ক্রোনিকা দে র্যামন মুন্টানের (কাতালান উচ্চারণ: [rəˈmom muntəˈne], ১২৭০ –১৩৩৬ ) একজন কাতালান সৈনিক, লেখক এবং ভ্যালেন্সিয়া ও ম্যালোর্কার সাংবাদিক ছিলেন। তিনি ক্রোনিকা নামের গ্রন্থে তার জীবনের ধারাবিবরণী লেখেন। এই গ্রন্থেই কাতালান কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে তার রোমাঞ্চকর কাহিনীগুলো স্থানলাভ করে। তিনি পেরেলাডায় জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতা জন মুন্টানের এবং মাতা ছিলেন সামরিক আভিজাত্যপূর্ণ বংশের নারী। ১২৭১ সালে, যখন তার বয়স ৬, তিনি আরাগনের প্রথম জেমস, তার পুত্র ক্যাসিলের দশম আলফোনসো এবং আরাগনের জোল্যান্ডের মধ্যকার বৈঠক প্রত্যক্ষ করেন। এ বৈঠকে তার পিতাকে পেরালাদা করা হয়। ১২৭৬ সালে, এগারো বছর বয়সে তিনি ফ্রান্সের রজার দে লরিয়া আরাগনের রাজপুত্র পিটার কে সহায়তাকারীদের অংশ ছিলেন। ১২৮১ সালে, ষোল বছর বয়সে তিনি মন্টেপিলারে সম্ভবত ম্যালোর্কা দ্বিতীয় জেমসকে সহায়তার কাযে নিযুক্ত হন।
১২৮৫ সালে বিশ বছরের র্যামন পেরালাদায় ফিরে আসেননি, তার পিতা এবং সকল পেরালাদার অধিকার তখন ছিন্ন হয়েছিল, যার কারণ ১২৮৫ সালের আরাগনীয় ধর্মযুদ্ধ। এতে আলমোগ্যাভারসরা ঐ শহরকে পুরোপুরি দখল করে নেয়।
এপ্রিল, ১৯৮৬ সালে শুরু হয় সিসিলীয় যুদ্ধের সময় র্যামনের বয়স ছিল ২১। তিনি ভ্যালেন্সিয়া থেকে রজার দে লরিয়া'র বহর নিয়ে খুব দ্রুতই ফরাসি অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে আবার ভ্যালেন্সিয়াতেই ফিরে আসেন।
১৯৮৭ সালের মেনোর্কার বিজয়ে তারা অংশ নিয়েছিলেন। তাদের সাথে তাদের আত্মীয়রা; তার চাচার সন্তান জন, পিটার এবং জেমস মুন্টানেরও ছিল। আরাগনের প্রথম জেমসের বিজয়ের পর তারা ম্যালোর্কার দ্বীপে উপনিবেশ স্থাপনে কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৩ই এপ্রিল, ১২৯৮ সালে তারা ভ্যালেন্সিয়া ত্যাগ করেন এবং ম্যালোর্কার নাগরিক হিসেবে সেখানে বসবাস করেন।
১৩০০ সালে তিনি মেসিনার অবরোধে অংশ নেন। তিনি মেসিনার একটি পর্বের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। এই সময়ে আত্তোরনি জেনারেল রজার দে ফ্লোর সিসিলিতে ছিলেন। সিসিলীয় বিদ্রোহ (১২৯৬-১৩০২) চলাকালে এবং পরবর্তীতে কাল্টাবেলোটার শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।
