রেভলূশন্যারি রোড | |
---|---|
পরিচালক | স্যাম মেন্ডেজ |
প্রযোজক | ববি কোহেন স্যাম মেন্ডেজ স্কট রাডিন |
চিত্রনাট্যকার | জাস্টিন হেইথ |
উৎস | রিচার্ড ইয়েটস কর্তৃক রেভলূশন্যারি রোড |
শ্রেষ্ঠাংশে | লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও কেট উইন্সলেট মাইকেল শ্যানন ক্যাথরিন হান ডেভিড হারবার ক্যাথি বেট্স টাই সিম্পকিন্স |
সুরকার | থমাস নিউম্যান |
চিত্রগ্রাহক | রজার ডিকিন্স |
সম্পাদক | তারিক আনোয়ার |
প্রযোজনা কোম্পানি | |
পরিবেশক | প্যারামাউন্ট ভ্যান্টেজ (যুক্তরাষ্ট্র) ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশলান পিকচার্স (ইউরোপ) |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১১৯ মিনিট |
দেশ | যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য |
ভাষা | ইংরেজি |
নির্মাণব্যয় | $৩৫ মিলিয়ন |
আয় | $৭৫.২ মিলিয়ন[১] |
রেভলূশন্যারি রোড স্যাম মেন্ডেজ পরিচালিত ২০০৮ সালের ব্রিটিশ-মার্কিন রোমান্টিক নাট্য চলচ্চিত্র। রিচার্ড ইয়েটসের ১৯৬১ সালের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন জাস্টিন হেইথ। এতে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, কেট উইন্সলেট, মাইকেল শ্যানন, ক্যাথরিন হান, ডেভিড হারবার, ক্যাথি বেটস, টাই সিম্পকিন্স প্রমুখ। এই ছবিতে দ্বিতীয়বারের মত একসাথে অভিনয় করে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, কেট উইন্সলেট ও ক্যাথি বেটস; এর আগে তারা একসাথে টাইটানিকে অভিনয় করেছিলেন। ডিক্যাপ্রিও এই ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার - নাট্য চলচ্চিত্র লাভ করেন এবং উইন্সলেট শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার - নাট্য চলচ্চিত্রের জন্য মনোনয়ন লাভ করেন। এছাড়া ছবিটি ৬৬তম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার-এ আরও তিনটি বিভাগে মনোনয়ন লাভ করে, এবং চারটি বিভাগে বাফটা পুরস্কার ও তিনটি বিভাগে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়।
২০০৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর লস অ্যাঞ্জেলেস-এ ছবিটির প্রিমিয়ার হয় এবং ২৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সীমিতভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ২৩ জানুয়ারি সারা যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায় এবং অন্যান্য দেশে ১৫-৩০ জানুয়ারির মধ্যে মুক্তি পায়।
১৯৫৫ সালে এক পার্টিতে ফ্রাঙ্ক হুইলারের এপ্রিলের সাথে সাক্ষাৎ হয়। ফ্রাঙ্ক জাহাজের খালাসী, সে ক্যাশিয়ার হতে চায়। অন্যদিকে এপ্রিল অভিনেত্রী হতে চায়। ফ্রাঙ্ক পরে নক্স মেশিনে তার বাবার স্থলে বিক্রয়কর্মী হিসেবে যোগদান করে এবং এপ্রিলকে বিয়ে করে। এপ্রিল গর্ভবতী হলে ফ্রাঙ্ক উপশহরে ১১৫ রেভলূশন্যারি রোডে চলে আসে। সেখানে তাদের বাড়িওয়ালা দম্পতি হেলেন গিভিংস ও হাউয়ার্ড গিভিংস এবং প্রতিবেশী দম্পতি মিলি ক্যাম্পবেল ও তার স্বামী শেপের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এপ্রিল