| |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৯৬৫–১৯৭৯ | |||||||||
অবস্থা | অস্বীকৃত রাষ্ট্র | ||||||||
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | সালিশ্বুরি | ||||||||
সরকারি ভাষা | ইংরেজি (কার্যত) | ||||||||
অন্যান্য ভাষা | |||||||||
নৃগোষ্ঠী (১৯৬৯) |
| ||||||||
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | Rhodesian | ||||||||
সরকার |
| ||||||||
রানি[ক] | |||||||||
• ১৯৬৫ – ১৯৭০ | দ্বিতীয় এলিজাবেথ | ||||||||
রাষ্ট্রপতি | |||||||||
• ১৯৭০ – ১৯৭৫ | ক্লিফোর্ড ডুপন্ট | ||||||||
• ১৯৭৫ – ১৯৭৬ | হেনরি এভারার্ড (ভারপ্রাপ্ত) | ||||||||
• ১৯৭৬ – ১৯৭৮ | জন রেথাল | ||||||||
• ১৯৭৮ | হেনরি এভারার্ড (ভারপ্রাপ্ত) | ||||||||
• ১৯৭৮ – ১৯৭৯ | জ্যাক পিথে (ভারপ্রাপ্ত) | ||||||||
প্রধানমন্ত্রী | |||||||||
• ১৯৬৫ – ১৯৭৯ | ইয়ান স্মিথ | ||||||||
আইন-সভা | সংসদ | ||||||||
• উচ্চকক্ষ | সিনেট | ||||||||
হাউজ অব অ্যাসেম্বলি | |||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | স্নায়ুযুদ্ধ এবং আফ্রিকার উপনিবেশ বিলোপন | ||||||||
• ঘোষণা | ১১ নভেম্বর ১৯৬৫ | ||||||||
২ মার্চ ১৯৭০ | |||||||||
• [অভ্যন্তরীণ বন্দোবস্ত | ৩ মার্চ ১৯৭৮ | ||||||||
১ জুন ১৯৭৯ | |||||||||
আয়তন | |||||||||
• মোট | ৩,৯০,৫৮০ কিমি২ (১,৫০,৮০০ মা২) | ||||||||
জনসংখ্যা | |||||||||
• ১৯৭৮ আদমশুমারি | ৬৯,৩০,০০০ | ||||||||
মুদ্রা |
| ||||||||
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+2 (CAT) | ||||||||
| |||||||||
বর্তমানে যার অংশ | জিম্বাবুয়ে | ||||||||
|
রোডেশিয়া (/roʊˈdiːʒə/ ( ) roh-DEE-zhə, /roʊˈdiːʃə/ roh-DEE-shə;[২] শোনা: Rodizha) ছিল ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত স্থায়ী আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের একটি অস্বীকৃত রাষ্ট্র। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭০ সাল থেকে দেশটির নাম ছিল রোডেশিয়া প্রজাতন্ত্র।[৩] সেসময় রোডেশিয়ার অন্তর্ভূক্ত অঞ্চল বর্তমান আধুনিক জিম্বাবুয়ের সমতুল্য। রোডেশিয়া ছিল দক্ষিণ রোডেশিয়ার ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রকৃত উত্তরসূরি রাষ্ট্র। ১৯২৩ সালে দায়িত্বশীল সরকার অর্জনের পর থেকে এটি স্ব-শাসিত ছিল। স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র রোডেশিয়ার দক্ষিণে দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ-পশ্চিমে বেচুয়ানাল্যান্ড (পরবর্তীতে বতসোয়ানা), উত্তর-পশ্চিমে জাম্বিয়া (পূর্বনাম উত্তর রোডেশিয়া) এবং পূর্বে মোজাম্বিক (১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একটি পর্তুগিজ প্রদেশ) অবস্থিত ছিল। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রোডেশিয়া ছিল আফ্রিকা মহাদেশের এমন দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি, যা ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অপর দেশটি হলো দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৯ শতকের শেষের দিকে ট্রান্সভালের উত্তরের অঞ্চলটি সেসিল রোডসের নেতৃত্বে ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকা কোম্পানির কাছে চার্টার্ড করা হয়েছিল। রোডস এবং তার পাইওনিয়ার কলাম বাহিনী ১৮৯০ সালে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একটি বিশাল অঞ্চল অধিগ্রহণ করে। সেসব অঞ্চলে কোম্পানিটি ১৯২০ এর দশকের শুরু পর্যন্ত শাসন করে। ১৯২৩ সালে কোম্পানির সনদ প্রত্যাহার করা হয়। সেসময় দক্ষিণ রোডেশিয়া একটি আইনসভা প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে স্ব-শাসিত সরকার অর্জন করে। দক্ষিণ রোডেশিয়া ১৯৫৩ ও ১৯৬৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ে উত্তর রোডেশিয়া এবং নিয়াসাল্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়ে ফেডারেশন অফ রোডেশিয়া এবং নিয়াসাল্যান্ডের অংশ ছিল।
১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে আফ্রিকার দ্রুত উপনিবেশকরণ দক্ষিণ রোডেশিয়ার শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে শঙ্কিত করেছিল। কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনে স্থানান্তর বিলম্বিত করার প্রয়াসে প্রধানত শেতাঙ্গ দক্ষিণ রোডেশীয় সরকার ১৯৬৫ সালের ১১ নভেম্বরে যুক্তরাজ্য থেকে নিজস্ব একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা (ইউডিআই) জারি করে। নতুন দেশটি নিজেদের কেবল রোডেশিয়া হিসাবে ঘোষণা দিয়ে প্রাথমিকভাবে কমনওয়েলথ অফ নেশনসের অন্তর্গত একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি চেয়েছিল। কিন্তু ১৯৭০ সালে দেশটিকে একটি প্রজাতন্ত্র হিসাবে পুনর্গঠিত করা হয়।
স্বাধীনতার ঘোষণার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ একটি রেজুলেশন পাস করে, যেখানে সকল রাষ্ট্রকে রোডেশিয়াকে স্বীকৃতি না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দুটি আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী দল, জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান পিপলস ইউনিয়ন (জেডএপিইউ) ও জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন (জেডএএনইউ) ইউডিআই সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে রোডেশীয় বুশ যুদ্ধের সূত্রপাত করে। ক্রমবর্ধমান যুদ্ধের ক্লান্তি, কূটনৈতিক চাপ এবং জাতিসংঘ কর্তৃক আরোপিত একটি ব্যাপক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ১৯৭৮ সালে রোডেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইয়ান স্মিথকে সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনে মেনে নিতে বাধ্য করে। যদিও নির্বাচন পরবর্তী একটি বহুজাতিক অস্থায়ী সরকার এবং স্মিথের ও তার উত্তরসূরী মধ্যপন্থী আবেল মুজোরেওয়া আন্তর্জাতিক সমালোচকদের সন্তুষ্ট করতে বা যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মুজোরেওয়া জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান পিপলস ইউনিয়ন ও জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়নের সাথে একটি চুক্তি করতে সক্ষম হন। এর ফলে রোডেশিয়া ব্রিটিশ তত্ত্বাবধানে নতুন নির্বাচনের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে ঔপনিবেশিক অবস্থানে ফিরে যেতে পারে। জেডএএনইউ ১৯৮০ সালে একটি নির্বাচনী বিজয় অর্জন করে এবং ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে দেশটি জিম্বাবুয়ে হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বাধীনতা অর্জন করে।
রোডেশিয়ার বৃহত্তম শহরগুলো ছিল সলসবারি (এর রাজধানী শহর, যা এখন হারারে নামে পরিচিত) এবং বুলাওয়েও। ১৯৭০ সালের আগে প্রধানত শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ছিল, যেখানে অল্প সংখ্যক আসন কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিনিধিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ১৯৭০ সালে দেশটিকে একটি প্রজাতন্ত্রের ঘোষণার পর আইনসভাটিকে একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে পরিণত করা হয়। একটি হাউস অফ অ্যাসেম্বলি এবং অন্যটি ছিল সেনেট। ১৯৮০ সালের পর জিম্বাবুয়েতে দ্বিকক্ষ ব্যবস্থা বহাল ছিল। এর জাতিগত ভোটাধিকার ছাড়াও, রোডেশিয়া যুক্তরাজ্য থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত একটি মোটামুটি প্রচলিত ওয়েস্টমিনস্টার ব্যবস্থা কার্যকর করেছিল। সেখানে রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে কাজ করতেন এবং একজন প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান হিসাবে মন্ত্রিপরিষদের নেতৃত্ব দিতেন।
১৯৬৫ সালের নভেম্বরে ইউডিআই-এর সাথে একযোগে গৃহীত সংবিধান অনুসারে দেশের সরকারি নাম ছিল রোডেশিয়া। তবে এটি ব্রিটিশ আইনের অধীনে ছিল না। তাই ব্রিটিশরা অঞ্চলটির আইনী নামটি দক্ষিণ রোডেশিয়া বলে বিবেচনা করতো। ১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকা কোম্পানির রোডেশিয়াস প্রশাসনের সময় দেশটির এই নাম দেওয়া হয়েছিল এবং ১৯২৩ সালে কোম্পানির শাসনের অবসানের পরে দক্ষিণ রোডেশিয়ার স্ব-শাসিত উপনিবেশের শাসকেরাও তা বহাল রেখেছিল।[৪]
এই নামকরণের বিরোধ ১৯৬৪ সালের অক্টোবরে শুরু হয়েছিল। কারণ সেসময় উত্তর রোডেশিয়া যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীন হয়ে এবং একই সাথে দেশটি তার নাম পরিবর্তন করে জাম্বিয়া রাখে। সলসবারির দক্ষিণ রোডেশীয় ঔপনিবেশিক সরকার মনে করেছিল যে "উত্তর" রোডেশিয়ার অনুপস্থিতিতে "দক্ষিণ"-এর অব্যাহত ব্যবহার ছিল বাহুল্য। তাই দেশটি নিজেদের নাম কেবল রোডেশিয়া হওয়ার জন্য আইন পাস করে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এটিকে অনুমোদন করতে অস্বীকার করেছিল। ব্রিটিশদের দাবি ছিল, এই দেশের নামটি ব্রিটিশ আইন দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা, তাই ঔপনিবেশিক সরকার দ্বারা তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। স্যালিসবারি একটি অফিসিয়াল পদ্ধতিতে সংক্ষিপ্ত নামটি ব্যবহার করে চলেছিল।[৫] কিন্তু ব্রিটিশ সরকার দেশটিকে দক্ষিণ রোডেশিয়া হিসাবে উল্লেখ করতে থাকে। এই অবস্থা ইউডিআইয়ের পুরো সময় ধরে চলতে থাকে।[৪] সংক্ষিপ্ত নামটি হাউস অফ কমন্সে ব্রিটিশ সরকার সহ অনেক লোক ব্যবহার করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পর্যন্ত দক্ষিণ রোডেশিয়ার স্থলবেষ্টিত ব্রিটিশ অধিকার একটি আদিবাসী আফ্রিকান অঞ্চল হিসেবে গড়ে ওঠেনি, বরং বহুজাতিক চরিত্রকে প্রতিফলিত করা একটি অনন্য রাষ্ট্র হিসেবে বিকশিত হয়।[৬] এই পরিস্থিতি অবশ্যই এটিকে ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে বিদ্যমান অন্যান্য ভূমি থেকে খুব আলাদা করে তুলে। কারণ অনেক ইউরোপীয় স্থায়ী বাড়ি তৈরি করতে, শহরগুলোকে ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে জনবহুল করতে কিংবা সর্বাধিক উত্পাদনশীল মাটি চাষ করতে বসতি স্থাপন করতে এসেছিল।[৭][৮] ১৯২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ইউনিয়নে দেশটির পঞ্চম প্রদেশ হিসাবে যোগদান অথবা প্রায় সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ স্বায়ত্তশাসন গ্রহণ করার সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়ে রোডেশিয়ার ভোটাররা দক্ষিণ আফ্রিকার একীকরণের বিরুদ্ধে ভোট দেয়।[৯][১০][১১]
গণভোটের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে, ১৯২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য এই অঞ্চলটি সংযুক্ত করে।[১২][১৩][১৪][১৫] সংযুক্তির অল্প সময়ের মধ্যেই ১৯২৩ সালের ১ অক্টোবরে দক্ষিণ রোডেশিয়ার নতুন উপনিবেশের জন্য প্রথম সংবিধান কার্যকর হয়। এই সংবিধানের অধীনে দক্ষিণ রোডেশিয়াকে তার নিজস্ব ত্রিশ সদস্যের আইনসভা, প্রিমিয়ার এবং মন্ত্রিসভা নির্বাচন করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল।[১৪][১৬] যদিও ব্রিটিশ ক্রাউন স্থানীয়দের প্রভাবিত করে এবং বৈদেশিক নীতিতে আধিপত্য বিস্তার কারী ব্যবস্থাগুলোর উপর একটি আনুষ্ঠানিক ভেটো বজায় রেখেছিল।[১৭][১৮][১৯]
পরবর্তী তিন দশক ধরে, দক্ষিণ রোডেশিয়া সাব-সাহারান আফ্রিকায় প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ এবং শিল্পায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করে।[২০] ক্রোমিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজের বৃহৎ মজুদ সহ খনিজ সম্পদের প্রাকৃতিক প্রাচুর্য প্রচলিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উচ্চ হারে অবদান রেখেছিল।[২০] তবে আফ্রিকার বেশিরভাগ উপনিবেশ, এমনকি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ উপনিবেশগুলোও প্রযুক্তিগত ও পরিচালনাগত দক্ষতার ঘাটতির কারণে একই হারের বিকাশ অর্জনে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল।[২০] ঔপনিবেশিক সরকারি কর্মচারীদের ক্ষুদ্র, আবর্তিত ক্যাডার যারা স্থানীয় অর্থনীতিতে তাদের দক্ষতা বিনিয়োগের জন্য সামান্য উত্সাহ পেয়েছিল, তারা এই অসুবিধার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য অপর্যাপ্ত ছিল।[২০]
দক্ষিণ রোডেশিয়া তার অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বৃহত ইউরোপীয় অভিবাসী এবং প্রবাসী জনসংখ্যার আকারে সরাসরি বিদেশ থেকে একটি দক্ষ কর্মী বাহিনী আমদানি করে সমস্যাটি সমাধান করে।[২০] উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫১ সালে ৯০% এরও বেশি শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ রোডেশীয়দের ব্রিটিশ সরকার "দক্ষ পেশা" বা পেশাদার এবং প্রযুক্তিগত ব্যবসা হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে নিযুক্ত ছিল।[২০] এর ফলে একটি শক্তিশালী উৎপাদন খাত এবং লোহা ও ইস্পাত শিল্পের সাথে একটি বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল এবং বিদেশে উপনিবেশগুলোতে শিল্পকে নিরুৎসাহিত করার সময় মেট্রোপোলে দেশীয় শিল্পকে সমর্থন করার সাধারণ ব্রিটিশ সংরক্ষণবাদী নীতিকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল।[৬][২১]
বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মূলধন আমদানিও বাড়তে থাকে।[২০] এই প্রবণতাটিও অন্যান্য বেশিরভাগ ঔপনিবেশিক অঞ্চলগুলোর বিপরীত। অন্যান্য উপনিবেশে রাজস্ব কেবল মেট্রোপোলে প্রত্যাবাসিত হওয়ার কারণে সেগুলো একটি বড় মূলধন ঘাটতিতে পড়েছিল। সেখানে স্থানীয়ভাবে বিনিয়োগের জন্য খুব কম মূলধন থাকত।[২২] অর্থনীতিতে শ্বেতাঙ্গ রোডেশীয়দের করা যথেষ্ট বিনিয়োগ দক্ষিণ রোডেশিয়ার রপ্তানি শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে এটিকে আরও একীভূত করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোতে অর্থায়ন করেছে।[২০]
দক্ষিণ রোডেশিয়া ১৯৫৩ সালের আগস্টে অন্য দুটি ব্রিটিশ মধ্য আফ্রিকান অঞ্চল উত্তর রোডেশিয়া এবং নিয়াসাল্যান্ডের (বর্তমান মালাউই) সাথে একীভূত হয়ে ফেডারেশন অফ রোডেশিয়া এবং নিয়াসাল্যান্ড গঠন করে। এটি ছিল একটি শিথিল রাষ্ট্রব্যবস্থা। এই ফেডারেশনে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক বিষয়াবলী থাকলেও অনেক অভ্যন্তরীণ বিষয়ের উপর এর অন্তর্ভূক্ত অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল।[২৩] সেসময় চলমান পরিস্থিতিতে পরিষ্কার হতে থাকে সেই অঞ্চলে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার বিলোপন অনিবার্য। এছাড়াও আদিবাসী কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী সেসময় অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রবলভাবে চাপ দিচ্ছিল।[৬] ফলে ১৯৬৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে ফেডারেশনটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।[২৪][২৫]
ব্রিটিশ সরকার দক্ষিণ রোডেশিয়াকে (বর্তমানে রোডেশিয়া) আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের আগে কোনও স্বাধীনতা না দেওয়ার (no independence before majority rule বা NIMBER) নীতি গ্রহণ করায় তার নির্দেশ দিয়েছিল যে, ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় জনসংখ্যার উপনিবেশগুলো সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের শর্ত ব্যতীত স্বাধীনতা পাবে না।[২৬][২৭][২৮] শ্বেতাঙ্গ রোডেশীয়রা এই নীতি মেনে নিতে পারছিল না। তাদের অনেকে মনে করেছিল, তুলনামূলকভাবে কম জনসংখ্যা সত্ত্বেও তাদের নিরঙ্কুশ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে, অন্তত কিছু সময়ের জন্য।[২৩][২৯]
কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মতো সেই সময়ে অন্যান্য আফ্রিকান দেশগুলোতে ঘটে যাওয়া উপনিবেশ-উত্তর রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিশৃঙ্খলার কারণেও তারা বিরক্ত হয়েছিল।[৩০] শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর একটি সোচ্চার অংশ ধীরে ধীরে কৃষ্ণাঙ্গ রোডেশীয়দের নাগরিক সমাজে এবং তাত্ত্বিকভাবে আরও সংহত রাজনৈতিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করার ধারণার জন্য উন্মুক্ত ছিল, যদিও যোগ্যতা এবং সমতা ছাড়াই নয়।[৩১] তারা যুক্তি দিয়েছিল যে আরও বেশি কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকরা উচ্চতর শিক্ষাগত এবং বৃত্তিমূলক মান অর্জন করার পরে বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক সমতা গ্রহণযোগ্য ছিল।[৩১] শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় দলটি কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর কাছে সমতার নীতি, অনুশীলন তো দূরের কথা, রাজনৈতিক কাঠামোতে তাদের উপস্থিতি মেনে নিতে সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক ছিল।[৩১] উভয় দলই নিকট ভবিষ্যতে সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের বিরোধিতা করেছিল।[৩১] তবে,একবার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে আলোচনার জন্য রোডেশিয়াকে একটি ইস্যু হিসাবে প্রবর্তন করা হলে, স্থিতাবস্থার সম্প্রসারণ ব্রিটিশ সরকারের উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠে, যা যাচাই-বাছাইকে যুক্তরাজ্যের জন্য একটি গুরুতর বিব্রতকর বিষয় বলে মনে করা হয়েছিল।[৭]
১৯৬৩ সালের ডিসেম্বরে ফেডারেশন বিলুপ্ত হওয়ার পর, তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার অ্যালেক ডগলাস-হোম বেশ জোর দিয়ে স্বাধীনতার আলোচনার পূর্বশর্তগুলোকে তিনি "পাঁচটি নীতি" বলে অভিহিত করেছিলেন। সেগুলো হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনের অবাধ অগ্রগতি, ভবিষ্যতের কৃষ্ণাঙ্গদের স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকারক এমন যে কোনও আইনের বিরুদ্ধে আশ্বাস, স্থানীয় আফ্রিকানদের "রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতি", সরকারি বর্ণবাদী বৈষম্যের অবসান, এবং একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত যা "পুরো জনসংখ্যার কাছে গ্রহণযোগ্য" হতে পারে।[৩২][৩৩] পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন এবং তার আসন্ন লেবার সরকার স্বাধীনতার সময়সূচী নির্ধারণের আগে এই দফাগুলোকে বৈধভাবে সম্বোধন করার দাবিতে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছিল।[৭]
১৯৬৪ সালে চলমান আলোচনার সাথে ক্রমবর্ধমান শ্বেতাঙ্গ অসন্তোষ দক্ষিণ রোডেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে উইনস্টন ফিল্ডকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। ফিল্ডের স্থলাভিষিক্ত হন ইয়ান স্মিথ। তিনি ছিলেন রক্ষণশীল রোডেশীয় ফ্রন্ট পার্টির চেয়ারম্যান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনে অবিলম্বে পরিবর্তনের একজন স্পষ্টবাদী সমালোচক।[৩৪][৩৫]
উপনিবেশের প্রথম রোডেশীয়-বংশোদ্ভূত নেতা স্মিথ শীঘ্রই ব্রিটিশ সরকারে উদারপন্থীদের এবং পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।[৭] ১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বরে, স্মিথ লিসবন সফর করেছিলেন। সেখানে পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও দে অলিভিরা সালাজার স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তাকে "সর্বোচ্চ সমর্থন" করার প্রতিশ্রুতি দেন।[৩৬] দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে নিরাপত্তা সম্পর্ক বজায় রাখার সাধারণ আগ্রহের পাশাপাশি, সালাজার ১৯৬১ সালে গোয়ার ভারতীয় সংযুক্তির সময় পর্তুগালকে সমর্থন করতে ব্রিটেনের অস্বীকৃতি নিয়ে প্রচুর ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি স্মিথকে ব্রিটিশ সরকারকে বিশ্বাস না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।[৩৬] সেই বছরের শেষের দিকে স্বাধীনতার একতরফা ঘোষণার ঘটনায় প্রত্যাশিত নিষেধাজ্ঞাগুলো ভঙ্গ করার সমন্বয় সাধনের জন্য লিসবনে একটি রোডেশীয় বাণিজ্য অফিস খোলা হয়েছিল, যা স্মিথকে আপস না করতে উত্সাহিত করেছিল।[৩৬]
এর বদলে লিসবনে রোডেশীয় ট্রেড অফিস একটি ডি ফ্যাক্টো দূতাবাস হিসাবে কাজ করেছিল। এই বিষয়টি লন্ডনের সাথে রোডেশিয়ার উত্তেজনা সৃষ্টি করে। কারণ ব্রিটিশ সরকার রোডেশিয়ার নিজস্ব বৈদেশিক নীতি পরিচালনায় আপত্তি জানায়।[৩৬]
স্থলবেষ্টিত রোডেশিয়া পর্তুগিজ উপনিবেশ মোজাম্বিকের সীমান্তবর্তী হওয়ার পাশাপাশি প্রত্যাশিত নিষেধাজ্ঞাগুলো ভঙ্গ করার ক্ষেত্রে পর্তুগালের কাছ থেকে "সর্বাধিক সমর্থন" সূচক সালাজারের প্রতিশ্রুতি স্মিথকে লন্ডনের সাথে তার আলোচনায় আত্মবিশ্বাসের আরও ভিত্তি দিয়েছিল[৩৬]। স্মিথ ব্রিটিশ পাঁচটি নীতির গ্রহণযোগ্যতা প্রত্যাখ্যান করে[৩৭] বোঝাতে চেয়েছিলেন যে রোডেশিয়া ইতিমধ্যে আইনত স্বাধীনতার অধিকারী ছিল। এটি এমন একটি দাবি যা গণভোটে প্রধানত শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের দ্বারা ব্যাপকভাবে সমর্থন করা হয়েছিল।[৩৮][৩৯]
এই গণভোট এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল দ্বারা উত্সাহিত হয়ে রোডেশীয় সরকার ব্রিটিশদের সম্মতি ছাড়াই স্বাধীনতা ঘোষণা করার হুমকি দিয়েছিল। হ্যারল্ড উইলসন সতর্ক করে দিয়ে পাল্টা বলেছিলেন যে এই জাতীয় অনিয়মিত পদ্ধতিটি রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসাবে বিবেচিত হবে। যদিও তিনি ইংরেজ "কিথ অ্যান্ড কিন" বা প্রধানত ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ রোডেশীয়দের বিদ্রোহ দমন করার জন্য সশস্ত্র শক্তি ব্যবহার করার বিষয়টি বিশেষভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারম রোডেশীয়দের মধ্যে অনেকেই তখনও যুক্তরাজ্যের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তারা যুক্তরাজ্যের সাথে পারিবারিক বন্ধন রেখেছিলেন।[৪০][৪১] উইলসনের সামরিক বিকল্প বিবেচনা করতে অস্বীকৃতি স্মিথকে তার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে আরও উত্সাহিত করেছিল। আলোচনা দ্রুত ভেস্তে যায় এবং অক্টোবরে একটি নিষ্পত্তি অর্জনের চূড়ান্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। স্মিথ সরকার স্বাধীনতার পাঁচটি নীতি গ্রহণ করতে রাজি ছিল না এবং ব্রিটিশ সরকার যুক্তি দিয়েছিল এই নীতির চেয়ে কম কিছুতে তারা স্বাধীনতার বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে না।[৭]
১৯৬৫ সালের ১১ নভেম্বর রোডেশিয়ার মন্ত্রিসভা স্বাধীনতার একতরফা ঘোষণা (Unilateral Declaration of Independence বা UDI) জারি করে।[৬][৪২][৪৩] যুক্তরাজ্য তত্ক্ষণাৎ ইউডিআইকে "ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ" হিসাবে নিন্দা করা করে। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী উইলসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এই "অবৈধ" পদক্ষেপটি স্বল্পস্থায়ী হবে।[৪৪] তবে, এর স্ব-শাসিত মর্যাদার কারণে রোডেশিয়া কিছু সময়ের জন্য যুক্তরাজ্যের প্রত্যক্ষ প্রভাবের ক্ষেত্রের মধ্যে ছিল না এবং অব্যাহত ব্রিটিশ শাসনের মুখোশটি ইউডিআই দ্বারা একটি সাংবিধানিক কল্পকাহিনী হিসাবে উপস্থাপিত হয়েছিল[২৩]। এই পরিস্থিতিগুলোর আলোকে, উইলসন দ্রুত বুঝতে পেরেছিলেন যে আগত রোডেশীয় সরকারের উপর সরাসরি উদ্দেশ্যসাধনের উপায় জোরদার করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ ছিল।[২৩]
১৯৬৫ সালের ১২ অক্টোবর, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ "সংখ্যালঘু শাসনকে চিরস্থায়ী করার জন্য একতরফাভাবে দক্ষিণ রোডেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য" রোডেশীয় কর্তৃপক্ষের বারবার হুমকির কথা উল্লেখ করেছিল এবং এবং উইলসনকে রোডেশীয় ফ্রন্টকে স্বাধীনতা দাবি করা থেকে বিরত রাখতে তার নিষ্পত্তি করা সমস্ত উপায় (সামরিক শক্তি সহ) ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছিল।[৪৫] ইউডিআই ঘোষণার পরে, জাতিসংঘের কর্মকর্তারা রোডেশীয় সরকারকে "অবৈধ বর্ণবাদী সংখ্যালঘু শাসন" হিসাবে চিহ্নিত করে[৪৬] সদস্য দেশগুলোকে স্বেচ্ছায় রোডেশিয়ার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়ে পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং সামরিক হার্ডওয়্যারের উপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছিলেন। ১৯৬৬ সালের ডিসেম্বরে, জাতিসংঘ পুনরায় ঘোষণা করে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো বাধ্যতামূলক জানিয়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সদস্য দেশগুলোকে রোডেশীয় রফতানি পণ্য যেমন তামাক, ক্রোমিয়াম, তামা, অ্যাসবেস্টস, চিনি এবং গরুর মাংস কেনা থেকে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।[৭]
ব্রিটিশ সরকার ইতোমধ্যেই নিজস্ব ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মোজাম্বিকের বেইরা বন্দরে তেল সরবরাহের নিরীক্ষণের জন্য একটি রয়্যাল নেভি স্কোয়াড্রন প্রেরণ করে। যেখান থেকে একটি কৌশলগত পাইপলাইন রোডেশিয়ার উমতালি পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। যুদ্ধজাহাজগুলো "প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে, যুক্তিসঙ্গতভাবে (দক্ষিণ) রোডেশিয়ার জন্য নির্ধারিত তেল বহনকারী জাহাজগুলোকে প্রতিরোধ করতে হয়েছিল"।[৪৭][৪৮]
কিছু পশ্চিমা দেশ, যেমন সুইজারল্যান্ড, এবং পশ্চিম জার্মানি, যেগুলো জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ছিল না, তারা রোডেশিয়ার সাথে খোলাখুলিভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পশ্চিম ইউরোপে স্মিথ সরকারের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল, যখন এটি জাতিসংঘে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল।[৭] জাপান আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে রোডেশিয়ার রপ্তানির প্রধান প্রাপক ছিল এবং ইরানও নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে রোডেশিয়াকে তেল সরবরাহ করেছিল।[৪৯] পর্তুগাল রোডেশীয় পণ্যগুলোর জন্য একটি বাহক হিসাবে কাজ করেছিল, যা এটি মূল শংসাপত্রের মিথ্যা শংসাপত্র সহ মোজাম্বিকের মাধ্যমে রপ্তানি করেছিল।[৫০] দক্ষিণ আফ্রিকাও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা মানতে অস্বীকার করেছে।[৫১][৫২] ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বার্ড সংশোধনী পাস করা হয়েছিল, যা আমেরিকান সংস্থাগুলোকে রোডেশীয় ক্রোমিয়াম এবং নিকেল পণ্যগুলো স্বাভাবিক হিসাবে আমদানি করার অনুমতি দেয়।[৫৩]
নিষেধাজ্ঞার দুর্বল প্রদর্শন সত্ত্বেও, রোডেশিয়া বিদেশে কূটনৈতিক স্বীকৃতি পাওয়া প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেছিল। ১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে যে এটি "[কোন] পরিস্থিতিতে" ইউডিআই কে স্বীকৃতি দেবে না।[৫৪] দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পর্তুগাল, রোডেশিয়ার বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার, এছাড়াও কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রসারিত করতে অস্বীকার করে এবং "স্বীকৃত প্রতিনিধিদের" মাধ্যমে কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পছন্দ করে, রোডেশিয়ার রাজধানী সালিসবারিতে দূতাবাস খোলেনি।[৫৫] এটি দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পর্তুগিজ সরকারগুলোকে বজায় রাখার অনুমতি দেয় যে তারা ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে চলেছে এবং স্মিথ প্রশাসনের ব্যবহারিক কর্তৃত্বও স্বীকার করে।[৫৬]
প্রাথমিকভাবে, রোডেশিয়া রাজ্য রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি তার অঙ্গীকারবদ্ধ আনুগত্য বজায় রেখে তাকে রোডেশিয়ার রাণী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।[৭] যখন স্মিথ এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্লিফোর্ড ডুপন্ট দক্ষিণ রোডেশিয়ার গভর্নর স্যার হামফ্রে গিবসকে ইউডিআই সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করার জন্য যান, গিবস এটিকে রাষ্ট্রদ্রোহের কাজ বলে নিন্দা করেন। স্মিথ আনুষ্ঠানিকভাবে রেডিওতে ইউডিআই ঘোষণা করার পর, গভর্নর গিবস হোয়াইটহলের ঔপনিবেশিক অফিসের নির্দেশে স্মিথ এবং তার পুরো মন্ত্রিসভাকে অফিস থেকে বরখাস্ত করার জন্য তার রিজার্ভ ক্ষমতা ব্যবহার করেন। যাইহোক, গিবস আইনানুগ ঔপনিবেশিক সরকারের প্রত্যাবর্তনের জন্য কোন দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে অক্ষম ছিলেন। রোডেশিয়ার মন্ত্রীরা কেবল তার নোটিশগুলোকে উপেক্ষা করেছিলেন, দাবি করেছিলেন যে ইউডিআই তার অফিসকে অপ্রচলিত করে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও, গিবস ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্যালিসবারিতে তার সরকারি বাসভবন, গভর্নমেন্ট হাউস দখল করে চলেছিলেন। তিনি অবশেষে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর রোডেশিয়া ত্যাগ করেন।[৫৭] এর আগে তাকে কার্যকরভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল; স্মিথ সরকার বলেছিল যে রানী যদি একজন গভর্নর-জেনারেল নিয়োগ না করেন তবে এটি ডুপন্টকে " সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা " হিসাবে নাম দেবে।[৫৮] স্মিথ ডুপন্টকে গভর্নর-জেনারেল নাম দেওয়ার ইচ্ছা করেছিলেন, কিন্তু রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এই পরামর্শটিও বিবেচনা করবেন না। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হোয়াইটহলের এই দাবিকে সমর্থন করেছিল যে গিবসই ছিলেন রাণীর একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি, এবং তাই রোডেশিয়াতে একমাত্র বৈধ কর্তৃপক্ষ।
১৯৬৮ সালের সেপ্টেম্বরে, রোডেশিয়া হাইকোর্টের আপিল বিভাগ রায় দিয়েছিল যে আয়ান স্মিথের প্রশাসন কেবল ডি ফ্যাক্টো নয়, দেশের ডি জুর সরকারে পরিণত হয়েছে।[৫৯] তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করার জন্য, প্রধান বিচারপতি স্যার হিউ বিডল হুগো গ্রোশিয়াসের বেশ কয়েকটি বিবৃতি ব্যবহার করেছিলেন, যিনি বলেছিলেন যে কোনও জাতি সঠিকভাবে কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চল শাসন করার দাবি করতে পারে না - যদি এটি সেই অঞ্চলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায়। বিডল যুক্তি দিয়েছিলেন যে রোডেশিয়ার বিরুদ্ধে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক যুদ্ধের কারণে তাকে (একই সময়ে) রোডেশিয়ার শাসক হিসাবে বর্ণনা করা যায় না।[৬০][৬১] এই রায়টি এমন নজির স্থাপন করেছিল যে ইউডিআই সত্ত্বেও, ক্ষমতাসীন স্মিথ সরকার "আইনত তার পূর্বসূরিরা আইনত যা করতে পারত তা করতে পারে"।[৬২]
বিশিষ্ট আইনজীবী ডব্লিউআর ওয়েলির রাষ্ট্রপতিত্বে একটি স্যালিসবারি কমিশন ১৯৬৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত রোডেশীয় কর্তৃপক্ষের জন্য উন্মুক্ত সাংবিধানিক বিকল্পগুলো অধ্যয়ন করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল, যার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশদের সাথে একটি মীমাংসার বিষয়ে পুনরায় আলোচনা শুরুর আগেই তা বাতিল করা হয়েছিল।[২৩][৬৩] ওয়েলি কমিশন দেখেছে যে ব্যবহারিক এবং আইনগত দিক থেকে, "ইউরোপীয়দের অবশ্যই স্থায়ী ইউরোপীয় আধিপত্যের যে কোনো বিশ্বাসকে আত্মসমর্পণ করতে হবে", উল্লেখ করে যে সংখ্যালঘু শাসন স্থায়ীভাবে টেকসই ছিল না।[৭] যাইহোক, ওয়ালিও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন অবিলম্বে কাম্য নয়।[৭]
রোডেশিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে পার্থক্য কমানোর লক্ষ্যে আলোচনা রয়্যাল নেভির জাহাজে একবার ১৯৬৬ সালের ডিসেম্বরে এবং আবার ১৯৬৮ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল[৬৪][৬৫][৬৬] উভয় প্রচেষ্টা চুক্তি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল, যদিও হ্যারল্ড উইলসন তিনি পূর্বে ঘোষিত পাঁচটিতে একটি ষষ্ঠ নীতি যুক্ত করেছিলেন: "এটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে জাতি নির্বিশেষে, সংখ্যালঘু দ্বারা সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা [কোনও] সংখ্যালঘুর উপর কোনও নিপীড়ন করা হচ্ছে না। নতুন বন্দোবস্তে পৌঁছাতে ব্যর্থতার পরে রোডেশীয় সংকল্প কঠোর হয়েছিল, রোডেশীয় ফ্রন্টের আরও উগ্রপন্থী উপাদানগুলো একটি প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের আহ্বান জানিয়েছিল।[৭]
১৯৬৯ সালে অনুষ্ঠিত একটি দ্বি-প্রস্তাব গণভোটের সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাথে অবশিষ্ট সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রস্তাবটি ৬১,১৩০ বনাম ১৪,৩২৭ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পেয়ে পাস হয়।[৭] ১৯৭০ সালের ২ মার্চ রোডেশিয়া নিজেকে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে। নতুন সংবিধানের অধীনে একজন রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে নামমাত্র রিপোর্ট করতেন। রোডেশীয় সরকারের কেউ কেউ নিরর্থক আশা করেছিল যে একটি প্রজাতন্ত্রের ঘোষণা অবশেষে অন্যান্য দেশগুলোকে স্বীকৃতি দিতে প্ররোচিত করবে।[৬৭]
রোডেশিয়ার ইউডিআই-পরবর্তী বছরগুলোতে দেশের উপর অর্থনৈতিক, সামরিক এবং রাজনৈতিক চাপের একটি ক্রমবর্ধমান ধারা দেখা যায়। এই পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন নিয়ে আসে, পরিবর্তনের প্রবর্তনের কারণের পরিবর্তে এই কারণগুলোর সামগ্রিকতা।[৬৮] ২০০৫ সালে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের একটি সম্মেলনে রোডেশিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়, ইউডিআই স্নায়ুযুদ্ধের ষড়যন্ত্র দ্বারা জটিল হওয়া একটি বিদ্যমান জাতিগত সংঘাতের কারণে উদ্ভূত হয়েছিল।[৬৯]
ইউডিআইয়ের সমালোচকরা বলেছিলেন যে ইয়ান স্মিথ দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ জনসংখ্যার ব্যয়ে একটি ঔপনিবেশিক শাসক শ্রেণীর সুযোগ-সুবিধা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন।[৭০] স্মিথ দাবি করে তার পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দেয়, কৃষ্ণাঙ্গ রোডেশীয় সংখ্যাগরিষ্ঠরা সমসাময়িক আফ্রিকান মান অনুসারে একটি যুক্তিসঙ্গতভাবে শিল্পায়িত রাষ্ট্রের জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে খুব অনভিজ্ঞ ছিল।[৩০]
বৃহৎ পরিসরে ইউডিআই সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন এবং যুক্তরাজ্যের সাথে সম্পর্কের প্রতি শ্বেতাঙ্গ জনগণের মনোভাবকে আরও কঠোর করে।[৪২] শ্বেতাঙ্গ রোডেশীয় বাসিন্দাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্রিটিশ অভিবাসী বা ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত হওয়ায় তাদের অনেকেরই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি বিশেষ সহানুভূত ছিল।[৪২] তবে, তাদের শর্তে তাদের স্বাধীনতা দিতে যুক্তরাজ্যের অস্বীকৃতি ব্রিটিশ শর্তে একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বিরোধিতা আরও নিশ্চিত করে এবং রোডেশীয় রাজনীতিতে ব্রিটিশ হস্তক্ষেপের প্রতি তাদের নেতিবাচক মনোভাবকে পুষ্ট করেছে।[৪২] ইউডিআই পূর্ববর্তী বছরগুলোতে, শ্বেতাঙ্গ রোডেশীয়রা ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেকে অবরুদ্ধ ও হুমকী, চিরতরে অনিরাপদ এবং মেট্রোপোল দ্বারা অবনমিত হিসাবে দেখেছিল, নিজেকে ছাড়া অন্য কারও উপর নির্ভর করতে অক্ষম।[৩০] "সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনের আগে কোনও স্বাধীনতা নেই" নীতিটি যুক্তরাজ্যের সাথে শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের সম্পর্ককে পরিবর্তন করে এবং ঔপনিবেশিক বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের অবিশ্বস্ততা এবং দ্বিচারিতা সম্পর্কে সন্দেহ বাড়িয়ে তুলেছিল। বিশেষত ব্রিটিশ সরকার যেহেতু পরবর্তীকালে এই সিদ্ধান্তকে একটি আনুষ্ঠানিক নীতি হিসাবে গ্রহণ করে। এই পরিস্থিতি ইউডিআই এড়াতে পরিচালিত হয়েছিল। শ্বেতাঙ্গ রোডেশীয়রা উপনিবেশ বিলোপকরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই তা প্রতিরোধ করতে লড়াই করছিল।[৩০]
কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী দলগুলো ইউডিআইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সাথে প্রতিক্রিয়া জানায়। একজন জেডএএনইউ কর্মকর্তা বলেছিলেন, "... যারা স্বাধীনতা এবং একটি অর্থবহ জীবনকে লালন করেন তাদের সকলের জন্য, ইউডিআই একটি সংঘর্ষের পথ নির্ধারণ করেছে যা পরিবর্তন করা যায় না। ১৯৬৫ সালের ১১ নভেম্বর সেই ভূখণ্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামের মোড় সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম থেকে প্রাথমিকভাবে সামরিক সংগ্রামের দিকে মোড় নেয়।"[৪৩] তবে জাতীয়তাবাদীরা রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের প্রাথমিক কৌশল হিসাবে সশস্ত্র সংগ্রামকে গ্রহণ করতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগে।[৪৩] এই সময়ে সহিংস কৌশলগুলোর উদ্দেশ্য ছিল রোডেশীয় সুরক্ষা বাহিনীকে গুরুতরভাবে দুর্বল করার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বাহ্যিক হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করা।[৪৩]
রোডেশীয় রপ্তানিগুলো সাধারণত প্রতিযোগিতামূলক ছিল। পূর্বে ব্রিটিশ বাজারে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধার অধিকারী থাকায় এই প্রাক্তন উপনিবেশ স্বাধীনতার আগে তাদের অর্থনীতি ও রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যের গতি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি। ইউডিআই অনুসরণ করে রোডেশিয়া দেখাতে শুরু করে যে এটি আরও বেশি পরিমাণে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।[৩০][৭১] রোডেশীয় ফ্রন্ট দেশীয় উত্পাদনে প্রদত্ত প্রণোদনা প্রবর্তন শুরু করার পরে, শিল্পের উৎপাদন নাটকীয়ভাবে প্রসারিত হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় প্রণীত পাল্টা ব্যবস্থার একটি কঠোর ব্যবস্থা কমপক্ষে এক দশক ধরে তাদের প্রভাবকে ভোঁতা করতে সফল হয়েছিল।[৭] পরবর্তী নয় বছরে রোডেশীয় সংস্থাগুলো, তাদের সম্পদ ফ্রিজ করা এবং বিদেশী অ্যাকাউন্টগুলো ব্লক করা, স্থানীয় এবং বিদেশী উভয় সহায়ক সংস্থার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ফাঁকির ধূর্ত কৌশলগুলোও নিখুঁত করে একটি গোপন বাণিজ্য নেটওয়ার্কে পরিচালিত হয়।[৭]
১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত, রোডেশিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে কার্যত আর কোন সংলাপ হয়নি। ১৯৬৯ সালে একটি গণভোটে, শ্বেতাঙ্গ ভোটাররা একটি নতুন সংবিধান এবং একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়, যার ফলে ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে যথাযথভাবে ঘোষণা করা ব্রিটিশ ক্রাউনের সাথে রোডেশিয়ার শেষ সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়। এডওয়ার্ড হিথের নির্বাচনের পরপরই এই অচল অবস্থার পরিবর্তন হয়। তিনি ক্ষমতায় এসে পুনরায় আলোচনা শুরু করেন।[৭২] স্মিথ আশাবাদী ছিলেন যে হিথ অ্যাংলো-রোডেশীয় সম্পর্কের প্রতিকারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। যদিও তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব অ্যালেক ডগলাস-হোম প্রস্তাবিত মূল "পাঁচ নীতি"কে প্রকাশ্যে সমর্থন করায় স্মিথ যথেষ্ট হতাশ হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের নভেম্বরে, ডগলাস-হোম স্যালিসবারির সাথে যোগাযোগ পুনর্নবীকরণ করেন এবং একটি প্রস্তাবিত চুক্তি ঘোষণা করেন যা উভয় পক্ষের জন্য সন্তোষজনক হবে। এটি রোডেশিয়ার ১৯৬৯ সালের সংবিধানকে সরকারের আইনি কাঠামো হিসাবে স্বীকৃতি দেয়, যখন একমত হয়েছিল যে ধীরে ধীরে আইনী প্রতিনিধিত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনে নিরবচ্ছিন্ন অগ্রগতির জন্য একটি গ্রহণযোগ্য সূত্র ছিল।[৭] তবুও, নতুন বন্দোবস্তটি অনুমোদিত হলে কৃষ্ণাঙ্গ রাজনৈতিক অবস্থানের তাত্ক্ষণিক উন্নতিও বাস্তবায়ন করবে, বর্ণবাদী বৈষম্য শেষ করার একটি উপায় সরবরাহ করবে এবং পশ্চাদমুখী সাংবিধানিক সংশোধনীর বিরুদ্ধে একটি শক্ত নিশ্চয়তা প্রদান করবে।[৭৩]
প্রস্তাবিত বন্দোবস্তের বাস্তবায়ন জনগণের গ্রহণযোগ্যতার উপর নির্ভরশীল, কিন্তু রোডেশীয় সরকার এটিকে সর্বজনীন (শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ উভয়) গণভোটে জমা দিতে ক্রমাগতভাবে অস্বীকার করে।[৭] একজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ লর্ড পিয়ার্সের নেতৃত্বে চব্বিশ সদস্যের একটি কমিশনকে তাই এই বিষয়ে জনমত যাচাই করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।[৭৪] ১৯৭২ সালে কমিশন আগ্রহ গোষ্ঠীর সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং মতামতের নমুনা নেওয়া শুরু করে - যদিও ব্যাপক উদাসীনতার সম্মুখীন হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।[৩০] কমিশনের মতে, শ্বেতাঙ্গরা বন্দোবস্তের পক্ষে ছিল, এবং বর্ণসংকর বা এশীয় বংশের রোডেশীয়রা সাধারণত সন্তুষ্ট ছিল, যখন বন্দোবস্তের শর্তগুলোর প্রতি কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্রভাবে নেতিবাচক।[৭২][৭৫] ৩০ টির মতো কৃষ্ণাঙ্গ রোডেশীয় প্রধান এবং রাজনীতিবিদ তাদের বিরোধিতা করে কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিটেনকে প্রস্তাবগুলো থেকে প্রত্যাহার করতে প্ররোচিত করেছিল।[৭৪]
১৯৬২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে, জাতীয়তাবাদীরা ৩৩টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ২৮টি অগ্নিসংযোগের এবং তারা ২৭টি যোগাযোগ অবকাঠামোর বিরুদ্ধে নাশকতার ঘটনায় জড়িত ছিল।[৪৩] জাতীয়তাবাদীরা বেশ কিছু কৃষ্ণাঙ্গ রোডেশীয়কেও হত্যা করে। তাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছিল।[৪৩] এনকোমোর দল, জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান পিপলস ইউনিয়ন (জেএপিইউ) সেই বছর ঘোষণা করেছিল যে তারা একটি সামরিক শাখা, জিম্বাবুয়ে পিপলস রেভোলিউশনারি আর্মি (জিআইপিআরএ) গঠন করেছে এবং "অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনা শুরু করার এবং যুবকদের নাশকতার প্রশিক্ষণের জন্য দূরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"[৪৩] ১৯৬০ সালের গোড়ার দিকে, জেএপিইউ এর পূর্বসূরি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চেকোস্লোভাকিয়ার সাথে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপন করে এর সদস্যদের জন্য পূর্ব ইউরোপে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছিল।[৭৬] ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে, এনকোমো মস্কো সফর করেন এবং রোডেশিয়াতে জেএপিইউ-এর নেতৃত্বে সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।[৭৬] তিনি জিপিআরএ-এর জন্য সোভিয়েত তহবিল এবং অস্ত্রের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন "এই উদ্দেশ্যে জেএপিইউ-এর অস্ত্র, বিস্ফোরক, রিভলভারের প্রয়োজন... গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষাকারী ব্যক্তিদের ঘুষ দেওয়ার জন্য, নাশকতা চালানোর জন্য পার্টির অর্থও প্রয়োজন,"[৭৬] সোভিয়েতরা ১৯৬৩ সালে শুরু হওয়া সীমিত তহবিল দিয়ে জেএপিইউ সরবরাহ করতে সম্মত হয় এবং ইউডিআই-এর পরে আর্থিক সহায়তার মাত্রা বৃদ্ধি করে।[৭৬] ১৯৬৩ সালে জিআইপিআরএ সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে তার প্রথম আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেছিল।[৭৬] সোভিয়েতরা ১৯৬৪ সালের প্রথম দিকে জিপিআরএ সশস্ত্রদের গেরিলা যুদ্ধে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে।[৭৬]
সহিংস কৌশলটির এনকোমোর প্রকাশ্য সমর্থন শ্বেতাঙ্গ রাজনীতিবিদদের জেডএপিইউ র বিরোধিতা নিশ্চিত করেছে এবং কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের প্রতি তাদের নেতিবাচক মনোভাবকে পুষ্ট করেছে।[৪৩] জিপ্রা গঠনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে, রোডেশীয় সরকার জেডএপিইউ কে নিষিদ্ধ করেছিল। ফলে সেই দলের সমর্থকদের আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে হয়।[৭৭] তারা কঠোর নিরাপত্তা আইন পাস করে সমাবেশের অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে সন্দেহভাজন রাজনৈতিক নাশকতাকারীদের দমন করার ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করে।[৪৩] এই আইনে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অগ্নিসংযোগ বা বিস্ফোরক ব্যবহারের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়।[৭]
রোডেশিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী দলগুলোর দ্বারা গেরিলা যুদ্ধের উত্থান এবং শহুরে বিদ্রোহের কাজগুলো বর্ণবাদী রাজনীতিকে শ্বেতাঙ্গ রোডেশীয় জনসাধারণের বক্তৃতায় আইনশৃঙ্খলার ইস্যুতে উন্নীত করার সুযোগ দেয়। স্মিথ এবং তার সরকারের কাছে, কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা ছিল রাষ্ট্রহীন ভিন্নমতাবলম্বী যাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক নয়, বরং অপরাধ এবং চিরস্থায়ী অনাচার। উদাহরণস্বরূপ, স্মিথ তার মন্তব্যে বিদ্রোহীদের "গ্যাংস্টার" হিসাবে বর্ণনা করতে পছন্দ করেছিলেন।[৩০] কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র থেকে উৎসারিত অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহারও সংঘর্ষের বর্ণগত গতিশীলতাকে ছদ্মবেশ ধারণ করে, যার ফলে শ্বেতাঙ্গ রোডেশীয়রা দাবি করতে পারে যে তারা ঘরোয়া রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিবর্তে সোভিয়েত-নির্দেশিত কমিউনিস্ট আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য ছিল।[৬৮] স্মিথ এবং তার সমর্থকরা নিজেদেরকে আন্তর্জাতিক কমিউনিজমের জোড়া হুমকির বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের সম্মিলিত রক্ষক হিসেবে মনে করতেন। এটি কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী সশস্ত্রদের প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন এবং পশ্চিমের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।[৪২] " মুক্ত বিশ্বকে রক্ষা করার" এবং "পশ্চিমা সভ্যতা" বজায় রাখার জন্য তাদের অগ্রগামী পূর্বপুরুষদের খ্রিস্টান ঐতিহ্যের প্রতি বারবার আবেদন এই বিশ্বাসগুলোকে প্রতিফলিত করে।[৪২] সেই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের মধ্যে এটি খুব কমই একটি অস্বাভাবিক মতামত ছিল; এই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দ্বারা সংকলিত একটি ডসিয়ার পাওয়া গেছে যে:
অনেক [দক্ষিণ আফ্রিকান] শ্বেতাঙ্গরা.........বিশ্বাস করে যে মহাদেশ জুড়ে বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা কমিউনিস্ট অনুপ্রাণিত এবং পরিচালিত; যে কমিউনিস্ট প্ররোচনা ছাড়া এটি কোনও সমস্যা হবে না। তারা দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সরকারগুলোর বিরুদ্ধে পরিচালিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে কমিউনিস্ট দেশগুলো থেকে প্রদত্ত উপকরণ ও প্রশিক্ষণের দিকে ইঙ্গিত করে। তারা পর্তুগিজ, রোডেশীয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে কাজ করা বিদেশী ভিত্তিক কৃষ্ণাঙ্গ মুক্তিকামী গোষ্ঠীগুলোকে দক্ষিণ আফ্রিকায় কমিউনিস্ট ঠেলে দেওয়ার নেতৃত্ব হিসাবে দেখে।[৭৮]
