রিচার্ড উইডমার্ক | |
---|---|
জন্ম | রিচার্ড উঈড উইডমার্ক ২৬ ডিসেম্বর ১৯১৪ সানরাইয টাউনশিপ, মিনেসোটা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
মৃত্যু | ২৪ মার্চ ২০০৮ রক্সবারি, কানেটিকাট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৯৩)
মাতৃশিক্ষায়তন | লেইক ফরেস্ট কলেজ, বিএ ১৯৩৬ |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৯৩৮-২০০১ |
দাম্পত্য সঙ্গী | জিন হেইযেলউড (বি. ১৯৪২; মৃ. ১৯৯৭) সুযান ব্ল্যানচার্ড(বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব) (বি. ১৯৯৯) |
সন্তান | ১ |
রিচার্ড উইড উইডমার্ক (ডিসেম্বর ২৬, ১৯১৪-মার্চ ২৪, ২০০৮) একজন মার্কিন চলচ্চিত্র, মঞ্চ, এবং টেলিভিশন অভিনেতা ও প্রযোজক। তিনি তার সর্বপ্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র “কিস অফ ডেথ” – এ টমি উডো নামে একজন খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তিনি গোল্ডেন গ্লোব জয়ী হন সবচেয়ে উজ্জ্বল নবাগত হিসেবে। অভিনয় জীবনের শুরুর দিকে তিনি নোয়া চলচ্চিত্রে খলনায়কের ভূমিকায় বেশি অভিনয় করেন, তবে পরে তিনি নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন ওয়েস্টার্ন, নাট্য এবং ভয়ের চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্র জগতে অবদানের জন্য হলিউড ওয়াক অফ ফেইম-এ উইডমার্কের একটি তারকা আছে।
উইডমার্ক ডিসেম্বর ২৬, ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের সানরাইজ টাউনশিপে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতা-মাতা ছিলেন কার্ল হেনরি উইডমার্ক এবং এথেল মে।[২][৩] তার পিতা ছিলেন সুইডিশ বংশোদ্ভূত আমেরিকান এবং তার মাতা ছিলেন ইংরেজ ও স্কটিশ বংশোদ্ভূত।[৪] তিনি বেড়ে ওঠেন ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের প্রিন্সটনে, এবং তার পিতার পেশার কারণে তাঁদেরকে বিভিন্ন স্থানে থাকতে হতো।[৫] তিনি লেক ফরেস্ট কলেজে অভিনয়ের উপর পড়াশোনা করেন, এবং বি এ পাশ করার পর তিনি সেখানে অভিনয়ের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।[৬]
উইডমার্কের অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৩৮ সালে, আন্ট জেনিয রিয়াল লাইফ স্টোরিয নামে রেডিও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ৪০-এর দশকে বিভিন্ন বেতার অনুষ্ঠানে তার কন্ঠ শোনা যেত, যেমন গ্যাং বাস্টার্স, দ্য শ্যাডো, ইনার স্যাংটাম মিস্টেরিয, জয়েস জর্ডান এম ডি, মোল মিস্টেরি থিয়েটার, এথেল এন্ড এলবার্ট ইত্যাদি।
উইডমার্ক ১৯৪৩ সালে এফ হিউয হার্বার্টের “কিস এন্ড টেল” নামক ব্রডওয়ে শো’তে অভিনয় করেন। কানের পর্দা ফুটো হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। তিনি যখন শিকাগো শহরে “ড্রীম গার্ল” নামক মঞ্চ নাট্যে অভিনয় করছিলেন তখন টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরী ফক্স তার সাথে ৭ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি করে।[৭]