অভিনয়ের বাইরে আর কোন চাকরি না পেলে এবং ফ্রাঙ্ক তার কাজ নিয়ে বিরক্ত হতে থাকলে তাদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। এসময়ে হেলেন তাদের দুজনকে তার মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে জনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তাকে সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করতে বললে তারা সম্মত হয়।
এপ্রিল নতুনত্ব চায় এবং তার পরিবারে উপার্জনে ভূমিকা রাখতে চায়, যাতে ফ্রাঙ্ক তার কাজে উদ্যম খুঁজে পায়। তাই তার প্যারিস গিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে ভায়। এপ্রিল ও ফ্রাঙ্ক গিভিংস পরিবারকে তাদের সিদ্ধান্তে কথা জানালে শুধুমাত্র জনই তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারটা বুঝতে পারে। তারা চলে যেতে চাইলে তাদেরকে আবার ভাবার জন্য অনুরোধ করে। ফ্রাঙ্ককে পদোন্নতি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং এপ্রিল আবার গর্ভবতী হয়ে পরে। ফ্রাঙ্ক তা জানার পর রাগান্বিত হয়ে এপ্রিলের সাথে ঝগড়া করে এবং তাকে গর্ভপাত করতে বলে। কিন্তু এপ্রিল তাকে বলে সে দ্বিতীয় বাচ্চা নিয়ে এটা প্রমাণ করার জন্য যে তাদের প্রথম বাচ্চা নেওয়া ভুল ছিল না।
পরের দিন ফ্রাঙ্ক পদোন্নতি লাভ করে এবং তার নির্জীব জিবনকে গ্রহণ করার চেষ্টা করে। সন্ধ্যায় ক্যাম্পবেল পরিবারের সাথে এক জ্যাজ বারে শেষ দিকে শেপ আর এপ্রিল একা হয়ে পরলে গাড়িতে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় এবং শেপ এপ্রিলের প্রতি তার আকর্ষণের কথা জানায়, কিন্তু এপ্রিল তাতে অসম্মতি জানায়। পরের দিন ফ্রাঙ্ক তার অফিসের এক নারী সহকারীর সাথে তার সম্পর্কের কথা এপ্রিলকে জানায়। এপ্রিল তাকে অবাক করে দিয়ে জানায় তাতে তার কিছু আসে যায় না। রাতে ডিনারে গিভিংস পরিবারকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফ্রাঙ্ক তাদেরকে প্যারিস যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা জানায়। জন ফ্রাঙ্ককে এপ্রিলের আশাভঙ্গের জন্য কঠোর কথা শুনায় এবং গিভিংস পরিবার চলে গেলে ফ্রাঙ্ক ও এপ্রিলের মধ্যে ঝগড়া হয় ও এপ্রিল বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
ফ্রাঙ্ক সারারাত মদ পান করে সকালে ওঠে দেখে এপ্রিল চুপিসারে নাস্তা তৈরি করছে। এপ্রিল ফ্রাঙ্ককে বিদায় জানিয়ে একা বাড়িতে নিজেই ভ্যাকুয়াম পাইপ দিয়ে গর্ভপাত করে, যা মারাত্মক আকৃতি ধারণ করে। এপ্রিল হাসপাতালে মারা যায়। ফ্রাঙ্ক নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করে এবং শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় এবং কম্পিউটার বিক্রি করতে শুরু করে। সে তার অবসর সময় সন্তানদের সাথে কাঠায়। মিলি ক্যাম্পবেল নতুন ব্রেস যুগল, যারা এই বাড়িটি কিনেছে, তাদের এই গল্প শুনাতে থাকে। শেপ তাকে তার গল্প থামাতে বলে এবং কেঁদে কেঁদে যাওয়ার সময় আর কখনো এই গল্প না করার জন্য বলে।
