রেওয়া রাজ্য रीवा | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
ব্রিটিশ ভারতের দেশীয় রাজ্য | |||||||
আনু. ১৭৯০–১৯৪৬ | |||||||
ইম্পেরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়া থেকে প্রাপ্ত রেওয়া রাজ্যের মানচিত্র | |||||||
আয়তন | |||||||
• ১৯০১ | ৩৩,৬৭০ বর্গকিলোমিটার (১৩,০০০ বর্গমাইল) | ||||||
জনসংখ্যা | |||||||
• ১৯০১ | ১৩,২৭,৩৮৫ | ||||||
ইতিহাস | |||||||
• প্রতিষ্ঠিত | আনু. ১৭৯০ | ||||||
১৯৪৬ | |||||||
| |||||||
বর্তমানে যার অংশ | মধ্যপ্রদেশ, ভারত | ||||||
কলম্বিয়া-লিপিনকট গেজেটিয়ার (নিউ ইয়র্ক: কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, ১৯৫২) পৃ. ৩৬৯ |
রেওয়া রাজ্য (রীবা নামেও পরিচিত) ছিলো ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অবস্থিত একটি দেশীয় রাজ্য, যা বর্তমানে ভারতের অন্তর্গত৷ রাজ্যটির রাজধানী বর্তমান রেওয়া জেলার রেওয়া শহরে অবস্থিত ছিলো৷ [২]
রাজ্যটি ৩৪,০০০ কিমি২ (১৩,০০০ মা২) অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত৷ এটি মধ্য ভারত এজেন্সির বাঘেলখণ্ড এজেন্সির অন্তর্গত সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য৷ মধ্য ভারতে অবস্থিত রাজ্যগুলির মধ্যে রেওয়া ছিলো তৃতীয় বৃহত্তম সম্পদশালী৷ ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে রাজ্যটির গড় করের পরিমাণ ছিলো ২.৯ মিলিয়ন ভারতীয় মুদ্রা৷ [৩] বাঘেলখণ্ডের ব্রিটিশ রাজনৈতিক এজেন্ট পূর্ব রেলওয়ে বিভাগের সাতনায় অস্থায়ীভাবে থাকতেন৷ ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে বাঘেলখণ্ড এজেন্সি বাতিল হলে রেওয়া রাজ্যটিকে ইন্দোর রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
জনশ্রুতি অনুসারে, আনুমানিক ১১৪০ খ্রিস্টাব্দে রেওয়া রাজ্যের পত্তন হয়৷ ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ৫ই অক্টোবর তারিখে এটি ব্রিটিশ করদ রাজ্যে পরিণত হয়৷ ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা এপ্রিল থেকে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই অক্টোবর পর্যন্ত রেওয়া সরাসরি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতের শাসনাধীন ছিলো৷[৪]
গুজরাতী যোদ্ধা রাজা বীর ধবলের সরাসরি উত্তরসূরী রাজা ব্যাঘ্র দেব ছিলেন রেওয়ার প্রথম রাজা৷ শুরুর দিকে রাজ্যটির রাজধানী বান্ধবগড় (বর্তমান উমারিয়া জেলাতে অবস্থিত)৷ খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে রাজা রামচন্দ্র সিং বাঘেলের রাজত্বকালে তার রাজসভায় শোভা পেতেন বিখ্যাত হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতজ্ঞ তানসেন৷ ১৬১৭ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা বিক্রমাদিত্য রাজ্যের রাজধানী বান্ধবগড় থেকে রেওয়াতে নিয়ে আসেন৷ রেওয়া রাজ্যের শেষ শাসক মহারাজা মার্তণ্ড সিং রাজ্যটিকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার সম্মতিস্বাক্ষর করেন৷ [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সম্রাট হুমায়ন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ভারত ত্যাগ করলে দশ বছর বয়সে আকবর রেওয়াতে আশ্রয়ের খোঁজে এলে স্থানীয় রাজা তাকে আশ্রয় দেন৷ রাজকুমার রামচন্দ্র সিং এবং আকবর উভয়ই রাজপুত্রের মতো পালিত হন৷ মহারাজা রামচন্দ্র সিং ও আকবর বন্ধুবৎ ছিলেন৷ আকবর ভারতের সম্রাট ঘোষিত হলে উপহারস্বরূপ মহারাজা রামচন্দ্র তার রাজসভা দূই রত্ন তথা তানসেন ও বীরবলকে (মহেশ দাস ব্রহ্মভট্ট) তার নিকট প্রেরণ করেন৷