জেডএপিইউ এর সশস্ত্র সংগ্রাম বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা ১৯৬২ এবং ১৯৬৩ সালের মধ্যে পার্টির মধ্যে একটি উপদলীয় বিভক্তির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। জেডএপিইউ ভিন্নমতাবলম্বীদের একটি সংখ্যা এনকোমোর কর্তৃত্ব প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদের নিজস্ব সংগঠন জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন (জেডএএনইউ) গঠন করে। এর রাষ্ট্রপতি ছিলেন এনদাবাঙ্গিঙ্গি সিথোল এবং রবার্ট মুগাবে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক।[৭৬] মুগাবে পরবর্তীতে ৭ বছর জিম্বাবুয়ের প্রধানমন্ত্রী এবং ৩০ বছর দেশটির রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ১৯৬৪ সালের আগস্টের মধ্যে, জেডএএনইউ-কে রোডেশীয় সরকারও নিষিদ্ধ করেছিল। সরকার এর সদস্যদের হিংস ভীতি প্রদর্শনের ব্যাপক কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী উল্লেখ করে।[৭৯] জেডএএনইউ-এর এজেন্ডা ছিল বামপন্থী এবং প্যান-আফ্রিকানবাদী। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলুপ্তি সহ একদলীয় রাষ্ট্রের দাবি জানায়।[৭] জাতিগত উত্তেজনাও বিভক্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। জেডএএনইউ প্রায় সম্পূর্ণভাবে রোডেশিয়ার শোনা-ভাষী জনগণের মধ্য থেকে নিয়োগ করেছিল।[৭৬] এর প্রধান সহায়ক ভিত্তি ছিল মাশোনাল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলের গ্রামীণ কৃষক।[৭] জেডএপিইউ বিভক্ত হওয়ার পরেও তার সিনিয়র নেতৃত্বের মধ্যেও শোনা সদস্যদের ধরে রেখেছে।[৭৬] যাইহোক, তারপরে এটি প্রধানত এনদেবেলের জাতিগত গোষ্ঠী থেকে নিয়োগ করা হয়।[৬৮] সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে জেডএপিইউ-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে, জেডএএনইউ নিজেকে সোভিয়েত ব্লকের দ্বারা বহিষ্কৃত দেখতে পায়। কিন্তু তারা শীঘ্রই গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে একটি নতুন মিত্র খুঁজে পায়।[৭৬] এর রাজনৈতিক মতাদর্শ জেডএপিইউ-এর চেয়ে মাওবাদের নীতির দ্বারা কিছুটা বেশি প্রভাবিত হয়েছিল এবং একটি সহানুভূতিশীল চীনা সরকার শীঘ্রই জেডএএনইউ-এর নিজস্ব যুদ্ধ প্রচেষ্টার জন্য অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিতে সম্মত হয়েছিল।[৮০]
ইউডিআই-এর পরে, জেডএএনইউ তার নিজস্ব সামরিক শাখা, জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (জেডএএনএলএ) গঠন করে।[৬৮] যদিও জেডএএনএলএ এবং জেডআইপিআরএ উভয়ই রোডেশীয় সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা করেছিল, তাদের নিজ নিজ নেতৃত্ব বিদ্রোহ পরিচালনার উপায় নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছিল। জেডআইপিআরএ সোভিয়েত চিন্তাধারার পক্ষপাতী, ডিয়েন বিয়েন ফু-এ ভিয়েত মিনের মতো একটি প্রচলিত যুদ্ধ জয়ের আশায় অত্যাধুনিক অস্ত্র অর্জনের উপর জোর দেয়।[৬৮] জেডএএনএলএ এটি পরিচালিত এলাকাগুলোতে স্থানীয় জনগণের রাজনীতিকরণের উপর বেশি জোর দেয়, তারা ছিল যুদ্ধের আরও অনিয়মিত শৈলীর পক্ষে।
১৯৬৬ সালের এপ্রিলের গোড়ার দিকে, নানজিংয়েরর একটি চীনা সামরিক স্থাপনায় প্রশিক্ষণ নেওয়া জেডএএনএলএ বিদ্রোহীদের দুটি দল জাম্বিয়া থেকে রোডেশিয়ায় প্রবেশ করে। তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নাশকতা এবং শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের হত্যা করার জন্য অস্পষ্ট নির্দেশ জারি করেছিল।[৪৩] রোডেশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।[৪৩] অন্য সাতজন প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার এড়িয়ে গিয়ে সিনোয়ার কাছে একটি বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছিল।[৪৩] তাদের বিস্ফোরক চার্জ বিস্ফোরণে ব্যর্থ হয় এবং নিরাপত্তা বাহিনী আবিষ্কার করে, যারা ২৮ এপ্রিল বিদ্রোহীদের নিকটবর্তী একটি খামারে ট্র্যাক করেছিল,[৪৩] তারা সংক্ষিপ্ত বন্দুক যুদ্ধের পর সাতজনই কোণঠাসা হয়ে মারা যায়। এই ঘটনাটিকে রোডেশীয় বুশ যুদ্ধের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করা হয়।[৮১][৮২] সিনোইয়াতে এই ঘটনাটি গেরিলাদের সমর্থকদের দ্বারা " চিমুরেঙ্গা দিবস " হিসাবে স্মরণ করা হয় এবং জেডএএনইউ হ্যাজিওগ্রাফিতে এটি গর্বের স্থান দখল করে।
১৯৬৭ সালের আগস্টে প্রায় সত্তরটি জিপিআরএ বিদ্রোহীর একটি বৃহৎ এবং উন্নত-সজ্জিত দল জাম্বিয়া থেকে রোডেশিয়ায় অনুপ্রবেশ করেছিল। তারা দক্ষিণ আফ্রিকার একটি মিত্র সশস্ত্র সংগঠন উমখোন্তো উই সিজওয়ে (এমকে) থেকে নিয়োগকারী যোদ্ধাদের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়েছিল।[৮০] বিদ্রোহীরা স্থানীয় জনগণের সাথে পূর্বে যোগাযোগ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়, যা তাদের উপস্থিতির কথা অবিলম্বে রোডেশীয় কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেয়। এক মাসের মধ্যে, রোডেশীয় পুলিশ এবং সেনাবাহিনী অপারেশন নিকেল নামে একটি পাল্টা আক্রমণ শুরু করে সাতচল্লিশজন বিদ্রোহীকে হত্যা করে, আরও বিশ জনকে বন্দী করে এবং জীবিতদের সীমান্ত পেরিয়ে বতসোয়ানায় নিয়ে যায়৷ ১৯৬৮ সালের গোড়ার দিকে শতাধিক বিদ্রোহীর একটি আরও বড় জেডআইপিআরএ দল আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল।[৬৮] ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে একটি তৃতীয় জেডআইপিআরএ অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা একই রকম বিপর্যয়কর ফলাফলের সম্মুখীন হয়।[৬৮] তারপরে, জেডআইপিআরএ শুধুমাত্র ছোট অস্ত্রে সজ্জিত বিদ্রোহীদের বড় দল নিয়ে দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার ধারণা ত্যাগ করে। এটি নিজেকে আরও অনিয়মিত যুদ্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে যতক্ষণ না এটি একটি বড় প্রচলিত আক্রমণের জন্য যথেষ্ট ভারী অস্ত্র মজুত করতে পারে।[৮০] তার অংশের জন্য, জেডএএনএলএ নেতৃত্ব একটি প্রধান প্রচলিত প্রবৃত্তি জয়ের সাথে জিপিআরএ-এর ক্রমাগত স্থিরকরণের সমালোচনা করেছিল। তারা যুক্তি দিয়েছিল যে ব্যর্থ অনুপ্রবেশগুলো রোডেশীয় সামরিক বাহিনীকে এমন কঠিন যুদ্ধে জড়িত করার নিরর্থকতা প্রদর্শন করে যেখানে এটি একটি অনস্বীকার্য সুবিধা ছিল।[৮০] স্থানীয়দের কাছ থেকে সমর্থন পেতে জেডআইপিআরএ-এর ব্যর্থতাও উল্লেখ করা হয়েছিল, এবং জেডএএনএলএ তার ভবিষ্যত কার্যক্রমের ক্ষেত্র জুড়ে বেসামরিক সমর্থন গড়ে তোলার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী গোপন রাজনীতিকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করে।[৮০]
১৯৭২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জেডএএনএলএ অস্ত্র সংগ্রহ করে উত্তর-পূর্ব রোডেশিয়াতে তথ্যদাতা এবং সমর্থকদের একটি বিশাল ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিল।[৮০] মোজাম্বিকের স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে মোজাম্বিকের সীমান্ত প্রদেশগুলোতে পর্তুগিজ কর্তৃত্ব ক্ষয় হওয়ার ফলে জেডএএনএলএ সেখানে বহিরাগত অভয়ারণ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়।[৮০] এটি মোজাম্বিকের নেতৃস্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ মোজাম্বিক (ফ্রিলিমো) এর সাথে একটি সামরিক জোট গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার মধ্যেও ছিল।[৮০] ২১শে ডিসেম্বর, রেক্স নোঙ্গোর নেতৃত্বে জেডএএনএলএ বিদ্রোহীদের একটি দল মোজাম্বিক থেকে রোডেশিয়ায় প্রবেশ করে এবং একটি বিচ্ছিন্ন বাণিজ্যিক খামারে অভিযান চালায়।[৬৮] পরের মাসগুলোতে এই আক্রমণটি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের উপর ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং এর ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।[৬৮] এই অভিযানের প্রচার মূল্য, জেডএএনএলএ এর রাজনীতিকরণ অভিযানের সাফল্যের সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে গোয়েন্দা তথ্য অস্বীকার করে এবং বিদ্রোহীদের জন্য আরও নিয়োগ দেয়।[৬৮] জবাবে রোডেশীয় নিরাপত্তা বাহিনী পর্তুগিজ সেনাবাহিনীর সাথে মোজাম্বিকে অভিযান পরিচালনা শুরু করে যাতে তারা সীমান্ত অতিক্রম করার আগে জেডএএনএলএ বিদ্রোহীদের আটকাতে পারে।[৮৩]
প্রথমে জেডআইপিআরএ ও এমকে এবং পরে জেডএএনএলএ ও ফ্রেলিমোর মধ্যে গঠিত হওয়া জোট, রোডেশিয়াকে সক্রিয় সহায়তার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পর্তুগালের দিকে ক্রমবর্ধমানভাবে দৃষ্টিপাত করতে প্ররোচিত করে। রোডেশীয় রাজনীতিবিদরা ঘন ঘন অন্যান্য দুটি দেশের কর্মকর্তাদের তাদের অস্থির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির মিলের ভিত্তিতে অভিন্ন নিরাপত্তা স্বার্থের কথা মনে করিয়ে দেন। তারা কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহ এবং মোজাম্বিকের ফ্রেলিমোর সাথে পর্তুগিজদের বিপর্যয়, সেইসাথে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার বিদ্রোহের সাথে কিছুটা হলেও তাদের দেশের অবস্থানের মধ্যে শক্তিশালী সমান্তরাল দেখেছিল। আলকোরা এক্সারসাইজের পৃষ্ঠপোষকতায়, তিনটি দেশের আমলারা নিয়মিতভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে শুরু করে এবং অভিন্ন-সাধারণ কূটনৈতিক অবস্থানের সন্ধান করতে শুরু করে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন সিনিয়র কৌশলবিদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল অ্যালান ফ্রেজার ১৯৭০ সালে লিখেছিলেন, "আমাদের কারো মনে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না যে আমাদের একটি সাধারণ শত্রু রয়েছে: আমরা, অর্থাৎ পর্তুগাল, আরএসএ এবং রোডেশিয়া। যদি না আমরা বিশদভাবে পরাজয়ের সম্ভাবনার জন্য নিজেদেরকে উন্মুক্ত রাখি, আমাদের অবশ্যই এই শত্রুর সাথে যৌথভাবে লড়াই করতে হবে - যদি একই সাথে না হয়।" তা সত্ত্বেও, মোজাম্বিকের অপারেশনাল স্তরে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি এবং কিছু সীমিত সমন্বয় ছাড়াও, পর্তুগিজরা রোডেশিয়াকে সামান্য সিদ্ধান্তমূলক সহায়তা দিতে পারে। মোজাম্বিকে পর্তুগিজ সামরিক সংস্থানগুলো ফ্রেলিমোতে ব্যস্ত ছিল এবং এক দশকের যুদ্ধের কারণে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং বিদেশী মিত্রকে সাহায্য করার জন্য খুব কমই রেহাই পাওয়া যেতে পারে। রোডেশিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে অনেক বেশি আশা করেছিল, যেটি অনেক বেশি সামরিক সম্পদ এবং বিদেশে অসীম বেশি কূটনৈতিক প্রভাবের অধিকারী ছিল।
১৯৭৪-১৯৭৫ সালে মোজাম্বিকে পর্তুগিজ শাসনের পতনের পর, স্মিথ সরকারের পক্ষে অনির্দিষ্টকালের জন্য শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের শাসন বজায় রাখা আর কার্যকর ছিল না। এই সময়ের মধ্যে এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার ভর্স্টারও এই দৃষ্টিভঙ্গিতে এসেছিলেন। যদিও ভর্স্টার তার নিজের দেশের কৃষ্ণাঙ্গ জনগণকে ছাড় দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না, তিনি উপসংহারে পৌঁছেছিলেন যে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসন এমন একটি দেশে টেকসই নয় যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যা ২২:১।[৮৪] ১৯৭৬ সালে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত ২৭০,০০০ রোডেশীয় এবং ছয় মিলিয়ন আফ্রিকান ছিল।[৮৫]
দেশটিতে জড়িত আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো (যেমন লোনরো( রোডেশীয় সরকারের কাছ থেকে কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী দলগুলোতে তাদের সমর্থন স্থানান্তর করে। ব্যবসায়ী নেতা এবং রাজনীতিবিদরা এনকোমোকে তার ইউরোপ সফরে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। জেডএএনইউ ব্যবসায়িক সমর্থকদেরও আকৃষ্ট করেছিল।[৮৬] ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার মিত্রদের দ্বারা সমর্থকদের দেওয়া তহবিল এবং অস্ত্র সহায়তা, জেডআইপিআরএ এবং জেডএএনএলএ উভয়কেই আরও অত্যাধুনিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেয়। এর ফলে গেরিলারা রোডেশিয়াতে যে সামরিক চাপ রাখতে সক্ষম হয়েছিল তা বাড়িয়ে দেয়।
১৯৭২ সাল পর্যন্ত, গেরিলাদের ধারণ করা একটি পুলিশি পদক্ষেপের চেয়ে সামান্য বেশি ছিল। এমনকি ১৯৭৫ সালের আগস্টের শেষের দিকে রোডেশিয়ার সরকার এবং কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী নেতারা ভিক্টোরিয়া পানিপ্রপাতে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জাম্বিয়ার মধ্যস্থতায় আলোচনার জন্য মিলিত হয়েছিল। সেখানে আলোচনা প্রক্রিয়াগত পর্যায়ের বাইরে যায়নি।[৮৭] রোডেশীয় প্রতিনিধিরা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন ঠেকাতে সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।[৮৮] যাইহোক, ১৯৭৫ সালে মোজাম্বিকে পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। রোডেশিয়া তখন নিজেকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিকূল রাষ্ট্র দ্বারা বেষ্টিত ছিল। এমনকি এর একমাত্র প্রকৃত মিত্র দক্ষিণ আফ্রিকা একটি মীমাংসার জন্য চাপ দিয়েছিল।
র্যান্ড ডেইলি মেইল সম্পাদকীয়তে ১৯৭৬ সালের মে মাসে লেখা হয়: "আরও মধ্যপন্থী কৃষ্ণাঙ্গ নেতাদের সাথে সমঝোতায় পৌঁছানোর একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করার পরে, রোডেশিয়ার শ্বেতাঙ্গরা কনফারেন্স টেবিলের পরিবর্তে বন্দুকের নলের চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদের মুখোমুখি হওয়ার মর্মান্তিক পথ পছন্দ করেছে বলে মনে হচ্ছে। রোডেশিয়ায় বর্ণযুদ্ধের দিকে উতরাই পথটি রক্তে ক্রমশ পিচ্ছিল হয়ে উঠছে।"[৮৯]
এই মুহুর্তে, ফ্রিলিমো এর সাথে জেডএএনইউ এর জোট এবং মোজাম্বিক এবং পূর্ব রোডেশিয়ার মধ্যে ছিদ্রযুক্ত সীমান্ত জেডএএনইউ/জেডএএনএলএ যোদ্ধাদের বড় আকারের প্রশিক্ষণ এবং অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম করে। জাম্বিয়া এবং বতসোয়ানার সরকারকে তাদের অঞ্চলগুলোতে প্রতিরোধ আন্দোলনের ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সাহসী পদক্ষেপ নেয়। ১৯৭৬ সালে গেরিলারা রোডেশিয়ার গভীরে অভিযান শুরু কর। তারা রাস্তা, রেলপথ, অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তু এবং বিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থানগুলোতে আক্রমণ করে।[৯০]
গ্রামীণ এলাকার জনসংখ্যার উপর বিদ্রোহীদের প্রভাব সীমিত করার জন্য সরকার মালয় এবং ভিয়েতনামে ব্যবহৃত একটি কৌশলগত হ্যামলেট নীতি গ্রহণ করে। স্থানীয় লোকজনকে সুরক্ষিত গ্রামে (PVs) স্থানান্তরিত করতে বাধ্য করা হয়। সেগুলো বিদ্রোহীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরকার কর্তৃক কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং সুরক্ষিত ছিল। সুরক্ষিত গ্রামগুলোকে গেরিলারা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সাথে তুলনা করেছে। কিছু সমসাময়িক বিবরণ দাবি করে যে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে এই হস্তক্ষেপ তাদের অনেককে প্ররোচিত করেছিল। তারা আগে গেরিলাদের সমর্থন করতে নিরপেক্ষ ছিল।[৯১]
যুদ্ধটি জড়িত তিনটি পক্ষের (জেডএএনইউ এবং জেডএপিইউ এবং রোডেশীয় আর্মি) থেকে ক্রমবর্ধমান বর্বরতার চালিয়ে যাচ্ছিল। ১৯৮০ সালে রোডেশিয়ায় প্রাক্তন নিউজিল্যান্ড সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণকারী মাইক সুব্রিটজকি এই যুদ্ধকে "রক্তাক্ত এবং নৃশংস উভয়ই বলে বর্ণনা করেছিলেন এবং তিনটি পক্ষেরই বিরোধী যোদ্ধাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বের করে এনেছিলেন।"[৯২]