১৯৬১ সালে রিচার্ড ইয়েটসের উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর পরিচালক জন ফ্রাঙ্কেনহেইমার এই গল্পে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হন, কিন্তু পরে তিনি দ্য মাঞ্চুরিয়ান ক্যান্ডিডেট নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।[২] স্যামুয়েল গোল্ডউইন জুনিয়রও এই এই গল্পে চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হন, কিন্তু তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাকে বুঝায় যে এটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে না।[৩] ১৯৬৫ সালে প্রযোজক আলবার্ট এস. রুডি উপন্যাসের স্বত্ব কিনেন কিন্তু তিনি এই বইয়ের সমাপ্তিটুকু পছন্দ করেন নি। ফলে এটি বাদ দিয়ে তিনি দ্য গডফাদার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, এবং এই বইয়ের স্বত্ব অভিনেতা প্যাট্রিক ও'নীলের কাছে বিক্রয় করে দেন। ও'নীল বইয়ের গল্পটি পছন্দ করেন কিন্তু তিনি ভাল চিত্রনাট্যের লেখার চেষ্টা করেও পারেন নি।[৩] ইয়েটস ও'নীলের তার উপন্যাস নিয়ে কাজের কথা শুনে পুনরায় স্বত্ব নিতে চাইলে ও'নীল তাকে প্রত্যাখ্যান করে। ইয়েটস ১৯৯২ সালে এবং এর দুই বছর পরে ও'নীল মারা যান।[২]
২০০১ সালে টড ফিল্ড চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহ দেখানোর পূর্ব পর্যন্ত তা এভাবেই ছিল। কিন্তু যখন তাকে বলা হল ও'নীলের চিত্রনাট্য অনুযায়ী তাকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে, ফিল্ড পিছিয়ে গেল এবং তার অন্য চলচ্চিত্র লিটল চিলড্রেন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।[৪] ডেভিড এম. থম্পসন বিবিসি ফিল্মস-এর জন্য এই বইয়ের স্বত্ব কিনে নেয়।[৫] ২০০৭ সালের মার্চে বিবিসি ফিল্মস ড্রিমওয়ার্কস-এর সাথে যৌথ প্রযোজনায় যায়, এবং বিশ্বব্যাপী এর পরিবেশনা স্বত্ব দেওয়া হয় ড্রিমওয়ার্কসের প্যারামাউন্ট পিকচার্সকে। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্যারামাউন্ট ঘোষণা দেয় যে তারা প্যারামাউন্ট ভ্যান্টেজকে পরিবেশনার দায়িত্ব প্রদান করেছে।[৬] বিবিসি ফিল্মস জাস্টিন হেইথকে চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্ব দেয়।[৩]
প্রযোজক স্কট রুডিন কেট উইন্সলেটকে চিত্রনাট্য পাঠায় এবং তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তার তৎকালীন স্বামী স্যাম মেন্ডেজ এই চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য ঠিক হবে কিনা।[৩] উইন্সলেট মেন্ডেসকে ইয়েটসের উপন্যাসটি দেয় এবং সে এই গল্পের চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।[৭] মেন্ডেস হেইথের চিত্রনাট্য ও পরে ইয়েটসের উপন্যাসটি পড়েন এবং হেইথকে ফ্রাঙ্ক ও এপ্রিলের কিছু সংলাপ, যা উপন্যাসে উহ্য রয়েছে, লিখতে বলেন।[৩]
