকে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে[৫৪]। ১৯৯২ সালের শেষদিকে কুয়েত ও রাশিয়ার মধ্যে একটি যৌথ নৌ-মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯৩ সালের ২৯ নভেম্বর প্রথম পারস্য উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্র হিসেবে কুয়েত রাশিয়ার সঙ্গে একটি সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে[৫৫][৫৬]। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া ও কুয়েতের মধ্যে সামরিক ক্ষেত্রে বিস্তৃত সহযোগিতা আরম্ভ হয়েছে[৫৭]। রাশিয়া ও কুয়েতের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেনও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন মুক্তিবাহিনীকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করে[৫৮][৫৯]। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম কয়েক বছর দেশ দু'টির মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্য প্রবেশসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বর্তমানে রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক[৬০][৬১] ও সামরিক[৬২][৬৩] সম্পর্ক বিদ্যমান।
There are some reports that Ukraine had established effective custody, but not operational control, of the cruise missiles and gravity bombs. ... By early 1994 the only barrier to Ukraine's ability to exercise full operational control over the nuclear weapons on missiles and bombers deployed on its soil was its inability to circumvent Russian permissive action links (PALs).