বুশ যুদ্ধের লড়াইয়ে রোডেশীয় রাজ্যের একটি বড় সমস্যা ছিল সর্বদা জনবলের অভাব।[৯৩] :৬০১১৯৭৩ সালে নিয়োগের জন্য দায়বদ্ধ ৩,০০০ শ্বেতাঙ্গ পুরুষের মধ্যে শুধুমাত্র ১,০০০ জন রিপোর্ট করেছিল।[৯৩] :৬০১ ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে রোডেশীয় আর্মি বলেছিল যে যুদ্ধ অভিযান চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের ন্যূনতম ১,০৪১ জন লোকের প্রয়োজন। যাদেরকে ডাকা হয়েছিল, তাদের মধ্যে মাত্র ৫৭০ জন দায়িত্ব পালনের জন্য রিপোর্ট করেছে এবং বাকিরা দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।[৯৩] :৬০১ রাজ্যটি যখনযু দ্ধে লড়াই করার জন্য আরও বেশি সংখ্যক পুরুষদের আহ্বান করে তখন শ্বেতাঙ্গ অভিবাসন বৃদ্ধি পায়। এটি একটি দুষ্ট চক্র তৈরি করে, যা ধীরে ধীরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য রোডেশীয় রাজ্যের ক্ষমতা সীমিত করে।[৯৩] :৬০২শ্বেতাঙ্গ অভিবাসন বন্ধ করার জন্য, স্মিথ সরকার ১৯৭৫ সালে রোডেশীয় নাগরিকদের বিদেশী মুদ্রা রাখা নিষিদ্ধ করার জন্য একটি আইন আনেন, কিন্তু আইনটি ব্যাপকভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছিল।[৯৩] :৬০৪শ্বেতাঙ্গ অভিবাসনকে উত্সাহিত করার জন্য, জেডএএনইউ এবং জেডএপিইউ-এর গেরিলারা রাষ্ট্রকে আরও বেশি পুরুষ ডাকতে এবং শ্বেতাঙ্গ বেসামরিকদের হত্যা করার জন্য দেশ জুড়ে অর্থনৈতিক মূল্যের যে কোনও কিছু এবং সমস্ত কিছুকে আক্রমণ করার কৌশল অনুসরণ করেছিল।[৯৩] :৬০৬রোডেশীয় শ্বেতাঙ্গ নাগরিকদের হত্যা করার প্রবণতা একটি "প্রতিধ্বনি প্রভাব" ছিল কারণ জেডএএনইউ এবং জেডএপিইউ প্রত্যেকে অনুমান করেছিল যে একজন শ্বেতাঙ্গ নাগরিকের জন্য নিহত হওয়ার ফলে প্রায় ২০ জন রোডেশিয়া ছেড়ে চলে গেছে।[৯৩] :৬০৬
রোডেশিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অত্যাবশ্যক অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা হারাতে শুরু করে। দেশটি শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা সত্ত্বেও এটিকে কখনই কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার রোডেশীয় সামরিক বাহিনীকে যে জ্বালানি ও যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করেছিল তার উপর সীমাবদ্ধতা রেখেছিল। তারা যুদ্ধের প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য পূর্বে যে কর্মী ও সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিল তাও প্রত্যাহার করে নেয়, যদিও গোপন সামরিক সহায়তা অব্যাহত ছিল।[৯৪]
১৯৭৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের একটি রূপে সম্মত হওয়ার জন্য স্মিথের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য একসাথে কাজ করেছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের উদ্যোগের প্রতিক্রিয়ায়, ১৯৭৬ সালে ইয়ান স্মিথ দুই বছরের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের নীতি গ্রহণ করেন।[৯৪] রোডেশীয়রা তখন আরও ছাড় দেয়, কিন্তু সেই ছাড়গুলো, মধ্যপন্থী কৃষ্ণাঙ্গ নেতাদের সাথে একটি "অভ্যন্তরীণ মীমাংসা" করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেল এটি যুদ্ধ শেষ করার জন্য অপর্যাপ্ত ছিল।
সেই সময়ে, কিছু রোডেশীয় বলেছিল যে ব্রিটিশ-অধ্যুষিত রোডেশিয়া এবং আফ্রিকান-অধ্যুষিত দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে এখনও বিব্রত ইতিহাস আংশিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারকে রোডেশিয়াতে সহায়তা প্রত্যাহার করতে পরিচালিত করেছিল। ইয়ান স্মিথ তার স্মৃতিচারণে বলেছেন যে যদিও অনেক শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান রোডেশিয়াকে সমর্থন করেছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধানমন্ত্রী জন ভর্স্টারের কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান রাজ্যগুলোর সাথে ডিটেন্টের নীতি শেষ পর্যন্ত রোডেশিয়াকে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আরও সময় কেনার জন্য "বলির পাঠা" হিসাবে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। অন্যান্য পর্যবেক্ষকরা রোডেশিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়াকে এই প্রক্রিয়াটির প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন যা দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের দিকে পরিচালিত করেছিল।[৯৫]
দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউডিআই।য়ের ড. সু অনস্লো বলেন: "১৯৭৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা রোডেশীয় প্রশ্নের নিষ্পত্তিকে বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখেছিল: মনস্তাত্ত্বিক আঘাতের ক্ষতটি কাটাতে ... অ্যাঙ্গোলার সংঘর্ষে তার পরাজয়ের কারণে; রোডেশিয়ায় সম্ভাব্য কিউবার হস্তক্ষেপ এবং পশ্চিমা শক্তির সমর্থন ও সমর্থন ছাড়াই দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরেকটি শীতল যুদ্ধের আঞ্চলিক সংঘাতের মধ্যে চুষে নেওয়ার সম্ভাবনা।"[৯৬]
১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে জঙ্গিরা সফলভাবে রোডেশিয়ার অর্থনীতিকে উল্লেখযোগ্য চাপের মধ্যে ফেলেছিল যখন দেশে গেরিলাদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে।[৯৭][৯৮] সরকার দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং যোগাযোগের লাইনগুলোকে রক্ষা করার পক্ষে সীমানা রক্ষা করার চেষ্টা করার তার প্রাথমিক কৌশল ত্যাগ করে।
১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে, রোডেশিয়ার ফ্রন্ট-লাইন বাহিনীতে প্রায় ২৫,০০০ নিয়মিত সৈন্য এবং পুলিশ ছিল। এটি তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী সেনাবাহিনী এবং পুলিশ রিজার্ভ দ্বারা সমর্থিত ছিল।[৯৯] এর যান্ত্রিক কন্টিনজেন্টে হালকা সাঁজোয়া গাড়ি এবং ইম্প্রোভাইজড মাইন-সুরক্ষিত সাঁজোয়া কর্মী বাহক ছিল, যা যুদ্ধের শেষ বছরে সরবরাহ করা আটটি ট্যাঙ্ক (পোলিশ নির্মিত টি-ফাইভ ফাইভ এল ডি ট্যাঙ্ক) দ্বারা পরিপূরক। রোডেশীয় এয়ার ফোর্স ক্যানবেরা হালকা বোমারু বিমান, হকার হান্টার ফাইটার বোমারু বিমান, পুরোনো ডি হ্যাভিল্যান্ড ভ্যাম্পায়ার জেট এবং সেইসাথে কিছুটা পুরানো কিন্তু তখনও শক্তিশালী, হেলিকপ্টার আর্ম উভয়ের একটি ভাণ্ডার পরিচালনা করেছিল। উচ্চ প্রশিক্ষিত বিশেষ অপারেশন ইউনিট সহ এই বাহিনীগুলো ১৯৭৭ সালের অপারেশন ডিঙ্গো এবং অন্যান্য অনুরূপ অপারেশনগুলোর মতো দেশের বাইরে প্রতিরোধ আন্দোলনের ক্যাম্পগুলোতে ধ্বংসাত্মক অভিযান চালাতে সক্ষম ছিল।
তা সত্ত্বেও, ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে দেশের অভ্যন্তরে গেরিলা চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ১৯৭৮-১৯৭৯ সালের মধ্যে, যুদ্ধটি গেরিলা যুদ্ধের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছিল। এটি রোডেশীয় শাসন এবং নাগরিক জনগণের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করে এবং মধ্যপন্থী কৃষ্ণাঙ্গ নেতাদের সাথে সমঝোতামূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য বাহ্যিক স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত জঙ্গিদের আটকে রাখার চেষ্টা করার রোডেশীয় সরকারের কৌশল।
এই সময়ের মধ্যে একটি চুক্তি করার প্রয়োজনীয়তা বেশিরভাগ রোডেশীয়দের কাছে স্পষ্ট ছিল, কিন্তু সবার কাছে নয়। ইয়ান স্মিথ ১৯৭৬ সালের প্রথম দিকে তার অস্থির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিকে ভ্যান ডার বাইলকে বরখাস্ত করেন।[১০০] ভ্যান ডের বাইল ইউডিআইয়ের আগে থেকেই দেশীয় বিরোধিতা বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যেকোনো ধরনের আপস করার কঠোর বিরোধী ছিলেন।
১৯৭৭ সালে পি কে ভ্যান ডার বাইল একটি ব্রিটিশ শান্তি পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন:"... শেষ মানুষ এবং শেষ কার্তুজ পর্যন্ত লড়াই করা এবং কিছু সম্মানের সাথে মারা যাওয়া ভাল। কারণ, এখানে আমাদের সামনে যা উপস্থাপন করা হচ্ছে তা কিছুটা অপমানজনক..."[১০১]
ভ্যান ডার বাইল শেষ পর্যন্ত কেপটাউনের বাইরে তার দেশের এস্টেটে অবসর নিয়েছিলেন। তবে রোডেশিয়ায় এমন উপাদান প্রধানত প্রাক্তন সুরক্ষা বাহিনীর কর্মীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত এবং তার বাইরেও সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের জোর বিরোধিতা করেছিল। নতুন শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের প্রাক্কালে রোডেশিয়ায় আসতে থাকে।
স্যালিসবারির ৬ষ্ঠ মার্কেসের ছেলে লর্ড রিচার্ড সেসিলের মতো সাংবাদিকদের কাজ রোডেশীয় এবং তাদের বিদেশী সমর্থকদের মনোবলকে দৃঢ় করেছে।[১০২] লর্ড রিচার্ড আইটিএন-এর জন্য সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন যা সাধারণত "অক্ষম" বিদ্রোহীদের সাথে "অসাধারণ পেশাদার" সরকারি সৈন্যদের তুলনা করে।[১০৩] জেডএএনএলএ যোদ্ধাদের একটি দল ২০ এপ্রিল ১৯৭৮ সালে লর্ড রিচার্ডকে হত্যা করে। তখন তিনি ফায়ার ফোর্স অপারেশনে নিযুক্ত একটি রোডেশীয় এয়ারবর্ন ইউনিটের সাথে ছিলেন।[১০৪]
১৯৭৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে বেসামরিক এয়ার রোডেশিয়া এয়ারলাইনার, হুনীয়ি নামে একটি ভিকার্স ভিসকাউন্ট কারিবা এলাকায় জিপআরএ যোদ্ধারা একটি সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। পরবর্তীতে এর ১৮ জনের মধ্যে ১০ জনের মধ্যে ১০ জনের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে গুলি করে বিধ্বস্ত করে। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য রোডেশীয়দের ইচ্ছাকে শেষ পর্যন্ত ধ্বংস করার ঘটনা বলে মনে করা হয়। যদিও সামরিক দিক থেকে নগণ্য এই বিমানের ক্ষতি (এবং ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় ভিসকাউন্ট, যার নাম উমনিয়াটি) রোডেশিয়ার নাগরিক সমাজের কাছে প্রসারিত প্রতিরোধ আন্দোলনের নাগাল প্রদর্শন করে।[১০৫]
যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য রোডেশীয়দের উপায়ও দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে একটি জেডএএনএলএ ইউনিট স্যালিসবারির উপকণ্ঠে প্রবেশ করে এবং প্রধান তেল স্টোরেজ ডিপোতে রকেট এবং অগ্নিসংযোগকারী ডিভাইস রাউন্ড ছুঁড়ে দেয়। এটি দেশের সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত অর্থনৈতিক সম্পদ। স্টোরেজ ট্যাঙ্কগুলো পাঁচ দিন ধরে পুড়তে থাকে। সেখান থেকে নির্গত ধোঁয়ার কলাম ১৩০ কিলোমিটার (৮০ মা) দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল। পাঁচ শত হাজার barrel (৭৯,০০০ মি৩) পেট্রোলিয়াম পণ্য (রোডেশিয়ার কৌশলগত তেল রিজার্ভ নিয়ে গঠিত) এর ফলে ধ্বংস হয়ে যায়।[১০৬]
সরকারের প্রতিরক্ষা ব্যয় $৩০ মিলিয়ন রোডেশীয় ডলার থেকে বৃদ্ধি পায়। ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সালে জাতীয় বাজেটের ৮.৫%, ১৯৭৮ থেকে ১৯৭৯ সালে $৪০০ মিলিয়ন রোডেশীয় ডলার, জাতীয় বাজেটের ৪৭%। ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা-উত্তর সরকার ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জাতীয় ঋণ উত্তরাধিকার সূত্রে পায়।[১০৭]
রোডেশীয় সেনাবাহিনী নো-গো এলাকায় এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে অভিযান চালানোর সময় মূল অবস্থানগুলো ("অত্যাবশ্যক সম্পদ গ্রাউন্ড") ধরে রাখার তার "মোবাইল পাল্টা আক্রমণাত্মক" কৌশল অব্যাহত রেখেছে। যদিও প্রায়শই ভারী গেরিলা হতাহত হওয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণভাবে সফল হয়, এই ধরনের অভিযানগুলোও তাদের উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে বিশেষ বাহিনী লুসাকা (জাম্বিয়া( তে জোশুয়া এনকোমোর বাসভবনে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একটি অভিযান চালায়।[১০৮] অভিযানের কয়েক ঘন্টা আগে এনকোমো এবং তার পরিবার তাড়াহুড়ো করে চলে যায়। তাদেরকে পরিষ্কারভাবে সতর্ক করা হয়েছিল যে অভিযান আসছে।
১৯৭৯ সালে কিছু বিশেষ বাহিনীর ইউনিটকে হাতির দাঁত চোরাচালান এবং চোরাচালানের আড়াল হিসাবে বিদ্রোহী বিরোধী অভিযান ব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। কর্নেল রিড-ডেলি (সেলাস স্কাউটের কমান্ডার) আবিষ্কার করেন যে তার ফোনে বাগ ছিল এবং এই বিষয়ে একজন উচ্চপদস্থ অফিসারকে চ্যালেঞ্জ করার পরে অবাধ্যতার জন্য কোর্ট মার্শাল করা হয়েছিল। তিনি সম্ভাব্য সবচেয়ে হালকা সাজা পেয়েছিলেন। এটি একটি সতর্কতা হলেও তিনি তার প্রত্যয়ের সাথে লড়াই চালিয়ে যান এবং অবশেষে তার কমিশন থেকে পদত্যাগ করে সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন।
১৯৭৮-১৯৭৯ সাল নাগাদ, নিয়মিত সেনাবাহিনীর ৭০% পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গ সৈন্যদের সমন্বয়ে গঠিত ছিল (যদিও সেনাবাহিনী এবং পুলিশ রিজার্ভ উভয়ই অপ্রতিরোধ্যভাবে শ্বেতাঙ্গ ছিল)। ১৯৭৯ সালের মধ্যে নিয়মিত সেনাবাহিনীতে ৩০ জন কৃষ্ণাঙ্গ কমিশনড অফিসারও ছিল। যদিও প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গ ইউনিটের সৈন্যদের মধ্যে আনুগত্যের কোনো পরামর্শ ছিল না (বিশেষ করে সেলস স্কাউটস বা রোডেশীয় আফ্রিকান রাইফেলস - আরএআর)। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে ১৯৮০ সালের নির্বাচনের সময়, রোডেশীয় আফ্রিকান রাইফেলস সৈন্যদের অনেকেই রবার্ট মুগাবেকে ভোট দিয়েছিলেন।[১০৯]
রোডেশীয় সরকার এবং মধ্যপন্থী আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী দলগুলোর মধ্যে যারা নির্বাসিত ছিল না এবং যুদ্ধে জড়িত ছিল না, তাদের মধ্যে ১৯৭৮ সালের ৩ মার্চে স্বাক্ষরিত একটি অভ্যন্তরীণ সমঝোতার ফলাফল হিসাবে ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইউনাইটেড আফ্রিকান ন্যাশনাল কাউন্সিল (ইউএএনসি) পার্টি এই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং এর নেতা আবেল মুজোরেওয়া (একজন ইউনাইটেড মেথডিস্ট চার্চ বিশপ) ১৯৭৯ সালের ১ জুনে দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী হন। দেশটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জিম্বাবুয়ে রোডেশিয়া। অভ্যন্তরীণ বন্দোবস্তের ফলে দেশের পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী, সিভিল সার্ভিস এবং বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ আপাতত শ্বেতাঙ্গদের হাতে চলে যায়। এটি পার্লামেন্টে শ্বেতাঙ্গদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসন নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল মূলত শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যবস্থা যা অনেকের চোখে, বিশেষ করে বিদ্রোহীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের সমান ছিল না।[১১০] যাইহোক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ১২ জুন জিম্বাবুয়ে রোডেশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শেষ করার পক্ষে ভোট দেয়।[১১১]
যদিও ১৯৭৯ সালের নির্বাচনকে রোডেশীয় সরকার অ-জাতিগত এবং গণতান্ত্রিক বলে বর্ণনা করেছিল। এতে প্রধান জাতীয়তাবাদী দল জেডএএনইউ এবং জেডএপিইউ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ইয়ান স্মিথের প্রস্তাব সত্ত্বেও, পরবর্তী দলগুলো এমন একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল। সেখানে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান অনিরাপদ হবে এবং একটি প্রস্তাবিত সংবিধানের অধীনে যা তারা খসড়া তৈরিতে কোনো ভূমিকা পালন করেনি এবং যাকে শক্তিশালী শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু বিশেষাধিকার বজায় রাখা হয়েছে বলে মনে করা হয়েছিল।
