রূপকুণ্ড | |
---|---|
| |
অবস্থান | চামোলি, উত্তরাখণ্ড |
স্থানাঙ্ক | ৩০°১৫′৪৪″ উত্তর ৭৯°৪৩′৫৪″ পূর্ব / ৩০.২৬২২২° উত্তর ৭৯.৭৩১৬৭° পূর্ব |
গড় গভীরতা | ৩ মিটার (৯.৮ ফু) |
পৃষ্ঠতলীয় উচ্চতা | ৪,৫৩৬ মিটার (১৪,৮৮২ ফু) |
রূপকুন্ড (স্থানীয়ভাবে রহস্যময় হ্রদ বা কঙ্কাল হ্রদ নামে পরিচিত) [১] ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের একটি উঁচু হিমবাহের হ্রদ । এটি ত্রিশূলের পর্বতপ্রাচীরে অবস্থিত। হিমালয়ে অবস্থিত এই হ্রদের চারপাশের এলাকা জনবসতিহীন। এটি প্রায় ৫,০২০ মিটার(১৬,৪৭০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত, [১] এবং শিলা-বিস্তৃত হিমবাহ ও তুষার-ঢাকা পর্বত দ্বারা বেষ্টিত। রূপকুন্ড একটি জনপ্রিয় ট্রেকিং গন্তব্য। [২] হ্রদের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়, তবে এর ব্যাস কদাচিৎ ৪০ মিটারের বেশি (১,০০০ থেকে ১,৫০০ বর্গ মিটার এলাকা) হয় এবং শীতকালে হিমপূর্ণ থাকে। [৩]
প্রায় তিন মিটার গভীর রূপকুন্ড হ্রদের ধারে প্রাপ্ত শত শত প্রাচীন মানব কঙ্কালের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। [৪] তুষার গলে গেলে মানুষের কঙ্কালের অবশেষ হ্রদের নীচে দৃশ্যমান হয়। [৫] প্রাথমিক তদন্তের ফলে কেউ কেউ বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে, কঙ্কালগুল একটি আধা-কাল্পনিক ঘটনার অবশেষ ছিল, যখন ৯ম শতাব্দীতে এক আকস্মিক ও তীব্র শিলাবৃষ্টিতে কোন একক গোষ্ঠী নিহত হয়েছিল। [৬] তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে দেহাস্থিগুলি তিনটি পৃথক গোষ্ঠীর অন্তর্গত। প্রায় ৮ম ও ১৮ শতাব্দীর ভিন্ন কোনো সময়ে তারা মারা গিয়েছিলেন। [৭] মানব দেহাবশেষের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে হ্রদটিকে "কঙ্কাল হ্রদ" বলা হয়। [৮]
১৯৪৩ সালে হরি কিষণ মাধওয়াল নামে নন্দা দেবী জাতীয় উদ্যানের একজন বনরক্ষক কর্তৃক কঙ্কালগুলি পুনরায় আবিষ্কৃত হয়। [৯] প্রথমে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করেছিল কঙ্কালগুলি গুপ্ত জাপানি আক্রমণকারী বাহিনীর সৈনিকদের , কিন্তু দেখা গেল যে কঙ্কালগুলি জাপানী সৈন্যদের চেয়ে বহু পুরোনো। [৬] বরফ গলার ফলে এক মাসের মধ্যে অগভীর হ্রদের স্বচ্ছ জলে কঙ্কালগুলি দৃশ্যমান হয়। [১] কঙ্কালের পাশাপাশি কাঠের শিল্পকর্ম, লোহার বর্শা, চামড়ার চপ্পল [১০] ও আংটিও পাওয়া গেছে। ২০০৩ সালে যখন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি দল প্রায় ৩০টি কঙ্কাল উদ্ধার করেছিল তখনও কিছু কঙ্কালের সাথে মাংস সংযুক্ত ছিল। [১]
স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, কনৌজের রাজা যশধাবল, তার গর্ভবতী স্ত্রী রানী বলম্পা, তাদের ভৃত্য, একটি নৃত্য দল ও অন্যান্যরা নন্দা দেবীর মন্দিরে তীর্থযাত্রায় গিয়েছিলেন। দলটি বড় শিলাবৃষ্টি ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিল যার দরুন রূপকুন্ড হ্রদের নিকটে পুরো দলটি মারা যায়। [১১] [১২]
এই হ্রদে তিনশ'রও বেশি মানুষের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। ভারতের নৃতাত্ত্বিক জরিপ ১৯৫০-এর দশকে কঙ্কালগুলির উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করে ও কিছু নমুনা অ্যানথলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া মিউজিয়াম, দেরাদুনে প্রদর্শিত হয়। [১৩] কঙ্কালের গবেষণায় মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে; [১৪] কিছু সূত্র অনুসারে [১৫] এই আঘাতগুলি উপর থেকে পতিত গোলাকার বস্তু দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল। মৃতদের মধ্যে মৃত্যুর সাধারণ কারণ বিদ্যমান ছিল। এই গবেষকরা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে স্থানীয় কিংবদন্তি ও গাথায় যেমন বর্ণনা করা হয়েছে তদনুযায়ী হতভাগ্যরা হঠাৎ শিলাবৃষ্টির কবলে পড়েছিলেন। [৬] [১৫] অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রেডিওকার্বন অ্যাক্সিলারেটর ইউনিটে হাড়ের রেডিওকার্বন ডেটিং নির্ধারণ করেছে, তাদের মৃত্যুর সময়কাল ৮৫০ শতক ±৩০ বছর।[ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ] অতি সম্প্রতি রেডিওকার্বন ডেটিং রূপকুন্ড হ্রদের ৩৮ জন ব্যক্তির জিনোম-ভিত্তিক বিশ্লেষণের সাথে মিলে গিয়েছে।২৩ জনের একটি গোষ্ঠীর (তারিখ ~৮০০ খ্রিস্টাব্দ) সাধারণত দক্ষিণ এশীয় পূর্বপুরুষ ছিল, অপর ব্যক্তির (তারিখ ~১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পূর্বপুরুষ ছিল, এবং ১৪ জন ব্যক্তির (তারিখ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) পূর্বপুরুষ ভূমধ্যসাগরের অধিবাসী ছিল যারা বিশেষভাবে বর্তমান সময়ের মূল ভূখণ্ড গ্রীস ও ক্রিটের বাসিন্দা । এই ফলাফলগুলি এই তত্ত্বের বিরোধী যে উল্লিখিত ব্যক্তিরা কোন একক বিপর্যয়মূলক ঘটনায় মারা গিয়েছিল। রেডিওকার্বন ডেটিং আরও ইঙ্গিত দেয় , পুরোনো দক্ষিণ এশীয় কঙ্কালগুলি একটি বর্ধিত সময়ের মধ্যে স্তূপীকৃত হয়েছিল , এবং ক্ষুদ্র পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় ও দক্ষিণ - পূর্ব এশীয় কঙ্কালগুলি এক পৃথক দূর্ঘটনায় জমা হয়েছিল ।
কঙ্কালগুলির নিয়মিত ক্ষয় সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়ছে ও আশঙ্কা করা হচ্ছে যে যদি এগুলি সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে আগামী বছরগুলিতে কঙ্কালগুলি ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে । [১৬] জানা গেছে যে এই অঞ্চলে আসা পর্যটকদের প্রচুর পরিমাণে হাড় সংগ্রহ করার অভ্যাস রয়েছে এবং জেলা প্রশাসন এই অঞ্চলটি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করেছে । [১৩] চামোলি জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, পর্যটক ট্রেকার এবং কৌতূহলী গবেষকরা খচ্চরের উপর কঙ্কালগুলি পরিবহন করছেন ও এই অঞ্চলটিকে সুরক্ষিত করার পরামর্শ দিয়েছেন । [১১] সরকারী সংস্থাগুলি কঙ্কালগুলি রক্ষার জন্য এই অঞ্চলকে একটি ইকো - ট্যুরিজম গন্তব্যরূপে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করেছে ।[১৭]
রূপকুণ্ড একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র এবং হিমালয়ের দুটি শৃঙ্গের পাদদেশের নিকট হিমালয়ের চামোলি জেলা ট্রেকিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির একটি। শৃঙ্গ দুটি হলো ত্রিসুল (৭,১২০ মি.) ও নন্দ ঘুন্টি (৬,৩১০ মি.) । [১৮] হ্রদের উত্তরে জুনাগড় নামে একটি শিলা ও পূর্বে চন্দনিয়া কোট নামে একটি শৃঙ্গ রয়েছে । প্রতি শরৎকালে বেদনি বুগিয়াল আলপাইন তৃণভূমিতে একটি ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয় যেখানে আশেপাশের গ্রামগুলি অংশগ্রহণ করে । রূপকুণ্ডে প্রতি বারো বছর অন্তর নন্দা দেবী রাজ জাট অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ে দেবী নন্দার পূজা করা হয় । [১৮] বছরের বেশিরভাগ সময়ই হ্রদটি বরফে ঢাকা থাকে। ট্রেকিংয়ের সেরা সময় হল শরৎকাল (সেপ্টেম্বরের—অক্টোবর পর্যন্ত) ।
রূপকুণ্ডের কঙ্কালগুলি ন্যাশনাল জিওগ্রাফির তথ্যচিত্র " রিডলস অফ দ্য ডেডঃ স্কেলেটন লেক-এ(Riddles of the Dead: Skeleton Lake) প্রদর্শিত হয়েছিল । [১৯][২০] ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি (সিসিএমবি) " দ্য মিস্টিরিয়াস ফ্রোজেন লেক ইন দ্য হিমালয় " নামে তথ্যচিত্র তৈরি করেছে যেখানে একটি বৈজ্ঞানিক দল ও একটি চলচ্চিত্র দল হ্রদটি তদন্ত করার চেষ্টা করছে ।[২১]
4. The Skeleton Lake of Roopkund