রুকাইয়াহ বিনতে মুহাম্মাদ | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ৬০১ সিই |
মৃত্যু | মার্চ, ৬২৪ (২৩ বছর বয়সী) |
সমাধি | আল-বাকী |
দাম্পত্য সঙ্গী | উসমান ইবন আফ্ফান |
সন্তান | আবদুল্লাহ ইবনে উসমান |
পিতা-মাতা |
|
রুকাইয়াহ বিনতে মুহাম্মাদ ﷺ (আরবি: رقية بنت النبي محمد) ছিলেন মুহাম্মদ ﷺ এবং খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদের কন্যা। তিনি প্রথমে উতবাহ ইবনে আবু লাহাবকে বিয়ে করেন কিন্তু তিনি ইসলামে রূপান্তরের পরে তালাকপ্রাপ্ত হন, এরপর তিনি উসমান ইবনে আফফানের এর সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
মুহাম্মাদের নবুওয়াত লাভের ৭ বছর পূর্বে মক্কায় খাদিজার গর্ভে মেঝো মেয়ে রুকাইয়া জন্মগ্রহণ করেন।[১] যুবাইর, মুসআব ও জুরজানির ধারণা মতে, রুকাইয়া মুহাম্মাদের ছোট মেয়ে। তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদগণ বলেছেন, জয়নাব বড়, আর রুকাইয়া মেঝো মেয়ে। ইবন হিশামের মতে, রুকাইয়া মেয়েদের মধ্যে বড়।[২]
রুকাইয়াহ্ ইসলামের প্রারম্ভের আগে জন্মগ্রহণ করেন।[১] আবু লাহাব মুহাম্মাদের তটস্থ হন এবং তার পুত্রদের তার কন্যাদের সাথে বিবাহের অভিপ্রায় প্রকাশ করেন, রুকাইয়াহকে উতবাহ ইবনে আবু লাহাবের সাথে এবং উম্মে কুলসুমকে উথাবাহ ইবনে আবু লাহাবের সাথে বিয়ে দেন। পরবর্তীতে মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করলে, আবু লাহাব প্রতিকূল অবস্থান নেন এবং সক্রিয়ভাবে ইসলামের বিরোধিতা করা শুরু করেন। এবং নিজ ছেলেদের মুহাম্মাদের মেয়েদের থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান।
রুকাইয়াহ্ বিবাহবিচ্ছেদের পর, উসমানের সাথে রুকাইয়ার ২য় বিবাহ হয়। তাদের আব্দুল্লাহ ইবনে উসমান নামে একটি পুত্র সন্তান ছিল, এবং খুব ছোট বেলায় এই সন্তানটি মারা যায়।
মুহাম্মাদের নবুয়ত লাভের পূর্বে মক্কার আবু লাহাবের পুত্র ‘উতবাহ ইবনে আবু লাহাবের সাথে রুকাইয়ার প্রথম বিয়ে হয়।[৩] মুহাম্মাদ যখন প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে লাগলেন, তখন কুরাইশরা বিভিন্নভাবে মুহাম্মাদের উপর চাপ প্রয়োগ করতে লাগলো, এরই ধারাবাহিকতায় আবু লাহাবকে চাপদিয়ে তার পুত্রদের নিকট হতে মুহাম্মাদের কন্যাদের ছাড়িয়ে দিলেন। পিতা-মাতার চাপ[৪] ও মক্কার কুরাইশদের প্রলোভনে পরে উতবাহ রুকাইয়াকে তালাক দিয়েছিলো।[৫] উল্লেখ্য যে, ‘উতবার সাথে রুকাইয়ার কেবল বিবাহের চুক্তি (আকদ) হয়েছিল। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাসের পূর্বেই তালাকের এ ঘটনাটি ঘটে।[৬]
উসমানের খালা 'সায়াদা" তাকে মূর্তিপূজা ছেড়ে ইসলাম গ্রহণের পরামর্শ দেন। এই পরামর্শ পেয়ে উসমান তার বন্ধু আবু বকরের সাথে পরামর্শ করে। পরে আবু বকরের মাধ্যমে মুহাম্মাদের নিকট ইসলাম গ্রহণ করে।[৭] এরপরে উসমানের সাথে রুকাইয়ার বিবাহ সম্পন্ন হয়। এদিকে রুকাইয়া তার মা খাদিজা, বড় বোন জয়নবের সাথে ইসলাম গ্রহণ করে।[৮] এবং অনন্য মহিলাদের সাথে বাইয়াত গ্রহণ করে।[৯]
