রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাস বিষয়টি সামাজিক বিজ্ঞানের ভিন্ন শাখা হিসেবে তুলনামূলকভাবে দেরিতে এসেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাজনৈতিক দর্শন থেকে আলাদা নয় এবং এই আধুনিক শাখার পূর্বগামী ধারণাসমূহ হল নৈতিক দর্শন, রাজনৈতিক অর্থনীতি, রাজনৈতিক ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস ও অন্যান্য মাননির্ধারক শাখা।[১]
সক্রেটিসীয় রাজনৈতিক দার্শনিকগণ পশ্চিমা রাজনৈতিক ভাবধারার পূর্বসূরি; তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অ্যারিস্টটল (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২ অব্দ), যাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করা হয়। অ্যারিস্টটলই প্রথম ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কার্যকর সংজ্ঞা প্রদান করেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য শাখা বলে মনে করতেন এবং এটি সামরিক বিজ্ঞানসহ অন্য শাখাগুলোর উপর বিশেষ কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে।[২] প্লেটো ও অ্যারিস্টটলদের মত রাজনৈতিক দার্শনিকগণ এমনভাবে রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিশ্লেষণ শুরু করেন যে তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক ধারণাসমূহে অধিকতর গুরুত্ব বহন করে, যা তাদের পূর্বের গ্রিক দার্শনিকগণ যেভাবে এই বিষয়টিকে চিত্রায়িত করেছিলেন তার বিপরীত। প্লেটোর পূর্বে রাজনীতির উপর উল্লেখযোগ্য বক্তব্য প্রদান করেছিলেন সে সময়ের কবি, ইতিহাসবেত্তা ও বিখ্যাত নাট্যকারগণ।[৩]
নব্য পশ্চিমা দর্শনের ভিত্তি স্থাপিত হয় আলোকিত যুগে যা পৃথক গির্জা ও রাজ্যের প্রয়োজনীয়তার প্রতি জোর দেয়। এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিগুলো বস্তু বিজ্ঞানের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে যা সমাজে প্রয়োগ করা যায় ও সামাজিক বিজ্ঞানের উদ্ভব ঘটায়। রাজনীতি গবেষণাগারে অধ্যয়ন করা যেত কারণ এটি সামাজিক প্রতিবেশ ছিল। ১৭৮৭ সালে আলেকজান্ডার হ্যামিলটন লিখেন, "রাষ্ট্রবিজ্ঞান অন্যান্য বিজ্ঞানের মত অনেকাংশে বিকশিত হয়েছে।" মার্কুইস দার্গেনসন ও আব দ্য সাঁ-পিয়ের দুজনেই রাজনীতিকে বিজ্ঞান হিসেবে উল্লেখ করেছেন; তন্মধ্যে দার্গেনসন একজন দার্শনিক এবং দ্য সাঁ-পিয়ের আলোকিত যুগের সংস্কারক ছিলেন।[৪]
ভারতে চাণক্য খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে অর্থশাস্ত্র রচনা করেন, যা ভারতের অন্যতম প্রাচীন রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত রচনা হিসেবে উল্লেখিত হয়ে থাকে।[৫] অর্থশাস্ত্র রাজনৈতিক চিন্তাধারার একটি প্রামাণ্য ইতিহাস, যেটাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যুদ্ধের কৌশল, রাজস্ব নীতিসহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।
প্রাচীন ভারতের রাজনীতির পূর্বসূরির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রচনা হল হিন্দুধর্মের চারটি বেদের মধ্যকার তিনটি বেদ, এবং মহাভারত ও পালি ত্রিপিটক। উল্লেখিত তিনটি বেদ হল ঋগ্বেদ, সংহিতা ও ব্রাহ্মণ। চাণক্যের সময়ের প্রায় দুইশত বছর পর মনুসংহিতা প্রকাশিত হয়, যা সে সময়ের ভারতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রামাণ্য গ্রন্থ।[৬]
কনফুসীয়বাদ ও তাওবাদ মূলত ধর্ম হিসেবে পরিচিত হলেও এতে মৌলিক রাজনৈতিক দর্শন রয়েছে। যুক্তিবাদ ও মহিবাদসহ এই রাজনৈতিক দর্শন প্রাচীন চীনের শরৎ বসন্ত কাল থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। চীনের ইতিহাসে এই সময়টি চীনা দর্শনের স্বর্ণযুগ ছিল, কারণ এই সময়ে অনেকগুলো ভিন্ন ধারণার জন্ম হয় যা মুক্তভাবে আলোচিত হত। শরৎ বসন্ত কালে সামরিক কৌশল ও রাজনৈতিক পদ আরোহণ মানব জীবনের দিকগুলো আধ্যাত্মিকতার প্রতি মানুষের আকর্ষণের মধ্য দিয়ে প্রভাবিত হয়।[৭]
ইবন সিনা ও মায়মোনিদেসসহ মধ্যপ্রাচ্যের অ্যারিস্টটলবাদীগণ অ্যারিস্টটলের অভিজ্ঞতাবাদের ঐতিহ্য ধরে রাখেন এবং অ্যারিস্টটলের কাজের উপর বিশদ মন্তব্য রচনার মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণকে বাঁচিয়ে রাখেন। আরব পরবর্তীকালে অ্যারিস্টটলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাবধারা থেকে সরে যায় এবং প্লেটোর রিপাবলিক রচনার দিকে মনোনিবেশ করে। এর ফলে রিপাবলিক ইহুদি-ইসলামি রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি হয়ে ওঠে, যা আল ফারাবী ও ইবনে রুশদের রচনাবলিতে দেখা যায়।[৮]
ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াৎ ও ফেরদৌসীর শাহনামার মত রচনাবলিতে মধ্যযুগীয় পারস্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষণের প্রমাণ পাওয়া যায়।[৮]
Political Science was not unknown to ancient Indians. ArthasHastra of Kautilya of 3rd century B.C. is a purely political science work.