কাতালান কোম্পানি ছিল রজার দে ফ্লোরের নেতৃত্বে থাকা হালকা পদাতিক বাহিনীর অন্তর্গত একটি সেনাবাহিনী। মূলত আরাগনীয় এবং কাতালান ভাড়াটে, যারা আমোগ্যাভারস নামে পরিচিত ছিল; তাদের জন্যেই এটি গঠিত হয়েছিল। রজার দে ফ্লোরের সাথে পরিচয়ের ফলে তিনি পূর্বের কাতালান কোম্পানিতে যোগদান করতে রাজি হন। রজার তুর্কীয়দের বিরুদ্ধে গ্রীকদের সাহায্য করার জন্য এই কোম্পানির নেতৃত্বে তাকে পাঠান এবং তিনি ১৩০৩ সালের আগস্টের দিকে কনস্টান্টিনোপল-এর দিকে গমন করেন। তিনি গ্যালিপোলি'র বিদ্রোহ থেকে নিজেকে পৃথক রাখেন। ১৩০৭ সালের দিকে তিনি রাজা ফার্দিনান্দ-এর পক্ষে ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে বার্নাট দে রোকাফোর্ট-এর সাথে বিরোধের ফলে তিনি ফার্দিনান্দের সমর্থকদের সাথে কোম্পানি ত্যাগ করেন। তাসোস, হ্যালমাইরস, স্কোপেলোস এবং নেগ্রোপন্টে-এইসব স্থানেও তাই হয় নেগ্রোপন্টেতে তিনি ভেনিসবাসীদের দ্বারা বন্দী হিসেবে আটক হয়েছিলেন। ভেনিসবাসীরা তাকে মুক্তি দেয় এবং তিনি কোম্পানিতে ফেরত আসেন। এখানে তিনি সাদরে গৃহীত হন।
পরবর্তীতে মেসিনায় যাবার জন্যে তিনি গ্রীস থেকে কোর্ফুর উপকূল ধরে এবং তারপর টারান্টোর উপসাগর অতিক্রম করে ক্যাস্ট্রোনুয়োভোর পরে সিসিলির রাজা তৃতীয় ফ্রেডেরিকের সভায় যান। ফ্রেডেরিকের সাথে দেখা হবার পরে তিনি কাতালোনিয়ার ক্যালাব্রিয়ায় যান।
১৩০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে, সিসিলির রাজা তৃতীয় ফ্রেডেরিক ড্যেরবা এবং ক্যুয়েরকুইনস দ্বীপের সরকার সম্পর্কীয় কাজের ভার অর্পণ করেন ৪৪ বছর বয়সী র্যামনের উপর। ১৩১৫ সাল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। শুধুমাত্র ১৩১১ সালে তিনি ভ্যালেন্সিয়ার ভ্যালেনকোনা প্রাসাদে যান। এখানেই জিরিভেলা ফার্মহাউজের উত্তরাধীকারিণীর সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের ম্যাকারি এবঙ্গি ক্যাথারিন নামের দুই সন্তান হয়।
১৩১৫ সালে তিনি রাজা ফার্দিনান্দ দে ম্যালোর্কা (যিনি পরের বছরেই মানোলাদার যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন) এবং স্যাব্রানের ইসাবেলার পুত্র ম্যাজোর্কার ভবিষ্যতের রাজা তৃতীয় জেমসকে[১] উদ্ধার করার দায়িত্ব লাভ করেন এবং পরে তাকা কাতালোনিয়া থেকে পার্পিগানে তৃতীয় জেমসের দাদা-দাদি, অর্থাৎ ম্যালোর্কার দ্বিতীয় জেমস এবং এস্ক্লারমন্দে দে ফয়েক্সের কাছে পৌছে দেন।
তিনি ১৯৩৬ সালে ইবিজাতে মৃত্যুবরণ করেন।
তার ছবি বার্সেলোনা সিটি কাউন্সিলের গ্যালারি অব ইলাস্ট্রিয়াস-এর একটি অংশ হয়ে অবস্থান করছে।[২] [৩]
ঐতিহাসিকদের মতানুসারে র্যামন মুন্টানের রচিত ক্রোনিকা চারটি কাতালান গ্র্যান্ড ক্রনিকলস-এর একটি হিসেবে গৃহীত হয়। ত্রয়োদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত আরাগনের সাম্রাজ্য এবং কাতালোনিয়ার সকল সামরিক এবং রাজনৈতিক ঘটনার পরিচয় এতে রয়েছে।[৪]