বিশপ মুজোরেওয়ার সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। বুশ যুদ্ধ অবিরাম অব্যাহত ছিল এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এমন কোনো চুক্তির বৈধতা মানতে অস্বীকার করে যা প্রধান জাতীয়তাবাদী দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। ব্রিটিশ সরকার (তখন সম্প্রতি নির্বাচিত মার্গারেট থ্যাচারের নেতৃত্বে) ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে শান্তি সম্মেলনে যোগদানের জন্য সমস্ত পক্ষকে আমন্ত্রণ জারি করেছিল। এই আলোচনাগুলো ১৯৭৯ সালের শেষের দিকে লন্ডনে হয়েছিল। ভূমি সংস্কার নিয়ে মতবিরোধের কারণে তিন মাসব্যাপী সম্মেলনটি প্রায় উপসংহারে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, কিন্তু তা ল্যাঙ্কাস্টার হাউস চুক্তিতে পরিণত হয়। ইউডিআই সমাপ্ত হয় এবং রোডেশিয়া সাময়িকভাবে ব্রিটিশ উপনিবেশের ('দক্ষিণ রোডেশিয়ার উপনিবেশ') অবস্থায় ফিরে আসে।[১১২] চুক্তি অনুসারে, লর্ড সোমেস সম্পূর্ণ আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ক্ষমতা সহ গভর্নর হন।
ল্যাঙ্কাস্টার হাউস চুক্তি আরও একটি যুদ্ধবিরতির জন্য প্রদান করে যা ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে সাধারণ নির্বাচন দ্বারা অনুসরণ করা হয়েছিল। রবার্ট মুগাবের নেতৃত্বাধীন জেডএএনইউ এই নির্বাচনে জিতে। কেউ কেউ অভিযোগ করে, জেডএপিইউ এর সমর্থকদের সহ এর রাজনৈতিক বিরোধিতাকে আতঙ্কিত করে প্রাক্তন বিদ্রোহীদের মাধ্যমে যারা ল্যাঙ্কাস্টার হাউস চুক্তির দ্বারা নির্ধারিত গেরিলা সমাবেশ পয়েন্টে নিজেদের সীমাবদ্ধ করেনি। পর্যবেক্ষক এবং সোমেসকে অন্য দিকে তাকানোর জন্য অভিযুক্ত করা হয় এবং মুগাবের বিজয় প্রত্যয়িত হয়েছিল। তবুও, খুব কমই সন্দেহ করতে পারে যে তার সংখ্যাগরিষ্ঠ শোনা উপজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে মুগাবের সমর্থন অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। জেডএএনইউ কে দেশ দখল করা থেকে বিরত রাখতে রোডেশীয় সামরিক বাহিনী একটি অনুভূত চুরি হওয়া নির্বাচনের ("অপারেশন কোয়ার্টজ") বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটানোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছিল। কথিত অভ্যুত্থানের মধ্যে ছিল মুগাবের হত্যা এবং সারা দেশে গেরিলা সমাবেশ পয়েন্টে সমন্বিত হামলা। পরিকল্পনাটি শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়, কারণ এটা স্পষ্ট ছিল যে ভোটারদের ভয় দেখানো সত্ত্বেও মুগাবে কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিলেন, সেইসাথে অভ্যুত্থান কোন বাহ্যিক সমর্থন লাভ করবে না, এবং একটি বিস্ফোরণ যা দেশকে আচ্ছন্ন করবে তা অনিবার্য হিসাবে দেখা হয়েছিল।
১৯৮০ সালের ১৮ এপ্রিলে দেশটি কমনওয়েলথ অফ নেশনসের মধ্যে জিম্বাবুয়ে প্রজাতন্ত্র হিসাবে স্বাধীন হয় এবং এর রাজধানী সালিসবারিকে দুই বছর পর হারারে নামকরণ করা হয়।
ভূখণ্ডে রোডেশিয়া আধুনিক জিম্বাবুয়ের সমতুল্য। এটি দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ ছিল। এটি ১৫° ও ২৩° দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং ২৫° ও ৩৪° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর দক্ষিণে দক্ষিণ আফ্রিকা, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে বেচুয়ানাল্যান্ড প্রটেক্টরেট (পরবর্তীতে বতসোয়ানা(, উত্তর-পশ্চিমে জাম্বিয়া এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে মোজাম্বিকের সীমানা ছিল। এর উত্তর-পশ্চিম কোণটি দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকা (বর্তমান নামিবিয়া), দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রায় ১৫০ মিটার (৫০০ ফুট) দূরে ছিল, যা প্রায় একটি চার-দেশীয় চতুর্ভুজ গঠন করে। দেশের বেশির ভাগ অংশই ছিল উচ্চভূমি। এর মধ্যে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় মালভূমি (উচ্চ ভূমি) যা দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর দিকে ১,০০০ এবং ১,৬০০ মি (৩,৩০০ এবং ৫,২০০ ফু) এর মধ্যে উচ্চতা বিশিষ্ট। দেশের একদম পূর্বাঞ্চল ছিল পার্বত্য অঞ্চল। এই অঞ্চলটি পূর্ব উচ্চভূমি নামে পরিচিত। সেখানে মাউন্ট ইনয়াঙ্গানির সর্বোচ্চ বিন্দু ২,৫৯২ মি (৮,৫০৪ ফু) উচ্চতায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
রোডেশিয়ার অনেক স্থানীয় বৈচিত্র সহ একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু ছিল। দক্ষিণের অঞ্চলগুলো তাদের তাপ এবং শুষ্কতার জন্য পরিচিত ছিল, কেন্দ্রীয় মালভূমির কিছু অংশে শীতকালে তুষারপাত হতো। জাম্বেজি উপত্যকাটি তার চরম উত্তাপের জন্যও পরিচিত ছিল এবং পূর্ব উচ্চভূমিগুলো সাধারণত শীতল তাপমাত্রা এবং দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের অভিজ্ঞতা লাভ করে। দেশটির বর্ষাকাল ছিল অক্টোবরের শেষ থেকে মার্চ পর্যন্ত এবং উষ্ণ জলবায়ু উচ্চতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিমিত ছিল। দেশটি বারবার খরার সম্মুখীন হয়েছিল এবং প্রচণ্ড ঝড় বিরল ছিল।[১১৩]
দেশটি বেশিরভাগই সাভানা ছিল, যদিও আর্দ্র এবং পাহাড়ী পূর্ব উচ্চভূমিগুলো গ্রীষ্মমন্ডলীয় চিরহরিৎ এবং শক্ত কাঠের বনের অঞ্চলের ক্ষেত্রে সুবিধাজন ছিল। এই পূর্বাঞ্চলীয় উচ্চভূমিতে পাওয়া গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে সেগুন, মেহগনি, স্ট্র্যাংলার ডুমুর বিশাল নমুনা, ফরেস্ট নিউটোনিয়া, বড় পাতা, শ্বেতাঙ্গ স্টিঙ্কউড, চিরিন্দা স্টিঙ্কউড, নবথর্ন এবং আরও অনেক কিছু।
দেশের নিম্নাঞ্চলে জ্বর গাছ, মোপানে, কমব্রেটাম ও বাওবাব প্রচুর। দেশটির বেশিরভাগ অংশই মিওম্বো বনভূমি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল, যেখানে ব্র্যাকিস্টেজিয়া প্রজাতি এবং অন্যান্যদের আধিপত্য ছিল। অসংখ্য ফুল ও ঝোপঝাড়ের মধ্যে ছিল হিবিস্কাস, ফ্লেম লিলি, স্নেক লিলি, স্পাইডার লিলি, লিওনোটাস, ক্যাসিয়া, ট্রি উইস্টেরিয়া এবং ডম্বেয়া। রোডেশিয়াতে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী পাওয়া যায়। এছাড়াও অনেক সাপ এবং টিকটিকি, ৫০০ টিরও বেশি পাখির প্রজাতি এবং ১৩১টি মাছের প্রজাতি ছিল।
দক্ষিণ রোডেশিয়া কখনই কমনওয়েলথ অফ নেশনসের মধ্যে পূর্ণ ডমিনিয়নের মর্যাদা পায়নি। দক্ষিণ রোডেশীয়রা ১৯২৩ সালে ' দায়িত্বশীল সরকার ' অর্জন থেকে নিজেদের শাসন করেছিল। এর নির্বাচনী রেজিস্টারে সম্পত্তি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল। বছরের পর বছর ধরে জাতীয় এবং পৌরসভা পর্যায়ে বিভিন্ন নির্বাচনী ব্যবস্থা এই মানগুলোকে সমুন্নত রেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৮৯৯ সালে প্রথম দক্ষিণ রোডেশীয় আইন পরিষদে নির্বাচনের ভোটাধিকার নিম্নলিখিত প্রয়োজনীয়তা ধারণ করে:
ভোটাররা ব্রিটিশ প্রজা, পুরুষ, ২১ বছর বা তার বেশি বয়সী, তাদের ঠিকানা এবং পেশা লিখতে এবং তারপর নিম্নলিখিত আর্থিক প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করতে সক্ষম হবেন: (ক) দক্ষিণ রোডেশিয়ায় একটি নিবন্ধিত খনির দাবির মালিকানা, বা (খ) দখল করা £৭৫ পাউন্ড মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি, বা (গ) দক্ষিণ রোডেশিয়ায় বার্ষিক £৫০ পাউন্ড মজুরি বা বেতন প্রাপ্তি। যোগ্যতা (খ) এবং (গ) এর জন্য ছয় মাসের একটানা বসবাসেরও প্রয়োজন ছিল।
সিসিল রোডসের "সকল সভ্য পুরুষের জন্য সমান অধিকার" এর আদেশ অনুসরণ করে, ভোটাধিকারে কোন প্রকাশ্য জাতিগত উপাদান ছিল না। আবশ্যিক শর্ত ভোটারদের থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে বাদ দিয়েছে।
১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত, দক্ষিণ রোডেশিয়ার একটি প্রাণবন্ত রাজনৈতিক জীবন ছিল। সেখানে ডান ও বামপন্থী দলগুলো ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। রোডেশীয় লেবার পার্টি ১৯২০ এবং ১৯৩০ এর দশক জুড়ে আইনসভা এবং মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলে আসন দখল করেছিল। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একজন উদারপন্থী গারফিল্ড টড। তিনি শিক্ষা, আবাসন এবং স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগের মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য অনেক কিছু করেছিলেন। যাইহোক, সরকার টডকে অফিস থেকে বাধ্য করে কারণ তার প্রস্তাবিত সংস্কারকে অনেক শ্বেতাঙ্গ খুব উগ্রপন্থী হিসাবে দেখেছিল।
১৯৫৮ সাল থেকে, শ্বেতাঙ্গ বসতি স্থাপনকারীদের রাজনীতি সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চারপাশে সংহত এবং অস্পষ্ট হয়ে ওঠে, যা ইউডিআই-এর মঞ্চ তৈরি করে। ১৯৬১ সালের সংবিধান ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ রোডেশিয়া এবং স্বাধীন রোডেশিয়াকে শাসিত করেছিল। সেখানে ওয়েস্টমিনস্টার সংসদীয় ব্যবস্থা ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন সম্পত্তি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাতি নির্বিশেষে পৃথক ভোটার তালিকার একটি সিস্টেম দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছিল। শ্বেতাঙ্গরা বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে শেষ করেছে।
১৯৬৯ সালের রিপাবলিকান সংবিধান একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা করে। এটি একটি পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সেনেট এবং একটি সরাসরি নির্বাচিত হাউস অফ অ্যাসেম্বলি নিয়ে গঠিত। কার্যকরভাবে শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন সংরক্ষিত ছিল। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক তাৎপর্য ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা ছিল।
স্বল্পস্থায়ী জিম্বাবুয়ে রোডেশিয়ার সংবিধানে প্রথমবারের মতো একটি কৃষ্ণাঙ্গ নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচিত হয়েছিল। ১০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮টি শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে সম্মত স্বাধীনতা সংবিধান সেই বিধানগুলোকে জলাঞ্জলি দেয়। হাউস অফ অ্যাসেম্বলিতে শ্বেতাঙ্গদের জন্য ১০০টি আসনের মধ্যে ২০টি এবং সেনেটে ৪০টি আসনের মধ্যে ৮টি সংরক্ষিত করা ছিল। সংবিধান সর্বসম্মত সম্মতি ছাড়াই জিম্বাবুয়ে কর্তৃপক্ষকে সাত বছরের জন্য সংবিধান পরিবর্তন করতে নিষিদ্ধ করেছিল এবং আরও তিন বছরের জন্য সংসদে তিন-চতুর্থাংশ ভোটের প্রয়োজন ছিল। সরকার ১৯৮৭ সালে শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত আসন বাতিল করার জন্য সংবিধান সংশোধন করে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে একজন নির্বাহী রাষ্ট্রপতি দিয়ে প্রতিস্থাপন করে। ১৯৯০ সালে সরকার সিনেট বিলুপ্ত করে।
রোডেশিয়ার একটি কেন্দ্রীভূত সরকার ছিল এবং প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে প্রাদেশিক মর্যাদা সহ সাতটি প্রদেশ এবং দুটি শহরে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি প্রদেশের একটি প্রাদেশিক রাজধানী ছিল যেখান থেকে সাধারণত সরকারি প্রশাসন পরিচালিত হত।
প্রদেশ | মূলধন |
---|---|
ম্যানিকালল্যান্ড | উমতলী |
উত্তর ম্যাশোনাল্যান্ড | সালিসবারি |
দক্ষিণ ম্যাশোনাল্যান্ড | সালিসবারি |
ভিক্টোরিয়া | ফোর্ট ভিক্টোরিয়া |
উত্তর মাতাবেলেল্যান্ড | বুলাওয়েও |
দক্ষিণ মাতাবেলেল্যান্ড | বুলাওয়েও |
মিডল্যান্ডস | গোয়েলো |
দক্ষিণ রোডেশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটিশ নির্ভরতাগুলোর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিল যে এটি অর্থায়ন করেছিল এবং তার নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী এবং কমান্ড কাঠামো তৈরি করেছিল।[১১৪] ইউডিআই-এর পরে, এটি ব্রিটিশ সরকারের জন্য একটি বিশেষ দ্বিধা তৈরি করেছিল, যা রোডেশিয়ার বিদ্রোহ রাজ্যকে বলপ্রয়োগ করে শেষ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রস্তাব বিবেচনা করে এবং প্রত্যাখ্যান করেছিল।[১১৪] হ্যারল্ড উইলসন একবার মন্তব্য করেছিলেন যে রোডেশিয়ার স্বাধীনতার অবসান ঘটানো "একজন ধ্বংসাত্মক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার মতো ঘটনা হবে না। এর অর্থ হবে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, এবং সম্ভবত একটি রক্তাক্ত যুদ্ধ একটি রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধে পরিণত হবে।"[১১৪] রোডেশীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ঙ্কর প্রকৃতি, সেইসাথে দুর্বৃত্ত উপনিবেশের পক্ষে সরাসরি দক্ষিণ আফ্রিকার হস্তক্ষেপের ব্রিটিশ ভয়, সামরিক বিকল্পগুলোকে আরও বিবেচনার জন্য অগ্রাধিকার দেয়।[১১৪]
এর বেশিরভাগ অস্তিত্বের জন্য রোডেশিয়া ৩,৪০০ সৈন্যের একটি ছোট পেশাদার স্থায়ী সেনাবাহিনী বজায় রেখেছিল, যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ছিল কৃষ্ণাঙ্গ স্বেচ্ছাসেবক।[১১৪] অনেক ঔপনিবেশিক সেনাবাহিনী র ঐতিহ্যে, এটি প্রাথমিকভাবে বিদ্রোহ-বিরোধী যুদ্ধ বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কর্মকাণ্ডের জন্য প্রশিক্ষিত এবং সজ্জিত হালকা পদাতিক ব্যাটালিয়নে সংগঠিত ছিল,[১১৫] এবং সামান্য কামান বা বর্ম ছিল।[১১৪] রয়্যাল রোডেশীয় এয়ার ফোর্সের (RRAF) ১,০০০ জন কর্মী এবং ছয়টি স্কোয়াড্রন বিমান ছিল, যার মধ্যে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশটি হকার হান্টার এবং ডি হ্যাভিল্যান্ড ভ্যাম্পায়ার স্ট্রাইক বিমান এবং ইংলিশ ইলেকট্রিক ক্যানবেরা লাইট বোমারু বিমান ছিল।[১১৪] এটিতে একটি হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রন, একটি ট্রান্সপোর্ট স্কোয়াড্রন এবং একটি হালকা রিকনেসান্স স্কোয়াড্রনও ছিল।[১১৪] রোডেশীয় সামরিক বাহিনীকে ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকা পুলিশ (BSAP), একটি সুসজ্জিত পুলিশ বাহিনী দ্বারা সমর্থিত ছিল, যার শিরোনামটি ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকা কোম্পানির আইন প্রয়োগকারী বিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছিল।[১১৪] BSAP এর নিজস্ব সাঁজোয়া যান এবং একটি শক্তিশালী আধাসামরিক ক্ষমতা ছিল।[১১৪] দেশীয় এবং বহিরাগত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইও) উপর ন্যস্ত ছিল।[১১৬]
ক্রমবর্ধমান গ্রামীণ বিদ্রোহের ফলস্বরূপ, রোডেশীয় নিরাপত্তা বাহিনী শ্বেতাঙ্গ বাহিনী এবং টেরিটোরিয়াল ফোর্স এবং টেরিটোরিয়াল রিজার্ভের সংরক্ষকদের উপর আরও বেশি নির্ভর করতে শুরু করে।[১১৫] নিয়মিত ইউনিটগুলো রোডেশীয় বুশ যুদ্ধ জুড়ে ছোট ছিল কিন্তু ক্রমবর্ধমানভাবে বিশেষীকৃত হয়ে ওঠে এবং প্রায়শই তাদের আকারের সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়।[১১৭] নিরাপত্তা বাহিনীতে অসম সংখ্যক কর্মী অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা প্রথম মালয়ান জরুরী অবস্থার পাশাপাশি এডেন জরুরী অবস্থার সময় পদক্ষেপ দেখেছিল এবং তা দের অভিজ্ঞতা রোডেশিয়ার প্রতিরক্ষা সংস্থাকে বিদ্রোহ-বিরোধী যুদ্ধ এবং বিশেষ করে ছোট ইউনিট কৌশলগুলোতে একটি শক্ত ভিত্তি দিয়েছে।[১১৬] তা সত্ত্বেও, অপারেশনাল এলাকার বিশালতা এবং রোডেশিয়ার সীমিত জনশক্তির পুল সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং বিএসএপিকে ক্রমাগত অতিরিক্ত প্রসারিত করেছে।[১১৬] বাজেট এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা, জনবলের ঘাটতির সাথে মিলিত হওয়ার অর্থ হল নিরাপত্তা বাহিনী গেরিলা আন্দোলনের সাথে মেলে তা দ্রুত প্রসারিত করতে পারেনি এবং প্রায় সবসময়ই সংখ্যায় ছাড়িয়ে যায়।[১১৬] রোডেশীয় ইউনিটগুলো একটি আক্রমণাত্মক পূর্বাভাসমূলক এবং পাল্টা স্ট্রাইক কৌশল অনুসরণ করে, তাদের বহিরাগত অভয়ারণ্যে গেরিলা বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে অভিযান চালিয়ে এই বিষয়ে তাদের অসুবিধার জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।[১১৬]
