রিচার্ড মুলার | |
---|---|
জন্ম | ৬ জানুয়ারি ১৯৪৪ |
জাতীয়তা | আমেরিকান |
শিক্ষা | কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (ব্যাচেলর অব আর্টস) ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে (Ph.D.) |
পেশা | পদার্থবিজ্ঞানী |
রিচার্ড মুলার (জন্ম ৬ই জানুয়ারি, ১৯৪৪) একজন আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। তিনি লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির একজন উচ্চপদস্থ বিজ্ঞানী। সাম্প্রতিককালে, ২০১০ এ, মুলার এবং তার কন্যা এলিজাবেথ বার্কলে আর্থ (Berkeley Earth) নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এর লক্ষ্য আবহাওয়া বিজ্ঞান এবং এর কৌশলগত বিশ্লেষণের কাজ করা, বিশেষত বৈশ্বিক ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা রেকর্ড করা।
মুলার নিউইয়র্কের দক্ষিণ ব্রনক্স শহরে বেড়ে উঠেন। পড়াশোনা করেন পি এস ৬৫ (১৪১তম স্ট্রীটে), জুনিয়র হাই স্কুল ২২ (১৬১তম স্ট্রীটে), ব্রনক্স হাইস্কুল অব সায়েন্স সহ নিউইয়ুরকের পাবলিক স্কুলে। মুলার কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস এবং বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। মুলার তার পেশাজীবন শুরু করেন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ লুইস আলভারেজের অধীনে। তার সাথে তিনি কণা পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষণ এবং বাবল চেম্বারের কাজ করেন। শুরুর প্রাথমিক সময়ে তিনি ভর বর্ণালিবীক্ষণ ত্বরকযন্ত্র সহনির্মাণে সহায়তা করেন। তিনি মহাজগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডের অসদৃসশতার বেশ কিছু প্রাথমিক পরিমাপও করেন।
পরবর্তীকালে মুলার বিজ্ঞানের আরো বিভিন্ন শাখায় কাজ করেন, বিশেষত ভূবিজ্ঞানে। তিনি তার কাজে বরফ যুগকে ভালোভাবে বোঝার প্রচেষ্টা করেছেন— এর গতিবিধি, বিলুপ্তির ধরন এবং সময়ের সাথে বৈচিত্র্য, যেসব প্রক্রিয়া প্রভাব বিস্তারকারী ঘটনার সাথে সম্পর্কিত। তার একটি বিখ্যাত প্রস্তাবনা হল নেমেসিস হাইপোথিসিস। নেমেসিস হাইপোথিসিস বলে আমাদের সূর্যের একটি বামন তারা থাকতে পারে যা অনাবিষ্কৃত। উর্ট মেঘে ওটার অস্থিরতার দরুণ পরবর্তীতে সৌরজগতে ধুমকেতুর প্রবাহ প্রবেশ ব্যাখায় দিতে পারে ২৬ মিলিয়ন বছর পর্যায়বৃত্তকালের বিলুপ্তির ঘটনাসমূহের।
২০১১ এর মার্চে, তিনি ইউএস হাউস অব সায়েন্স স্পেস এন্ড টেকনোলজি কমিটির কাছে বৈশ্বিক উষ্ণতার নিশ্চিতকরণ প্রাথমিক ডাটা পেশ করেন। [১] ২৮শে জুলাই ২০১২, তিনি ঘোষণা করেন বৈশ্বিক উষনতার জন্যমূলত মানুষই দায়ী। "[২]
কার্ল প্যানিপেকারের সাথে,[৩] মুলার বার্কলে রিয়েল টাইম সুপারনোভা অনুসন্ধান শুরু করেন,[৪] যা বার্কলে স্বয়ংক্রিয় সুপারনোভা অনুসন্ধান কেন্দ্রে পরিণত হয়।[৫] সেটি পরবর্তীতে সুপারনোভা কসমোলজি প্রজেক্টে পরিণত হয়, যার মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয় মহাবিশ্বের প্রসারণের হার বাড়ছে। এজন্য মুলারের গ্র্যাজুয়েট ছাত্র সল পার্লমাটার ২০১১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে, মুলার জেসন উপদেষ্টা কমিটিতে যোগ দেন। এই গ্রুপটি দেশের প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিভাগের পরামর্শক হিসেবে সম্মিলিত করত। [৬]
তাকে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশনের ফেলো নির্বাচিত করা হয়। ১৯৭৮ এ, তিনি "জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞান, রেডিওআইসোটোপ ডেটিং, আলোকবিজ্ঞানসহ পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক এবং উদ্ভাবনী গবেষণার জন্য" ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন থেকে অ্যালান টি ওয়াটারম্যান পুরস্কার গ্রহণ করেন। মুলার বার্কলে আর্থ ভূ-তাপমাত্রা প্রজেক্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং বোর্ড সদস্য, যেটি ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার রেকর্ডের উপর একটি স্বাধীন বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে।
