রিজাইনা কানাডার সাসক্যাচুয়ান প্রদেশের রাজধানী। এটি কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং সাসক্যাচুয়ান প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ২০১৬ সালের কানাডীয় আদমশুমারি অনুযায়ী রিজাইনা শহরের জনসংখ্যা ২,১৫,১০৬ ও এর মেট্রোপলিটন এলাকার জনসংখ্যা ২,৩৬,৪৮১।[১]
রিজাইনা ইতোপূর্বে উত্তর-পশ্চিম ভূখণ্ডের রাজধানী ছিল, পরবর্তীতে যা ভাগ হয়ে আলবার্টা ও সাসক্যাচুয়ান প্রদেশ সৃষ্টি করে। শুরুতে শহরটির নাম ছিল ওয়াসকানা (ক্রি ভাষায় মহিষের হাড়)। ১৮৮২ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার সম্মানে এর নাম দেওয়া হয় রিজাইনা (লাতিন ভাষায় যার অর্থ রানি)। কানাডার তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মারকুয়েস অব লোমের সহধর্মিণী ও ভিক্টোরিয়ার কন্যা রাজকুমারী লুইস ওয়াসকানার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। [২]
১৯০৬ সালে রিজাইনা সাসক্যাচুয়ান প্রদেশের রাজধানী হয়। [২]"ওয়াস্কানা সেন্টার" শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। এখানে প্রাদেশিক আইনসভা ভবন, রিজাইনা ও ফার্স্ট নেশনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, রাজকীয় সাসক্যাচুয়ান জাদুঘর, রিজাইনা সংরক্ষণাগার ও সাসক্যাচুয়ান বিজ্ঞান কেন্দ্র, ম্যাকেঞ্জি চিত্রশালা ও সাসক্যাচুয়ান শিল্প কেন্দ্র অবস্থিত।
১৯১২ সালে রিজাইনা ঘূর্ণিঝড়ে শহরটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এলাকা ধ্বংস হয়।[৩] ১৯৩০ সালের রিজাইনা দাঙ্গা,খরা ও মহামন্দা শহরটির কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।[৪] ১৯৩৩ সালে এ শহরেই বামপন্থী দল কো-অপারেটিভ কমনওয়েলথ ফোর্স(বর্তমান নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি) প্রতিষ্ঠিত হয়। [৫]
রিজাইনার জলবায়ু আর্দ্র মহাদেশীয় ধরনের। এখানে গ্রীষ্মকাল উষ্ণ ও শীতকাল ঠাণ্ডা এবং শুষ্ক। বছরে গড়ে ৩৮৯.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। জুন থেকে আগস্ট মাসে বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। জুন হলো রিজাইনার সবচেয়ে আর্দ্র মাস; এসময় গড়ে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৮৮৫ সালের ১ জানুয়ারি (-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৯৩৭ সালের ৫ জুলাই (৪৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) [৬]।
২০১১ সালের কানাডীয় আদমশুমারি অনুযায়ী রিজাইনার জনসংখ্যা ১,৯৩,১০০। [৭] ২০০৬-২০১১, এই পাঁচ বছরে রিজাইনার জনসংখ্যা ৭.৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,৩২৭.৬ জন।
রিজাইনার অধিকাংশ অধিবাসীই ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন (৯৮.১%) ও অল্প কয়েকজন ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলেন (১.৩%)।
২০১১ সালের এক নিরীক্ষা অনুযায়ী, রিজাইনার ৯৪% বাসিন্দা কানাডীয় নাগরিক, বাকিরা বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অভিবাসী।
রিজাইনার ২৭.১% বাসিন্দা কোনো ধর্মের অনুসারী নন। যারা কোনো ধর্মমত অনুসরণ করেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন খ্রিস্টান(৬৭.৯%),মুসলিম(১.৯%),হিন্দু(০.৮%), শিখ(০.৫%)ও ইহুদি(০.২%)।
শিক্ষার হার বিবেচনায় পঁচিশ থেকে চৌষট্টি বছর বয়স্ক রিজাইনা অধিবাসীদের শ্রেণিবিন্যাস হলো: ৬১.৬% এর উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা, ২৭.৬% এর মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে ডিপ্লোমা ও ১০.৮% এর প্রাথমিক শিক্ষা রয়েছে। রিজাইনার বেকারত্বের হার ৫%, যা কানাডার জাতীয় বেকারত্বের হার ৭.৮% অপেক্ষা কম। রিজাইনার আবাসন ইউনিটগুলোর গড় মূল্য ২,৯৯,৭৪৮ ডলার।
রিজাইনা শহরের প্রধান দৈনিক পত্রিকা "দি লিডার পোস্ট"। এটি ১৮৮৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। বর্তমানে পোস্টমিডিয়া নেটওয়ার্ক এর স্বত্বাধিকারী। [৮]
১৯৯৩ সাল থেকে এখানে বিকল্পধারার পত্রিকা "প্রেইরি ডগ" প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়াও ফরাসিভাষীদের জন্য "ল্যু ভিভ" নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
রিজাইনা শহরের বেশ কিছু ভ্রাতৃশহর রয়েছে। এগুলো হলো বুখারেস্ট (রোমানিয়ার রাজধানী),[৯], জিনান (চীন)[১০] এবং ফুজিওকা (জাপান)[১১]