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও চলচ্চিত্রটি করতে সম্মত হওয়ার পরপরই এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যায়।[৩] ডিক্যাপ্রিও বলেন এই চলচ্চিত্রের তার চরিত্রটি বীরোচিত নয় বরং কিছুটা কাপুরুষোচিত যে তার বাহ্যিক পরিবেশের একজন হয়ে থাকতে চায়।[৮] ডিক্যাপ্রিও এই চরিত্রে অভিনয়ের পূর্বে ১৯৫০-এর দশকের ও উপশহরের কিছু প্রামাণ্যচিত্র দেখেন। তিনি বলেন চলচ্চিত্রটি আসলে প্রণয়ধর্মী নয় এবং টাইটানিকের পরে তিনি ও উইন্সলেট কেউই প্রণয়ধর্মী চরিত্রে অভিনয় করেন নি।[৮] তারা দুজনেই টাইটানিকের মত একই ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয়ে অনিচ্ছুক ছিলেন।[৯] উইন্সলেট এই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তুতি হিসেবে বেটি ফ্রিডেন-এর দ্য ফেমিনিন মিস্টিক পড়েন।[১০]
রেভলূশন্যারি রোড যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র তিনটি প্রেক্ষাগৃহে সীমিত পরিসরে ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৮ সালে মুক্তি পায় এবং সারাদেশে ১,০৫৮ প্রেক্ষাগৃহে ২৩ জানুয়ারি, ২০০৯ মুক্তি পায়। ছবিটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে $২২.৯ মিলিয়ন আয় করে এবং বাকি দেশগুলো থেকে $৫১.৭ মিলিয়ন আয় করে, ফলে বিশ্বব্যাপী মোট $৭৪.৬ মিলিয়ন আয় করে।[১]
রেভলূশন্যারি রোড ইতিবাচক সমালোচনা লাভ করে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এর কেনেথ তুরান বলেন, কেট উইন্সলেট ও লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর অভিনয় এবং স্যাম মেন্ডেসের পরিচালনা ছবিটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। জাস্টিন হেইথের চিত্রনাট্যে বেশ কিছু ভালো দিক ছিল, তবে পুরনো ভাষার ব্যবহারটা ত্যাগ করতে পারে নি। ফলে একটু সেকেলে মনে হয়েছে।[১১]
নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজের জো ন্যুমেইয়ের বলেন, চলচ্চিত্রটি রিচার্ড ইয়েটসের উপন্যাসের কাছাকাছি এসেছে কিন্তু অল্পের জন্য বাকি রয়ে গেছে। ছবিটির দুই-তৃতীয়াংশ অ্যামেরিকান বিউটির মত হয়ে গেছে। তবে পরিচালক মেন্ডেজ ও চিত্রনাট্যকার হেইথ ইয়েটসের কিছু বিষয় ধরতে পেরেছে এবং ডিক্যাপ্রিও ও উইন্সলেট তা সফলভাবে করতে পেরেছে।[১২]
শিকাগো সান-টাইমস-এর রজার ইবার্ট রেভলূশন্যারি রোড চলচ্চিত্রকে ৪-এ ৪ রেটিং দিয়েছেন এবং অভিনয় ও চিত্রনাট্যের ভিত্তিতে এই চলচ্চিত্রকে খুবই ভালো বলে উল্লেখ করেন। উইন্সলেট ও ডিক্যাপ্রিও সম্পর্কে তিনি বলেন তারা খুবই ভালো করেছেন এবং অভিনয়শিল্পীর বাইরে গিয়ে তারার সাধারণ মানুষের সাথে মিশে গেছেন।"[১৩]
ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনের টড ম্যাককার্থি চলচ্চিত্রটির অভিনয় ও চিত্রগ্রহণের প্রশংসা করে বলেছেন, চলচ্চিত্রটি প্রায়-পরিপূর্ণ কেইস স্টাডি হিসেবে চিত্রায়িত হয়েছে।[১৪] তিনি আরও বলেন, ছবিটি বিলি ওয়াইল্ডারের দি অ্যাপার্টমেন্ট ও রিচার্ড কুইনের স্ট্রেঞ্জারস হোয়েন উই মিটের সাথে তুলনায় চলে আসে এবং টিভি সিরিজ ম্যাড ম্যান আরও বেশি উপযোগিতা, ব্যর্থতা ও ভন্ডামি দেখানো হয়েছে।[১৫]
চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে বেশ কয়েকজন সমালোচকের সেরা দশ তালিকায় স্থান পায়।[১৬]