রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (সংক্ষেপে আরটিজিএস) (ইংরেজি: Real-time gross settlement), হল একটি বিশেষায়িত তহবিল স্থানান্তর ব্যবস্থা যার মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিক বা প্রকৃত সময়ে তহবিল স্থানান্তর করা যায়। এটি আরটিজিএস নামেই বহুল পরিচিত।[১] 'রিয়েল টাইম' বা প্রকৃত সময় বলতে বুঝায় এখানে লেনদেন সম্পূর্ণ হতে কোন নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হয় না বরং লেনদেন প্রক্রিয়া করার সাথে সাথেই লেনদেন সম্পূর্ণ হয়। আর 'গ্রস সেটেলমেন্ট' অর্থ লেনদেনটি অন্য কোনও লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত নয় এবং একবার লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে সেটাই চূড়ান্ত এবং প্রত্যাহারযোগ্য নয়।
১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরটিজিএস পদ্ধতি বাস্তবায়ন করেছিল, যেখানে ২০০৫ সালের শেষ নাগাদ ৯০টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করে। সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারাল রিজার্ভ ওয়্যার নেটওয়ার্কে আরটিজিএস পদ্ধতি চালু হয়।[২] এটি টেলিগ্রাফের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকগুলির মধ্যে বৈদ্যুতিকভাবে তহবিল স্থানান্তর পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স ১৯৮৪ সালে স্বাধীনভাবে আরটিজিএস পদ্ধতি তৈরি করে। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে অন্যান্য কয়েকটি উন্নত দেশ এই পদ্ধতি চালু করেছে। যদিও, দেশ ভেদে এই পদ্ধতির প্রযুক্তিগত ও কাজের ধরনের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে আরটিজিএস ব্যবস্থা চালু আছে।
আরটিজিএস পদ্ধতি সাধারণত একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয়, কারণ এটি একটি দেশের অর্থনীতির খুব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসাবে বিবেচিত। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে, একটি কার্যকরী জাতীয় পেমেন্ট সিস্টেম পণ্য ও সেবা বিনিময় ব্যয় হ্রাস করে এবং এটি আন্তঃব্যাংক, অর্থ এবং মূলধন বাজারের কাজকর্মের জন্য অপরিহার্য।[৩]
আরটিজিএস পদ্ধতিতে অর্থের কোনও ফিজিক্যাল এক্সচেঙ্গে বা প্রাকৃত বিনিময় হয় না বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংক লেনদেনকারী ব্যাংকসমুহের হিসাব সমন্নয় করে। যেমন:- 'ক ব্যাংক' আরটিজিএস পদ্ধতি ব্যবহার করে 'খ ব্যাংকে' ৫ লক্ষ টাকা স্থানান্তর করল। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক 'ক ব্যাংকের' হিসাব থেকে ৫ লক্ষ টাকা ডেবিট বা বিয়োগ করে 'খ ব্যাংকের' হিসাব ক্রেডিট বা যোগ করে দেয়। আবার যখন 'খ ব্যাংক' এই পদ্ধতি ব্যবহার করে 'ক ব্যাংকে' টাকা স্থানান্তর করবে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক 'খ ব্যাংকের' হিসাব ডেবিট বা বিয়োগ করে 'ক ব্যাংকের' হিসাব ক্রেডিট বা যোগ করে দিবে। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রমাগত উভয় ব্যাংকের হিসাব সমন্বয় করে থাকে। অর্থাৎ, এই পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে থাকা অন্যান্য ব্যাংকসমূহের হিসাবগুলি নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রস ভিত্তিতে সমন্বিত হতে থাকে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি হবে বৈদ্যুতিকভাবে। ফলে এই পদ্ধতিতে প্রাকৃত অর্থের বিনিময় প্রয়োজন হয় না। আরটিজিএস পদ্ধতিতে ছোট-বড় সব ধরনের তহবিল স্থানান্তরণ করা যায়। তবে দেশ ভেদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লেনদেনের একটা নিম্ন সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারে। এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে লেনদেনের ঝুঁকি হ্রাস করা বিশেষ করে বড় অঙ্কের তহবিল স্থানান্তরের ঝুঁকি হ্রাস করা।
বিভিন্ন দেশের আর্থিক অবকাঠামোর মূল উপাদান হিসাবে পেমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়নকল্পে বিশ্বব্যাংক বিশেষ মনোযোগ দিয়ে আসছে এবং ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক দেশকে আর্থিক অবকাঠামোর উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করেছে।[৪] বেশিরভাগ আরটিজিএস সিস্টেমকে নিরাপদ করতে সর্বোত্তম ডিজাইন এবং আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হয়েছে।
২০১০ সালে বিশ্বব্যাংক বিশ্বব্যাপী পেমেন্ট সিস্টেম সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যেখানে আরটিজিএস পদ্ধতিতে ব্যবহার করে যেসব দেশ বড় অঙ্কের লেনদেন নিষ্পত্তি করে সেগুলর উল্লেখ করা হয়েছে।[৫]