১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে, তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলে থেকে একটি পৃথক শিক্ষকতা পুরস্কার গ্রহণ করেন। [৭] তার "ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টদের জন্য পদার্থবিজ্ঞান" নামে লেকচার সিরিজে তিনি আধুনিক গুণগত পদার্থবিজ্ঞানের (কোনো জটিল গণিত ব্যবহার না করে) সংক্ষিপ্ত শিক্ষা দেন। সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হয়েছে ইউটিউবে। এই কোর্সটি যথেষ্ট গণ্য করা হয় বার্কলেতে। ডিসেম্বর ২০০৯ এ, মুলার আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন, তবে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে তিনি লেকচার দিয়ে থাকেন। ড. মুলার ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানে সুপারনোভা কসমোলজি প্রজেক্টের জন্য Breakthrough Prize গ্রহণ করেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে, তিনি ছিলেন এমআইটির প্রযুক্তি পর্যালোচনার মাসিক কলাম লেখক। আগস্ট ২০০৩ এর এক কলামে তিনি পলিগ্রাফ মেশিনে মিথ্যে ধরার ফাঁদ নিয়ে লেখা কলামে বলে, "পলিগ্রাফ পদ্ধতির যথাযথতা ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশ।"[৮] ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সস আবিষ্কার করে যে "খুবই ক্ষীণ আশা করা যেতে পারে পলিগ্রাফ পরীক্ষণ উচ্চ পরিশুদ্ধভাবে কাজ করবে।"[৯] অবশ্য এটা মুলারের কলামের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে না, যতক্ষণ না ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস ৮০-৯৫ শতাংশ যাচাইযোগ্যতাকে যথেষ্ট বেশি ধরে নেয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সুন এবং বালিউনাস বিতর্কের পর মুলার টেকনোলজি রিভিউতে ২০০৩ এর ১৭ ডিসেম্বর কলাম প্রকাশ করেন যে, দুর্বল গবেষণাপত্র অভূতপূর্ব কিছু নয়। সুন এবং বালিউনাস অস্বাভাবিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন তাদের বিশেষ মধ্যযুগীয় উষ্ণতম পর্বের জন্য। অপরপক্ষে ম্যান, ব্রাডলি এবং হিউজেস বিগত ১০০০ বছরের রেকর্ড পুনর্গঠন করেছিলেন। এই পুনর্গঠন হকিস্টিক গ্রাফ নামে পরিচিত। মুলার তার অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন পরবর্তী বিতর্কের বিষয়ে। ২০০৩ এর অক্টোবরে মুলার স্টিফেন ম্যাকইন্টায়ার এবং রস ম্যাককিট্রিকের Energy and Environment জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের উপর মূল্যায়ন দেন, ম্যান, ব্রাডলি এবং হিউজেসের ত্রুটি সংশোধন একটি শক্ত মধ্যযুগীয় উষ্ণ সময়ের কথা বলবে যা প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্থাপন করে এই গবেষণাপত্রটি। [১০]
২০০৪ অক্টোবরের এক টেকনোলজি রিভিউয়ের নিবন্ধে মুলার ম্যাকইন্টায়ার এবং ম্যাককিট্রিকের সপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ম্যান, ব্রাডলি এবং হিউজেসদের বিশ্লেষণীয় ত্রুটির (Principal Component Analysis- PCA) কথা বলেন।[১১]
তিনি বলেন "আপনারা যদি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন (যেমন আমি উদ্বিগ্ন) এবং আমি মনে করেন মানব-সৃষ্ট কার্বন ডাই অক্সাইড এতে দায় বহন করে (যেমন আমি করি), তাহলে আপনারা একমত হবেন যে আমরা হকি স্টিক ভেঙে ফেলার চেয়ে ভাল অবস্থায় আছি। ভুল তথ্য আসল ক্ষতি করে দিতে পারে, কেননা, এটি ভবিষ্যদ্বাণী ও পরিকল্পনাকে বিচ্যুত করে দেয়। "[১১] RealClimate ব্লগে একটি নিবন্ধে গ্রাফের উপর বিভিন্ন অতিকথনের প্রেক্ষাপটে ম্যান মুলারের নিবন্ধের উল্লেখ করেন যা ম্যাকইন্টায়ার এবং ম্যাককিট্রিকের দাবীকে সমর্থন করে। [১২] এমআইটি জার্নালে মুলারের অভিমত নিবন্ধ এটা ছড়াতে সাহায্য করে যে হকি স্টিক গ্রাফ ছিল একটি হাতে গড়া পরিসংখ্যান, অর্থাৎ সেটিতে তথ্যের এপাশ ওপাশ করা হয়েছে, কিন্তু কিছু পিয়ার রিভিউ করা গবেষণা বলছে পিসিএ পদ্ধতির ঐ গ্রাফের উপর প্রভাব ছিল না বললেই চলে। [১৩][১৪] ২০০৬ সালের মধ্যে একটি সাধারণ স্বীকৃতি দাঁড়ায় যার উপসঙ্গহার বলে ঐ গ্রাফ অনুযায়ী সাম্প্রতিককালের উষ্ণায়ন গত ১০০০ বছরের মধ্যে ছিল অভূতপূর্ব। [১৫]
