‘কুরস্ক’-এর মতো দেখতে একটি অস্কার-২ শ্রেণীর ডুবোজাহাজ
| |
ইতিহাস | |
---|---|
রাশিয়া | |
নাম: | কে-১৪১ কুরস্ক |
নামকরণ: | রাশিয়ান শহর কুরস্ক-এর নামানুসারে |
নির্মাণের সময়: | ১৯৯২ |
অভিষেক: | ১৯৯৪ |
কমিশন লাভ: | ডিসেম্বর, ১৯৯৪ |
নিমজ্জনের সময়: | ২০০০ |
নিয়তি: | ২০০০ সালের ১২ আগস্ট নিজের টর্পেডো বিস্ফোরণের কারণে ব্যারেন্টস সাগরের ১০০ মিটার গভীরে ১১৮ জন আরোহীসহ নিমজ্জিত হয়। |
অবস্থা: | সমুদ্রগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয়েছে, শিপইয়ার্ডে নিয়ে এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। |
সাধারণ বৈশিষ্ট্য | |
প্রকার ও শ্রেণী: | অস্কার-২ শ্রেণীর ডুবোজাহাজ |
ওজন: | ১৩.৪০০ টন, ১৬.৪০০ টন |
দৈর্ঘ্য: | ১৫৪.০ মিটার |
প্রস্থ: | ১৮.২ মিটার |
ড্রাফট: | ৯.০ মিটার |
প্রচালনশক্তি: | ২টি নিউক্লীয় চুল্লী ওকে-৬৫০বি, ২টি বাষ্পীয় টারবাইন, ২/৭-ব্লেডের প্রপেলার |
গতিবেগ: | ৩২ নট (৫৯ কি.মি./ঘণ্টা) সমুদ্রগভীরে, ১৬ নট (৩০ কি.মি./ঘণ্টা) ভাসমান অবস্থায় |
পরীক্ষিত গভীরতা: | ৩০০ থেকে ১০০০ মিটার (বিভিন্ন অনুমানের ভিত্তিতে) |
লোকবল: | ৪৪ জন অফিসার, ৬৮ জন তালিকাভুক্ত |
রণসজ্জা: | ২৪ x এসএস-এন-১৯/পি-৭০০ গ্রেইন্ট, ৪ x ৫৩৩ মি.মি. এবং ২ x ৬৫০ মি.মি. ধনুকাকৃতি টর্পেডো টিউব |
টীকা: | মাতৃ বন্দর: ভিদায়েভো, রাশিয়া |
কে-১৪১ ‘কুরস্ক’ (ইংরেজি: K-141 ‘Kursk’) হচ্ছে রাশিয়ান নৌবাহিনীর একটি অস্কার-২ শ্রেণীর পারমাণবিক ক্রুজ মিসাইল ডুবোজাহাজ (Submarine)। ১২ আগস্ট, ২০০০ সালে এটি এর সকল আরোহীসহ ব্যারেন্টস সাগরে ডুবে যায়। রাশিয়ান ভাষায় কুরস্কের পূর্ণ নাম Атомная подводная лодка, যার বাংলা অনুবাদ হচ্ছে নিউক্লীয় শক্তিচালিত সাবমেরিন ‘কুরস্ক’ (Курск [АПЛ ‘Курск’])। এটির নামকরণ করা হয়েছিলো রাশিয়ার শহর কুরস্কের নাম অনুসারে, এবং এই শহরেই ১৯৪৩ সালে সামরিক ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ট্যাংক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো, যা ব্যাটল অফ কুরস্ক বা কুরস্কের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এটি ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার নির্মিত নৌহবহরের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, যা ১৯৯৪ সালে ডিসেম্বরে রাশিয়ান নৌবাহিনীর নর্দান ফ্লিট বা উত্তর নৌবহরে কমিশন লাভ করে।
মূল ঘটনা:[১] ১২ আগস্ট,২০০০ সাল, সকাল রাশিইয়ার নৌ-বহরের নিজেদের মহরা শুরু হয়। এই মহরায় নৌ-বহরের প্রতিপক্ষ ছিল রাশিয়ার একটি সাবমেরিন যার নাম ছিল কুরস্ক কে-১৪১। রাশিয়ান বহরের অন্যতম রনতরী “পিটার দি গ্রেট” এর বিপক্ষেই প্রথমে মহড়া শুরু হয়। ৫ বছর ধরে সাবমেরিনটির দায়িত্বে, ল্যাফটেন্যান্ট ক্যপ্টেন দিমিত্রি কালাশ্নিকভ।
