রোহিণী হট্টঙ্গডি | |
---|---|
रोहिणी हट्टंगडी | |
![]() ২০১০ সালে রোহিণী | |
জন্ম | রোহিণী ওক ১১ এপ্রিল ১৯৫৫ |
পেশা | অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯৭৮-বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | জয়দেব হট্টঙ্গডি (বি. ১৯৭৭; মৃ. ২০০৮) |
সন্তান | ১ |
রোহিণী হট্টঙ্গডি (মারাঠি: रोहिणी हट्टंगडी; জন্ম ১১ এপ্রিল ১৯৫৫) হলেন একজন ভারতীয় অভিনেত্রী। তিনি মারাঠি ও হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চনাটকে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন।[১] তিনি একটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং গান্ধী (১৯৮২) চলচ্চিত্রে কস্তুরবা গান্ধী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য একমাত্র ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী বিভাগে বাফটা পুরস্কার অর্জন করেছেন।
নতুন দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামারের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হট্টঙ্গডি মূলত মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন এবং ১৯৭৮ সালে অরবিন্দ দেসাই কী আজিব দাস্তান দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। গান্ধী চলচ্চিত্রের পর তার নিকট মূলধারার বলিউড চলচ্চিত্রে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে কাজের প্রস্তাব আসতে শুরু করে, এবং অনেক ক্ষেত্রে তার বয়সের তুলনায় অধিক বয়সের ও মায়ের চরিত্রে। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে তিনি অর্থ (১৯৮২) ও অগ্নিপথ (১৯৯০) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য দুইবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং পার্টি (১৯৮৪) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন ও মঞ্চনাটকেও সক্রিয় ছিলেন।
হট্টঙ্গডি ১৯৫৫ সালের ১১ই এপ্রিল মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মনাম ছিল রোহিণী ওক। তার পিতা অনন্ত ওক।[২] হট্টঙ্গডি পুনের রেণুকা স্বরূপ মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে তার বিদ্যালয়ের পড়াশোনা সমাপ্ত করেন।[৩] ১৯৭১ সালে তিনি নতুন দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় ভর্তি হন। ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থান তার নিজ শহর পুনেতে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি সেখানে ভর্তি হননি, কারণ তার মঞ্চনাটকে অধিক আগ্রহ ছিল এবং শুরুতে চলচ্চিত্রে আসার কোন পরিকল্পনা ছিল না। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় তিনি তার ভবিষ্যৎ স্বামী জয়দেব হট্টঙ্গডির সাথে পরিচিত হন, যিনি তার একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা দুজন ইব্রাহিম আলকাজির অধীনে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার সময় তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ও শ্রেষ্ঠ অল-রাউন্ড শিক্ষার্থীর পুরস্কার লাভ করেন, অন্যদিকে পরিচালনায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জয়দেব শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৪][৫] রোহিণী আট বছর সুরেন্দ্র ওয়াডগাঁওকরের তত্ত্বাবধানে ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য কথাকলি ও ভারতনাট্যমের প্রশিক্ষণ নেন।[৪]
রোহিণীর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ১৯৭৮ সালে সাঈদ আখতার মির্জার অরবিন্দ দেসাই কী আজিব দাস্তান দিয়ে। চলচ্চিত্রটি সে বছর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার অর্জন করে। এরপর তিনি মির্জার আলবার্ট পিন্টো কো গুস্সা কিঁউ আতা হ্যায় (১৯৮০) ও রবীন্দ্র ধর্মরাজের চক্র (১৯৮১) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[২]
তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ছিল রিচার্ড অ্যাটনবারা পরিচালিত মহাত্মা গান্ধীর জীবনীনির্ভর চলচ্চিত্র গান্ধী (১৯৮২)। এই চলচ্চিত্রে তিনি বেন কিংসলি অভিনীত মহাত্মা গান্ধীর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধী চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ব্যাপক সফলতা লাভ করে এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কার অর্জন করে। হট্টঙ্গডি তার অভিনয়ের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত অর্জন করেন এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী বিভাগে বাফটা পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি একমাত্র ভারতীয় এবং এশীয় অভিনেত্রী হিসেবে এই পুরস্কার অর্জন করেছেন।[৫]
এরপর তিনি মহেশ ভাটের অর্থ (১৯৮২) চলচ্চিত্রের অভিনয় করে সমাদৃত হন এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি গোবিন্দ নিহলানির ব্যঙ্গধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র পার্টি (১৯৮৪)-তে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[৫] একই বছর তার অভিনীত সাঈদ আখতার মির্জার মোহন জোশি হাজির হো! এবং মহেশ ভাটের সারাংশ চলচ্চিত্র দুটি প্রশংসিত হয়। সারাংশ চলচ্চিত্রে তিনি অভিষিক্ত অনুপম খেরের দ্বৈত চরিত্রের বিপরীতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে খের ও হট্টঙ্গডি যথাক্রমে বি.ভি. প্রধান ও পার্বতী চরিত্রে অভিনয় করেন, যারা সম্প্রতি তাদের পুত্রের মৃত্যু শোকে কাতর। তারা দুজনেই সে সময়ে অনূর্ধ্ব ত্রিশ ছিলেন, দ্য ট্রিবিউন তাদের এই কাজকে "অমর অভিনয়" বলে অভিহিত করে।[৬] হট্টঙ্গডি তার কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন, কিন্তু এই চলচ্চিত্রটি মা চরিত্রে তার ভাবমূর্তি গড়ে তুলে এবং তাকে পরবর্তী সময়ে মূলধারার হিন্দি চলচ্চিত্রে মাতৃস্থানীয় চরিত্রে দেখা যায়।[২]
১৯৯০ সালে তিনি অগ্নিপথ চলচ্চিত্রে অমিতাভ বচ্চনের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে তিনি রাজকুমার সন্তোষীর কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, সেগুলো হল দামিনি (১৯৯৩), ঘাতক: লেথাল (১৯৯৬), পুকার (২০০০) ও লজ্জা (২০০১)।
১৯৯৫ সালে তিনি মোহনলালের বিপরীতে মালয়ালম চলচ্চিত্র অগ্নিদেবন-এ অভিনয় করেন। এতে তাকে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার বিজয়ী লেখিকা ও একটি শীর্ষস্থানীয় আঞ্চলিক সংবাদপত্র চালানো যৌথ-পরিবারের প্রধান নারী চরিত্রে দেখা যায়। ২০০৩ সালে রাজকুমার হিরানীর অভিষেক চলচ্চিত্র মুন্না ভাই এম.বি.বি.এস.-এ তার অভিনয় ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে এবং পরের বছর তিনি একই চরিত্রে তামিল ভাষা সংস্করণ ভাসুল রাজা এমবিবিএস (২০০৪)-এ অভিনয় করেন। এছাড়াও ২০১৩ সালের তামিল চলচ্চিত্র ড্যাভিডে তার একজন ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদের চরিত্র মালতী তাই ছিলো প্রশংসিত।
বছর | পুরস্কার | বিভাগ | মনোনীত কর্ম | ফলাফল | সূত্র |
---|---|---|---|---|---|
১৯৮৩ | বাফটা পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী | গান্ধী (১৯৮২) | বিজয়ী | [৭] |
১৯৮৩ | ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী | অর্থ (১৯৮২) | বিজয়ী | [৮] |
১৯৮৫ | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী | পার্টি (১৯৮৪) | বিজয়ী | [৯] |
১৯৮৫ | ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী | সারাংশ (১৯৮৪) | মনোনীত | [১০] |
১৯৯১ | শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী | অগ্নিপথ (১৯৯০) | বিজয়ী | [১১] | |
২০০৪ | সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার | মঞ্চনাটকে অভিনয় |