আঠারো থেকে তেইশ বছর বয়সী সমস্ত শ্বেতাঙ্গ পুরুষ বাসিন্দাদের পূর্ণ-সময়ের জাতীয় পরিষেবা সাড়ে চার মাস (পরে নয় মাস পর্যন্ত বাড়ানো) পূরণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।[১১৪] এটি একটি তিন বছরের সংরক্ষিত বাধ্যবাধকতা দ্বারা অনুসরণ করা হয়েছিল।[১১৪] ১৯৭৪ সালের মধ্যে জাতীয় পরিষেবা গ্রহণের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়েছিল এবং ২৩ বছরের বেশি শ্বেতাঙ্গ পু রুষদেরও নিয়োগ করা হয়েছিল।[১১৫] ১৯৭৮ সালে রোডেশীয় আর্মিতে প্রায় ১৪,০০০ শ্বেতাঙ্গ জাতীয় সৈনিক ছিল, কিন্তু ক্রমাগত জনবলের ঘাটতি এটিকে বৃহত্তর সং খ্যায় কৃষ্ণাঙ্গ স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োগ করতে এবং ষাট বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবা প্রসারিত করতে বাধ্য করে।[১১৫] রোডেশীয় বুশ যুদ্ধের শেষের দিকে কার্যত সমস্ত পুরুষ শ্বেতাঙ্গ বাসিন্দারা হয় সামরিক বা পুলিশে পূর্ণকালীন বা খণ্ডকালীন ক্ষমতায় কাজ করছিলেন।[১১৫] রোডেশীয় সেনাবাহিনীর আকার প্রায় ২০,০০০ জন কর্মী এবং বি এস এ পি-এর সংখ্যা ৪০,০০০-এর উপরে। তাদের যার মধ্যে সংরক্ষিত সেনাও ছিল।[১১৫]
১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত রোডেশীয় সরকার রাসায়নিক এবং জৈবিক এজেন্টকে অস্ত্র দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা করেছিল।[১১৮] নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গেরিলা ক্যাশে প্রতিস্থাপন করার আগে সরবরাহকে দূষিত করে বা অভিযানের সময় গেরিলাদের দ্বারা চুরি করার জন্য গ্রামীণ দোকানে লাগিয়ে দেয়।[১১৯] তারা রোডেশীয় সীমান্তে পরিচিত অনুপ্রবেশের রুটগুলোতে পানির উত্সগুলোকে বিষাক্ত করে, তাদের বিরোধীদের আরও শুষ্ক অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করতে বা তাদের ট্রেকের সময় আরও বেশি পানি বহন করতে বাধ্য করে।[১২০]
রোডেশীয় রাসায়নিক ও জৈবিক যুদ্ধ (CBW) প্রোগ্রামে সর্বাধিক ব্যবহৃত রাসায়নিক এজেন্টগুলো ছিল প্যারাথিয়ন (একটি অর্গানোফসফেট কীটনাশক) এবং থ্যালিয়াম (একটি ভারী ধাতু যা সাধারণত রডেন্টিসাইডে পাওয়া যায়)।[১২১] রোডেশীয়রা যে অস্ত্রগুলো ব্যবহারের জন্য বেছে নিয়েছিল তার মধ্যে ভিব্রিও কলেরা (কলেরার কার্যকারক এজেন্ট) এবং সম্ভবত ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস (অ্যানথ্রাক্সের কার্য কারক এজেন্ট) অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা রিকেটসিয়া প্রোওয়াজেকি (মহামারী টাইফাসের কার্যকারক এজেন্ট), এবং সালমোনেলা টাইফি (টাইফয়েড জ্বরের কার্যকারক এজেন্ট), এবং রিসিন এবং বোটুলিনাম টক্সিনের মতো বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করার দিকেও নজর দিয়েছে।[১১৮]
জৈবিক এজেন্ট, যেমন ভিব্রিও কলেরি, জেডএএনএলএ-এর যুদ্ধ ক্ষমতার উপর কিছুটা প্রভাব ফেলেছিল।[১২২] রোডেশীয় সিকিউরিটি ফোর্সের কিছু প্রাক্তন অফিসার অভিযোগ করেছেন যে ১৯৭০ এর দশকের শেষে র দিকে অ্যানথ্রাক্স গোপনে ব্যবহার করা হয়েছিল, তবে এটি বিতর্কিত হয়েছে।[১১৮] বিশিষ্ট গেরিলা কমান্ডারদের হত্যার প্রচেষ্টার সময় অ্যানথ্রাসিস, রিসিন বা বোটুলিনাম টক্সিনের ব্যবহার সমর্থনযোগ্য ছিল।[১১৮]
অর্থনৈতিকভাবে, দক্ষিণ রোডেশিয়া এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলেছিল যা সংকীর্ণভাবে কয়েকটি প্রাথমিক পণ্যের উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে ছিল, বিশেষ করে, ক্রোমিয়াম এবং তামাক। তাই এটি অর্থনৈতিক চক্রের জন্য দুর্বল ছিল। ১৯৩০-এর দশকের গভীর মন্দা যুদ্ধ-পরবর্তী বুমের পথ দিয়েছিল। এই উচ্ছ্বাস ১৯৪৫ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে প্রায় ২০০,০০০ শ্বেতাঙ্গদের অভিবাসন প্ররোচিত করেছিল, যা শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যাকে ৩০৭,০০০ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। এই অভিবাসীদের একটি বৃহৎ সংখ্যক ব্রিটিশ শ্রমিক শ্রেণীর বংশোদ্ভূত ছিল, অন্যরা বেলজীয় কঙ্গো, কেনিয়া, তানজানিয়া এবং পরে অ্যাঙ্গোলা এবং মোজাম্বিক থেকে এসেছিল। তারা একটি অপেক্ষাকৃত ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা একসময় ব্যাকউড চাষের উপর নির্ভরশীল প্রাথমিক উৎপাদনকারীকে একটি শিল্প দৈত্যে রূপান্তরিত করেছিল যা একটি শক্তিশালী উত্পাদন খাত, লোহা ও ইস্পাত শিল্প এবং আধুনিক খনির উদ্যোগের জন্ম দেয়। এই অর্থনৈতিক সাফল্যগুলো দক্ষ শ্রমের অভিবাসন ব্যতীত বিদেশী সাহায্যের জন্য সামান্যই ঋণী।
রোডেশিয়া রাজ্যের অর্থনীতি তার স্বাধীনতার ঘোষণার পর এক দশক ধরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলোকে টিকিয়ে রেখেছিল, একটি প্রতিরোধ যা আরও দক্ষিণ আফ্রিকান রাজ্যগুলো স্বাধীনতা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন ঘোষণা করার পাশাপাশি রোডেশীয় বুশ যুদ্ধের ধ্বংসের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছিল।
রোডেশিয়ার শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর ক্ষণস্থায়ীত্ব। যেহেতু শ্বেতাঙ্গ বসতি স্থাপনকারীরা স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করার কয়েক বছর পর রোডেশিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ১৮৯০ সালে আগত প্রথম শ্বেতাঙ্গ বসতি স্থাপনকারী ৭০০ জন ব্রিটিশের মধ্যে মাত্র ১৫ জন্খতনও ১৯২৪ সালে রোডেশিয়ায় বসবাস করছিলেন।[৯৩] :৬৫৯৩যেহেতু রোডেশিয়ার শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যার জন্মহার কম ছিল (আফ্রিকান হারের তুলনায় প্রতি ১,০ ০০ জনে ১৮, প্রতি ১,০০০ জনে ৪৮[১২৩](, শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যা বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য মূলত নতুন শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের গ্রহণের উপর নির্ভরশীল ছিল। ১৯৫৫ এবং ১৯৭২ সালের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ রোডেশীয় জনসংখ্যার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৬০% দায়ী ছিল অভিবাসন।[৯৩]
যাইহোক, আমেরিকান ইতিহাসবিদ জোসিয়াহ ব্রাউনেল উল্লেখ করেছেন যে রোডেশিয়াতে শ্বেতাঙ্গ বাসিন্দাদের টার্নওভারের হার খুব বেশি ছিল। কারণ রোডেশিয়া ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে মোট ২৫৫,৬৯২ জন শ্বেতাঙ্গ অভিবাসী গ্রহণ করেছিল এবং একই সময়ে মোট ২৪৬,৫৮৩ জন শ্বেতাঙ্গ অভিবাসী হয়েছিল। এমনকি ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে রোডেশিয়া গড়ে ১৩,৬৬৬ শ্বেতাঙ্গ অভিবাসী গ্রহণ করেছিল। তাদের বেশিরভাগই যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আগত। সেসময় গড়ে প্রায় ৭,৬৬৬ শ্বেতাঙ্গ বার্ষিক দেশত্যাগ করেছিল। ১৯৬১ এবং ১৯৬৫ সালের মধ্যে, রোডেশিয়া প্রতি বছর গড়ে ৮,২২৫ শ্বেতাঙ্গ অভিবাসী গ্রহণ করেছিল এবং প্রতি বছর ১২,৯১২ জন শ্বেতাঙ্গ অভিবাসী ছিল। রোডেশিয়ায় অনেক সম্ভাব্য শ্বেতাঙ্গ অভিবাসী অর্থনৈতিক সুযোগ খুঁজতে এসেছিলেন এবং বুশ যুদ্ধ তীব্র হওয়ার সাথে সাথে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওঠানামার কারণে দেশ ত্যাগ করে চলে যান। একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক সেখানে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপনে আগ্রহী ছিল না এবং রোডেশীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন।, যদিও ১৯৬৭ সালের একটি প্রচারাভিযান তাদের তা করার আহ্বান জানানো হয়েছিল।[৯৩]
ব্রাউনেল জোর দিয়েছিলেন যে শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের দেশপ্রেম মূলত প্রবাসী চরিত্রের কারণে "অগভীর" ছিল। তিনি আরও দাবি করেন যে ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে বেশিরভাগ শ্বেতাঙ্গ অভিবাসী ছিলেন অদক্ষ শ্রমিক যারা দেশের কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান কর্মশক্তির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এবং দেশে খারাপভাবে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত বা পে শাগত দক্ষতার অবদান রাখেনি। যুক্তি দেওয়া হয় এটি সরকারি নীতির কারণে হয়েছে। শ্বেতাঙ্গ অভিবাসনকে "যতটা সম্ভব অনির্বাচিত" করার জন্য এবং প্রত্যেক শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীকে চাকরির নিশ্চয়তা দিতে। রোডেশিয়ার জনসংখ্যা ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে অভিবাসন এবং এর কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের মধ্যে প্রাকৃতিক বৃদ্ধির একটি ব্যতিক্রমী হারের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এটি সেই সময়ে সাব-সাহারান আফ্রিকাতে সর্বোচ্চ।[৯৩]
বছর | দক্ষিণ রোডেশিয়া | উত্তর রোডেশিয়া | ন্যাসাল্যান্ড | মোট | ||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
শ্বেতাঙ্গ | কৃষ্ণাঙ্গ | শ্বেতাঙ্গ | কৃষ্ণাঙ্গ | শ্বেতাঙ্গ | কৃষ্ণাঙ্গ | শ্বেতাঙ্গ | কৃষ্ণাঙ্গ | |
১৯২৭ | ৩৮,২০০ (৩.৯৮%) | ৯২২,০০০ (৯৬.০২%) | ৪,০০০ (০.৪%) | ১,০০০,০০০ (৯৯.৬%) | ১,৭০০ (০.১৩%) | ১,৩৫০,০০০ (৯৯.৮৭%) | ৪৩,৯০০ (১.৩২%) | ৩,২৭২,০০০ (৯৮.৬৮%) |
১৯৪৬ | ৮০,৫০০ (৪.৭৯%) | ১,৬০০,০০০ (৯৫.২১%) | ২১,৯১৯ (১.৩২%) | ১,৬৩৪,৯৮০ (৯৭.৬৮%) | ২,৩০০ (০.১০%) | ২,৩৪০,০০০ (৯৯.৯০%) | ১০৪,৭১৯ (১.৮৪%) | ৫,৫৭৪,৯৮০ (৯৮.১৬%) |
১৯৫৫ | ১৫০,০০০ (৫.৮৮%) | ২,৪০০,০০০ (৯৪.১২%) | ৬৫,০০০ (৩.০২%) | ২,০৮৫,০০০ (৯৬.৯৮%) | ৬,৩০০ (০.২৫%) | ২,৫৫০,০০০ (৯৯.৭৫%) | ২২১,৩০০ (৩.০৫%) | ৭,০৩৫,০০০ (৯৬.৯৫%) |
১৯৬০ | ২২৩,০০০ (৭.৩০%) | ২,৮৩০,০০০ (৯২.৭০%) | ৭৬,০০০ (৩.১৪%) | ২,৩৪০,০০০ (৯৬.৮৫%) | ৯,৩০০ (০.৩৩%) | ২,৮১০,০০০ (৯৯.৬৬%) | ৩০৮,৩০০ (৩.৭২%) | ৭,৯৮০,০০০ (৯৬.২৮%) |
বছর | শ্বেতাঙ্গ | কৃষ্ণাঙ্গ (আনুমানিক) | এশিয়াটিক এবং রঙিন | মোট জনসংখ্যা (আনুমানিক) |
---|---|---|---|---|
১৯১১ | ২৩,৬০৬ (৩.০৬%) | ৭৪৪,৫৫৯ (৯৬.৫৬%) | ২,৯১২ (০.৩৮%) | ৭৭১,০৭৭ |
১৯২১ | ৩৩,৬২০ (৩.৭৩%) | ৮৬২,৩১৯ (৯৫.৯০%) | ৩,২৪৮ (০.৩৬%) | ৮৯৯,১৮৭ |
১৯৩১ | ৪৯,৯১০ (৪.৪২%) | ১,০৭৬,০০০ (৯৫.২২%) | ৪,১০২ (০.৩৬%) | ১,১৩০,০০০ |
১৯৪১ | ৬৮,৯৫৪ (৪.৬৬%) | ১,৪০৪,০০০ (৯৪.৯৩%) | ৬,৫২১ (০.৪৪%) | ১,৪৭৯,০০০ |
১৯৫১ | ১৩৫,৫৯৬ (৫.৮৪%) | ২,১৭০,০০০ (৯৩.৫৩%) | ১০,২৮৩ (০.৪৪%) | ২,৩২০,০০০ |
১৯৬১ | ২২১,৫০৪ (৬.৭৪%) | ৩,৬১৮,১৫০ (৯২.৮০%) | ১৭,৮১২ (০.৪৬%) | ৩,৮৫৭,৪৬৬ |
১৯৬৯ | ২৫৮,৫৮০ (৬.৪৯%) | ৪,৮৪০,০০০ (৯৩.০৯%) | ২৩,৮৭০ (০.৪৭%) | ৫,০৯০,০০০ |
বছর | জন্ম | মৃত্যু | বিবাহ | অভিবাসী |
---|---|---|---|---|
১৯৬৩ | ৪,৪৫৭ | ১,৪৪৯ | ২,০০৮ | ৫,০৯৩ |
১৯৬৪ | ৪,০১৭ | ১,৩০৬ | ২,০৪৬ | ৭,০০০ |
১৯৬৫ | ৩,৮৬৩ | ১,৩৬৯ | ২,০৭১ | ১১,১২৮ |
১৯৬৬ | ৩,৭৮২ | ১,৪৬০ | ২,০৩৫ | ৬,৪১৮ |
১৯৬৭ | ৪,০৩১ | ১,৫১২ | - | ৯,৬১৮ |
১৯৬৮ | ৪,০০৪ | ১,৬৪৬ | - | ১১,৮৬৪ |
১৯৬৯ | ৪,০৮৯ | ১,৬৩৩ | - | ১০,৯২৯ |
শহর | শ্বেতাঙ্গ | কৃষ্ণাঙ্গ | অন্যান্য | মোট |
---|---|---|---|---|
সালিসবারি | ৯৬,৪২০ (২৫.০৭%) | ২৮০,০৯০ (৭২.৮৪%) | ৮,০২০ (২.০৯%) | ৩৮৪,৫৩০ |
বুলাওয়েও | ৫০,০৯০ (২০.৪০%) | ১৮৭,৫৯০ (৭৬.৩৮%) | ৭,৯১০ (৩.২২%) | ২৪৫,৫৯০ |
উমতলী | ৮,৩৪০ (১৭.৯৩%) | ৩৬,২২০ (৭৭.৮৮%) | ১,৯৫০ (৪.২০%) | ৪৬,৫১০ |
গোয়েলো | ৮,৩৯০ (১৮.২৩%) | ৩৬,৮৮০ (৮০.১২%) | ৭৬০ (১.৬৫%) | ৪৬,০৩০ |
Que Que | ৩,১৬০ (৯.৬২%) | ২৯,২৫০ (৮৯.০১%) | ৪৫০ (১.৩৭%) | ৩২,৮৬০ |
গাতুমা | ১,৮৮০ (৮.৯৭%) | ১৮,৭৭০ (৮৯.৫৫%) | ৩১০ (১.৪৮%) | ২০,৯৬০ |
ওয়াঙ্কি | ২,১৬০ (১০.৭২%) | ১৭,৯৮০ (৮৯.২৮%) | - | ২০,১৪০ |
শাবানী | ১,৫৬০ (৯.৮৭%) | ১৪,১৭০ (৮৯.৬৩%) | ৮০ (০.৫১%) | ১৫,৮১০ |
ফোর্ট ভিক্টোরিয়া | ২,৫৩০ (২২.২৯%) | ৮,৪৭০ (৭৪.৬৩%) | ৩৫০ (৩.০৮%) | ১১,৩৫০ |
শ্বেতাঙ্গ রোডেশীয়রা বেশিরভাগই ইংরেজিতে কথা বলত, সংখ্যালঘুরা আফ্রিকান্স ভাষা কথা বলে। প্রায় ৭০% কৃষ্ণাঙ্গ রোডেশীয় শোনা ভাষায় কথা বলত এবং প্রায় ২০% এনদেবেলে কথা বলত।[১২৫] রোডেশিয়ার ভারতীয় সম্প্রদায়ের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক গুজরাটি এবং একটি সংখ্যালঘু হিন্দিতে কথা বলে।
রোডেশিয়া প্রধানত খ্রিস্টান ধর্মকে মেনে চলত, যেখানে প্রোটেস্ট্যান্টবাদ সবচেয়ে বড় সম্প্রদায়। তবে, অনেক নেটিভ আফ্রিকান এখনও ঐতিহ্যগত আফ্রিকান ধর্ম মেনে চলে।
স্বাধীনতার একতরফা ঘোষণার (১৯৬৫ থেকে ১৯৭৯) সময়কাল জুড়ে, রোডেশিয়া একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টার একটি বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেছিল। দেশটি তার রাজনৈতিক ব্যবস্থা 'সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের জন্য ধীরে ধীরে পদক্ষেপ' অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে জোর দিয়েছিল। প্রবলভাবে কমিউনিস্ট-বিরোধী, রোডেশিয়া আফ্রিকায় কমিউনিস্ট সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে একটি ফ্রন্ট-লাইন রাষ্ট্র হিসাবে পশ্চিমের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে খুব সামান্যই লাভ হয়েছিল।
রোডেশিয়া তার অস্তিত্বের সময় সামান্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছিল। স্বীকৃতি শুধুমাত্র ১৯৮০ সালের নির্বাচন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনে রূপান্তরের পরে ঘটেছে।
রোডেশিয়া তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ধরে রাখতে চেয়েছিল এবং বিদ্রোহী বাহিনীতে কমিউনিস্ট উপাদানগুলোকেও ভয় করেছিল। এভাবে তাদের কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনে ধীরে ধীরে অগ্রগতির নীতি ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করেছিল। যাইহোক, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই যুক্তি মেনে নিতে অস্বীকার করে। তারা বিশ্বাস করত যে রোডেশিয়ার নীতিগুলো বর্ণবাদকে স্থায়ী করছে। এই মনোভাবটি ছিল বৃহত্তর উপনিবেশকরণের প্রেক্ষাপটের অংশ, যে সময়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামের মতো পশ্চিমা শক্তিগুলো আফ্রিকায় তাদের উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা দিতে ত্বরান্বিত হয়েছিল।
রোডেশিয়া মূলত ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আফ্রিকায় উপনিবেশকরণ শুরু হয়েছিল, তবে এটি ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে ত্বরান্বিত হতে শুরু করে, যার ফলে ব্রিটেন তার বেশ কয়েকটি উপনিবেশের সাথে দ্রুত স্বাধীনতার আলোচনা করতে শুরু করে। এই সম য়ের মধ্যে, এটি NIBMAR নামে একটি বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করে, বা সংখ্যাগরিষ্ঠ আফ্রিকান শাসনের আগে নো ইন্ডিপেন্ডেন্স, গণতান্ত্রিক সংস্কার বাধ্যতামূলক ক রে যা সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের হাতে শাসন পরিচালনা করে। ইয়ান স্মিথের নেতৃত্বে রোডেশিয়ার শাসক শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুরা নীতি এবং এর প্রভাবের বিরোধিতা করেছিল। ১১ নভেম্বর ১৯৬৫-এ, রোডেশিয়ার সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ সরকার ইউনাইটেড কিংডম থেকে স্বাধীনতার একতরফা ঘোষণা (ইউডিআই) করে, কারণ এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে শ্বেতাঙ্গ শাসনের অধীনে আলোচনা স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করবে না।