অক্টোবর ২০১১ তে, দ্যা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে বার্কলে আর্থ ভূ-তাপমাত্রা প্রজেক্টের সাথে তার কাজের উদ্বেগ প্রকাশ করেন:
যখন আমরা আমাদের গবেষণা শুরু করি, আমরা ভেবেছিলাম সন্দেহবাদীরা আইনসঙ্গত সমস্যা উত্থাপন করেছে এবং আমরা আমরা জানতাম না আমরা কী খুঁজে পাব। আমাদের ফলাফল পূর্বে কাজ করা গ্রুপের সাথে কাছাকাছি মিলে গেল। আমরা মনে করলাম ঐ পূর্বতন দলগুলো সন্দেহবাদীদের সন্তুষ্ট করায় অক্ষমতা থাকলেও তাদের কাজে খুবই সতর্ক ছিল। তারা তাদের তথ্য সংগ্রহে পক্ষপাত এড়াতে পেরেছিল এবং সুসমন্বয় ও অন্যান্য সংশোধন সাধন করেছিল।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাস্তব। সম্ভবত,আমাদের ফল বৈশ্বিক উষ্ণতা বিতর্কের হ্রাস ঘটাতে সাহায্য করবে। কতটুকু উষ্ণায়ন মানুষের কারণে ঘটেছে এবং এর ফলে কী কী ঘটতে পারে? আমরা সেতড়া কোনো স্বাধীণ মূল্যায়ন করিনি। [১৬]
২৮শে জুলাই ২০১২ তে তিনি বলেন, "বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাস্তব... মানুষ সমগ্রভাবে এর জন্য দায়ী।"[২]
ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন এর ২০১২ সংখ্যায় শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদের তালিকায় মুলারকে স্থান দেয়।[১৭]
নভেম্বর ২০১৩তে, মুলার নিউওইয়র্ক টাইমসে একটি মত প্রকাশ করেন যে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ১৯৫০ এর দশক থেকে শক্তিশালী এবং জোরালো টর্নেডো সংঘটনের হার হ্রাস পেয়েছে। পল মার্কওস্কি, হ্যারল্ড ই ব্রুকস প্রমুখ আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে বলেন, মুলার এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদ্ধতিগত ভুল করেছেন এবং দীর্ঘকাল ধরে প্রতিষ্ঠিত গুরুতর ঝড় সম্পর্কিত আবহাওয়াবিজ্ঞান সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তারা মত দেন টর্নেডোর স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হ্রাস ঘটেনি এবং শীঘ্র বৈশ্বিক পরিবর্তন ঘটে যাওয়ার সাথে টর্নেডো কার্যক্রমের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিশেষত, আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটেছে। [১৮]
সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজের একটি রিপোর্টে মুলার এবং তার কন্যা এলিজাবেথ মুলার প্রকাশ করেন প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কয়লার কারণে নিঃসৃত ক্ষতিকর বায়ুদূষণ হ্রাস করে, যা কিনা হাইড্রোলিক চিড়ের(fracturing) পরিবেশীয় খরচকে অতিক্রম করে। হাইড্রোলিক চিড় পদ্ধতি হল ভূ-অভ্যন্তরস্থ কঠিন খনিজে তরল প্রবেশ করিয়ে প্রবল চাপ দেয়ার মাধ্যমে আহরণের জন্য খনিজে ফাটল সৃষ্টি করা। তাদের মতে বায়ু দূষণ, মূলত কয়লার দহন বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৩০ লক্ষ লোকের মৃত্যুর কারণ। তারা আরো বলেন, "পরিবেশবিদরা যারা প্রাকৃতিক গ্যাস এবং শিলাস্তরে হাইড্রোলিক চিড়ের বিরোধিতা করছেন তারা দুঃখজনক ভুল করছেন।"[১৯]
মুলার মুলার এন্ড এসোসিয়েটস এর প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান বিজ্ঞানী। এই গ্রুপটি শক্তি সম্পর্কিত খাতে আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা গ্রুপ হিসেবে কাজ করে। [২০]
মুলার সলিড কর্পোরেশনের (SoliDDD Corp.) প্রধান প্রযুক্তি অফিসার, যারা উন্নত ত্রিমাত্রিক ছবি প্রকাশে আধুনিক আলোকীয় ডিজাইন পদ্ধতির সাথে পদার্থবিজ্ঞান এবং আলোকবিজ্ঞানের মৌলিক সমীকরণ ব্যবহার করে।[২১]