লিম্ফ নোড | |
---|---|
বিস্তারিত | |
তন্ত্র | Lymphatic system, part of the প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | নোডাস লিম্ফ্যাটিকাস (singular); nodi lymphatici (plural) |
মে-এসএইচ | D008198 |
টিএ৯৮ | A13.2.03.001 |
টিএ২ | 5192 |
এফএমএ | FMA:5034 |
শারীরস্থান পরিভাষা |
লসিকা নালী বা লসিকা বাহের বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট ফোলা অংশ থাকে, এগুলিকেই লসিকা গ্রন্থি বা লসিকা পর্ব বা লিম্ফ নোড বলে। লসিকাতন্ত্রের এবং অভিযোজিত রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার এগুলি অঙ্গ। লিম্ফনোডগুলি সারা শরীর জুড়ে বিস্তৃতভাবে উপস্থিত থাকে এবং লসিকানালীর মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে সংবহনতন্ত্রের অংশ হিসেবে কাজ করে। এতে বি এবং টি লিম্ফোসাইট বেশি থাকে এবং অন্যান্য শ্বেত রক্ত কণিকায়ও থাকে। লিম্ফ নোডগুলি বাইরের কণা এবং ক্যান্সারের কোষগুলির জন্য ফিল্টার হিসাবে কাজ করে, রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থাটির সঠিক ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কলাকোষের ফাঁকা এলাকা লসিকাপূর্ণ থাকে। এখান থেকেই পাতলা প্রাচীরযুক্ত সরু নলের ন্যায় গঠন তৈরি হয়। এই নালীটিকেই লসিকানালী (Lymph vessel) বা লসিকাবাহ বলা হয়। অনেকগুলি ছোট লসিকাবাহ যুক্ত হয়ে বড় লসিকাবাহ গঠন করে। মানুষের বুক এলাকায় থোরাসিক ডাক্ট (Thoracic Duct) নামে বড় লসিকাবাহ থাকে। এটি আবার শিরার সঙ্গে যুক্ত হয়। তাই লসিকা কর্তৃক প্রবাহিত বিভিন্ন উপাদান শিরার রক্তে আসতে পারে। রক্ত সংবহনের জন্য যে রকম পাম্পের ব্যবস্থা (হৃৎযন্ত্র দিয়ে) আছে, লসিকা সংবহনে সেরকম কোন ব্যবস্থা নেই। তাই লসিকা সংবহন অভিকর্ষজ টান ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালনের উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল।[১]
লসিকা (Lymph): লসিকা প্রকৃতপক্ষে পরিবর্তিত কলারস যা সংবহনে আংশিক সাহায্য করে। লসিকা ক্ষারধর্মী, হালকা হলুদ বর্ণের একরকম তরল পদার্থ। লসিকা গ্রন্থি এবং লসিকা-বাহের দ্বারা গঠিত লসিকা তন্ত্রে লসিকা প্রবাহিত হয়। বিভিন্ন রক্তবাহ থেকে চুইয়ে আসা রক্তরসও পরিবর্তিত হয়ে লসিকার উৎপাদন করতে পারে। দেহকোষ এবং রক্ত- জালকের মাঝে অবস্থিত লসিকা বিভিন্ন উপাদানের ব্যাপনে সাহায্য করে।
লসিকার উপাদান: লসিকার উপাদান প্রায় রক্তরসের মতো। অবশ্য এতে রক্ত রসের অনেকগুলি প্রোটিন থাকে না।
প্রতি ঘন মিলিলিটার লসিকায় প্রায় ৫০০ থেকে ৭৫০০ লিম্বোসাইট নামে শ্বেত রক্ত- কণিকা দেখা যায়। এতে সাধারণত লোহিত রক্ত কণিকা এবং অনুচক্রিকা দেখা যায় না।
জল- ৯৪ %
কঠিন পদার্থ - ৬ %
(ক) প্রোটিন- ২.০-৪.৫ % (রক্ত রসের প্রায় অর্ধেক) অ্যালবিউমিন, গ্লোবিউলিন, ফাইব্রিনোজেন।
(খ) কার্বোহাইড্রেট- গ্নুকোজ, গড়ে ১২৩ মিলিগ্রাম প্রতি ১০০ মিলিলিটার লসিকায়।
(গ) চর্বি - ৫-১৫ %
(ঘ) অন্যান্য উপাদান- লিম্বোসাইট, বিভিন্ন উৎসেচক, অ্যান্টিবডি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি।[২]
দেহের মধ্যে লসিকা নিম্নলিখিত কাজগুলি করে থাকে:
(১) কলা থেকে প্রোটিন-জাতীয় পদার্থ রক্তস্রোতে ফিরিয়ে আনতে লসিকা উল্লেখযোগ্য অংশ নেয়।
(২) লিম্ফনোড থেকে উৎপন্ন লিম্ফোসাইট (এক ধরনের শ্বেত রক্ত কণিকা) রক্তে প্রেরণ করে।
(৩) যে সমস্ত স্থানে রক্ত পৌঁছাতে পারে না সেখানে লসিকা কোষগুলিকে খাদ্যোপাদান, অক্সিজেন প্রভৃতির জোগান দেয়।
(৪) ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে শোষিত চর্বিকণা লসিকার মাধ্যমেই শোষিত হয় এবং তারপর রক্ত- সংবহনে প্রবেশ করে।
(৫) লসিকার লিম্ফোসাইট, মনোসাইট প্রভৃতি শ্বেত রক্ত কণিকাগুলি দেহ প্রতিরক্ষার কাজে অংশ নেয়। লিম্ফনোড বা লসিকা-গ্রন্থি অনেকটা ছাঁকনীর মতো, কেননা এখানে লসিকা থেকে ক্ষতিকর জীবাণু (যেমন, ব্যাকটিরিয়া) বের করে দেওয়া হয়।
আমাদের ঘাড়ে, বগলে, বুকে ও কুঁচকী অঞ্চলে প্রচুর লিম্ফনোড আছে। রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে অনেক সময় এই লিম্ফনোড ফুলে ওঠে। প্রতিরক্ষার অঙ্গ হিসেবে তখন সেখানে লিম্ফোসাইট উৎপাদনের কাজ চলে। তারাই জীবাণুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালায়।