মহড়া শুরুর কিছুক্ষন পরেই ক্যপ্টেন লিয়াকশন সাবমেরিনের গতি কমিয়ে ঘণ্টায় ৮ নট করার নির্দেশ দেন। এরপর তিনি ৯০০০ পাউন্ডের ৬৫-৭৬ টর্পেডো (যা “ফ্যাটগার্ল” নামে পরিচিত)নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুতির আদেশ দেন। এই টর্পেডোগুলো কেরোসিন তেল দ্বারা প্রোপেলড হয়। কিন্তু এটি সমুদ্রের তলদেশ থেকে নিরাপদে নিক্ষেপের জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। আর এই শক্তি যোগানের জন্য টর্পেডোগুলোতে ব্যবহার করা হয় “হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড”। এটি খুবই সাধারণ একটি যৌগ। কিন্ত উপযুক্ত পরিবেশে কপার অথবা ব্রাস এর সংস্পর্শে এলে এটি অতি মাত্রায় ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে।
টর্পেডো ছোড়ার আগ-মুহূর্তে হটাৎ ব্যাপক শব্দে টর্পেডো রুমে একটি টর্পেডো বিস্ফোরিত হয়। সেখানকার তাপমাত্রা মুহুর্তেই ৫০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌছায়। এর কিছুক্ষন পরেই একসাথে আরো চারটি টর্পেডোর বিস্ফোরন হয়। শক্তিশালী সাবমেরিনটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে ব্যারেন্টস সাগরের ৩৩০ ফুট নিচে সমুদ্র পৃষ্টতলে পতিত হয়। এত বড় বিস্ফোরনেও সাবমেরিনের নিউক্লিয়ার রিএক্টরের কোন ক্ষতি ই হয়নি। সাবমেরিনের ১১৮ জনের মধ্যে ২৩ জন বাদে সকলেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কুরস্ক অনেকগুলো কম্পার্টমেন্টে বিভক্ত ছিল। এর মধ্যে ৪ টি কম্পার্টমেন্ট কোন ক্ষতির সম্মুখিন হয়নি।
নিয়ক্লিয়ার টার্বাইনটি তখনো সচল ছিল, যদিও কুরস্কের পক্ষে কোনভাবেই আগানো সম্ভব ছিল না, টার্বাইনটি অ্যাকটিভ থাকায় ধীরে ধীরে পানি ঢুকতে শুরু করে। তাছাড়া সেই মুহুর্তে সমুদ্রের ৩৩০ ফুট নিচে থাকায় কম্পার্টমেন্টগুলোতে পানির ব্যাপক চাপ অনুভুত হতে থাকে। এমন কঠিন মুহূর্তে ল্যাফটেন্যান্ট কালাশ্নিকভ সবাইকে উদ্ধারের জন্য অপেক্ষার নির্দেশ দেন। এছাড়া তাদের জন্য আর কিছু করার ও ছিল না। কেননা, তারা যদি ৩৩০ ফুট নিচ থেকে অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করতেও চায় তবুও পানির চাপে হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হতে হবে। দুর্ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পর মূল উদ্ধার অভিযান শুরু হয় । সমুদ্রেও ঝড় বইতে শুরু করে যার ফলে উদ্ধারকার্য সাময়িক বন্ধ রাখতে হয় । সাবমেরিনটি ছিল উচ্চতায় চারতলা সমান। ফলে কম্পার্ট্মেন্টগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাবমেরিনের বিভিন্ন অংশে আগুন ধরে যাওয়ায় অতিদ্রুত অক্সিজেন কমে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার অষ্টম দিন “নরম্যান্ড পাইয়োনিয়ার” রেসকিউ-সাবমেরিন নিয়ে উদ্ধারকারীরা কুরস্কের মূল অংশে পৌছায়। এর পর উদ্ধারের জন্য ভেতরে আটকে থাকা স্ক্রুদের জানান দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তখন অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে।
১৪ মাস পর ৭ই অক্টবর, ২০০১ সালে হল্যান্ডের উদ্ধারযান দিয়ে কুরস্ক কে ভূমিতে তুলে আনা হয়।
https://www.reviewtalkiez.com/%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95-%E0%A6%A1%E0%A7%81%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8/[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)