রেওয়াই প্রথম রাজ্য যেটি মহারাজা গুলাব সিংয়ের সময়কালে হিন্দি ভাষাকে ঐ রাজ্যের জাতীয় ভাষা বলে প্রতিষ্ঠিত করেন৷ তিনিই আধুনিক ভারতের একমাত্র শাসক যিনি রেওয়া রাজ্যের জনসাধারণকে রাজতন্ত্র ও রাজার কর্মবিষয়ক প্রশ্ন তোলার বাকস্বাধীনতা দিয়েছিলেন৷
রাজ্যটি ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের সর্বপ্রধানত্বে আসে এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা অবধি এটি ব্রিটিশ শাসিত ভারতের দেশীয় রাজ্যের মর্যাদা পেয়ে আসে৷
রাজা বেঙ্কটরমন সিংহের রাজত্বকালে রাজ্যের প্রশাসন পুনর্গঠন করা হয়৷ ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে শহরে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি আদর্শ সংশোধনাগার এবং ভিক্টোরিয়া হসপিটাল ও জেনানা হসপিটাল নামে দুটি হাসপাতাল নির্মীত হয়৷ ভারতের স্বাধীনতালাভের পর ভি. পি. মেনন এই রাজ্য পরিদর্শনে আসলে তিনি এটিকে ভারতের অন্যতম অনগ্রসর অঞ্চলগুলির একটি বলে উল্লেখ করেন৷
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর রেওয়া রাজ্যের মহারাজা ভারতীয় অধিরাজ্যে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এটি স্বাধীন ভারতের বিন্ধ্যপ্রদেশ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা ছিল মূলত বুন্দেলখন্ড বাঘেলখন্ড অঞ্চলের দেশীয় রাজ্যগুলির সমষ্টি। রেওয়া শহর ছিল নবগঠিত রাজ্যটির সদর।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে বিন্ধ্যপ্রদেশের সঙ্গে অন্যান্য একাধিক প্রদেশ একত্রিত করে গঠন করা হয় মধ্যপ্রদেশ রাজ্য। এই সময়ে রাজবাড়ীকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়।
২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে রেওয়ার ইতিহাস নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসে প্রকাশিত হয় বাঘেলখন্ড, অর দ্য টাইগার্স’ লেয়ার বইটি। বাঘেলি হল এই অঞ্চলের স্থানীয় ভাষা।
পূর্বতন বান্ধবগড় রাজ্য আনুমানিক ১১৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রেওয়া রাজ্যের শাসক ছিলেন গুজরাতে খ্রিস্টীয় দশম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী অবধি রাজত্ব করা সোলাঙ্কি রাজবংশের উত্তরপুরুষ। গুজরাতের কোন এক শাসকের ভাই ব্যাঘ্র দেব ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পশ্চিম থেকে উত্তর ভারতের দিকে আসেন এবং কলঞ্জরের ২৯ কিমি (১৮ মা) উত্তর পূর্বে অবস্থিত মর্ফা দুর্গ দখল করেন। তার পুত্র করণ দেব কালাচুরি (হৈহেয়) মণ্ডলা রাজ্যের রাজকন্যাকে বিবাহ করেন এবং পণ হিসেবে বান্ধবগড় দুর্গ লাভ করেন। ১৫৯৭ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট আকবর এই দুর্গটি ধ্বংস করার পূর্ব অবধি এটি ছিল বাঘেল রাজধানী। ১২৯৮ খ্রিস্টাব্দে উলুগ খাঁ মুঘল সম্রাট আলাউদ্দিনের নির্দেশে গুজরাত থেকে বাঘেল সম্রাটকে বিতাড়িত করেন, ফলস্বরূপ তার রাজ্যের বহু সাধারন নাগরিক তার সঙ্গে বান্ধবগড়ে চলে আসেন। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে বান্ধবগড়ের বাঘেল রাজারা দিল্লীর সুলতানের নজর এড়িয়ে নিজের রাজ্য বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করেন, শতাব্দীর শেষের দিকে ১৪৯৮-৯৯ এর সময় সিকান্দর লোদি বান্ধবগড় দুর্গ দখল করতে এলে তিনি ব্যর্থ হন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে রেওয়া রাজ্যের শাসকগণ মহারাজা উপাধিতে ভূষিত হতেন।