অধ্যাপক রিচার্ড মার্টিন ভিলস্টাটার এফআরএস(এফওআর) এইচএফআরএসই(১৩ই আগস্ট ১৮৭২ – ৩রা আগস্ট ১৯৪২) একজন জার্মান জৈব রসায়নবিদ যাকে উদ্ভিদ রঞ্জক এর গবেষণার(ক্লোরোফিল অন্তর্ভুক্ত) কারণে, ১৯১৫ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।[১] ভিলস্টাটার পেপার ক্রোমাটোগ্রাফি আবিষ্কার করেন।
ভিলস্টাটার কার্লসরুহে অঞ্চলে একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তিনি ম্যাক্সওয়েল(ম্যাক্স) ভিলস্টাটার, একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী, এবং তার স্ত্রী সোফি উলম্যানের পুত্র ছিলেন।
তিনি কার্লসরুহে জিমন্যাসিয়াম স্কুলে যান এবং যখন তার পরিবার নুরেমবার্গে চলে যায়, তিনি সেখানে টেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন। ১৮ বছর বয়সে তিনি বিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন এবং পরবর্তী পনের বছর সেখানে অবস্থান করেন। তিনি রসায়ন বিভাগে অধ্যয়নরত ছিলেন, প্রথমে আলফ্রেড আইনহর্নের ছাত্র হিসেবে - তিনি ১৮৯৪ সালে ডক্টরেট লাভ করেন - তারপর একজন ফ্যাকাল্টি সদস্য হিসেবে। তার পিএইচডি-র বিষয় ছিল কোকেইনের কাঠামোর উপর। ভিলস্টাটার অন্যান্য অ্যালকালয়েড নিয়ে তার গবেষণা অব্যাহত রাখেন এবং বেশ কয়েকটি সংশ্লেষণ করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি প্রভাষক এবং ১৯০২ সালে অসাধারণ অধ্যাপক(চেয়ার বিহীন অধ্যাপক) হিসেবে মনোনীত হন।
১৯০৫ সালে তিনি মিউনিখ ছেড়ে ইটিএইচ জুরিখের অধ্যাপক হন এবং সেখানে তিনি উদ্ভিদ রঞ্জক ক্লোরোফিল নিয়ে কাজ করেন। তিনি প্রথমে তার অভিজ্ঞতামূলক সূত্র নির্ধারণ করেন।
১৯১২ সালে তিনি বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন অধ্যাপক এবং কাইজার উইলহেল্ম ইনস্টিটিউট ফর কেমিস্ট্রি-র পরিচালক হন; সেখানে ফুল এবং ফলের রঙ গঠন অধ্যয়ন করেন। এখানেই ভিলস্টাটার দেখিয়েছেন যে, ক্লোরোফিল দুটি যৌগ, ক্লোরোফিল-এ এবং ক্লোরোফিল-বি এর মিশ্রণ। তিনি অন্যান্য বিজ্ঞানীদের কাছেই দাহলেম এলাকায় বাস করতেন।
১৯১৫ সালে তার বন্ধু ফ্রিৎজ হাবার তাকে বিষাক্ত গ্যাস উন্নয়নে যোগ দিতে বলেন। ভিলস্টাটার বিষ নিয়ে কাজ করবেন না কিন্তু সুরক্ষার জন্য কাজ করতে সম্মত হয়েছিলেন। তিনি এবং তার সহকর্মীরা একটি তিন স্তরের ফিল্টার তৈরি করেন যা শত্রুর সব গ্যাস শোষণ করতে পারে। ১৯১৭ সালের মধ্যে ত্রিশ মিলিয়ন উৎপাদিত হয় এবং ভিলস্টাটারকে আয়রন ক্রস দ্বিতীয় শ্রেণী পুরস্কৃত করা হয়।
১৯১৬ সালে তিনি তার পরামর্শদাতা বেয়ারের উত্তরসূরি হিসেবে মিউনিখে ফিরে আসেন। ১৯২০-এর দশকে ভিলস্টাটার এনজাইম বিক্রিয়া পদ্ধতি গবেষণা করেন এবং "এনজাইম রাসায়নিক পদার্থ, জীব নয়" তা প্রমাণ করার জন্য অনেক কিছুই করেছিলেন।
১৯২৪ সালে ভিলস্টাটারের কর্মজীবন "একটি বেদনাদায়ক পরিসমাপ্তি ঘটে যখন ক্রমবর্ধমান ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি ইঙ্গিত হিসেবে তিনি তার অবসরের ঘোষণা দেন।" তার নোবেল জীবনী অনুসারে:[৩] "ফ্যাকাল্টির আস্থা প্রকাশ, তার ছাত্র এবং মন্ত্রী ৫৩ বছর বয়স্ক এই বিজ্ঞানীকে তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তে নাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি মিউনিখে বাস করতেন. দেশে এবং বিদেশে চমকপ্রদ প্রস্তাব তিনি সমানভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।" তার একমাত্র গবেষণা ছিল সহকারীদের সাথে যারা তাদের ফলাফল তাঁকে টেলিফোন করে জানাতো। ১৯৩০-এর দশকের শুরুতে জেরুজালেম বা সুইজারল্যান্ডে চলে যাওয়ার আবেদন সত্ত্বেও ভিলস্টাটার ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত জার্মানি থেকে পালিয়ে যাননি।
১৯৩৯ সালে ভিলস্টাটার সুইজারল্যান্ডে অভিবাসিত হন। তিনি তার জীবনের শেষ তিন বছর লোকার্নোর কাছে মুরালটোতে তার আত্মজীবনী লিখে অতিবাহিত করেন। তিনি ১৯৪২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
ভিলস্টাটারের আত্মজীবনী, Aus meinem Leben, ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয়নি। এটি ১৯৬৫ সালে "ফ্রম মাই লাইফ" নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়।
১৯১১ সালে পলাতক আমেরিকান রসায়নবিদ মাইকেল হাইডেলবার্গার জুরিখের ভিলস্টাটারের সাথে এক বছরের জন্য কাজ করতে যান। ভিলস্টাটার তার সাথে ল্যাবরেটরি রসদ সরবরাহের খরচ ভাগাভাগি করে তার কিছুটা অপ্রতিরোধ্য আমেরিকান ছাত্রকে(হাইডেলবার্গারকে) সাহায্য করেন, যখন দামী উপাদান যেমনঃ সিলভার নাইট্রেট কিনতে হত, আর তার টাকা দেওয়ার পালা ছিল, তখন হাইডেলবার্গার সালফিউরিক এসিডের মত সস্তা উপাদান কিনতেন। "এর চেয়ে ভালো প্রশিক্ষণ তুমি করতে পারবে না," হাইডেলবার্গার ভিলস্টাটারের সাথে তার অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ করে বলেছেন। তারা আজীবন বন্ধু ছিলেন।
১৯০৩ সালে তিনি সোফি লেসারকে বিয়ে করেন, যিনি ১৯০৮ সালে মারা যান।[৪] তাদের দুটি সন্তান ছিল।
১৯৬৫ সালে, নুরেমবার্গের যে স্কুলে তিনি পড়ালেখা করেছিলেন, সেই স্কুলের নাম তার সম্মানার্থে ভিলস্টাটার-জিমন্যাসিয়াম নামকরণ করা হয়।[৫]