রুকাইয়া খুবই রূপ-লাবণ্যের অধিকারিণী ছিলেন।[১০][১১] রুকাইয়া ছিলেন স্বামীর প্রতি যত্নবান একজন মহিলা,[১২] নিজের স্বামীর সংসারে সে ছিলো আন্তরিক।[১৩]
তার বিয়ে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। কিছু সূত্রে তিনি প্রথম উতবাহ ইবনে আবু লাহাবকে বিয়ে করেছিলেন বলে জ্ঞাপিত আছে।[১৪]
নবুওয়াতের ৫ম বছরে রুকাইয়া মুহাম্মাদের অনুমতিক্রমে স্বামী উসমানের সাথে হাবশায় হিজরত করেন।[১৫] কাতাদা এর বর্ণনামতে, মুহাম্মাদ বলেছেন, ‘নিশ্চয় তারা দুইজন( উসমান ও রুকাইয়া) ইবরাহীম ও লুতের পরে সপরিবারে ইসলামের প্রথম হিজরাতকারী।[১৬][১৭][১৮] কিছুকাল হাবশায় অবস্থানের পর তারা একটি ভুল তথ্যের উপর ভিক্তি করে আবার মক্কায় ফিরে আসেন। মক্কার কাফিরদের অত্যাচারের মাত্রা তখন আরো বেড়ে গিয়েছিলো আবার হাবশায় ফিরে গেলেন।[১৯] তারা দ্বিতীয়বার বেশ কিছুদিন হাবশায় অবস্থান করার পর মক্কায় ফিরে আসেন এবং কিছুদিন মক্কায় থেকে আবার স্থায়িভাবে মদিনায় হিজরাত করেন।[৯]
রুকাইয়ার গর্ভে শুধু উসমানের একটি পুত্র সন্তান আবদুল্লাহ জন্মলাভ করেন। দ্বিতীয়বার হাবশায় অবস্থানকালে এ পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এজন্য আবদুল্লাহর নামেই হযরত উসমানের উপনাম হয় "আবু আবদুল্লাহ"। এর পূর্বে হাবশায় প্রথম হিজরাতের সময় তার গর্ভের একটি সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।[২০][২১] তবে কাতাদা ইবনে নোমান বলেন, উসমানের ঔরসে রুকাইয়ার কোন সন্তান হয়নি। তবে সকলের ঐকমত্যে, আব্দুল্লাহর পরে রুকাইয়ার আর কোন সন্তান হয়নি।[২২]
আবদুল্লাহর বয়স যখন ৬ বছর তখন হঠাৎ একদিন একটি মোরগ তার একটি চোখে ঠোকর দেয় এবং তাতে তার মুখমণ্ডল ফুলে গোটা শরীরে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই দুর্ঘটনায় ৪র্থ হিজরিতে জামাদিউল আওয়াল মাসে সে মারা যায়।[২৩] মুহাম্মাদ তার জানাযার নামাজ পড়ান এবং উসমান কবরে নেমে তার দাফন কাজ সম্পন্ন করেন।
মদিনা পৌঁছার পর রুকাইয়া ২য় হিজরিতে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে যান। তখন মুহাম্মাদ বদর যু্দ্ধের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি উসমানকে তাঁর রুগ্ন স্ত্রীর সেবা-শুশ্রুষার জন্য মদিনায় রেখে নিজে বদরে চলে যান। হিজরতের ১ বছর ৭ মাস পরে পবিত্র রমজান মাসে রুকাইয়া ইনতিকাল করেন।[২৪] উসামা ইবনে যায়দ বলেন, আমরা যখন মুহাম্মাদের মেয়েকে কবর দিয়ে মাটি সমান করছিলাম ঠিক তখন আমার পিতা যায়দ ইবন হারিসা বদরের বিজয়ের সুসংবাদ নিয়ে আসলেন।[১৩][২৫][২৬] তবে কতক বর্ণনা মতে, মুহাম্মাদ বদরে থেকে ফিরে রুকাইয়ার কবরের নিকট গিয়েছিলো।[২৭][২৮]
অসুস্থ স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য হযরত উসমান বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তবে মুহাম্মাদ তাকে বদরের গণীমতের অংশ দান করেন।[২৯][৩০] উল্লেখ্য, উসমান মুহাম্মাদের দ্বিতীয় মেয়ে রুকাইয়া মারা যাওয়ার পর তৃতীয় মেয়ে উম্মে কুলসুমকে বিবাহ করেন।