ইউনাইটেড কিংডম সরকার অবিলম্বে আইন (সাউদার্ন রোডেশিয়া আইন ১৯৬৫) আনে যা আনুষ্ঠানিকভাবে সমস্ত রোডেশীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিলুপ্ত করে। এই পদক্ষেপটি রোডেশিয়ার নাগরিকদের জীবনকে কঠিন করে তুলে। যারা আন্তর্জাতিকভাবে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন তাদের ভ্রমণ জটিলতা তৈরি হয়। কারণ রোডেশিয়ার ইউডিআই প্রশাসন কর্তৃক জারি করা পাসপোর্টগুলো বৈধ হিসাবে স্বীকৃত হয়নি।[১২৬] ১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে, ব্রিটিশরা স্বাধীনতা ঘোষণার আগে জারি করা যেকোনো পাসপোর্টকে বৈধ বলে স্বীকার করে এবং মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ছয় মাসের যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট মঞ্জুর করার অনুমতি দিয়ে একটি বিবৃতি জারি করে - তবে শর্ত থাকে যে বাহক ঘোষণা করে যে তারা ইউডিআই রোডেশীয় সরকারকে সাহায্য করতে চায় না।
১৯৬৯ সালের শেষের দিকে, রোডেশিয়া তখনও রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। যদিও এটি স্বাধীনতার লক্ষ্যে বাধা দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতা করেছিল। তবে তিনি রোডেশিয়ার রানী উপাধি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন এবং অবশেষে স্মিথ সরকার ব্রিটিশ ক্রাউনের প্রতি অনুগত থাকার তাদের প্রচেষ্টা ত্যাগ করে। ১৯৬৯ সালের গণভোটে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার রোডেশিয়াকে একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করার পক্ষে ভোট দেয়। আশা করা হয়, এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতির সুবিধা দেবে। কিন্তু শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের বিষয়টি রয়ে গেছে এবং এই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করে চলে এবং এর আগে ইউডিআই-এর মতো একটি প্রজাতন্ত্রের ঘোষণার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাব ছিল।
স্বাধীনতার ঘোষণার পরে, এবং প্রকৃতপক্ষে তার অস্তিত্বের পুরো সময়কালের জন্য, রোডেশিয়া কোনো রাষ্ট্রের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি, যদিও এটি দক্ষিণ আফ্রিকার সা থে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল, যা তখন বর্ণবাদের অধীনে ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা অ ন্যান্য জাতির সাথে তার ভঙ্গুর অবস্থান রক্ষা করার জন্য রোডেশিয়াকে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে প্রায়শই রোডেশিয়া রাজ্যকে সহায়তা করেছিল। পর্তুগাল ১৯৭৪ সালের কার্নেশন বিপ্লব পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। স্বাধীনতার ঘোষণার পরের দিন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ একটি প্রস্তাব পাস করে (S/RES/২১৬( যাতে সব রাষ্ট্রকে রোডেশিয়াকে স্বীকৃতি না দেওয়ার এবং কোনো সহায়তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। নিরাপত্তা পরিষদ নির্বাচনী বাধ্যতামূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছিল, যা পরবর্তীতে ব্যাপক করা হয়।
মালাউই,[১২৭] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউএনএসসিতে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দেওয়া সত্ত্বেও, রো ডেশিয়া থেকে ক্রোমিয়াম আকরিক কিনতে তাদের লঙ্ঘন করেছে।[১২৮] জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট কেনেথ কাউন্ডাও পশ্চিমা তেল কোম্পানিগুলোকে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে রোডেশিয়ার কাছে তেল বিক্রির অভিযোগ এনেছেন।[১২৯]
১১ নভেম্বর ১৯৬৫ তারিখে যুক্তরাজ্য থেকে রোডেশিয়ার একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা তাত্ক্ষণিকভাবে নিন্দা করা হয়েছিল। ১২ নভেম্বর ১৯৬৫-এর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২১৬ রেজুলেশন "সকল রাষ্ট্রকে দক্ষিণ রোডেশিয়ার এই অবৈধ বর্ণবাদী সংখ্যালঘু শাসনকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য" আহ্বান জানিয়েছে।[১৩০]
রোডেশিয়া আ ন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য প্রচারণা চালায় এবং তার অভ্যন্তরীণ নীতির বহিরাগত সমালোচনাকে তিরস্কারের ন্যায্যতা হিসাবে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অ-হস্তক্ষেপের মতবাদের আহ্বান জানায়। যাইহোক, ঔপনিবেশিক পরিস্থিতিতে আত্ম-নিয়ন্ত্রণের উদীয়মান মতবাদের অর্থ হল অধিকাংশ জাতি রোডেশিয়ার স্ব-ঘোষিত স্বাধীনতাকে অবৈধ বলে মনে করে।
জাম্বিয়া, পূর্বে উত্তর রোডেশিয়া, রোডেশিয়ার প্রতি একটি বাস্তবসম্মত পন্থা গ্রহণ করেছিল। কেনেথ কাউন্ডা, তার দেশের তামা আকরিক রপ্তানি, জ্বালানী এবং বিদ্যুৎ আমদানির জন্য রোডেশিয়ার মাধ্যমে অ্যাক্সেসের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, অনানুষ্ঠানিকভাবে রোডেশীয় সরকারের সাথে কাজ করেছেন। রোডেশিয়া এখনও জাম্বিয়াকে তার ভূখণ্ডের মাধ্যমে মোজাম্বিক বন্দরে পণ্য রপ্তানি ও আমদানি করার অনুমতি দেয়, জাম্বীয় সরকারের শত্রুতা এবং পোস্ট-ইউডিআই স্মিথ প্রশাসনের অ-স্বীকৃতি সত্ত্বেও।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অন্যান্য সমস্ত পশ্চিমা দেশগুলোর মতো, রোডেশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছিল, কিন্তু অন্যদের মত তার কনস্যুলেট-জেনারেলকে ওয়াশিংটন, ডিসিতে মার্কিন সরকার এবং সালিসবারিতে রোডেশীয় সরকারের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে কাজ করা র অনুমতি দেয়। রোডেশিয়া যখন ওয়াশিংটন, ডিসিতে রোডেশীয় তথ্য অফিস স্থাপন করে ছিল, তখন ওএএস দেশগুলো উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করেছিল। মার্কিন সরকার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল যে রোডেশীয় মিশন এবং এর কর্মীদের কোনও আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক মর্যাদা নেই এবং তারা কোনও মার্কিন আইন লঙ্ঘন করেনি।
পর্তুগাল রোডেশিয়ার সাথে একটি মধ্যম পথ অনুসরণ করেছে। ইয়ান স্মিথের অধীনে রোডেশিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না দিলেও, আন্তোনিও সালাজার সরকার রোডেশিয়াকে লিসবনে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক মিশন প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দেয় এবং তাদের মোজাম্বিকের উপনিবেশের মাধ্যমে রোডেশিয়ার রপ্তানি ও আমদানির অনুমতি দেয়। সেই সময়ে ক্ষমতায় থাকা পর্তুগিজ সরকার, কর্তৃত্ববাদী এবং প্রবলভাবে কমিউনিস্ট-বিরোধী, গেরিলা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রোডেশিয়ার লড়াইয়ে পর্দার অন্তরালে সক্রিয় সমর্থন দিয়েছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সরকার হিসাবে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে, সেই সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান রাজ্যগুলোর সাথে ডিটেনটে নীতি অনুসরণ করেছিল। এই রাজ্যগুলো চেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা দক্ষিণ আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অ-হস্তক্ষেপের অঙ্গীকারের বিনিময়ে রোডেশিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনে দ্রুত পরিবর্তনের জন্য ইয়ান স্মিথকে চাপ দিতে। প্রধানমন্ত্রী জন ভর্স্টার, রোডেশিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দিকে নিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করে, স্মিথকে চাপ দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি কৌশল ব্যবহার করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার জ্বালানি ও গোলা বারুদের চালান আটকে রাখে এবং রোডেশি য়া থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ দক্ষিণ আফ্রিকান বাহিনীকে প্রত্যাহার করে। মোজাম্বিকের সম্মিলিত ক্ষয়ক্ষতি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থন হারানো রোডেশীয় সরকারের জন্য গুরুতর আঘাতের সম্মুখীন হয়।
ইউডিআই-এর পরে, রো ডেশিয়া প্রিটোরিয়া সহ বেশ কয়েকটি বিদেশী মিশন পরিচালনা করে,[১৩১] এবং ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত পর্তুগালের লিসবন এবং মোজাম্বিকের লরেনো মার্কেস (বর্তমানে মাপুতো)।[১৩২]
১৯৬১ সাল থেকে, রোডেশিয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে একটি "স্বীকৃত কূটনৈতিক প্রতিনিধি" ছিল, যা এক টি "রোডেশীয় কূটনৈতিক মিশন" বা ডি ফ্যাক্টো দূতাবাসের নেতৃত্বে ছিল।[১৩৩] সেই বছর দক্ষিণ আফ্রিকা কমনওয়েলথ ত্যাগ করার আগে, তৎকালীন দক্ষিণ রোডেশিয়া তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকা ইউনিয়নের সাথে হাই কমিশনার বিনিময় করেছিল, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তনের পরে, প্রজাতন্ত্রের এখন স্যালিসবারিতে একটি "দক্ষিণ আফ্রিকান কূটনৈতিক মিশন" ছিল।[১৩৪]
১৯৬৫ সালে রোডেশিয়া সরকার লিসবনে ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে আলাদা একটি মিশন প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়। তার নিজস্ব স্বীকৃত প্রতিনিধির সাথে পূর্বে পর্তুগিজ মোজাম্বিকের রাজধানী লরেনকো মার্কে সে নিজস্ব কনস্যুলেট স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল।[১৩৫] এটি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে প্রতিবাদের প্ররোচনা দেয়, যা নির্ধারণ করা হয়েছিল যে প্রতিনিধি, হ্যারি রিডম্যান, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের কর্মীদের নামমাত্র সদস্য হওয়া উচিত।[১৩৬] তাদের পক্ষ থেকে, পর্তুগিজ কর্তৃপক্ষ একটি আপস চেয়েছিল যার মাধ্যমে তারা রিডম্যানকে একজন স্বাধীন প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করবে কিন্তু তাকে কূটনৈতিক মর্যাদা অস্বীকার করবে।[১৩৭]
ওয়াশিংটনের রোডেশীয় ইনফরমেশন অফিস ইউডিআই-এর অনুসরণে খোলা ছিল, কিন্তু এর পরিচালক, কেন টোসি এবং তার কর্মীরা তাদের কূটনৈতিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত ছিলেন।[১৩৮] পূর্বে, ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে একজন "রোডেশীয় বিষয়ক মন্ত্রী" ছিলেন,[১৩৯] পাশাপাশি টোকিও এবং বনের প্রতিনিধিরা।[১৪০] জিম্বাবুয়ে হিসাবে দেশটির স্বাধীনতার পর, টাওসি নতুন দূতাবাসের চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার্স হন।[১৪১]
রোডেশিয়া হাউস নামে পরিচিত লন্ডনের হাই কমিশন ১৯৬৯ সালে স্যালিসবারিতে "ব্রিটিশ রেসিডুয়াল মিশন" সহ দেশটিকে একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার গণভোটে শ্বেতাঙ্গ রোডেশীয়দের সিদ্ধান্তের পরে এটি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যায়। এটি বন্ধ করার আগে, মিশনটি রোডেশিয়ার সদ্য গৃহীত পতাকা উড়িয়েছিল, যা পররাষ্ট্র দপ্তর দ্বারা অবৈধ বলে বিবেচিত হয়েছিল। লেবার এমপি উইলি হ্যামিল্টন এটি অপসারণের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।[১৪২]
অস্ট্রেলিয়ায়, ফেডারেল সরকার সিডনিতে রোডেশিয়া তথ্য কেন্দ্র বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল।[১৪৩] কিন্তু এটি খোলাই ছিল। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের এখতিয়ারের অধীনে এটই কাজ করত।[১৪৪] ১৯৭৩ সালে গফ হুইটলামের লেবার সরকার কেন্দ্রের সাথে পোস্ট এবং টেলিফোন সংযোগ কেটে দেয়, কিন্তু হাইকোর্ট এটিকে অবৈধ বলে রায় দেয়।[১৪৫] প্যারিসে একটি অফিসও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু ১৯৭৭ সালে ফরাসি সরকার এটি বন্ধ করে দেয়[১৪৬]
একইভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সালিসবারি থেকে তার কনসাল-জেনারেলকে প্রত্যাহার করে এবং কনস্যুলার কর্মীদের কমিয়ে দেয়।[১৪৭] কিন্তু ১৯৭০ সালে একটি প্রজা তন্ত্র ঘোষণা না হও য়া পর্যন্ত তার কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়নি।[১৪৮] দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য ইউডিআই-এর পরে তার "স্বীকৃত কূটনৈতিক প্রতিনিধি" ধরে রাখে।[৫৫] যা এটিকে ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি ইয়ান স্মিথের সরকারের ডি ফ্যাক্টো কর্তৃত্বের সাথে মোকাবিলা করার অনুমতি দেয়।[৫৬]
১৯৭৫ সালের পর স্যালিসবারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কূটনৈতিক মিশন দেশে অবশিষ্ট একমাত্র মিশন হয়ে ওঠে।[১৪৯] তখন পর্তুগাল তার মিশনকে কনসাল স্তরে নামিয়ে দেয়,[১৫০] ১৯৭০ সালের মে মাসে সালিসবারিতে তার কনসাল-জেনারেলকে প্রত্যাহার করে।[১৫১] জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতার পর, নতুন সরকার প্রিটোরিয়া এবং কেপটাউনে তার মিশন বন্ধ করে দেয়, শুধুমাত্র জোহানেসবার্গে একটি বাণিজ্য মিশন বজায় রেখেছিল।[১৫২] অন্যদিকে স্যালিসবারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কূটনৈতিক মিশনও বন্ধ ছিল।[১৫৩]
গৃহযুদ্ধের ক্রমবর্ধমান তীব্রতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাব অবশেষে রোডেশীয় সরকারকে ১৯৭৯ সা লে যুক্তরাজ্যের সাথে একটি চুক্তিতে সম্মত হতে বাধ্য করে। এটি আন্তর্জাতিক মহলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত নির্বাচনের দিকে পরিচালিত করে। জিম্বাবুয়ের প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্টের জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন (ZANU) এবং রবার্ট মুগাবে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জিম্বাবুয়ে প্রতিষ্ঠা করে।
স্বাধীনতার পরবর্তী দশ বছরে, জিম্বাবুয়ের শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যার প্রায় ৬০% দেশান্তরিত হয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং অন্যান্য প্রধানত শ্বেতাঙ্গ, ইংরেজিভাষী দেশে অভিবাসী সম্প্রদায় গঠন করে। রাজনৈতিকভাবে জিম্বাবুয়ের অভ্যন্তরে রবার্ট মুগাবের ক্ষমতার একীকরণ ১৯৮০ এর দশকে অব্যাহত ছিল। ১৯৮৭ সালে দেশের সংবিধানে সংশোধনীর পর, শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত সংসদীয় আসন বিলুপ্ত করা হয় এবং মুগাবে কর্তৃক একটি নির্বাহী রাষ্ট্রপতির পদ তৈরি করা হয়। অনেক অভিবাসী এবং জিম্বাবুয়েতে থাকা কিছু শ্বেতাঙ্গ রোডেশিয়ার জন্য গভীর নস্টালজিক হয়ে ওঠে। এই ব্যক্তিরা "রোডিস" নামে পরিচিত। স্থানীয় শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে যারা নতুন আদেশকে বেশি গ্রহণ করে তারা "জিম্বোস" নামে পরিচিত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
প্রধান সংবাদপত্র ছিল সালিসবারির রোডেশিয়া হেরাল্ড এবং বুলাওয়েতে দ্য ক্রনিকল। ইউডিআই অনুসরণ করে, ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্র-চালিত রোডেশীয় ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (RBC) ব্যক্তিগত মালিকানাধীন রোডেশিয়া টেলিভিশন (RTV) পরিষেবা চালু করা হয়। যেখানে এটি পূর্বে ৫১ শতাংশ অং শীদারিত্ব অর্জন করেছিল।[১৫৪] ইউডিআই-এর অধীনে রোডেশিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ পত্রিকাগুলোর মধ্যে ছিল ইলাস্ট্রেটেড লাইফ রোডেশিয়া, যখন বেরিল সল্টের দ্য ভ্যালিয়েন্ট ইয়ারস ১৮৯০ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত রোডেশিয়ার ইতিহাসকে সম্পূর্ণভাবে রোডেশিয়ার সংবাদপত্রের নিবন্ধ এবং শিরোনামগুলোর অনুকরণ পুনরুত্পাদনের মাধ্যমে বলেছিল।[১৫৫]
রোডেশিয়া যুক্তরাজ্যে একটি প্রাক্তন উপনিবেশ হওয়ায় যুক্তরাজ্যে জন্ম হওয়া খেলাগুলো রোডেশিয়াতে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বিশেষ করে ক্রিকেট, রাগবি, ওয়াটার পোলো, ফুটবল, নেটবল, গলফ, টেনিস (রোডেশীয় ওপেন টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ সহ), লন বোল, ফিল্ড হকি ইত্যাদি। প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকার মতোই, রোডেশিয়াকে কমনওয়েলথ সদস্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণ উভয়ই থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।[১৫৬]
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]