উইডমার্কের প্রথম চলচ্চিত্রাভিনয় ছিল ১৯৪৭ সালের “কিস অফ ডেথ” ছায়াছবিতে। চলচ্চিত্রটিতে তিনি টমি উডো নামের চাপা হাসিমাখা একজন চিত্তবিকারগ্রস্তের ভূমিকায় অভিনয় করেন।[৮] তার বিখ্যাত দৃশ্যটি ছিল যেখানে উডো হুইল চেয়ারে বসা একজন বিকলাঙ্গ নারীকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে। এই ছায়াছবিতে উইডমার্কের অভিনয় করা নিয়ে বিতর্ক ছিল। উইডমার্ক বলেন “পরিচালক হেনরি হ্যাথাওয়ে আমাকে চাননি। আমার ছিল উঁচু ললাট, এবং হ্যাথাওয়ের মতে তা আমাকে একজন জ্ঞানী ব্যক্তির মত দেখাত।“ ছবিটি সমালোচনা এবং বাণিজ্যিক দিক থেকে সফল ছিল। উইডমার্ক বছরের নতুন তারকা হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেন এবং পার্শ্ব অভিনেতার হিসেবে অস্কারের মনোনয়ন পান।[৮]
এই সফলতার পর তিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন, যেমন দ্য স্ট্রীট উইথ নো নেইম (১৯৪৮), রোড হাউয (১৯৪৮), এবং একটি ওয়েস্টার্ন চলচ্চিত্র ইয়েলো স্কাই (১৯৪৮) যেটাতে তিনি অভিনয় করেন গ্রেগরি পেক ও এন ব্যাক্সটারের সাথে।
উইডমার্ক “ডাউন টু দ্য সি ইন শিপ্স (১৯৪৯) এবং স্ল্যাটারিয হারিকেন (১৯৪৯) ছবি দু’টির মধ্য দিয়ে বীরত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। নাইট এন্ড দ্য সিটি (১৯৪৯) চলচ্চিত্রে তিনি ছিলেন নায়কের বিরুদ্ধে। ইলিয়া কাযানের প্যানিক ইন দ্য স্ট্রীট (১৯৫০) ছায়াছবিতে তিনি ছিলেন নায়কের ভূমিকায়। একই সময়ে তিনি খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন সিডনি পটিয়েরের সাথে বর্ণবাদ বিষয়ক চলচ্চিত্র ১৯৫০ সালের “নো ওয়ে আউট”-এ।
এরপর তিনি আবার নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন হলয অফ মন্টিযুমা (১৯৫১) এবং দ্য ফ্রগমেন (১৯৫১)-এ। ১৯৫২ সালের “রেড স্কাইয অফ মন্টানা’এ তিনি একজন অগ্নি নির্বাপকের ভূমিকায় অভিনয় করেন। একই বছর তিনি অভিনয় করেন মেরিলিন মনরো’র সাথে “ডোন্ট বদার টু নক” ছায়াছবিতে।
এরপর তিনি অভিনয় করেন ১৯৫২ সালের “ও হেনরিয ফুল হাউয”-এ এবং একই বছর একটি কৌতুক চলচ্চিত্র “মাই পাল গাস”-এ। ডেস্টিনেশান গোবি (১৯৫৩) ছিল আরেকটি যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। ১৯৫৩ সালের স্যামুয়েল ফুলার পরিচালিত “পিক আপ অন সাউথ স্ট্রীট”-এ তার চরিত্রটি ছিল একজন পকেটমারের যে পরে হয় একজন বীরোচিত।
এম জি এম এর টেইক দ্য হাই গ্রাউন্ড! (১৯৫৪)-এ অভিনয়ের পর তিনি একই বছর অভিনয় করেন ফক্স-এর “হেল অন হাই ওয়াটার” চলচ্চিত্রে। তারপর তিনি দু’টি ওয়েস্টার্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেনঃ গ্যারি কুপারের সাথে গার্ডেন অফ ঈভল (১৯৫৪) এবং স্পেন্সার ট্রেসি’র সাথে ব্রোকেন ল্যান্স (১৯৫৪)।
ইউরোপে তিনি একটি রোমাঞ্চকর ছায়াছবি করেন “এ প্রাইয অফ গোল্ড (১৯৫৫)। তারপর একই বছর অভিনয় করেন লরেন বাকলের সাথে “দ্য কবওয়েব”-এ।
পরবর্তি ছবিগুলোঃ ব্যাকল্যাশ (১৯৫৬), রান ফর দ্য সান (১৯৫৬), দ্য লাস্ট ওয়াগন (১৯৫৬), সেইন্ট জোন (১৯৫৭)।
১৯৫৭ সালে উইডমার্ক “টাইম লিমিট” ছায়াছবির মাধ্যমে প্রযোজনা পেশা শুরু করেন। এটাতে তিনি অভিনয়ও করেন।
দ্য ট্র্যাপ (১৯৫৯) ছিল একটি নোয়া চলচ্চিত্র। অতঃপর তিনি কিছু ওয়েস্টার্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেনঃ ওয়ারলক (১৯৫৯), হেনরি ফন্ডার সাথে; এবং দ্য এলামো (১৯৬০)।
প্রযোজক হিসেবে তার দ্বিতীয় ছবি দ্য সিক্রেট ওয়েইয (১৯৬১) ছিল এলিস্টেয়ার ম্যাকলিনের উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে। ছবিটির পরিচালক ছিলেন ফিল কার্লসন। উইডমার্ক কার্লসনের কঠিন নিয়মের কারণে তার সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন এবং কার্লসনকে বাদ দিয়ে নিজেই পরিচালনা শুরু করেন।
উইডমার্ক ওয়েস্টার্নে আবার অভিনয় শুরু করেন টু রোড টুগেদার (১৯৬১) দিয়ে। ছবিটির অন্য তারকা ছিলেন জেমস স্টুয়ার্ট এবং পরিচালক ছিলেন জন ফোর্ড। এরপর তিনি অভিনয় করেন জাজমেন্ট এট নুরেমবার্গ (১৯৬১) এবং হাউ দ্য ওয়েস্ট ওয়ায ওয়ান (১৯৬২) ছায়াছবিতে।
দ্য লং শিপ্স (১৯৬৪) –এ উইডমার্ক ছিলেন একজন ভাইকিং এবং ফ্লাইট ফ্রম আশিয়া (১৯৬৪)-তে ছিলেন একজন বৈমানিক। তিনি জন ফোর্ডের সাথে আরেকটি চলচ্চিত্র করেন শাইয়েন অটাম (১৯৬৪)।
প্রযোজক হিসেবে তার তৃতীয় চলচ্চিত্রটি ছিল ১৯৬৫ সালের যুদ্ধভিত্তিক ছায়াছবি “দ্য বেডফোর্ড ইন্সিডেন্ট”।
অতঃপর তিনি আরো কয়েকটি ওয়েস্টার্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেনঃ আল্ভারেয কেলি (১৯৬৬), দ্য ওয়ে ওয়েস্ট (১৯৬৭), এবং ডেথ অফ এ গানফাইটার (১৯৬৯)। ১৯৬৮ সালর “ম্যাডিগান” ছায়াছবিতে তিনি একজন পুলিশ ডিটেক্টিভের ভূমিকায় অভিনয় করেন। পরে এটিকে একই নামে টেলিভিশন ধারাবাহিকে রূপান্তরিত করা হয়।
সত্তরের দশকে উইডমার্ক আবার পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন, কিন্তু মাঝে মাঝে মূল চরিত্রেও অভিনয় করেন। তার ৭০-এর দশকের চলচিত্রগুলোঃ দ্য মুনশাইন ওয়ার (১৯৭০), হোয়েন দ্য লেজেন্ডস ডাই (১৯৭২), মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস (৯১৯৭৪), টু দ্য ডেভিল এ ডটার (১৯৭৬), দ্য সেল আউট (১৯৭৬), টোয়াইলাইটস লাস্ট গ্লিমিং (১৯৭৭), দ্য ডমিনো প্রিন্সিপল (১৯৭৭), রোলারকোস্টার (১৯৭৮), কোমা (১৯৭৮), দ্য সোয়ার্ম (১৯৭৮), মিস্টার হর্ন (১৯৭৯), এবং বেয়ার আইল্যান্ড (১৯৭৯)।
২০০২ সালে মাইকেল শেলডনের সাথে এক আলোচনায় উইডমার্ক বলেনঃ
চলচ্চিত্র নির্মাণের যাদুগুলো হারিয়ে গেছে। এখন সবকিছুই একটা যান্ত্রিক প্রক্রিয়া...সবাই চায় ক্যামেরা ঘুরাতে, যেন এটা একটা রোলারকোস্টারের উপর স্থাপিত। জন ফোর্ডের মত স্বনামধন্য পরিচালক জানতেন কীভাবে এটা ব্যবহার করতে হয়। ফোর্ড কখনো ক্যামেরা নড়াতেন না, তিনি নড়াতেন মানুষকে।
১৯৫৪ সালের “হোয়াটস মাই লাইন” টেলিভিশন ধারাবাহিকে উইডমার্ক অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। পরের বছর তিনি “আই লাভ লুসি” ধারাবাহিকে স্ব-ভূমিকায় অভিনয় করেন।
১৯৭০-এর প্রথমদিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পল রুডবুশ-এর চরিত্রে “ভ্যানিশড” নামে একটি টেলিভিশন ছায়াছবিতে অভিনয়ের জন্য এমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। এছারা তিনি আরো কয়েকটি টেলিভিশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
উইডমার্ক চিত্রনাট্যকার জীন হেইযেলউডের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৪২ সালে এবং একসাথে ছিলেন ১৯৯৭ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত। তাঁদের একটি কন্যা সন্তান আছে, এন হীথ উইডমার্ক নামে। তিনি একজন অঙ্কন শিল্পী এবং লেখক। ১৯৯৯ সালে উইডমার্ক সুযান ব্ল্যানচার্ডের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট শহর গ্রীন সিটিতে একটি বিমানবন্দর আছে যার নাম উইডমার্ক এয়ারপোর্ট। এত ছোট শহরে বিমানবন্দর থাকার কথা নয়, কিন্তু সেই এলাকায় উইডমার্কের একটি ভেড়ার খামার ছিল এবং উইডমার্ক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য অর্থ সাহায্য দেন তাই এর নামও তার নামে রাখা হয়।
যদিও উইডমার্ক তার অভিনয় পেশার বেশিরভাগ সময় কাউবয়, পুলিশ, সৈন্য এবং গুন্ডার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বন্দুক অপছন্দ করতেন এবং কিছু আগ্নেয়াস্ত্র বিরোধী কর্মে অংশ নেন। তিনি ১৯৭৬ সালে বলেনঃ
আমি জানি আমার অভিনয় জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিংস্রতাই ছিল আমার অভিনয়ের মূল বিষয়, কিন্তু আমি হিংস্রতা ঘৃণা করি। আমি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের একজন গোঁড়া সমর্থক। আমি খুবই আশ্চর্যিত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীতে একমাত্র সভ্য দেশ যেখানে আজো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
উইডমার্ক ২০০১ সালে অবসর নেন। তারপর বহুদিন অসুস্থতার পর তিনি তার বাসস্থান রক্সবারি, কানেটিকাটে মৃত্যুবরণ করেন ২৪শে মার্চ ২০০৮ খৃষ্টাব্দে। তার বয়স হয়েছিল ৯৩। ২০০৯ সালে একাডেমি পুরস্কার অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মান জানানো হয় একটি স্মারক সম্মাননা দিয়ে। তাঁকে সমাহিত করা হয় রক্সবারি সেন্টার সমাধিক্ষেত্রে।